মার্চের দিনগুলি

রচনা : বাংলাদেশের জাতীয় পশু : বাঘ

ভূমিকা : বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এদেশের দক্ষিণে অবস্থিত সুন্দরবনে এর অবস্থান। সেখানকার নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর মধ্যে অন্যতম স্তন্যপায়ী প্রাণী বাঘ। রয়েল বেঙ্গল টাইগারই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করে। 

আকৃতি ও সৌন্দর্য : বাঘের গায়ের বর্ণ গাঢ় হলুদ থেকে লালচে হলুদ এবং তাতে লম্বা কালো ডোরা থাকে। এই ডোরা উঁচু এবং পেছন দিকে বেশি। এর পেটের দিকটা সাদাটে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলো কালো ডোরাকাটা দাগ আর লেজের আগা কালো দেখায়। কানের পেছন দিকটা কালো রঙের, তাতে একটি স্পষ্ট সাদা দাগ রয়েছে। মাথাসহ বাঘের দৈর্ঘ্য ১৪০ থেকে ২৮০ সেন্টিমিটার, উচ্চতা ৯৫ থেকে ১১০ সেন্টিমিটার। এদের ওজন ১১৫ থেকে ২৮০ কেজি হয়ে থাকে। 

স্বভাব : বাঘ সাধারণত নিঃসঙ্গ। কখনো কখনো জোড়া বেঁধে থাকে। এরা প্রধানত নিশাচর। এরা গরু, মহিষ, হরিণ, বুনো শূকর, সজারু ইত্যাদি শিকার করে খায়। বড় আকারের একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দৈনিক মাংস চাহিদা গড়ে ৮ থেকে ৯ কেজি। এরা নিজের দ্বিগুণ বড় জন্তু শিকার করতে পারে। বাঘিনী একসঙ্গে ২টি থেকে ৫টি বাচ্চা প্রসব করে। গর্ভকাল ১৪ থেকে ১৫ সপ্তাহ। মায়ের যত্নে বাচ্চারা ৪-৫ মাস লালিত-পালিত হয়। বাচ্চা এক বছরেরও বেশি সময মায়ের সাহচর্যে থাকে। 

বাসযোগ্য স্থান : বাংলাদেশের জাতীয় পশু বাঘ সহজেই গরম আবহাওয়ায় খাপখাইয়ে নিতে পারে। এরা উষ্ণমণ্ডলীয় অরণ্য, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, পত্রগোচর বন-সর্বত্রই বসবাস করতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, নেপাল, চীন ও পশ্চিম মায়ানমার এদের আবাসভূমি। একসময় বাংলাদেশের সবগুলো বনেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছিল। এখন শুধু সুন্দরবনেই এরা বসবাস করে। 

বাঘের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা : বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া, খাবারের অভাব, অবৈধ শিকার এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে বর্তমানে এই জাতীয় পশু বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সকল বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মৃত বাঘের চামড়া অত্যন্ত মূল্যবান। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দর্শন পেলে সুন্দরবনে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের নয়ন সার্থক হয়। এই প্রাণী আমাদের শক্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক। 

উপসংহার : বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকার যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করেছে তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাণীসংরক্ষণের প্রতি জনগণের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন। অতএব, প্রয়োজন অবৈধ শিকার বন্ধ করা, প্রাণীদের সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণ করা। তবেই আমাদের এই জাতীয় পশুসহ সকল বন্যপ্রাণীকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।


আরো দেখুন :

10 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post