রচনা : একটি গ্রাম্য বাজার

সূচনা : একটি গ্রাম্য বাজার গ্রামের একটি পরিচিত স্থান। এটি গ্রাম বাসীদের জন্য একটি সাধারণ স্থানও বটে। একটি তাদের জন্য একটি বাণিজ্যিক স্থান। এখানে গ্রাম বাসীরা তাদের মালামাল বেচা-কেনা করতে আসে।

প্রকারভেদ : গ্রাম্য বাজার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। একটিকে বলা হয় বাজার। এটি প্রত্যহ সকাল বেলায় বসে। অন্যটিকে বলা হয় হাট। এটি সাপ্তাহিক এক বা দুইদিন বসে। এক কথায় বলতে গেলে বাজার হচ্ছে দৈনন্দিন বাজার এবং হাট হচ্ছে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বসা বাজার।

গ্রাম্য বাজারের স্থান : সাধারণত গ্রাম্য বাজার খোলা মাঠে বসে। কখনো কখনো এটি নদীর তীরে কিংবা বড় কোনো গাছের নিচে বসে। বেশির ভাগ গ্রাম্য বাজার সরকারী জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়।

দোকান ঘরের প্রকারভেদ : একটি গ্রাম্য বাজারে দুই ধরনের দোকানঘর থাকে। কিছু কিছু দোকন ঘর স্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে উঠে। এ দোকান ঘরগুলো সারা বছর বাজারে থাকে। আর কতগুলো দোকান ঘর অস্থায়ী ভিত্তিতে বা ভাসমানভাবে গড়ে উঠে। এগুলো কখনো কখনো শুধু বাজারের দিনেই বসে। শাকসবজি, মাছ, মাংস, ফল সহ সকল কাঁচামাল অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হয়। মুদিমাল, তেল, লবণ, চিনি, চাল, ডাল, গম, ঘি, পোশাক-আশাক স্থায়ী প্রকৃতির দোকান ঘরে বিক্রি হয়।

গ্রাম্য বাজারের অসুবিধা : গ্রাম্য বাজারের কতগুলো অসুবিধা রয়েছে। এসব বাজারের মালামালের নির্দিষ্ট মূল্য থাকেনা। ফলে গ্রাম্য ভোক্তাদের অনিশ্চিত মূল্যের হাঁক ডাকে পড়ে যেতে হয়। এতে ভোক্তাগণ ঠকে যেতে পারে। সাধারণত এটি একটি অপরিষ্কার ও নোংরা স্থান হয়ে থাকে। এখানে কোনো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য পাবলিক ঝড়ুদার থাকে না। এটি কখনো কখনো মারামারি ও ঝগড়া বিবাদের কেন্দ্রে পরিণত হয়। বর্তমান সময়ে কখনো কখনো গ্রাম্য বাজার স্থানীয় অপরাধী ও সন্ত্রাসীর আড্ডাখানায় পরিণত হয়। এতে বাজারের দোকানদারগণ মাঝে মাঝে ভয়ে ভীত থাকে। এতে গ্রাম্য বাজারে কখনো কখনো আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। মানুষের নিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটে।

গ্রাম্য বাজারের সুবিধা : গ্রাম্য বাজারে কতগুলো অসুবিধা থাকার পরও প্রচুর সুবিধাও রয়েছে। এটি গ্রামবাসীদের জন্য এক প্রকারের আর্থিককেন্দ্র বটে। বর্তমান যুগে গ্রাম্য বাজারেও মোবাইল কম্পিউটারের দোকান এমনকি বড় বড় বাজার গুলোতে এক বা একাধিক ব্যাংকের শাখাও গড়ে উঠতে দেখা যায়। এমনকি নিরাপত্তার প্রশ্নে পুলিশ পাড়িও গড়ে উঠে। গ্রামের প্রবাসী মানুষজন এসব ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠিয়ে থাকে। এইসব ব্যাংকে গ্রামের মানুষও তাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক সঞ্চয় গড়ে তুলে। গ্রামের কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল ও শাক সবজি সহজভাবে বিক্রি করতে পারে এখানে। একটি গ্রাম্য বাজার গ্রামবাসিদের আয়-ব্যয়, লেনদেনের উৎস বটে। গ্রাম বাসীরা তাদের কাঁচামাল, উৎপাদনী পণ্য কিংবা হাতে তৈরি সামগ্রি বিক্রি করে। বর্তমান সময়ে গ্রামের মানুষ তাদের খামারে উৎপাদিত হাঁস-মুরগি, ডিম, দুধ বাজারে বিক্রি করে আত্মনির্ভরশীল হতে দেখা যায়। একটি গ্রাম্য বাজার গ্রাম বাসীদের সময়, টাকা এবং কাঁচামাল রক্ষায় সহায়তা করে থাকে। গ্রাম্য বাজার গ্রামীণ জনগণের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

উপসংহার : দেশের নব্বই ভাগ মানুষ গ্রামে বাস করে। বেশির ভাগ মানুষই কৃষক। সুতরাং একটি গ্রাম্য বাজার কৃষকের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ কৃষকেরা তাদের কৃষিজ পণ্যের মূল্য গ্রাম্য বাজার থেকেই লাভ করে। সুতরাং বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে গ্রামের মানুষ গ্রাম্য বাজারের চলমান অর্থনীতির উপরেই নির্ভর করে থাকে।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post