HSC 2021 : ইসলাম শিক্ষা : অ্যাসাইনমেন্ট

দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
ইসলাম শিক্ষা (২য় পত্র)
২য় সপ্তাহ

সূরা আল বাকারার ৮-১০ আয়াতের অর্থ, শিক্ষা ও মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ।

নির্দেশনা :
নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে লিখতে হবে :
  • সূরা আল বাকারার-
  • ৮-১০ আয়াতের অর্থ
  • ৮-১০ আয়াতের শানেনুযুল
  • ৮-৯ আয়াতের শিক্ষা
  • মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য
  • বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মুনাফিকী পরিহার করার উপায়।

নমুনা সমাধান

(ক) সূরা আল বাকারার ৮-১০ আয়াতের অর্থ :

৮. আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান এনেছি ; কিন্তু তারা মুমিন নয় ।

৯. তারা আল্লাহ ও মুমিনদেরকে ধোকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোকা  দেয় না ; কিন্তু তারা বুঝতে পারে না।

১০. তাদের অন্তঃকরণ ব্যাধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুত তাদের মিথ্যাচারের দরুন তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি।

(খ) সূরা আল বাকারার ৮-১০ আয়াতের শানেনুযুল :

৮ নং আয়াতের শানেনুযুল : এক শ্রেণির মানুষ এমন আছে, যারা প্রকাশ্যভাবে নিজেদেরকে আল্লাহ, রাসূল ও আখিরাতে বিশ্বাসী বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু অন্তরে অন্তরে ঘোর অবিশ্বাস ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে চরম বিদ্বেষ পোষণ করে থাকে। মহান আল্লাহ মুসলিমগণকে তাদের হীনচক্রান্ত শত্রুতা হতে সতর্ক থাকার জন্য তাদের প্রকৃত পরিচয় ও স্বরূপ উন্মোচন করে দিয়ে ঘোষণা করেন- তারা আদৌ মুমিন নয় ।

√ মুনাফিকরা মুসলিমদের ঘোর শত্রু। তারা মুখে ইসলামের কথা বলে মুসলিমদের ভণ্ড দরদী সাজে। কিন্তু অন্তরে মুসলিমদের ধ্বংস কামনা করে।

√ মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে তারা বলে, আমরা ইমান এনেছি ; কিন্তু যখন তারা কাফিরদের সাথে গোপনে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই আছি। আমরা মুসলিমদের সাথে ধোকা ও প্রবঞ্চনা করেছি মাত্র ।

√ আল্লাহ ও আখিরাতের ওপর কেবল ইমান আনার কথা বললেই চলবে না, ইসলামের সকল মৌলিক বিষয় এবং শাখা প্রশাখায়ও ইমান আনতে হবে এবং তদনুযায়ী আমল করতে হবে। অন্যথায় মুনাফিক বা কাফির বলেই বিবেচিত হবে।

৯ নং আয়াতের শানেনুযুল : মহান আল্লাহ এবং ইমানদার মুসলিমদের সাথে মুনাফিকদের প্রতারণা ও প্রবঞ্চণামূলক আচরণ ও তার পরিণাম সম্পর্কে এ আয়াতে বলা আলোচনা করা হয়েছে :

√ মুখে মুখে ইমান এনেছি- এ কথা বলে মুনাফিকরা মনে করছে যে, তারা আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদেরকেই নিজেরা ধোকার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তারা ভাবে তাদের মুনাফিকী ফকা চক্রান্ত তাদের পক্ষে বুঝি খুবই কল্যাণকর হবে। কিন্তু আসলে এ চাল ও চক্রান্ত তাদের দুনিয়ায় সাময়িক লাভবান করলেও পরকালে তারা নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

√ মুনাফিক ব্যক্তি কিছু দিনের জন্য হয়ত লোকদেরকে প্রতারিত করে রাখতে পারে, কিন্তু তা স্থায়ী হতে পারে না।

√ মুনাফিকরা আখিরাতে পীড়াদায়ক নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি ভোগ করবে। 

√ আসলে আল্লাহকে কেউ ধোকা দিতে পারে না । বরং রাসূল (স) ও মুসলিমদের সাথে ধোকাবাজি করার কারণেই আয়াতে বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করছে।

১০ নং আয়াতের শানেন্যল : এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, মুনাফিকদের অন্তরে কুফর, নিফাক, সংশয়, হিংসা, বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্রের ব্যাধি রয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাদের সেই ব্যাধিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন, আর তাদের মিথ্যাচারের কারণে তাদের জন্য কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে।

√ আয়াতে ' মারাদুন ' অর্থ : রোগ-ব্যাধি । ইবনে আব্বাস ( রা ) বলেন, এখানে এ এর দ্বারা সন্দেহ-দ্বিধা বোঝানো হয়েছে I

√ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুনাফিকদের অন্তর্নিহিত কুফরকে রোগ বলা হয়েছে।

√ আল্লাহ তাদের রোগকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তারা ইসলাম ও মুসলিমদের উন্নতি ও ক্রমবিকাশ দেখে জ্বলে - পুড়ে ছাই হতে থাকে । আল্লাহ তো দিন দিন তাঁর ইসলাম ধর্মের উন্নতি দিয়েই যাচ্ছেন। ফলে তারা শুধু হিংসায় জ্বলছে । তাদের সেই অন্তরজ্বালা বাড়তেই থাকে।

(গ) সূরা আল বাকারার ৮-৯ আয়াতের শিক্ষা :

৮ নং আয়াতের শিক্ষা :
  • মুখে মুখে ইমান আনলেই প্রকৃত ইমানদার হওয়া যায় না ।
  • ইমানদার হতে হলে  ইসলামের সকল বিষয়ের প্রতি  ইমান গ্রহণ করতে হবে।
  • মিথ্যাচার ও কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • মুনাফিকরা মুসলিম নয় বরং কাফির। এদের থেকে সদা সতর্ক থাকতে হবে।

৯ নং আয়াতের শিক্ষা :
  • মুনাফিক চক্রের সকল প্রকার ধোঁকা ও প্রতারণার জাল ফাস হয়ে যাবে এবং আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। লাঞ্ছিত হয়ে
  • পরকালে তারা ভীষণ শাস্তির সম্মুখীন হবে।
  • এ ব্যাধি যার হৃদয়ে স্থান পেয়েছে, সে দুনিয়া ও আখিরাত কে বিনষ্ট করেছে।

(ঘ) মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য : মুনাফিকি মানে কপট বিশ্বাসী। নিফাক বা মুনাফিকি অত্যন্ত জঘন্য পাপ । সমাজ, দল, রাষ্ট্র তথা সমষ্টিগত জীবনে নিফাকের দুষ্ট ব্যাধি সর্বদা বিশৃঙ্খলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করে । তারা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিতে ত দিতে তৎপর থাকে । তাই ইসলামে একে অমার্জনীয় পাপ বলা হয়েছে।

১. এরা প্রকৃত বিশ্বাসী নয় : মুনাফিকরা প্রকাশ্যভাবে নিজেদেরকে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী বলে দাবি করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ঈমানদার নয়। বরং অন্তরে তারা ইসলামের প্রতি ঘোর অবিশ্বাস পোষণ করে থাকে।

২. মুনাফিকরা ধোকাবাজ : মুনাফিকরা ধারণা করে যে, তারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মু'মিনদেরকে ধোঁকা দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তারা কেবল নিজেদেরকেই ধোকা ও প্রবঞ্চনার জালে   আবদ্ধ করে ধ্বংস ও ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে,অথচ তারা এ সহজ কথাটি বুঝতে পারে না। 

৩. মুনাফিকরাই পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী : মুনাফিকরা গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীতে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখে। এ ব্যাপারে যখন তাদেরকে বলা হয় যে, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় ও অশান্তি সৃষ্টি করো না। তখন তারা সাধু- তপস্বী সেজে বলতে থাকে:

“আমরাই তো শান্তি স্থাপনকারী”
(সূরা আল-বাকারা ২:১১) প্রকৃতপক্ষে এরাই যাবতীয় অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ।

৪. মুনাফিকের হৃদয়ে কপটতার রোগ : মুনাফিকদের হৃদয়ে রয়েছে কপটতা ও প্রবঞ্চনার রোগ। কখন কাকে ক্ষতি করবে, কখন কার বিরুদ্ধে লাগবে, কখন সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবে- এ হীন চারিত্রিক রোগ নিয়ে তারা সর্বদা ঘুরে বেড়ায়। 

৫. মুনাফিক দ্বিমুখী : মুনাফিকরা যখন ঈমানদারদের সঙ্গে মিলিত হয় তখন বলে, তারা ঈমান এনেছে । আবার যখন তাদের দুষ্ট দলপতির সাথে মিলিত হয় তখন বলে, তার তাদের সঙ্গেই রয়েছে । এরা দ্বিমুখী চরিত্রের । কোথাও তাদের স্বস্তি নেই।

৬. মুনাফিক নির্বোধ : মুনাফিকদেরকে খাঁটিভাবে ঈমান আনতে বলা হলে তারা মুখের উপর বলে দেয়, তারা কি নির্বোধদের ন্যায় অন্ধভাবে ঈমান আনবে? মহান আল্লাহ্ বলেন “ প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বোধ ও অজ্ঞ। কিন্তু এতটুকু বাস্তবতা তারা বুঝতে পারে না।”

৭. মুনাফিক পথহারা অন্ধ ও বধির : মুনাফিকরা পথহারা, তাদের অন্তর ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন । তাই মহান আল্লাহ তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় বধির, মূক ও অন্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মহানবী (স) মুনাফিকদের কিছু লক্ষণ তুলে ধরে বলেন মুনাফিকরা -
(ক) কথায় কথায় মিথ্যা বলে; 
(খ) প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে; 
(গ) আমানতের খিয়ানত করে এবং
(ঘ) ঝগড়া বিবাদে অশ্লীল গালমন্দ করে।

এসব লক্ষণ ও চরিত্র যাদের মধ্যে পাওয়া যায় তারাই মুনাফিক । এদের হীন ষড়যন্ত্র ও অনিষ্ট হতে সর্বদা সতর্ক থাকতে কুরআন ও হাদিসে সাবধান করা হয়েছে।

(ঙ) বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মুনাফিকী পরিহার করার উপায় : 
মুনাফিকদের সাথে কোনো প্রকার নমনীয়তা প্রদর্শন সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তাদের ক্ষতিকে কোনো ক্রমেই ছোট মনে করা যাবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মুনাফিকদের তুলনায় বর্তমান যুগের মুনাফিকরা আরো অধিক ভয়ঙ্কর ।

তাদের বিষয়ে একজন মুসলিমের অবস্থান:
১. মুনাফিকদের আনুগত্য করা হতে বিরত থাকা । কখনোই মুনাফিকদের আনুগত্য করা যাবে না। কারণ, তারা কখনোই মুসলিমদের কল্যাণ চায় না তারা চায় ক্ষতি। 
২. মুনাফিকদের সাথে বিতর্ক করা থেকে বিরত থাকা, তাদের ধমক দেওয়া ও ভালো হওয়ার জন্য উপদেশ দেওয়া।
৩. তাদের সাথে বিতর্ক না করা এবং তাদের থেকে আত্মরক্ষা করা।
৪. তাদের সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে বিরত থাকা ।
৫. তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং তাদের বিষয়ে কঠোর হওয়া।
৬.মুনাফিকদের নিকৃষ্ট বলে জানা এবং কখনো তাদের কাউকে নেতা না বানানো ।
৭. তারা মারা গেলে তাদের জানাজায় অংশ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকা।

নিফাক এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি ও নিন্দনীয় চরিত্র, যা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতি ও মারাত্মক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা নিফাকের গুণে গুণান্বিত তাদের গাদ্দার, খিয়ানত কারী, মিথ্যুক ও ফাজের বলে আখ্যায়িত করেছেন। কারণ, একজন মুনাফিক তার ভিতরে যা আছে, সে তার বিপরীত জিনিসটিকে প্রকাশ করে।

উপরোক্ত কাজগুলো করলে বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মুনাফিকী পরিহার করা সম্ভব হবে।


প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
ইসলাম শিক্ষা (১ম পত্র)
১ সপ্তাহ

সামাজিক অবক্ষয় রোধে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ।

নির্দেশনা :
নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে লিখতে হবে।
  • ইসলামি শিক্ষার ধারণা।
  • ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য।
  • ইসলামি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা।
  • ইসলামি শিক্ষার অভাবে সামাজিক অবক্ষয়সমূহ চিহ্নিত করণ।
  • সামাজিক অবক্ষয়সমূহ থেকে উত্তরণের উপায়।

নমুনা সমাধান

(ক)
ইসলামি শিক্ষার ধারণা :
ইসলাম শিক্ষার আরবি প্রতিশব্দ হলো ইলম এর অর্থ হলো- জ্ঞান, জানা, অবগত হওয়া ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় কুরআন ও হাদিসভিত্তিক এমন জ্ঞান অন্বেষণ করা যার মাধ্যমে ইসলামি জীবনব্যবস্থার ওপর চলা সহজ হয়। ইলম দ্বারা বোঝায় মহান আল্লাহকে জানবার জ্ঞান এবং এ অর্থে দ্বীন বিষয়ক যেকোনো জনকে ইসলাম শিক্ষা বলা হয়।

ইসলাম শিক্ষার পরিচয় এভাবেও দেওয়া যায়, ইসলাম শিক্ষা এমন একটি বিষয় যার পঠন পাঠন, অধ্যয়ন, অনুশীলন করলে আল্লাহর দেওয়া বিধান পরিপূর্ণ জীবন বিধান-দীন ইসলামের স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায় এবং তদনুযায়ী স্বীয় জীবন গঠন ও পরিচালনা করে আল্লাহ প্রদত্ত খেলাফতের দায়িত্ব -কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যায়। এ জ্ঞান মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ, যা মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ অবদান। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা,

“আল্লাহ তায়ালা তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন আর তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। তোমার প্রতি আল্লাহর মহানুগ্রহ রয়েছে।” (সূরা নিসা : ১১৩)

সর্বোপরি, যে শিক্ষা মুসলিম দার্শনিক, মুসলিম বৈজ্ঞানিক, মুসলিম অর্থনীতিবিদ, মুসলিম ঐতিহাসিক সৃষ্টি করবে -তাই ইসলামি শিক্ষা নামে অবহিত হওয়ার যোগ্য।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। মাবন জীবনের সমগ্র দিক ও বিভাগের জন্য এর নিজস্ব মূলনীতি ও বিধান রয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে। ইসলামী শিক্ষা বলতে বুঝায়- “যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামকে একটি পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ হিসেবে শিক্ষা দেয়ার বন্দোবস্ত থাকে। তাই ইসলাম শিক্ষা।”

এ শিক্ষা লাভ করার ফলে শিক্ষার্থীদের মন-মগজ-চরিত্র এমনভাবে গড়ে ওঠে, যাতে ইসলামের আদর্শে জীবনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার যোগ্যতা অর্জিত হয়। এক কথায়- “ইসলাম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করার শিক্ষাই হল ইসলামী শিক্ষা।” শিক্ষাই জীবনের আলো। জ্ঞান মানুষের মহামূল্যবান সম্পদ- যা মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ অবদান। 

এ মহামূল্যবান জ্ঞানের কল্যাণেই মানবজাতি ফেরেশতা তথা সমগ্র সৃষ্টি জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন। আর এ কারণেই মানুষ মহান আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ইসলামের শিক্ষা ব্যবস্থা এক স্বতন্ত্র বৈশেষ্ট্যের দাবীদার।

(খ)
ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য :
ইসলাম শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো- ইসলামকে সঠিকভাবে জানার ও মানার মাধ্যমে আল্লাহর খাঁটি গোলাম হিসেবে ব্যক্তি তৈরি করা এবং তার সন্তুষ্টি অর্জন করা। ফলে ইসলাম শিক্ষা মানুষের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আত্মিক বিকাশ সাধন করে মানুষকে সত্যিকারের মানুষে রূপান্তরিত করে। ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে মৌলিক পরিবর্তন সাধন সম্ভব হয়। এর কল্যাণে ব্যক্তি আদর্শ ও চরিত্রবান হয়, সুনাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমাজ-রাষ্ট্র তথা বিশ্বের সম্পদে পরিণত হয়। 

মানবতার বিকাশ সাধন:
শিক্ষার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্ব ও মানবিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা। মানব প্রকৃতির মননশীলতা, সৃজনশীলতা ও কর্মকুশলতা শিক্ষার মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে।

কুরআন-হাদীসের জ্ঞান আহরণের মাধ্যমেই মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশ, আত্মার উন্নতি, আধ্যাত্মিক জগতের রহস্যাবলী, আল্লাহ ও সৃষ্টি-জগত সম্পর্কিত জ্ঞান অবগত হওয়া যায়। মানুষের মধ্যে স্নেহ-মমতা, দয়া, সাহস, দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীও জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই উৎকর্ষ লাভ করে ও বিকশিত হয়। এ শিক্ষার গুণেই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে সৃষ্টিজগতের উপরে। কুরআনের ভাষায়:

“নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে সম্মান দান করেছি।” (সূরা বনী ইসরাইল : ৭০)

স্রষ্টা ও সৃষ্টির পরিচয়ের জন্য শিক্ষা:
মহান স্রষ্টা আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দেগী সম্পর্কে অবগত হওয়াও শিক্ষার উদ্দেশ্য। কেননা, আল্লাহ বলেন,
“আমি জিন ও মানব জাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (যারিয়াত : ৫৬) 

আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দেগী করতে হলে প্রথমে আল্লাহর সঠিক পরিচয়, আনুগত্য ও বন্দেগীর ধরন এবং আদায় করার নিয়ম নীতি অবগত হওয়া একান্ত অপরিহার্য। আর শিক্ষা ব্যতীত এগুলো অবগত হওয়া যায় না। প্রকৃত জ্ঞানীরা আল্লাহর এ শিক্ষার গুণেই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে সৃষ্টিজগতের উপরে। কুরআনের ভাষায়,

“নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে সম্মান দান করেছি।” (সূরা বনী ইসরাইল : ৭০) 

স্রষ্টা ও সৃষ্টির পরিচয়ের জন্য শিক্ষা :
মহান স্রষ্টা আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দেগী সম্পর্কে অবগত হওয়াও শিক্ষার উদ্দেশ্য। কেননা, আল্লাহ বলেন

“আমি জিন ও মানব জাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (যারিয়াত : ৫৬)

আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দেগী করতে হলে প্রথমে আল্লাহর সঠিক পরিচয়, আনুগত্য ও বন্দেগীর ধরন এবং আদায় করার নিয়ম নীতি অবগত হওয়া একান্ত অপরিহার্য। আর শিক্ষা ব্যতীত এগুলো অবগত হওয়া যায় না। প্রকৃত জ্ঞানীরা আল্লাহর স্বরূপ বুঝে তাঁর ইবাদাত করতে পারে। কুরআনে বলা হয়েছে,

“নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাহগণের মধ্যে কেবল বিদ্বানগণই আল্লাহকে ভয় করে।” (সূরা ফাতির: ২৮)

সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস পোষণ মানুষের সকল কাজের চালিকা শক্তি। আর তা অর্জিত হয় ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে।
 
ইসলামী সংস্কৃতির সাথে পরিচয় লাভ :
ইসলামী শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা-সংস্কৃতির সাথে পরিচয়। অপসংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারা। ইসলামের রয়েছে মানবতার ঊষালগ্ন থেকে চলে আসা সভ্যতা ও ঐতিহ্যের গৌরবময় উত্তরাধিকার। ইসলামের শিা, সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডারের সাথে পরিচয়ের জন্যে ইসলামী শিক্ষা খুবই জরুরী বিষয়।

শান্তিময় সুন্দর জীবনের জন্যে :
মানুষের জীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করার জন্য ইসলামী শিক্ষা অপরিহার্য। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, জাতি ও আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে ইসলামী শিক্ষা। মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা। পৃথিবীতে মানুষের রয়েছে অনেক দায়িত্ব। এ দায়িত্বের প্রতি যত্নবান ও সচেতন করে তোলা ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য।

আল্লাহর দ্বীনকে সঞ্জীবিত রাখা :
সমাজ জীবনে আল্লাহর দ্বীনকে সঞ্জীবিত করা ও প্রতিষ্ঠিত করার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বনবীর (স) তিরোধানের মাধ্যমেই নবুয়াতের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তাঁর পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবেনা। নবীর উম্মাহর উপর দ্বীনের হিফাযত ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বর্তিয়েছে। কাজেই আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা করে একে সঞ্জীবিত রাখা ও প্রতিষ্ঠা করা “মুসলিম উম্মাহর" প্রধান কর্তব্য। এজন্য মুসলিম উম্মাহর ওলামায়ে কিরামকে নবীদের উত্তরসুরী বলা হয়েছে। মহানবী (স) ঘোষণা করেছেন :

“যে ব্যক্তি ইসলামকে সঞ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে জ্ঞান শিক্ষা করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, জান্নাতের মধ্যে নবীগণ ও তার মধ্যে মাত্র একধাপ ব্যবধান থাকবে।”

আত্মকর্মসংস্থান :
হালাল উপার্জনে উৎসাহিত করা ও আত্মকর্মসংস্থানে সক্ষম করে গড়ে তোলা ইসলামী শিক্ষার অন্যতম বড় উদ্দেশ্য। আল্লাহ তাআলা যেমন বান্দাহকে সালাত, সাওম ও অন্যান্য ইবাদত করার আদেশ দিয়েছেন। তেমনি তিনি জীবিকা উপার্জনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন

“সালাত সমাপন করে তোমরা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহরাজি সন্ধান কর।” (সূরা জুমুআ : ১০)

মহানবী (স) জীবিকা উপার্জনকে ফরষ বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন :

“হালাল জীবিকা উপার্জন ফরযের পরেও একটি ফরয।” (বায়হাকী)

রাসূলুল্লাহ (স) আত্মকর্মসংস্থানের প্রতি খুবই তাকিদ দিয়েছেন। তিনি আরও ঘোষণা করেছেন :

“তোমরা ফজরের সালাত আদায় করার পর তোমাদের জীবিকার সন্ধান না করে ঘুমিয়ে যেওনা।”

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post