মার্চের দিনগুলি

রচনা : বাংলাদেশের জাতীয় ফল : কাঁঠাল

ভূমিকা : আল্লাহ মানুষকে বিভিন্ন ঋতুভেদে অসংখ্য ফলমূল দান করেছেন। তার মধ্যে কাঁঠাল অন্যতম। কাঁঠাল হলো গ্রীষ্মকালীন একটি অতি পরিচিত ফল। এত বড় ফল আমাদের দেশে সচরাচর দেখা যায় না। গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে এ ফল প্রচুর পাওয়া যায় বলে এটিকে আমরা জাতীয় ফল হিসেবে আখ্যায়িত করেছি। 

উৎপত্তিস্থল : কাঁঠাল গ্রীষ্মকালের ফল। গ্রীষ্মপ্রধান দেশেই এটি ভালো জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কার প্রাকৃতিক আবহাওয়া এ ফল উৎপাদনের অনুকূলে বলে এসব দেশে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল উৎপন্ন হয়। এছাড়াও পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশে কাঁঠাল দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রামে প্রচুর কাঁঠাল জন্মে। তবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে এর উৎপাদন এত ব্যাপক যা দেশের অন্য কোথাও হয় না। 

প্রকারভেদ : কাঁঠালের নির্দিষ্ট কোনো জাত বা প্রকারভেদ নেই। কাঁঠাল দু কেজি থেকে শুরু করে বিশ কেজি এমনকি কখনো কখনো তারও বেশি ওজনের হয়ে থাকে। 

চাষপ্রণালি : উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু কাঁঠাল চাষের জন্য উপযোগী। এঁটেল ও দো-আঁশ মাটিতে এ গাছ খুব ভালো জন্মে। এছাড়া গাছ লাগানোর জন্য প্রথমে চারা রোপণ করে নেয়া হয়। তবে সরাসরি বিচি বপন করেও এর গাছ বড় করা যায়। চারা রোপণ করার পর তিন-চার হাত উঁচু করে বাঁশ দিয়ে ঘেরাও দিতে হবে, যাতে গরু-ছাগলে চারাগাছ নষ্ট না করে কিংবা খেয়ে না ফেলে। এ ফলের গাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যেই কাঁঠাল ধরতে আরম্ভ করে। মাঘ-ফাল্গুন মাস হতে ফল ধরতে আরম্ভ করে এবং বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকা আরম্ভ হয়। 

কাঁঠালের বর্ণনা : কাঁঠালের নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই। এবড়ো-থেবড়ো, গোলাকার বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোনোটি বড় আবার কোনোটি ছোট। এটি কোষযুক্ত ফল। এর ভেতরে বীচি হয়। কাঁঠালের ভেতরে মাঝখানে একটি মোথা থাকে, যাতে কাঁঠালের কোষগুলো সংযুক্ত থাকে। কাঁঠালের গায়ে কাঁটার মত ছোট ছোট আড়া থাকে। এটি কাটলে আঠালো কষ বের হয়। 

উপকারিতা : ফল হিসেবে কাঁঠালের উপকারিতা উল্লেখ করার মতো। কাঁঠাল প্রচুর পুষ্টি জোগায়। সহজে পাওয়া যায় বলে লোকে খায়ও বেশি। কাঁঠালের বিচি তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। কাঁঠালের উচ্ছিষ্ট গরুর উপাদেয় খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর গাছ থেকে খুব ভালো কাঠ পাওয়া যায়। ডাল-পালা থেকে হয় লাকড়ি। কাঁঠালপাতা ছাগলের প্রিয় খাবার। মোটকথা কাঁঠালের মূল থেকে পাতা পর্যন্ত সবই কাজে লাগে। 

জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠাল : জাতীয় ফল হিসেবে কাঁঠালকে নির্বাচনের তাৎপর্য রয়েছে। এ ফল স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। আমাদের দেশে এ ফলের প্রাচুর্য রয়েছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এটি শীর্ষে। কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। তাছাড়া এ ফলের প্রাচুর্যতা রয়েছে বলে এটি অনেক সস্তা। যার ফলে সব শ্রেণির লোকের কাছে এ ফলের চাহিদা সমান। তাই অন্যান্য ফল অপেক্ষা কাঁঠালের মর্যাদা বেশি বিবেচিত হয় বলে এটি আমাদের জাতীয় ফল। 

উপসংহার : প্রতিটি ফলই আমাদের জীবনে প্রভাব বয়ে আনে। কিন্তু কাঁঠালের প্রভাব একটু অন্য রকম। স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিক উৎপাদন সম্ভব বলে এ ফলের চাহিদা অনেক বেশি। তাই সেদিকে খেয়াল রেখে আমাদের প্রত্যেককে অধিক কাঁঠাল উৎপাদনে এগিয়ে আসা উচিত।


আরো দেখুন :

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post