HSC 2021 : সমাজ বিজ্ঞান : অ্যাসাইনমেন্ট

দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
সমাজ বিজ্ঞান (২য় পত্র)
৩য় সপ্তাহ

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চা, প্রয়োজনীয়তা ও বিকাশধারা।

নমুনা সমাধান

(ক) বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি : মানব সমাজকে বুঝতে হলে এবং সমাজ কাঠামো অনুধাবন করতে হলে সমাজবিজ্ঞান চর্চার বিকল্প নেই। সমাজ কাঠামো, সামাজিক পরিবর্তনের গতিধারা, সামাজিক পরিবর্তনের কারণ, সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়াদি, পরিবার, রাষ্ট্র, সম্পত্তি, সামাজিক শ্রেণি, ধর্ম-বর্ণ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা এবং বিশ্লেষণে সমাজবিজ্ঞান চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা এবং এর গতি প্রকৃতি সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়নের পটভূমি তৈরি করেছে। বাংলাদেশের মানুষের সংস্কৃতি, সংস্কৃতির পরিবর্তন, সামাজিক পরিবর্তন, রাজনীতির দর্শন, ঐতিহাসিক দর্শন ইত্যাদি বিষয় সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে।

খ্রিস্টের জন্মের পূর্ব থেকেই সমাজবিজ্ঞান চর্চার প্রমাণ ভারতীয় উপমহাদেশে রয়েছে। ভারতীয় দার্শনিক কৌটিল্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০-২৭৫ অব্দ) গভীরভাবে সমাজ কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি তাঁর 'অর্থশাস্ত্র' গ্রন্থে তৎকালীন ভারতের আইন, রাষ্ট্র, রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজনীতি ও ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়সমূহ আলোচনা করেন। গ্রিক পণ্ডিত প্লেটো (খ্রিস্টপূর্ব ৪২৭-৩৪৭ অব্দ), এরিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ) প্রমুখের সমাজচিন্তা সমাজবিজ্ঞান উদ্ভবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।মধ্যযুগের বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন সমাজচিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। অনেকের মতে তিনিই সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃত জনক। কিন্তু ফরাসি সমাজচিন্তাবিদ অগাস্ট কোঁতকে সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। যেহেতু ১৮৩৯ সালে তিনিই প্রথম সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করেন। কার্ল মার্কস উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনের আলোকে সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের বিষয়ে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস পেয়েছেন। তিনি তাঁর আলোচনায় নির্দিষ্ট একটি উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত একটি সমাজব্যবস্থাকে চিহ্নিত করেছেন।সমাজ বিকাশের ধারায় তাঁর উৎপাদন ব্যবস্থা বিষয়ক আলোচ্য স্তরগুলো হলো, আদিম সাম্যবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (Primitive Communal Mode of Production); দাস উৎপাদন পদ্ধতি (The Slave Mode of Production); সামন্তবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (The Feudal Mode of Production); পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (The Capitalist Mode of Production), সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতি (The Socialistic Mode of Production) এবং সাম্যবাদী উৎপাদন পদ্ধতি (The Communist Mode of Production)। কার্ল মার্কসের উৎপাদন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হলো এশিয় উৎপাদন ব্যবস্থা (Asian Mode of Production)। এশিয় উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য অন্যান্য উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য থেকে আলাদা।

এটি মূলত এমন একটি উৎপাদন ব্যবস্থা যা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই লক্ষ্য করা গিয়েছিল। এ উৎপাদন ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য ছিলো স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সম্প্রদায় বা Self Sufficient,Village Community. যুগে যুগে অনেক পর্যটক, পরিব্রাজক, যোদ্ধা, ধর্ম প্রচারক এই বঙ্গভূমিতে এসেছেন। যেমন- হিউয়েন,সাং, আবুল ফজল, আলবেরুনি, ইবনে বতুতা প্রমুখ। তাঁদের লেখায় তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা পাওয়া যায়।এদেশের অর্থনীতি, সমাজনীতি, কৃষি, শিল্প, সমাজের বৈচিত্র্য,সমাজ কাঠামো, পরিবার, বিবাহ, জ্ঞাতি সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তাঁরা বর্ণনা করেছেন।

তবে তাঁদের আলোচনায় সামাজিক প্রেক্ষাপট, সমাজকাঠামো, সামাজিক স্তরবিন্যাস, শ্রেণি কাঠামো ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় নি, যা সমাজবিজ্ঞান চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ইংরেজদের হাতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পর ব্রিটিশ কোম্পানির শাসন ও ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি, সমাজকাঠামো ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চায় নতুন ধ্যান ধারণার তৈরি হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৬ সালে সমাজবিজ্ঞান একটি আলাদা বিষয় হিসেবে পঠন-পাঠন শুরু হয়।

১৯৪৭ এর দেশভাগ, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ সমাজবিজ্ঞান চর্চার আলাদা পটভূমি তৈরি করে। উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি খুব বেশি দিন আগে তৈরি হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন এদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চার পটভূমি তৈরি করেছে।

(খ) বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা : সামাজিক জীব হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করে। ফলে বাংলাদেশে এর পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশের মানুষ কীভাবে জীবন-যাপন করে, তাদের আচার আচরণ, রীতি-নীতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করার প্রয়োজন রয়েছে। সামাজিক উন্নয়ন, সমাজ সংস্কারমূলক কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

(১) বাংলাদেশের সমাজের শ্রেণি কাঠামো সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশে বিভিন্ন শ্রেণি এবং পেশার মানুষ বাস করে।এছাড়াও বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাসও এ অঞ্চলে রয়েছে। তাই এসব মানুষের শ্রেণি, তাদের পেশা, বৃত্তি, জীবন ধারণের উপায় ইতাদি বিষয়ে জানার জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

(২) বাংলাদেশের সমাজ সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশের সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের সমাজ কোন ধরনের, বাংলাদেশের সমাজের ক্রমবিকাশ, বাংলাদেশের সমাজের বিবর্তন ধারা, বাংলাদেশের সমাজের ধরণ, সমাজ পরিবর্তনের ধারা, গ্রামীণ এবং শহুরে সমাজ, সমাজে কাঠামো, বাংলাদেশের সামাজিক স্তরবিন্যাস, বর্ণপ্রথা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞান লাভের জন্য সমাজবিজ্ঞান পাঠ আবশ্যক।

(৩) বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশের মানুষের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালী, মানুষের সংস্কৃতি, চিন্তা চেতনা, অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান, ধর্ম, আচার আচরণ, রীতিনীতি, পরিবর্তনশীল আচার আচরণ এবং রীতিনীতি ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠ আবশ্যক।

(৪) বাংলাদেশের সমাজের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে জানা : বাংলাদেশের সমাজের গতি-প্রকৃতি এবং গতিধারা সম্পর্কে জানতে, বাংলাদেশের সমাজের অতীত অবস্থান, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে সমাজবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব রয়েছে।

(৫) সামাজিক সম্পর্ক সম্বন্ধে জানা : বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক সম্পর্ক, সম্পর্কের ধরন, পুঁজিপতি এবং পুঁজিহীনের সম্পর্ক সম্বন্ধে জানতে হলে, সামাজিক সম্পর্কের প্রভাব সম্পর্কে এবং গতি প্রকৃতি জানতে বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। 

(৬) বাংলাদেশের সমাজের উন্নতি বিধান : সীমিত সম্পদ দিয়ে অসীম চাহিদা পূরণ করে কিভাবে সামাজিক উন্নতি সাধন করা যায়, সমাজবিজ্ঞান সে সম্পর্কে জ্ঞান দান করে থাকে। তাই সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন ব্যতীত বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা, ভোগ প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা কখনও সম্ভব নয়।

(৭) সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা : বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে হলে সেগুলো কিভাবে পরিচালিত হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ আবশ্যক। সমাজবিজ্ঞান পাঠের মধ্য দিয়েই সমাজকে সবচেয়ে ভালোভাবে জানা সম্ভব।

(৮) বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে জানা : অধিক জনসংখ্যা, ছোট্ট সীমানা, অসীম চাহিদা, সীমিত যোগান, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয় বাংলােদশের প্রধানতম আলোচনার বিষয়। সমাজবিজ্ঞান পাঠ করলে এসব সামাজিক সমস্যাবলী চিহ্নিত করার সুযোগ হয়। তাই বাংলাদেশের যেকোনো সামাজিক সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করতে হলে এবং এগুলোর সমাধানের পথ বের করতে হলে সমাজবিজ্ঞান পাঠ অত্যাবশ্যক।

(গ) বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের বিকাশধারা : সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞান শাস্ত্রটির বিকাশ শুরু হয় ফরাসী মনীষী অগাস্ট কোঁত-এর হাত ধরে। সেইন্ট সাইমন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ১৮৩৯ সালে তিনিই প্রথম 'Sociology শব্দটি ব্যবহার করেন। তবে তিনি প্রথমে একে Social physics বা সামাজিক পদার্থবিদ্যা বলে অভিহিত করেছিলেন। পরবর্তীতে বিষয়টিকে Sociology বা সমাজবিজ্ঞান নামে নামকরণ করেন। বাংলাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অংশ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান চর্চার প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সিলেবাসে “Elements of Sociology" ও "Principles of Sociology" নামে দুটি কোর্স চালু করা হয়।এ বিষয়গুলো পড়ানোর জন্য বিদেশের অনেক অতিথি অধ্যাপককে নিয়ে আসা হতো। অতপর ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আলাদা বিভাগ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান যাত্রা শুরু করে। ১৯৫৭-১৯৫৮ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি শুরু হয়। এর আগে ১৯৫০ সাল থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক এ.কে নাজমুল করিম এবং অধ্যাপক অজিত কুমার সেন সমাজবিজ্ঞানকে একটি আলাদা বিভাগ হিসেবে চালু করার বিষয়ে কাজ শুরু করেন। একই বছর ফরাসি অধ্যাপক লেভি স্ট্রস গবেষণার কাজে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে সমাজবিজ্ঞান আলোচনার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে পান। তিনি অধ্যাপক নাজমুল করিম এবং অজিত কুমার সেন এর সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

অধ্যাপক নাজমুল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠা করেন এবং তার হাত ধরেই সমাজবিজ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়। বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশে অধ্যাপক নাজমুল করিমের অনেকগুলো গ্রন্থ রয়েছে, তার মধ্যে “The Changing Society of India, Pakistan and Bangladesh” গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তাঁর প্রবন্ধসমূহে সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতি, উন্নয়নের লক্ষ্য ও সামাজিক স্তরবিন্যাস সম্পর্কে যে মতামত প্রকাশ করেন তা বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এছাড়াও দেশি বিদেশি বিভিন্ন সেমিনার এবং সিম্পোজিয়ামে অনেক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যা বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিকাশে গুরুত্ব বহন করে।

তাঁর এ প্রবন্ধগুলোর মধ্যে চেঞ্জিং প্যাটার্নস অব এন ইস্ট পাকিস্তান ফ্যামিলি, উইম্যান ইন দি নিউ এশিয়া, রিলিজিয়নস অ্যান্ড সোসাইটি ইন বাংলাদেশ, রিলিজিয়নস ইন অরিয়েন্টাল সোসাইটিজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা বিষয় হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের পঠন-পাঠন শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান ছাড়াও উচ্চতর গবেষণা হিসেবে এম.ফিল, পি-এইচ-ডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সমাজবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ডিগ্রি দেওয়া হয়।


প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
সমাজ বিজ্ঞান (১ম পত্র)
২য় সপ্তাহ

সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও পটভূমি ও ক্রমবিকাশ।

নমুনা সমাধান

(ক) সমাজবিজ্ঞান শব্দের উদ্ভব (Origin of the Word 'Sociology') : ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী অগাষ্ট কোঁৎ ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম Sociology শব্দটি উদ্ভাবন করেন Sociology শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Socius, যার অর্থ সমাজ ও গ্রীক শব্দ Logos, যার অর্থ বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান- এই দুই শব্দ থেকে উদ্ভূত। তাহলে শব্দগত অর্থে বলা যায় সমাজ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞান যে বিজ্ঞানের মূল বিবেচ্য বিষয় তাকেই বলা হয় সমাজবিজ্ঞান। Sociology-র বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানকে গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলা ভাষায় সমাজ সম্পর্কিত বিজ্ঞান ভিত্তিক আলােচনার সূত্রপাত করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিনয় কুমার সরকার। অধ্যাপক সরকারও Sociology-র বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে সমাজবিজ্ঞান ব্যবহার করেছেন। তবে Sociology-র বাংলা ‘সমাজতত্ত্ব’ ও ‘সমাজবিদ্যা’ও করা হয়েছে। কিন্তু আক্ষরিক দিক থেকে বিবেচনা করলে Sociology-র বাংলা ‘সমাজবিজ্ঞান’ -ই অধিকার গ্রহণযােগ্য। 

সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা (Preliminary Idea of Sociology): সমাজবিজ্ঞানে প্রধানত মানুষের দলগত আচরণ ও পারস্পরিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে পাঠ করা হয়। মানুষের সংঘবদ্ধ জীবন যাত্রার উদ্দেশ্য ও গতি-প্রকৃতি সম্বন্ধেও এক্ষেত্রে আলােচিত হয়। কিভাবে মানুষের সমাজে নানা ধরনের সংঘের (Association) বিকাশ ঘটেছে এবং কিভাবে এ সবের ভেতর পরিবর্তন এসেছে তাও সমাজবিজ্ঞানে আলােচিত হয়।

তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে, সামাজিক সংগঠন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এসবের ব্যাখ্যা করাই সমাজবিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য। অবশ্য মানুষের জীবন যাত্রার উন্নতি বিধান হল সমাজবিজ্ঞানের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সে কারণে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান লাভ করার উপর সমাজবিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করা হয়। কেননা সামাজিক সমস্যাকে সার্থকভাবে মােকাবিলা করতে হলে সমস্যা সম্পর্কে আগে ভালভাবে জানতে হবে।

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানীর দেওয়া সংজ্ঞা : মূলত সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজ এবং মানুষের সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ ও পর্যালােচনা। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমন- সমাজবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ওয়ার্ড সমাজবিজ্ঞানকে ‘সমাজের বিজ্ঞান’ বলে অভিহিত করেছেন। (Sociology is the Science of Society)

সামনার সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক প্রপঞ্চের বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করেছেন। 
“Sociology is the Science of social phenomena.”
সমাজবিজ্ঞানী ভুখীম বলেন যে, সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।
“Sociology is the Science of institution.”
সমাজবিজ্ঞানী কোভালেভস্কির মতে সমাজবিজ্ঞান হলাে সামাজিক সংগঠন এবং সমাজ পরিবর্তনের বিজ্ঞান।
“Sociology is the science of social organization and social change.” 

(খ) সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি : কোনাে বিষয় বা বস্তুর প্রকৃতি বলতে ওই বিষয় বা বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব বা পরিচয়কে বােঝায়। অতএব সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি বলতে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের বৈশিষ্ট্য বা পরিচয়কে বােঝায়। সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, স্বভাব নিচে আলােচনা করা হলাে।

১. বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনা ও বিশ্লেষণ : সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি তথা এর উদ্দেশ্য হলাে সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কেও বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনা ও বিশ্লেষণ করা।

২. সমাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে অধ্যয়ন করে : রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতি সে ক্ষেত্রে সমাজের এক একটা দিক সম্পর্কে পাঠ করে সে ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান গােটা সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ প্রদান করে।

৩. সমাজের গঠনপ্রকৃতি ও সামাজিক কাঠামাে সম্পর্কে আলােচনা কবে : কিসের ভিত্তিতে এবং কিভাবে সমাজ গড়ে ওঠে এবং কিভাবেই বা সমাজ একটা কাঠামােগত রূপ নেয় তা সমাজবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়। এখানে বলা প্রয়ােজন, সমাজের তথা কাঠামাের ভিত্তি হচ্ছে মানব সম্পর্ক। ব্যক্তি, গােষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।

৪. সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ : সমাজবিজ্ঞান সমাজ গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং কৌশল অবলম্বন করে। সমাজের ব্যাখ্যা ও গবেষণায় হেয়ালি কল্পনা এবং আবেগের স্থান নেই। সমাজের বাস্তবতা নির্ণয় এর অন্যতম লক্ষ্য

৫. সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞান নেহায়েত সমাজের ঘটনাবলির বর্ণনাই কেবল নয়, এটি ঘটনাসমূহের কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে যুক্তিভিত্তিক বিচার - বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পায়। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান কেবল সমাজের আলােচনা নয়, পর্যালােচনাও বটে।

৬. নৈতিকতার প্রশ্নে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষ : সমাজের বাস্তব ভালাে কি মন্দ, সমাজ কেমন হওয়া উচিত কি অনুচিত, এসব বিষয়ে নিরপেক্ষ অবলম্বন করে অর্থাৎ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট রায় দেওয়া থেকে সমাজবিজ্ঞান বিরত থাকে।

৭. সমাজবিজ্ঞান সর্বদাই নিরপেক্ষ অবলম্বন করতে পারে না যদিও তাত্ত্বিকভাবে এবং আদর্শগতভাবে সমাজবিজ্ঞান মূল্যবােধনিরপেক্ষ বিজ্ঞান, তথাপি উন্নয়নকামী সমাজে সমাজবিজ্ঞান চর্চার অন্য লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সমস্যাবলি চিহ্নিতকরণ এবং তার সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া।

(গ) সমাজবিজ্ঞানের ৮ টি পরিধির বিবরণ নিচে ব্যাখ্যা করা হলাে :

১. সামাজিক কর্মকান্ড ও সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সামাজিক কর্মকান্ড। সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমস্থ মানুষের ভাল মন্দ বিচার করা হয়। 

২. সামাজিক ধারণা ও সামাজিক ধারণাসমূহ নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলােচনা করে থাকে। মরিস জিন্সবার্গের মতে, মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং এর ফলাফল সম্পর্কিত আলােচনাই হল সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু। 

৩. সামাজিক পরিবর্তন ও সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজ কাঠামাের পরিবর্তনের ফলে সমাজের রূপান্তর একটি সাবলীল সত্য। মানব জাতির আচার - ব্যবহার, রীতি-নীতি প্রভৃতি জীবন যাত্রার সকল বিষয়ের আলােচনা করাই সমাজবিজ্ঞানের কাজ। 

৪. সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও দলের মধ্যে সামাজিক মূল্যবােধ নির্ধারিত হয়। কিভাবে মানুষের সমাজে নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটেছে এবং কিভাবে এসবের ভেতর পরিবর্তন এসেছে এগুলাের বিচার বিশ্লেষণ সমাজবিজ্ঞানের পরিধিভুক্ত।

৫. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও সমাজকে কতিপয় সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল রীতি-নীতি ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করাকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে। সমাজবিজ্ঞানীগণের মতে, সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু কতগুলাে আচার - অনুষ্ঠান ও মূল্যবােধের দ্বারা নির্ধারিত। 

৬. সামাজিক সমস্যা ও সমাজবিজ্ঞান নৈতিকতার প্রশ্নে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। কাজেই সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সামাজিক সমস্যার বিশ্লেষণ করতে চায়। 

৭. সামাজিক আদর্শ ও সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ও বিষয়বস্তু হিসেবে সামাজিক আদর্শের অবদান রয়েছে। সামাজিক আদর্শছাড়া কোন জাতি উন্নতির চরম শিখরে আরােহন পারে না।

৮. সমাজের সামগ্রিক বিষয়ে আলােচনা ও মানুষের কার্যকলাপ এবং মানুষের সাংগঠনিক প্রতিভা, সংস্কৃতি, মূল্যবোেধ প্রভৃতি বিষয়গুলাে সমাজবিজ্ঞানের পরিধিকে অত্যন্ত ব্যাপকতর করে তুলেছে।

(ঘ) সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ ধারা এবং এই বিকাশধারা নিয়ে ৪ জন চিন্তাবিদের মতবাদ নিচে ব্যাখ্যা করা হলাে :

জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা হিসেবে আমাদের সমাজে সমাজবিজ্ঞানের পরিচয় খুব বেশী দিনের নয়। সামাজিক বিজ্ঞান সমূহের মধ্যে সমাজবিজ্ঞান সর্বকনিষ্ঠ। কেননা উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে -এর আবির্ভাব ঘটে। মূলত, মানুষের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা থেকে সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক অবস্থায় মানব জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রকৃতির অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশেই মানব চিন্তা বিকশিত হতে থাকে। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ভাবনা আদিকাল থেকে চলে আসছে। আদিতে সকল রকম চিন্তা চেতনা দর্শন শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু মানবচিন্তার ক্রমবিকাশের ধারায় দর্শনশাস্ত্রের সীমানা পেরিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নব দিগন্ত উন্মােচিত হতে থাকে। এভাবে মানুষের বিচিত্র জ্ঞানের শাখা হিসেবে জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, মনােবিদ্যা, ভূগােল ও ইতিহাস প্রভৃতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। তাই জ্ঞান চর্চার ইতিহাস ও তার উৎস খুঁজতে গিয়ে বার বার আমাদের ফিরে তাকাতে হয় সুদূর অতীতের দিকে। 

প্রাচীন গ্রীক ও রােমান পন্ডিতদের লেখায় সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত আলােচনা সমৃদ্ধি লাভ করে। গ্রীক দার্শনিকদের মধ্যে প্লেটো এবং এরিষ্টটল এর নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য। মূলত, প্লেটো, এরিষ্টটল ও পিথাগােরাস প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানকে দর্শনশাস্ত্রের আওতাভুক্ত বলে মনে করতেন। দর্শনশাস্ত্রের অঙ্গ হিসেবেই তাঁরা সামাজিক বিজ্ঞানকে পর্যালােচনা করেন। এ প্রসঙ্গে আমরা সর্বপ্রথম প্লেটোর নাম উল্লেখ করতে পারি। আমরা এখন ধারাবাহিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানীর মতবাদ আলােচনা করব।

প্লেটো : প্লেটো তাঁর Republic নামক গ্রন্থে সমাজ সম্পর্কে যে সব তত্ত্বের অবতারণা করেছেন সেসব মূলত যুক্তি নির্ভর হলেও অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা বর্জিত। কেননা, তিনি তাঁর গ্রন্থে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন, যেখানে শান্তি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে। মূলত প্লেটোর Republic নামক গ্রন্থে সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও প্রশ্নের পর্যালােচনা দেখা যায়। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রকে প্রাচীন কালের সাম্যবাদ বলেও অভিহিত করা হয়।

ইবনে খালদুন : তিউনিসিয়ার অধিবাসী মধ্যযুগের বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬) সমাজচিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি ঐতিহাসিক দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মুকাদ্দিমায়’ সমাজের গতি-প্রকৃতি এবং সমাজ জীবনে বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহের প্রভাব পর্যালােচনা করেছেন। ইবনে খালদুন সমাজ জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, সামাজিক সংহতি সম্পর্কে তিনি বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা করেছেন। তিনি বলেছেন সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য Social Solidarity বা সামাজিক সংহতির গুরুত্ব রয়েছে। মধ্যযুগে জন্মগ্রহণকারী এই মনীষী তাঁর চিন্তা-চেতনা এবং জ্ঞান সাধনার মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে গেছেন। তিনি সামাজিক সংহতিকে আসাবিহা ’ বলে অভিহিত করেছেন। অনেক বস্তুবাদী লেখক খালদুনকে জার্মান সমাজচিন্তাবিদ কার্ল মার্কসের পূর্বসূরি বলে গণ্য করেছেন।

ভিকো : ইটালীয় মনীষী ভিকো সমাজবিজ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখেছেন। ভিকো তাঁর The New Science নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, সমাজ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বির্বতিত হয়। ভিকো সমাজ বিবর্তনের ধারায় তিনটি যুগ লক্ষ করেন। এগুলাে হচ্ছে :
১। দেবতাদের যুগ (Age of Gods); 
২। বীর যােদ্ধাদের যুগ (Age of Heros) এবং
৩। মানুষের যুগ (Age of men)।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post