বাগধারা ও প্রবাদ-প্রবচন - ই, উ, ঊ, এ, ও


ইঁদুর কপালে (মন্দ ভাগ্য) – ওরে হাসান, তুই ইঁদুর কপালে। একের পর এক তোর সবাই মরে গেল।

ইতর বিশেষ (প্রভেদ বা পার্থক্য) – কাজী সাহেব নিজের ছেলে আর ভাইয়ের ছেলের মধ্যে কোনোরূপ ইতর বিশেষ না করে এক রকম পোশাক দিতেন।

ইঁদুরের কলে পড়া (লোভ করতে গিয়ে ফাঁদে পড়া বা আটকা পড়া) – বেশি লোভ করতে গিয়ে লোকটা ইঁদুরের কলে পড়েছে, এখন উদ্ধার পাবার জন্য সে কি আকুলিবিকুলি।

ইতস্তত করা (সংকোচ কার/গড়িমসি করা/দোমনা হওয়া) – কথাটা বলা উচিত হবে কি হবে না ভেবে সে ইতস্তত করতে লাগল।

ইনিয়ে বিনিয়ে (ঘুরিয়ে ফিরিয়ে/নানাভাবে) – ইনিয়ে বিনিয়ে না বলে সরাসরি বলো।

ইয়ারবকসি (বন্ধুবান্ধব) – তার চারদিকে কিছু ইয়ারবকসি জুটেছে।

ইলশেগুঁড়ি (গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি) – ভোর থেকেই শুরু হলো ইলশেগুঁড়ি।

ইল্লতে কাণ্ড (নোংরা ব্যাপার/নোংরা কাণ্ড) – একটা ইল্লতে ব্যাপার আমাদের চোখের সামনেই ঘটে গেল, এটাই লজ্জার।

ইশপিশ করা (অস্থির হওয়া, চঞ্চল হওয়া, ব্যগ্র হওয়া) – চুপচাপ বসে থাকতে অসহ্য লাগছে, কিছু করার জন্য গা ইশপিশ করছে।


উত্তম-মধ্যম (প্রহার) – চোরটাকে ভালো রকম উত্তম-মধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

উড়নচণ্ডী (অমিতব্যয়ী) – উড়নচণ্ডী হয়ে আর কতদিন বাপের হোটেলে কাটাবে, নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা কর।

উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে (একজনের কৃতকর্মের দায়িত্ব অন্যায়ভাবে অপরের ওপর আরোপ করা) – সাদেক মহাজনের টাকা মেরে এখন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাচ্ছে।

উড়ো চিঠি (ভিত্তিহীন পত্র বা সংবাদ) – আরে বাপু, এত ভীত হয়েছ কেন, এ তো উড়ো চিঠি, নাম নাই, ঠিকানা নাই।

উড়ে এসে জুড়ে বসা (অযোচিতভাবে এসে সর্বেসর্বা হওয়া) – জীবনে যাকে দেখিনি সেই মেজ জা উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন সংসারে।

উপরোধে ঢেঁকি গেলা (অনুরোধে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু করা) – লোকে উপরোধে ঢেঁকি গেলে, আর তুমি আমার সামান্য অনুরোধটি রাখবে না?

উচ্ছন্নে যাওয়া (অধঃপাতে যাওয়া/চরিত্রের অবনতি হওয়া) – কুসংসর্গে পড়ে ছেলেটা ধীরে ধীরে উচ্ছন্নে যাচ্ছে।

উটকো লোক (অচেনা লোক/হঠাৎ অবাঞ্ছিতভাবে এসে হাজির হয়েছে এমন লোক) – একটা উটকো লোকের হাতে এমন দরকারি কাগজটা দিয়ে দিলে?

উঠে পড়ে লাগা (বিশেষ যত্ন ও একাগ্রতার সঙ্গে কাজে প্রবৃত্ত হওয়া/যথাযোগ্য উদ্যমের সঙ্গে কাজে নামা বা কাজ আরম্ভ করা) – খেলাধুলা অনেক তো হলো। সামনে পরীক্ষা। এবার উঠে পড়ে লাগো।

উসখুস করা (ছটফট করা) – চুপচাপ বসো, এমন উসখুস করলে চলবে না।


ঊনপঞ্চাশ বায়ু (পাগলামি) – পরীক্ষা পরীক্ষা করতে করতে তার ঊনপঞ্চাশ বায়ু প্রবল হয়েছে, পরীক্ষা শেষ হলেই বাঁচে।

ঊনিশ-বিশ (সামান্য তফাত) – দু দলের খেলার মান প্রায় একই রকম, একটু ঊনিশ বিশ আর কি।

ঊনপাঁজুরে (মন্দভাগ্য) – ঊনপাঁজুরে মেয়ের কোনো আশা নেই।


এলোপাতাড়ি (বিশৃঙ্খলা) – গৃহস্বামীর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে ডাকাত দল পলায়ন করলো।

এক হাত লওয়া (প্রতিশোধ) – বড় সাহেবের পেছনে আর লাগবে? কেমন সে এক হাত নিয়েছে।

একচোখা (পক্ষপাত) – সেলিম চৌধুরীর মতো এক একচোখা মানুষ আমি আর দেখিনি। নিজের ছেলেদের কোনো দোষ তার চোখে পড়ে না, যত দোষ সব ভাইয়ের ছেলেদের।

এক ঢিলে দুই পাখি মারা (এক প্রচেষ্টায় উভয় উদ্দেশ্য সাধন করা) – চল, মেলা দেখব, কেনাকাটাও করব – এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে।

এক ক্ষুরে মাথা মুড়ান (একই অবস্থা বা স্বভাববিশিষ্ট) – যেমন বড় ভাই তেমনি ছোট ভাই, উভয়ে এক ক্ষুরে মাথা মুড়ান, টাকার জন্য এরা করতে পারে না এমন কাজ জগতে নেই।

এসপার ওসপার (মীমাংসা) – আর চিন্তা করো না, হয় কাজে যোগদান কর না হয় ছাড়, এসপার ওসপার করে ফেল।

একা ঘরের গিন্নি (কর্তৃত্ব) – তোমার তো এখন কেউ নেই সালমা, শুধু তোমার বুড়ো বাপ, তুমি তো এখন একা ঘরের গিন্নি।

এক মাঘে শীত যায় না (পুনরায় বিপদ ঘটার সম্ভাবনা) – আমার টাকা কয়টা নিয়ে তার দেখা নেই, আচ্ছা দেখা যাবে -এক মাঘে শীত যায় না।

এঁড়ে তর্ক (যুক্তিহীন তর্ক) – যে লোক এঁড়ে তর্ক করে তার সঙ্গে কথা বলাই ঝামেলাপূর্ণ।

একলা-দোকলা (কখনো একা/কখনো দুজনে) – একি আর একলা-দোকলার কাজ?

একা দোকা ( নিঃসঙ্গ) – এত বড় বাড়িতে একটা মেয়ে একা দোকা হয়ে থাকতে পারবে?

এগুলে রাম পেছুলে রাবণ (উভয় সংকট) – প্রস্তাবে সমর্থন করলে সহকর্মীরা চটে যাবে, বিরোধিতা করলে উপরওয়ালা চটবে -এ তো দেখছি এগুলে রাম পেছুলে রাবণ।

এলেবেলে (বাজে, নিকৃষ্ট) – এলেবেলে খেলা দেখলে ভালো লাগে না।

এলোপাতাড়ি, এলোপাথাড়ি, এলোধাবাড়ি (এলোমেলোভাবে/বিশৃঙ্খলভাবে) – সাপ দেখেই তারা এলোপাথাড়ি দৌড় দিল।


ওজন বুজে চলা (আত্মমর্যাদা) – ইদানীং দিনকাল খারাপ, ওজন বুঝে চল, নইলে অপমানিত হবে।

ওষুধ করা (জাদু করা) – নিশ্চয় কেউ তাকে ওষুধ করেছে। নইলে তার মুখে রা নেই কেন?

ওষুধ ধরা (আকাঙ্ক্ষিত ফল লাভ) – বড় বাবুর তিরস্কারে আবুল পড়াশুনায় মন দিয়েছে। ওষুধ ধরেছে নিশ্চয়।

ওষুধ পড়া (প্রভাবে পড়া) – এবারে ওষুধ পড়েছে, পড়াশুনা করছে।

ওতপাতা (শিকারের অপেক্ষায় থাকা) – বিড়ালটা তখন থেকে মাছের জন্য ওত পেতে রয়েছে।

ওলা-ওঠা (কলেরা রোগ) – প্রতি গ্রীষ্মে গ্রামের অনেক লোক ওলা-ওঠায় মারা যায়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post