ব্যাকরণ : সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম - ৭

সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম
পর্ব - ৭ 

যে, যে–, যেই, যে–ই
'যে' প্রয়োজন অনুযায়ী মুক্ত এবং যুক্তভাবে, এবং অর্থ স্পষ্ট করার তাগিদে দীর্ঘ শব্দের সাথে যুক্ত হলে হাইফেন সহযোগে লেখা হবে। যেমন— 
  • যেদিন তুমি আমার কাছে আসবে (সময় বোঝাচ্ছে) 
  • যে দিন তুমি এসেছিলে (নির্দিষ্ট একটি দিনকে বোঝাচ্ছে) 
  • তুমি যে এসেছিলে তা আমি বুঝিনি। (আসার ব্যাপারটিকে বোঝাচ্ছে) 
  • তুমি যে–উপহার দিলে সেটা আমার কাছে অমূল্য। (উপহারটিকে বোঝাচ্ছে) 
  • তুমি কথা দিয়েছিলে যে, আমার কথা মেনে চলবে।

'যেই' অর্থ 'যখনই' বা 'যে মুহূর্তে', যেমন— যেই আমি তাকালাম অমনি সে মুখ লুকাল।

'যে–ই' অর্থ 'যে–ব্যক্তিই', যেমন— অপরাধ যে–ই করুক, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। 

যেহেতু/যেইহেতু, সেহেতু/সেইহেতু
'যেহেতু' এবং 'যেইহেতু'–র মধ্যে বস্তুত কোনো পার্থক্য বিদ্যমান নাই। অনেকে মনে করেন, পরে 'সেইহেতু' থাকলে তার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে 'যেইহেতু' লিখতে হবে। এটি একটি ভুল ধারণা। 'যেহেতু.......সেহেতু' / 'যেহেতু........সেইহেতু' ('সেইহেতুতে অর্থগত জোর পড়লে) সাধারণ ব্যবহার এবং আনুষ্ঠানিক প্রমিত ব্যবহার —উভয়ক্ষেত্রেই যথার্থ। 

র, ড়, ঢ়
বাংলা বানানে ঢ়–এর ব্যবহার সীমিত৷ অল্পকিছু শব্দে এর ব্যবহার আছে। যেমন— গাঢ়, আষাঢ়, গূঢ়, নিগূঢ়, মূঢ়, বিমূঢ়, অনূঢ়া। ড়–এর ব্যবহার শব্দের শুরুতে নেই। র ও ড়–এর ব্যবহার কোন সূত্র বা নিয়মের অধীন নয়; সংশ্লিষ্ট শব্দগুলো মনে রাখাই বানানে এই দুই বর্ণের ব্যবহার মনে রাখার একমাত্র উপায়। 

রেফ
রেফ আসলে ' র্ ' –এর একটি সংক্ষিপ্ত রূপ। অন্য সংক্ষিপ্ত রূপটি হলো র–ফলা ( ্র )। যে ধ্বনির আগে রেফ (বা ' র্ ') উচ্চারিত হয় সেই ধ্বনিটির (অর্থাৎ বর্ণটির) ওপরে রেফ বসে। 
যেমন : 
ধ + র্ + ম = ধর্ম 

লক্ষ/লক্ষ্য
'লক্ষ করা' একটি ক্রিয়াপদ। এর অর্থ খেয়াল করা, দেখা ইত্যাদি। এতে য–ফলা নেই। যেমন— কদিন ধরেই লক্ষ করছি তোমার মনটা বেশ খারাপ। 'লক্ষ' শব্দের অন্য অর্থ একশ হাজার।

অন্যদিকে, 'লক্ষ্য' একটি বিশেষ্যপদ। এর অর্থ 'উদ্দেশ্য', 'নিশানা'। এতে য–ফলা আছে। যেমন— জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবতার জনয় কাজ করা। গাছ লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়লাম, ফল পড়ল না। 

লোপচিহ্ন ( ' )
লোপচিহ্নের ব্যবহার যতসম্ভব কম হবে। সংখ্যাবাচক শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপের পরে লোপচিহ্ন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। যেমন— নটা বাজে। ছয়শ টাকা দাও।

কখনও কখনও অর্থ স্পষ্ট করার প্রয়োজনে লোপচিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন— মা'র হাতের রান্না সবসময় সুস্বাদু হয়। 

শব্দশেষের 'ও', 'ই'
অধিকন্তু অর্থে শব্দ শেষের 'ও' প্রত্যয় ও–কার ( ো ) হিসেবে নয়, '–ও' হিসেবেই যুক্ত হবে। যেমন— কোনও ('কোনো নয়), আরও ('আরো' নয়), আজও ('আজো' নয়), এবারও ('এবারো নয়), তোমারই ('তোমারি' নয়) ইত্যাদি। 

শব্দসংক্ষেপ
'মোঃ' (মোহাম্মদ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ) রূপটি ব্যক্তিনামের সাথে সম্পর্কিত। তাই এটি এবং অনূরপ শব্দগুলো বিসর্গ সহযোগে লেখা হয়৷ অন্যান্য সংক্ষিপ্তকরণের ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা (economy) অনুসরণ করা সমীচীন। যেমন— 'ডক্টর' –এর সংক্ষিপ্ত রূপ ড. (ডঃ নয়), হিসাববিজ্ঞান এর সংক্ষিপ্ত রূপ 'হিবি' বা 'হি.বি.' (হিঃ বিঃ নয়) ইত্যাদি।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post