ভাবসম্প্রসারণ : মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন

মূলভাব : যে কোনো কাজের সাফল্যের জন্যে একেবারে উঠেপড়ে লাগতে হয়, অন্যথা সাফল্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। যারা জান-প্রাণ বাজি রেখে কর্মে প্রবৃত্ত হয়, সাফল্য কেবল তাদের হাতে ধরা দেয়।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীর খুব কম কাজেই সহজ-সাফল্য আসে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একনিষ্ঠ চেষ্টা-সাধনার দ্বারা সাফল্যকে অর্জন করে নিতে হয়। এছাড়া যে কোনো কাজের পেছনেই নানা বাধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা থাকে। আবার মানুষের জীবনও পুষ্পশয্যা নয়। এখানে রয়েছে নানা প্রাকৃতিক, মনুষ্যসৃষ্ট ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঝঞ্ঝাট। মানুষকে এসব ঝঞ্ঝাট মোকাবেলা করেই জীবনে টিকে থাকতে হয়। আবার যে কোনো কাজের সাফল্যলাভ এবং ভালো কিছু অর্জনের জন্যে মানুষকে এসব ঝঞ্ঝাট ও বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করতে হয়। কিন্তু জীবনের এসব প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করা ততো সহজ নয়। এজন্যে প্রয়োজন দৃঢ় প্রত্যয়, সাহস, ধৈর্য আর অক্লান্ত পরিশ্রম। এককথায় ‘Do or die.’ -এ নীতিতে বিশ্বাস রেখে জীবন চলার পথে অগ্রসর হতে হবে। যারা তা পারে তারাই জীবনে সফলতার দেখা পায়। আর যারা তা পারে না, যারা একটুতেই মুচড়ে পড়ে তাদের জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। প্রাণিজগতে পিঁপড়া, মাকড়সা প্রভৃতি প্রাণী সামান্য ক্ষুদ্রাকৃতির প্রাণী হয়েও নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে পৃথিবীর বুকে সগর্বে টিকে আছে। শুধু তাই নয়; তাদের এই ‘Do or die.’ নীতি মানুষের অনুকরণীয় আদর্শও বটে। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস ছয়বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সামান্য মাকড়সার জালবুনার সাধনকর্ম দেখে অনুপ্রাণিত হন এবং নতুন উদ্যমে যুদ্ধ শুরু করেন। শেষপর্যন্ত সপ্তমবারে তিনি রাজা এডওয়ার্ডকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন। দিগ্বিজয়ী সম্রাজ নেপোলিয়ন সাধারণ ঘরে জন্ম নিয়েও কেবল আত্মপ্রত্যয় আর প্রচেষ্টার কারণে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

মন্তব্য : পৃথিবীতে যুগে যুগে, দেশে দেশে আত্মপ্রত্যয়ী, সচেষ্ট ও পরিশ্রমী মানুষেরই জয় হয়েছে। তাই দোদুল্যমানতা, ভয়, উদ্বেগ প্রভৃতিকে পরিহার করে শক্তি, সাহস আর আত্মপ্রত্যয় নিয়ে আমাদের সম্মুখে অগ্রসর হতে হবে।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : জীবনের লক্ষ্য অর্জনে নিজেকে উৎসর্গ করেই মানুষ সার্থকতা লাভ করে।

সম্প্রসারিত ভাব : জীবনের লক্ষ্য। আদর্শ অর্জনই মানুষের প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত। মহৎ লক্ষ্যের দিকে জীবনের যাত্রা এবং লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে সাধনার সফলতা। সফলতা অর্জনই মানব জীবনের প্রধান কাজ এবং এর জন্য মানুষকে জীবন পণ করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের একটা বিশেষ আদর্শ থাকে। সে আদর্শ সামনে রেখে জীবন পরিচালিত হয়, জীবনের সাধনায় অগ্রগতি সাধিত হয়। লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন নৌকার মত অবশ্যই বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত হতে বাধ্য। জীবনের সুস্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারিত করে সে লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য সব সময় চেষ্টা চালাতে হবে। এ চেষ্টায় যদি সাফল্য আসে তাহলে জীবনের সার্থকতা প্রমাণিত হবে। লক্ষ্যহীন জীবন মানেই অর্থহীন। সে জীবন কখনই মর্যাদার অধিকারী হতে পারে না। তাই উদ্যোগী লোকের প্রধান কর্তব্যই হলো জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সাধনা করা। সে সাধনার মাধ্যমে আদর্শ বা লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। এর জন্য দরকার নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর উদ্যোগ। জীবনকে উৎসর্গ করতে হবে। জীবনপণ করে লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে। দৃঢ় মনোবল থাকলেই সাধনায় সাফল্য আসতে পারে। জীবনকে মহৎ আদর্শে মর্যাদাপূর্ণ করে তুলতে হবে এবং এর জন্য দরকার জীবনপণ সাধনা। জীবনের এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সার্থকতা নিহিত। 

মন্তব্য : জীবন বাজি রেখে কোনো কাজে অবতীর্ণ হলে সফলতা আসবেই। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে এ ধরনের সফলতার অজস্র নজির বিশ্বের ইতিহাসে রয়েছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post