রচনা : অধ্যবসায় (২টি রচনা) - PDF

↬ ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব

↬ ছাত্রজীবন ও অধ্যবসায়


রচনা : অধ্যবসায় (৩০+ পয়েন্ট) - PDF


ভূমিকা :
                                                                       - কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার

সময়ের সাথে জীবন, জীবনের সাথে কর্ম ও অধ্যবসায়- একই বিনিসুতোর মালায় গাঁথা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি কল্পনা করা যায় না। এ পৃথিবীতে যে-কোনো কাজ করতে গেলেই সফলতা ও নিষ্ফলতা উভয় প্রকার ঘটনাই ঘটে থাকে। অধ্যবসয় সফলতার চাবিকাঠি। অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে উন্নতির আশা কল্পনা মাত্র।

অধ্যবসায় কী ও বৈশিষ্ট্য : মানুষ জীবনকে সাজাতে চায়, সফল করতে চায় কিন্তু জীবনের পথ খুব সহজ নয়। জীবনের সব কাজই সহজে সমাধা হয় না। অনেক কাজেই প্রথমবারে সফলতা আসে না। এমনকী পরের বারও তার সফলতা নাও আসতে পারে। কিন্তু এতে হতাশ হলে চলবে না। বার বার চেষ্টা করতে হয়। তাতে এক সময় না একসময় সাফল্য আসবে। সাফল্য লাভের এই প্রয়াসই অধ্যবসায়। এই ধারণাকে কবি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রবাদতুল্য একটি কবিতায়:
‘পারিব না, পারিব না এ কথাটি বলিও না আর,
পারো কি না পারো করো যতন আবার।
একবার না পারিলে দেখ শতবার।’

কোনো কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় হচ্ছে কতিপয় গুণের সমষ্টি। চেষ্টা, উদ্যোগ, আন্তরিকতা, পরিশ্রম, ধৈর্য ইত্যাদি গুণের সমন্বয়ে অধ্যবসায় পরিপূর্ণতা লাভ করে। মনের আস্থা ও বিশ্বাসকে বাস্তব রূপদানের জন্যে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্য দিয়ে ঈস্পিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর মধ্যেই অধ্যবসায়ের সার্থকতা নিহিত। প্রসঙ্গত কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার বলেছেন-

অধ্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা : মানবসভ্যতার মূলে রয়েছে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা। মানবজীবনের যে-কোনো কাজে বাধা আসতে পারে, কিন্তু সে-বাধাকে ভয় করলে চলবে না, কেননা ‘জীবনের সমস্যাকে এড়িয়ে যাবার অর্থ হচ্ছে, জীবনকে অস্বীকার করা’ (-জন লিলি)। রাতের আঁধার পেরিয়ে যেমন দিনের আলো এসে দেখা দেয়, ঠিক তেমনি বার বার অবিরাম চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে উদিত হয় সাফল্যের শুকতারা।

অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড় হয়, অসাধ্য সাধন করতে পারে। সকল ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিশ্বাস, মেধা, সুযোগ কোনো কিছুই চূড়ান্ত সার্থকতা এনে দিতে পারে না যদি না তাদের যথার্থ প্রয়োগে অধ্যবসায়কেই মুখ্য করে তোলা হয়। একমাত্র অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই এসব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভবপর। নিজেকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে এবং দেশ, জাতি ও বৃহত্তর মানবসমাজের জন্যে তাকে কিছু-না-কিছু অবদান রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।

যে অধ্যবসায়ী নয় মনের দিক থেকে সে পঙ্গু। ফলে সমাজে তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়। বস্তুত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিরাশা বা ব্যর্থতাকে জয় করার প্রধান উপায় হচ্ছে অধ্যবসায়। ইংরেজিতে একটা কথা আছে....

“Failure is the pillar of success”

অধ্যবসায়ের উদাহরণ : জগতে যত বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক রয়েছেন, তাঁদের সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে তার দৃষ্টান্ত।

মহাকবি ফেরদৌসি দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে রচনা করেছিলেন অমর মহাকাব্য ‘শাহনামা’। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দশ বিশ বছরের একক প্রচেষ্টায় রচনা করেন পঞ্চাশ হাজারের বেশি শব্দ সংবলিত বাঙলা ভাষার অভিধান। আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নিজের চেষ্টা ও সাধনায় দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে সংগ্রহ করেছিলেন দু’হাজার প্রাচীন পুঁথি, যার ফলে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রায় চার’শ বছরের ইতিহাসের অজানা অধ্যায় উদ্ঘাটিত হয়।

১৭৫৫ খ্রিস্টাব্দে বেরোয় জনসনের বিখ্যাত অভিধান ‘এ ডিকশনারি অফ দি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ’ যাকে ইংরেজ জাতি গ্রহণ করে এক মহৎ কীর্তিরূপে : ফরাসিরা যা সম্পন্ন করেছে একাডেমির সাহায্যে ইংরেজ তা করেছে এক ব্যক্তির শ্রমে-মেধায়, এ-তৃপ্তি পাওয়ার সাথে সাথে ভাষার মানরূপ শনাক্তির জন্যে একাডেমি প্রতিষ্ঠার সমস্ত স্বপ্ন ত্যাগ করে ইংরেজ। মনীষী কার্লাইল অনেক বছরের শ্রমে ফরাসি বিপ্লবের এক অসামান্য ইতিহাস লিখেছিলেন। এ-সবই অধ্যবসায়ের ফসল।

স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস অধ্যবসায়ের আর এক জীবন্ত উদাহরণ। অগণিত ইংরেজ সৈন্যের সাথে পুনঃপুন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পলায়ন করতে বাধ্য হয়েও রবার্ট ব্রুস ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করার বাসনা ও চেষ্টা পরিত্যাগ করেন নি। বরং একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ের ফলে তিনি যুদ্ধে জয়ী হন। এমনিভাবে স্যার ওয়াল্টর স্কট প্রমুখ ব্যক্তিগণও বার বার ব্যর্থ হয়েও অধ্যবসায়ের দ্বারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। মহাবিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন নিজেই স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্ন শ্রম। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন,
“Impossible is a word, which is only found in the dictionary of fools.”

অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ : জীবনসংগ্রামে সাফল্য লাভের মূলমন্ত্র হচ্ছে অধ্যবসায়। অর্ধ পৃথিবীর অধীশ্বর নেপোলিয়ন তাঁর জীবনকর্মের মধ্য দিয়ে রেখে গেছেন অধ্যবসায়ের অপূর্ব নিদর্শন। কোনো কাজকে তিনি অসম্ভব বলে মনে করতেন না। তাই তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হতে পেরেছিলেন। শুধু অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ মনীষীগণ বিশ্বখ্যাত হয়েছেন।

পক্ষান্তরে, অধ্যবসায়ের অভবে অনেক সম্ভাবনাময় জীবনও অকালে ঝরে যায়। অধ্যবসায়হীন ব্যক্তি জগতের কোনো কাজেই সফলতা লাভ করতে পারে না। তার জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অধ্যবসায়ীকে কখনোই অসহিষ্ণু হলে চলবে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতাকে অর্জন করা যেমন সম্ভব তেমনি যোগ্যতার বলে অনেক প্রতিকূলতা কাটিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়াও বিচিত্র নয়। এক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে জরুরি তা হচ্ছে নিজের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা। তাই অধ্যবসায়ী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে কবি বলেছেন-
‘ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো! বাঁধো বাঁধো বুক,
শত দিকে শত দুঃখ আসুক আসুক।’

ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : বিধাতা প্রত্যেক মানুষকেই প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রতিভাকে বিকশিত করার বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন। মানবজীবনের এই সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করতে হলে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। অনেকের ধারণা- অসাধারণ প্রতিভা ছাড়া কোনো বড় কাজে সফলতা সম্ভব নয়। কিন্তু অসাধারণ প্রতিভা ছাড়াও নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের দ্বারা যে কোনো কাজে জয়যুক্ত হওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে বৈজ্ঞানিক নিউটন বলেছেন-
‘আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে দুরূহ তত্ত্বগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি।’

ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন-
‘প্রতিভা বলে কিছুই নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে’।

নিউটন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,
‘লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না’

তাই প্রতিভা লাভ করতে হলে অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন, এবং প্রতিভাকে অধ্যবসায়ের গুণে কাজে লাগাতে হবে, অন্যথায় সে-প্রতিভা কোনো কাজে আসবে না।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। ছাত্রজীবন আর অধ্যবসায় মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। বিদ্যার্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রী কখনও বিদ্যালাভে সফলতা অর্জন করতে পারে না। একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রী অল্প মেধাসম্পন্ন হলেও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা কঠিন নয়। কাজেই অকৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে অধ্যবসায়ে মনোনিবেশ করা উচিত। এ প্রসঙ্গে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ বলেছেন,
‘কোন কাজ ধরে যে উত্তম সেই জন
হউক সহস্র বিঘ্ন ছাড়ে না কখন।’
শুধু অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : মানুষ বিদ্যুৎ আবিষ্কার করে দূর করেছে আঁধার, বিমান আবিষ্কার করে জয় করেছে আকাশ, রকেটের সাহায্যে অর্জন করছে চন্দ্র বিজয়ের গৌরব। আর এসব সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে মানুষের যুগ যুগান্তরের সাধনা, তাঁর অবিরাম অধ্যবসায়। বর্তমান সভ্যতার যুগে মানুষ নিজ নিজ কৃষ্টি ও সভ্যতা অর্জন করতে চায়, পৌঁছতে চায় সভ্যতার চরম শিখরে। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় তা সহজে হয়ে ওঠে না। কোনো সভ্যতাই একদিনে গড়ে ওঠে নি।

বার বার চেষ্টা ও সাধনার দ্বারা পূর্ণতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সৃষ্টির প্রথম মানবগোষ্ঠীর সভ্যতাও স্তরে স্তরে গড়ে উঠেছে। বস্তুত সামগ্রিকভাবে একটি জাতির সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য সকল নাগরিককেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। পৃথিবীর বুকে তখনই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ সম্ভব যখন জাতীয় উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে সবাই সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করবে। তাই জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

অধ্যবসায় ও উন্নত বিশ্ব : উন্নত বিশ্ব আজ অধ্যবসায়ের বলে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছেছে। জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা কেবলমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই উন্নতির শীর্ষস্থান করছে।

অধ্যবসায় ও বাঙালি জাতি : আমরা বাঙালি জাতি। দুঃখজনক হলেও এ কথা সত্য যে, আমাদের অনেকের মধ্যে অধ্যবসায়ের মহৎ গুণটি অনুপস্থিত। আমাদের মধ্যে নেই কোনো প্রচেষ্টা, নেই কোনো উদ্যম, কোনো আগ্রহ। বরং আছে আস্ফালন, হুঙ্কার, গরিমা ও নিজেকে প্রকাশ করার মিথ্যে বাহাদুরী। কেবলমাত্র অধ্যবসায়ের অভাবে আজ আমরা এত পিছিয়ে আছি। জাতি হিসেবে আমরা তাই অনুন্নত। সতরাং আর একটি মুহূর্তও বিলম্ব না করে নিজেদেরকে অধ্যবসায়ী রূপে গড়ে তোলা খুবই জরুরি।

উপসংহার :
-অধ্যবসায় সম্পর্কিত একটি পরম সত্য প্রবাদ। যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয়, সে জীবনের কোনো সাধারণ কাজেও সফলতা লাভ করতে পারে না। জীবনের সফলতা এবং বিফলতা অধ্যবসায়ের ওপরই নির্ভর করে, তাই আমাদের সকলের উচিত অধ্যবসায়ের মতো মহৎ গুণটিকে আয়ত্ত করা, পরশপাথরের মতো এই পাথরটিকে ছুঁয়ে দেখা এবং সোনার কাঠির মতো একে অর্জন করা। মনে রাখতে হবে অধ্যবসায়ই জীবন, জীবনই অধ্যবসায়।


[ একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]


ভূমিকা : সাধনা আর পরিশ্রম ছাড়া কখনোই ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। আর এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে নিরন্তর নিরবচ্ছিন প্রচেষ্টারই অন্য নাম অধ্যবসায়। সংকল্পে অটল থেকে, সব বাধার সাথে লড়াই করে, কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্য দিয়ে সাফল্য লাভ করা- চরিত্রের এই গুণটিই অধ্যবসায়। পাশাপাশি উদ্যম, উদ্যোগ, নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা আর আন্তরিকতা অধ্যবসায়কে পরিপূর্ণতা দেয়।

অধ্যবসায়ের প্রাচীন ও বর্তমান রূপ : মানব সভ্যতার মূলে রয়েছে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা। প্রকৃতির কোলে যে মানুষের আবির্ভাব হয়েছিল অপরিচিত প্রতিকূল পরিবেশে নিতান্ত অসহায়ভাবে সেই মানুষই মাটিতে, পানিতে, আকাশে বিরুদ্ধ শক্তিকে মোকাবেলা করে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। নিজের চেষ্টাতেই অনাবাদী মাটি আবাদ করে ফলিয়েছে ফসল, আগুনের ব্যবহার শিখে তাকে নিজের ভৃত্যে পরিণত করেছে। প্রকৃতিকে জয় করতে গিয়ে সাগর ভরাট করে নগর গড়েছে, মরুভূমিকে করেছে মরূদ্যান। এভাবে আদিমগুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, শিল্পকলা- প্রতিটি শাখায় মানুষের এই যে অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যোগ আর নিরবিচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। জীবনের পথ পরিক্রমায় নানারকম সমস্যার মোকাবেলা করতে পারা যায় অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। সমাজ বদলের বা পরিবর্তনের জন্যে যেসব আন্দোলন হয়েছে তার পেছনে রয়েছে অধ্যবসায়। সকল ধর্মগ্রন্থে অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বিশ্বাস, মোধা, সুযোগ কোনো কিছুই চূড়ান্ত সার্থকতা এনে দিতে পারে না যদি না তাদের যথার্থ প্রয়োগে অধ্যবসায়কেই মুখ্য করে তোলা হয়।

ব্যক্তি জীবনে অধ্যবসায় : সংসারে প্রতিটি মানুষকে তার জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে অসংখ্য প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। নিজেকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে এবং দেশ, জাতি ও বৃহত্তর মানবসমাজের জন্যে তাকে কিছু-না-কিছু অবদান রাখতে হয়। এ ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। একমাত্র অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। অধ্যবসায়ী ব্যক্তিই মানব জাতির জন্যে কোনো-না-কোনো ভাবে অবদান রাখতে পারে। অ্যবসায়ী যে নয়, মনের দিক থেকে সে পঙ্গু। সকল বাধাবিঘ্ন, ব্যর্থতাকে উপেক্ষা করে দৃঢ় মনোবল ও উদ্যম নিয়ে যে অগ্রসর হতে পারে না, তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়।

অনেকে প্রতিভাকে সফলতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ভুল করে। কোনো প্রতিভাবান ব্যক্তি প্রতিভা নিয়ে চুপচাপ বসে থাকলে কখনেই পরিচিতি পাবে না। আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমেই ব্যক্তি প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্যে তাই প্রয়োজন অধ্যবসায়ের। অধ্যবসায়ী মানুষ আত্মবিশ্বাসী হয়। আর আত্মবিশ্বসী ব্যক্তির স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে সৎ ও মহিমান্বিত।

ছাত্রজীবনে অধ্যবসায় : অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সর্বক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধ্যয়ন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে একটি আত্মিক মিল রয়েছে। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে নৈরাজ্য আর নিরাশার মধ্যেও আশার আলো জ্বলবেই। আর অধ্যবসায়ের সাথে যদি মেধার যোগ ঘটে তবে তো কথাই নেই। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী শুধু মাত্র অলসতা আর অমনোযোগিতার জন্যে জীবনে সফলতা পায় না। মেধার চরম অবমাননা ঘটে। ব্যক্তিজীবনে তো বটেই, দেশ ও জাতির জন্যেও এ কম ক্ষতি নয়।

ইতিহাসে অধ্যবসায়ীরা : জগতে যাঁরা মানবজাতির জন্যে মহৎ অবদান রেখে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা কুড়িয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে তার দৃষ্টান্ত। কী অসাধ্যই না সাধন করেছেন তাঁরা। মহাকবি ফিরদৌসি দীর্ঘ তিরিশ বছর ধরে রচনা করেছেন অমর মহাকব্য ‘শাহনামা’। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দশ বিশ বছরের একক প্রচেষ্টায় রচনা করেন পঞ্চাশ হাজারের বেশি শব্দ সংবলিত বাংলা ভাষার অভিধান।

কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই পুরোপুরি নিজের চেষ্টায় ও সাধনায় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে প্রায় দু’হাজার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেন খ্যাতনামা সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। এর ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রায় চারশ বছরের ইতিহাসের অজানা অধ্যায় উদ্ঘাটিত হয়। কবি ভার্জিল ‘ইনিড’ মহাকাব্য রচনা করেন এগারো বছর ধরে।

ইংরেজ প্রাবন্ধিক, ঐতিহাসিক ও দার্শনিক টমাস কার্লাইল ৩৯ বছর বয়সে একনিষ্ঠ শ্রমে রচনা করেছিলেন ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস। গ্রন্থের প্রথম খণ্ডটি লেখা শেষ হলে প্রকাশকের নির্দেশে সেটি তিনি পড়তে দেন জন স্টুয়ার্ট মিলকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য কার্লাইলের। মিলের এক পরিচারিকার কাণ্ডজ্ঞানহীনতায় প্রথম খণ্ডের সমগ্র পাণ্ডুলিপি আগুনে পুড়ে যায়। কিন্তু তাতে দমে যান নি অধ্যবসায়ী কার্লাইল।

আবার নতুন করে তৈরি করেন পুরো পাণ্ডুলিপি। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েও হাল ছাড়েন নি। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছিলেন। নিউটন নিজেই স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানে তাঁর অবনদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম। কথিত আছে, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলতেন, তাাঁর অভিধানে ‘অসম্ভব’ শব্দটির স্থান নেই।

তাই জীবনে সফলতার জন্যে অধ্যবসায় নিঃসন্দেহে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর অধ্যবসায়ী হতে হলে অসহিষ্ণু হলে চলবে না। অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতাকে অর্জন করা যেমন সম্ভব তেমনি যোগ্যতার বলে অনেক প্রতিকুলতা কাটিয়ে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যাওয়াও বিচিত্র নয়। এক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে জরুরি তা হলো নিজের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা। চারিত্রিক দৃঢ়তা অধ্যবসায়ী ব্যক্তিকে যে কোনো কাজে অকে বেশি আগ্রহী করে তোলে। এতে মানবীয় সৎ গুণাবলি বিকাশের পথ প্রশস্ত হয়।

জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্বের কথা না বললেই নয়। সামগ্রিকভাবে একটি জাতির সগৌরব প্রতিষ্ঠার জন্যে সকল নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। পৃথিবরি বুকে তখনই মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব যখন জাতীয় উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে সবাই সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করবে। আবার ব্যক্তিজবিনের অধ্যবসায়ের প্রভাব জাতীয় জীবনেও পড়ে। তাই জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অধ্যবসায়ী ব্যক্তির ‍গুরুত্ব অনেকখানি। নিজর বলিষ্ঠ সাধনাই অধ্যবসায়ী ব্যক্তিকে সাফল্যের পথ দেখায়। অধ্যবসায়ের ফলে অনেক প্রতিকূলতা কেটে যায়, জীবনের পথ হয়ে ওঠে মসৃণ।

উপসংহার : জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে গৌরবান্বিত করার জন্যে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যে পৌঁছানোর দুরন্ত প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে বলেই কোনো পিছুটান, নিন্দা কিংবা অন্য কিছু দ্বারা প্রভবিত হয় না অধ্যবসায়ী ব্যক্তি। মনে রাখতে হবে, ব্যর্থতাই জীবনে সাফল্যের সোপান। সকল প্রতিকূলতা ও ব্যর্থতার মধ্যেও আশার আলো খুঁজে পাওয়া যাবে, যদি থাকে দৃঢ় মনোবল ও উদ্যম। এই মনোবল আর উদ্যম মানুষকে অধ্যবসায়ী করে তোলে। আর অধ্যবসাযী মানুষই একসময়-না-একসময় সাফল্য ছিনিয়ে আনে। মানুষের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব তাই অপরিসীম। প্রতিটি মানুষের উচিত এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া। আর তাহলেই কী ব্যক্তিগত জীবনে, কী জাতীয় জীবনে, কী বিশ্বসভায় মানুষ আরও বেশি অবদান রাখতে পারবে।



50 Comments

  1. ভাল বলা যায় না,,,

    ReplyDelete
    Replies
    1. First one is better than second one...

      Delete
    2. First one is better than second one

      Delete
    3. Thank you it is helping me a lot. to be honest ami JSC r student but till it is so much good

      Delete
    4. 1st one is very good.But it should be more points like 19-20.

      Delete
    5. "লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না "
      এইটা নিউটন বলেছে. Dalton না🙄

      Delete
    6. ধন্যবাদ, ঠিক করে দিয়েছি।

      Delete
    7. But apni rocona 20 ba 25 ta poyent daoyar try korben.sob rocona.amra always pnar roxona follow korbo.

      Delete
  2. tnx for your help..onek help holo amar

    ReplyDelete
  3. Enter your comment...খুব সুবিধা হয়েছে আজকে নকল করতে পেরেছি

    ReplyDelete
  4. প্যারা আরও অনেক বাড়ানো উচিৎ।

    ReplyDelete
  5. Atto sundor akta composition!!!
    Ami jerokom point a ja cheyechilam tai peye giye chi...
    Tnq ,tnq.... Very very tnq....

    ReplyDelete
  6. I want a copy of this rachana for my son . But this rachana is great for students.

    ReplyDelete
  7. Not good good writting at all. But it's good for the students.

    ReplyDelete
  8. I think is big.we are student of class ten.we need small one.

    ReplyDelete
  9. 1st ta beshi valo.... onek upokar holo.... aro quote chai....

    ReplyDelete
  10. Important rochona.Tai valo laglo

    ReplyDelete
  11. Thanks For Your Help Thank You Google We Love You

    ReplyDelete
  12. আমি ক্লাস এইট এর ছাত্রি। রচনাটা আমার খুব কাজে লেগেছে। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  13. পয়েন্ট একটু বাড়িয়ে দিলে বেশি ভাল হত

    ReplyDelete
  14. Aro koman mia etto pressure er jonno boi chaira net e ashlam..sob jaygyay Dekhi eki situation..:(

    ReplyDelete
  15. Onk point ache 1st roconay....wow....😍😍😍😍

    ReplyDelete
  16. খুবই ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  17. রচনাটা দেয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  18. আপনারা এগুলো কোন বই থেকে সংগ্রহ করেছেন ‌।

    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 😘😘😘

    ReplyDelete
  19. In your first composition narratess nice.where you from the nice okti.

    Thank you very much.

    ReplyDelete
  20. চরম........only for your অধ্যবসায়

    ReplyDelete
  21. hey..thanks..it's really great ..and to be honest I'm a student of class eight..it will help me...but it would be beyter if there would more quotes and steps ..thank u guyz:)

    ReplyDelete
  22. আপনাকে ধন্যবাদ।এই রচনাটি দেওয়ার জন্নে

    ReplyDelete
  23. স্যারএর মাইর থেকা বাচ্চি। এতার জন্য। ধন্যবা।

    ReplyDelete
  24. It is very nice to read and it is big.So I like it.

    ReplyDelete
  25. Vai apnar rochona gulo onek sundur hoi. Iam always with.

    ReplyDelete
  26. something is special. Good luck.

    ReplyDelete
  27. It's very very helpful for me... Thanks for awesome...
    COMPOSITION...

    ReplyDelete
  28. অনেক সুন্দর হয়েছে।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ👏👏👏

    ReplyDelete
  29. Abe copy paste Kira Jay na ken??

    ReplyDelete
  30. bhai ektu amar chelebela rochona ta jodi deten'

    ReplyDelete
  31. THX FOR THE THING.I PASSED ANNUL EXAM BECAUSE OF YOU GUYS.THX MY ALL GARBAGE TEAM FOR THE HELP

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post