মার্চের দিনগুলি

HSC : অর্থনীতি : ২য় সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট : ২০২১

HSC : অর্থনীতি : ২য় সপ্তাহ

রবির বাবার ২ বিঘা কৃষি জমি আছে। উক্ত জমির আলোকে একটি টেকসই পরিবেশ বান্ধব একটি কৃষিভিত্তিক প্রকল্পের রূপরেখা প্রস্তুত কর।

নমুনা সমাধান

(ক) বাংলাদেশের কৃষি পরিবর্তনের ধারণা :
বাংলাদেশের বর্তমান কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। স্বাধীনতার পর কৃষি উৎপাদনযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায় নি। অথচ প্রতিমুহূর্তে খাদ্যগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বিদ্যমান কৃষিভূমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ, নগরায়নের ফলে চাষযোগ্য কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার স্বত্তেও কৃষি উৎপাদনে বাংলাদেশের সফলতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ পরিবর্তন উৎপাদন কলাকৌশল উপকরণসমূহের প্রয়োগ, শস্য উদ্ভিদ ও প্রাণীজ সম্পদ পরিচর্যা ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষণীয়।

খাদ্যশস্য উৎপাদন :
ক) বর্তমানে বিভিন্ন শস্যের প্রচলিত বীজের পরিবর্তে নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ পরিবর্তন বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। বর্তমানে ৩৭টি উচ্চফলনশীল ধান উৎপাদিত হচ্ছে।

খ) চাষের ক্ষেত্রে মানুষ ও লাঙ্গলের পরিবর্তে পাওয়ার টিলার, ভাড়ায় চালিত ট্রাক্টর বাহিত লাঙ্গল, ধান মাড়ায় যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে।

গ) জৈবসারের পরিবর্তে উন্নত মানের কৃত্রিম সার ও কীটনাশকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের অপেক্ষা না করে যন্ত্রচালিত পানিসেচের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঘ) শস্যবহুমুখীকরণও শস্য উৎপাদনের পরিবর্তনের ধারায় আর একটি রূপ। একই জমিতে বছরে তিনরকমের শস্য চাষ হচ্ছে।

ঙ) কৃষক তার জমির আইলে ফলের গাছ লাগাচ্ছে। জমি পতিত না রেখে বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করছে।ফলে শস্য উৎপাদনের পরিমাণ ও বাড়ছে।

চ) শস্য উৎপাদনের পরিমাণেও এসেছে দারুন পরিবর্তন।

(খ) জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে উত্তরণে অভিযোজনের উপায় অনুসন্ধান :
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। বাংলাদেশের ভূখণ্ড উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে ক্রমশ ঢালু। নদ-নদীর গতিপথ উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ধরনের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টি হয়ে প্রতিকূল অবস্থা দেখা দেয়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজনের সম্পর্ক নিবিড়। জলবায়ু পরিবর্তন থামানো যাবেনা তাই এর সাথে অভিযোজিত হয়ে বেঁচে থাকায় একমাত্র উপায়। একটি কার্যকর অভিযোজন ব্যবস্থার জন্য না না ধরনের সক্ষমতা প্রয়োজন।

একটি টেকসই অভিযোজন ব্যবস্থার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন একটি টেকসই অর্থনৈতিক ভিত্তি, সে সাথে প্র‍য়োজন প্রযুক্তিগত, সামাজিক ও অভিজ্ঞতাজাত দক্ষতাও। বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু পরিবর্তিত অবস্থা বিভিন্ন অভিযোজন মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যেমন :

১) পরিবর্তিত জলবায়ু উপযোগী ধান ভিত্তিক প্রযুক্তি উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প।
২) ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খাদ্য নিরাপত্তা ও খামার উন্নয়ন প্রকল্প।
৩) জলাভূমি, বন সংরক্ষণ, জীব বৈচিত্র‍্য সংরক্ষণ প্রকল্প।
৪) মাল্টিপারপাস সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প।
৫) উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন প্রকল্প
৬) পরিবেশ দূষণ হ্রাস ও গ্রীণহাউস প্রতিক্রিয়া হ্রাসকরণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সম্মিলিত প্রকল্প।

(গ) কৃষিতে পারমানবিক শক্তি, জৈব প্রযুক্তি, আইসিটির ব্যবহার :
পারমানবিক শক্তি : আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি, শিল্প কারখানা ও নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য, জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার ২০৩০ সাল থেকে দেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ পারমাণবিক শক্তি থেকে উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নাম রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ কেন্দ্র। এর মাধ্যমে ৩৩তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে অভিজাত নিউক্লিয়ার ক্লাবে।

জৈবপ্রযুক্তি : বায়োটেকনোলজি কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার মেটাতে বায়োটেকনোলজির বিকল্প নেই। ফসলের ফলন বৃদ্ধি, পোকামাকড় প্রতিরোধী, লবণাক্ততা, খরা, বন্যা, শৈতপ্রবাহ সহ্যকারী কাঙ্খিত জাত উদ্ভাবন, বড় আকৃতির ফলফুল, কমসময়ে অসংখ্য চারা ইত্যাদি উদ্ভাবনে বায়োটেকনোলজির ভূমিকা অপরিসীম। যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের ৫০ভাগ বায়োটেক ফসল চাষ হয়। বিজ্ঞানিদের ধারণা বায়োটেক ফসলই বিশ্বের ক্ষুধা দূর করতে পারে।

আইসিটি : বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ব। জীবন উন্নয়ন ও টেকসই জীবন গড়তে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। সেকারণে গ্রামীণ জনগণের জীবন উন্নয়নে ই-কৃষি এনে দিতে পারে উন্নতির সম্ভাবনা। কৃষকের চাহিদামাফিক, সঠিক সময়োপযোগী আধুনিক তথ্য, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, মোবাইলের মাধ্যমে সরবরাহ করলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই জাতীয় কৃষিতে ই-কৃষি অন্তর্ভুক্তকরণ আব্যশক। এতে কৃষকদের কৃষি ফসল ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত জ্ঞানগত প্রতিবন্ধকতা দূর হবে।

দেশের কৃষির উৎপাদন উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন :
১. বর্তমানে কৃষি যান্ত্রিককরণ আরো গতিশীল হয়েছে, যার ফলে খামার উৎপাদনসমূহ আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভুর্তকি প্রদানের মাধ্যমে কম মূল্যে ৩৫টি জেলায় ৩৮ হাজার ৩২৪ টি কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে সরকার। তাছাড়া বিভিন্ন দুর্যোগে প্রণোদনা দানের পাশাপাশি, কৃষি পুনর্বাসন এরও ব্যবস্থা করেছে সরকার।

২. ভূ গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভূ উপরস্থ পানির উপর জোর প্রদান করে কৃষিতে ক্ষুদ্র সেচের ব্যবস্থা করেছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে সে সব স্থানে পানি কাজে লাগিয়ে ভূ গর্ভস্থ পানির উত্তোলন হ্রাস করার মাধ্যমে কৃষি ও পরিবেশ উভয়ের রক্ষায় ভূমিকা রাখছে সরকার।

৩. কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণের মাঝে সরকার বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। যেমন: পণ্যের বাজার সৃষ্টি, পরিবহনের জন্য বিভিন্ন গাড়ির ব্যবস্থা, নতুন উদ্যোগেক্তা সৃষ্টি ইত্যাদি। এসব কাজ কৃষি কাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

৪. সরকার অঞ্চলভিত্তিক ১৭টি কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কৃষির অবকাঠামো উন্নয়ন, সেচ আওতা বৃদ্ধি, কৃষির জন্য আধুনিকায়ন যন্ত্রপাতি এবং বাজার সম্প্রসারণ ইত্যাদি।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post