মার্চের দিনগুলি

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার গাইডলাইন

ফ্রিল্যান্সিং কী? 

ফ্রিল্যান্সিং মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারণ চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন। এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোনো ইমপ্লয়ার নেই। যখন যে বায়ারের কাজ নিবেন তখন সে-ই আপনার ইমপ্লয়ার। 

সাধারণ চাকরি থেকে এখানে আরেকটি বিষয়ের ভিন্নতা আছে। সেটি হলো কাজের স্থান। ফ্রিল্যান্সিংয়ের নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই। মূলত আপনার বাড়িই হচ্ছে  আপনার অফিস। এখানে বসেই আপনি বিভিন্ন দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে খুব সহজেই সরকারি বেসরকারি অনেক চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন আপনার যদি যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা থাকে।

ফ্রিল্যান্সিং করতে কী কী দক্ষতা লাগবে? 

অনেকেরই কনফিউশন থাকে যে আসলেই কি আমি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবো? কী কী জিনিস দরকার এই কাজের জন্য? প্রথম যে জিনিসটা আপনার লাগবে সেটি হলো ইচ্ছাশক্তি ও ধৈর্য। এগুলো থাকলেই আপনি এ সেক্টরে সফল হবেন। এর পাশাপাশি আপনার দরকার হবে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগের দক্ষতা এবং কাজ চালানোর মতো ইংরেজি জানা। ইন্টারনেট সম্পর্কিত ভালো ধারণা এবং গুগল ও ইউটিউব থেকে বিভিন্ন রিসোর্স খুঁজে বের করার দক্ষতা এক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন কীভাবে? 

এটা সকলেরই প্রশ্ন যে কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন। তো এই পেশায় ঢোকার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার যে কাজে আগ্রহ সব থেকে এর ফলে আপনি কাজ করে যেমন মজা পাবেন, তেমন অনেক দূর যেতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সেক্টরটিতে। যেমন ধরুন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন সেকশনটা বেছে নিলেন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য। এই কাজটি কিন্তু ক্রিয়েটিভ মানুষদের কাজ। সবার দ্বারা ডিজাইন করা সম্ভব নয়। তো এটি বেছে নেয়ার পূর্বেই আপনি দেখবেন যে, এই কাজটি আপনি কেমন পারছেন, কেমন আগ্রহ আপনার এই গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর। যদি দেখেন সব কিছু ঠিকঠাক, সেক্ষেত্রে এটিকে নির্ধারিত করে এই রিলেটেড যত কাজ আছে সব শিখবেন। যেমন: ব্যানার, কভার পেজ, লিফলেট, পোস্টার, লোগো ইত্যাদি ডিজাইন করা।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রথম ধাপ 

কাজ করার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। বর্তমানে এরকম অনেক প্লাটফর্ম রয়েছে। যেমন : Fiverr, Freelancer, Upwork ইত্যাদি। অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। দোকানে যেমন বিভিন্ন পণ্য সাজানো থাকে, ঠিক তেমন করেই আপনার করা কাজগুলো পোর্টফোলিও আকারে সাজিয়ে রাখতে হবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসগুলোতে।

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ কীভাবে পাবেন? 

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখবেন, ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে অনেক অনেক ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। একজন ক্লায়েন্ট কেন আপনাকেই কাজটি দিবে? 

তার জন্য আপনাকে অবশ্যই ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ ভালো থাকতে হবে। তাছাড়া আপনাকে যে কাজটির জন্য ক্লায়েন্ট পেমেন্ট করবে সেই কাজটিও আপনাকে অত্যন্ত ভালোভাবে সুসম্পন্ন করতে হবে। মনে রাখবেন, বায়ারের সাথে যতো ভালো সম্পর্ক তৈরি হবে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ততো বেশি সুন্দর হবে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন প্রতিটি বায়ারের সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করার।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুবিধা

ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেক সুবিধা রয়েছে। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলো হলো:

সময়ের স্বাধীনতা : আগেই বলা হয়েছে যে, এ সেক্টরে আপনার সুবিধা অনুযায়ী সময়ে আপনি কাজ করতে পারবেন। এর পুরোটাই নির্ভর করবে আপনার উপরে। 

কাজের স্বাধীনতা : আপনি নিজেই নিজের কাজ বেছে নিতে পারবেন। আপনার যে কাজটি সব থেকে ভালো লাগে সেটিকে বেছে নিতে পারবেন এবং চাইলে যতদিন ইচ্ছা ওই কাজ করে যেতে পারবেন। 

নিজের বেতন নিজে ঠিক করা : নিজের পেমেন্ট রেট নিজে বেছে নিতে পারবেন। প্রায় প্রত্যেকটা মার্কেটপ্লেসেই নিজের পেমেন্ট রেট উল্লেখ করার সুযোগ রয়েছে।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজের সুযোগ : ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ না করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে পারবেন এক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পুরোটাই আপনার নিজের উপরে নির্ভর করে। 

দলগত কাজের সুযোগ : একক ভাবে কাজের পাশাপাশি এখানে দলগত কাজেরও সুযোগ পেয়ে যাবেন। 

পড়ালেখার পাশাপাশি কাজের সুযোগ : এই পেশাটি আপনি চাইলে ফুল টাইমও নিতে পারেন আবার কাজ করতে পার্ট টাইম হিসাবেও পারেন। তাই ছাত্র থাকা অবস্থায়ও এই কাজ আপনি করতে পারবেন বিনা ঝামেলায়।

নিজের মন মতো কাজের পরিবেশ : আপনি চাইলেই ইচ্ছা মতো ওয়ার্কস্টেশন বানিয়ে নিতে পারবেন কাজ করার জন্য। আপনার কাজের জায়গা আপনি নিজেই তৈরি করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের অসুবিধা 

ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে। যেমন — 
১. ফ্রিল্যান্সারদের দীর্ঘ সময় একই জায়াগায় বসে কাজ করতে হয়। এজন্য কোমর, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথাসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। 

২. কম্পিউটার এর সামনে একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রিল্যান্সারদের চোখের সমস্যা দেখা যায়। 

৩. এক্ষেত্রে সব কাজ বাসায় বসে করতে হয়। এর ফলে একাকীত্বের মাধ্যমে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায় যেটি পরবর্তীতে বড় আকার ধারণ করতে পারে। 

৪. প্রায়শই ঘুমের নানা রকম সমস্যায় সম্মুখীন হন ফ্রিল্যান্সাররা। কারণ দেখা যায় আমাদের দেশে যখন রাত, ক্লায়েন্টের দেশে তখন দিন। প্রত্যেকটা জিনিসেরই ভালো মন্দ উভয় দিক থাকে।এক্ষেত্রেও ভালো মন্দ উভয় দিক রয়েছে। তবে একটু নিয়ম মেনে চললে ফ্রিল্যান্সিং এর অসুবিধাগুলোকে খুব সহজেই এড়িয়ে চলা যায়।

নতুনরা কীভাবে ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে পারে 

ফিল্যান্সিং এর জগতে নতুনদের আসতে এখন আর খুব বেশি কোনো সমস্যা হয় না। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ইন্টারনেটেই আছে। গুগল কিংবা ইউটিউবে কিছুটা ঘাটাঘাটি করলে এই বিষয়ে অনেক কিছু জানা যায়। 

তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন প্রফেশনাল মানের অনলাইন কোর্স থেকে শুরু করে অনেক ভালো ভালো ট্রেনিং সেন্টারও রয়েছে; যেখানে আপনি ট্রেনিং করে দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। 

তবে একটি বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং এমন কোনো পেশা নয়, যেখানে আপনি এক মাস কাজ করলেই খুব ভালো আয় করতে পারবেন। 

আপনাকে ধৈর্য সহকারে কাজ করে যেতে হবে। পথটা দুর্গম ও কষ্টকর হলেও আপনার ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল থাকলে এটি কোনো সমস্যা হবে না আপনার জন্য। 

ফ্রিল্যান্সিং জগতেও কেউ হচ্ছেন গ্রাফিক্স ডিজাইনার, কেউ ওয়েব ডিজাইনার আবার কেউবা ডিজিটাল মার্কেটার। প্রত্যেকের পদবী ভিন্ন কিন্তু সবাই ফ্রিল্যান্সার। 

আসলে এক্ষেত্রে শেখার মতো কিছু নেই। আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো একটি কাজে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাহলেই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post