HSC : পৌরনীতি ও সুশাসন : ১ম সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট : ২০২১

HSC : পৌরনীতি ও সুশাসন : ১ম সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট : ২০২১

নাগরিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে পৌরনীতি ও সুশাসনের ধারণা বিশ্লেষণপূর্বক একটি নিবন্ধ রচনা কর।

নমুনা সমাধান

পৌরনীতির ধারণা : পৌরনীতি নাগরিকতা বিষয়ক সামাজিক বিজ্ঞান। প্রাচীন গ্রীসের নগররাষ্ট্রের ধারণা থেকে পৌরনীতির সূত্রপাত ঘটে। পৌরনীতি ইংরেজি Cvics শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ। Civics শব্দটি দুটি ল্যাটিন শব্দ Civis ও Civitas থেকে এসেছে। শব্দ দুটির অর্থ হলো নাগরিক ও নগররাষ্ট। অর্থাৎ নগররাষ্ট্রে বসবাসরত নাগরিকরা হলো পৌরনীতির মূলকেন্দ্র এবং তাদের আচার আচরণ ও রাজনৈতিক কার্যাবলি বিশ্লেষণ হলো পৌরনীতির মূল আলোচ্য বিষয়। প্রাচীন গ্রিসের নগরাষ্ট্রগুলো ছিল আয়তনে ছোট, কিন্তু বর্তমানে জাতিরাষ্ট্র আয়তনে অনেক বিশাল ও জনসংখ্যা অনেক বেশি। এজন্য নাগরিকদের ভূমিকা জটিল ও ভিন্নধর্মী হয়। আধুনিক রাষ্ট্রের নাগরিকদের আচার-আচরণ, কার্যাবলি, বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই পৌরনীতি। নিম্নে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর পৌরনীতি বিষয়ক সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো।

প্রফেসর ই.এম. হোয়াটই বলেন,
নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকে পৌরনীতি বলে।

এফ. আই. গ্লাউড বলেন,
যেসব প্রতিষ্ঠান, অভ্যাস, কার্যাবলি ও চেতনার দ্বারা মানুষ রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন ও অধিকার ভোগকরতে পারে, তার অধ্যয়নই হচ্ছে পৌরনীতি।

সুশাসনের ধারণা : এটি আধুনিক বিশ্বের জনপ্রিয় ধারণা। সুশাসন রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের তথা সামাজিক, রাজনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত ১৯৮৯ সালে বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে সুশাসন ধারণাটি জনপ্রিয় হয়। সুশাসনের লক্ষ্য হলো জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এবর ইংরেজি প্রতিশব্দ Good Governance যার সাধারণ Governance বা শাসন এমন একটি পদ্ধতিকে বুঝায়, যেখানে একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো সংস্থা, সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ২০০০ সালে বিশ্বব্যাংক সুশাসনের ৪টি স্তম্ভ ঘোষণা করে। এ ৪টি স্তম্ভ হলো –
  • দায়িত্বশীলতা
  • স্বচ্ছতা
  • আইনী কাঠামো ও
  • অংশগ্রহণ

ম্যাক করণী বলেন,
সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে জনগনের এবং শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ককে বুঝায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সুশাসন সরকার পরিচালনা অপেক্ষা একটি বিস্তৃত ধারণা যা একটি নির্দিষ্ট ভু-খণ্ডে সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষায় এবং নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহারের প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় কতৃপক্ষের ভূমিকার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত।

পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি : পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি ব্যাপক। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :

১। নাগরিক বিষয়ক : পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিকের উত্তর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা করা পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য।

২। মৌলিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত : মানব সভ্যতার ইতিহাসে পরিবার হলো আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। পৌরনীতি ও সুশাসন পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশ, রাষ্ট্রের কার্যাবলি প্রভৃতি মৌলিক প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত।

৩। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন বিমূর্ত বিষয় তথা আইন, আইনের উৎস ও প্রকৃতি, আইন ও নৈতিকতা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতার প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে।

৪। রাজনৈতিক ঘটনাবলি : এটি বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে। যেমন : পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৪০ সালের লাহের প্রস্তাব, ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬ দফা, গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক অভ্যুত্থান ইত্যাদি রাজনৈতিক পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করে।

৫। সুশাসন সম্পর্কে আলোচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন সুশাসনের উপাদন। সুশাসনের সমস্যা ও সুশাসনের বহুমাত্রিক ধারণা, সমস্যার সমাধান, সুশাসন সমস্যার সমাধানে সরকার ও জনগণের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করে।

সুশাসনের বৈশিষ্ট্য : একটি দেশ বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশগত উন্নয়নের জন্য সুশাসন অপরিহার্য। নিম্নে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:

১। অংশগ্রহণ : সুশাসনের ভিত্তি হলো ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে শাসনব্যবস্থার সকল নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ। রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার নীতি নির্ধারণ ও এগুলোকে বাস্তবে রূপদান করতে প্রণীত বিভিন্ন কর্মসূচি জনগণের মাঝে সুষম বণ্টন করে দেওয়াকে অংশগ্রহণ বলে।

২। আইনের শাসন : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সুশাসনের অপরিহার্য শর্ত। কেননা আইনের শাসন ব্যতীত সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় কেননা তা রাষ্ট্র শাসকদের স্বেচ্ছাচারিতায় বন্দী হয়।

৩। স্বচ্ছতা : স্বচ্ছতা সুশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। স্বচ্ছতা জনগণের প্রতি অন্যায় ও রাষ্ট্রে দুর্নীতির আশঙ্কা কমায়।

৪। জবাবদিহিতা : সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জবাবদিহি। নিজ কর্ম সম্পর্কে অন্যের কাছে ব্যাখ্যা প্রদান বা কর্মের পেছনে কারণ প্রদর্শন করার বাধ্যতাকে জবাব দিহিতা বলে।

৫। সরকারের বৈধতা : সুশাসনের ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই বৈধ হতে হবে। কারণ সরকার স্থিতিশীল ও বৈধ না হলে সুশাসন সম্ভব নয়। অবৈধ সরকার স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিপরায়ণ হয়।

৬। জনসন্তুষ্টি : রাষ্ট্রের উন্নয়নের প্রধান শর্তই সুশাসন। আর এ সুশাসন পরিমাপের যন্ত্র রাষ্ট্রের জনগণ। অর্থাৎ সুশাসনে বিচারের মানদণ্ড হলো রাষ্ট্রীয় জনগণের সন্তুষ্টি। এছাড়াও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন সততা, লিঙ্গ বৈষম্য দূর, ক্ষমতার বিক্রেন্দ্রীকরণ, প্রশাসনের সেবাধর্মী মনোভাব, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সুশীল সমাজের ভূমিকা, গণতান্ত্রিক মনোভাব ইত্যাদি। এসবের সমন্বয় রাষ্ট্রের সুশাসনের বীজ বপণকরতে পারে।

পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ : মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। ফলে সঙ্গপ্রিয়তা তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সুদূর অতীতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে কতগুলো নিয়মকানুন, রীতি-নীতি প্রচলিত ছিল। প্রাচীন গ্রিসে নগর রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে কতগুলো বিধিনিষেধ মান্য করত। অবশ্যই প্রাচীন গ্রিসে যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করত শুধু তাদেরকে বলা হতো নাগরিক। নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে জ্ঞানের যে শাখায় আলোচনা করা হতো তাই পৌরনীতি। সমসাময়িক ভারতবর্ষে নগরকে পুর বা পুরী বলা হতো এবং এর অধিবাসীদের বলা হতো পুরবাসী। তাদের নাগরিক জীবনকে বলা হতো পৌরজীবন ও নাগরিক জীবন সম্পর্কিত বিদ্যার নাম ছিল পৌরনীতি। প্রাচীনকাল থেকে শাসকদের লক্ষ্য ছিলো অধিকতর জনকল্যাণ। পৌরনীতিও সুশাসনের ক্রমবিকাশ তখন থেকেই।


আরো দেখুন :

১ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post