ব্যাকরণ : সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম - ৫

সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম
পর্ব - ৫ 

বাংলা হরফে বিদেশি শব্দ লিখন বা প্রতিবর্ণীকরণ (Transliteration)
বিদেশি ও বিদেশি উৎসজাত শব্দকে বাংলা বর্ণমালায় লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট বিদেশি শব্দটির উচ্চারণ প্রধান বিবেচ্য। এ ক্ষেত্রে বাংলা এ, ঈ, ঊ, ণ, ন, স, শ, ষ, র, ড়, ঢ়শ বর্ণগুলোর ব্যবহার নিয়ে কিছু দ্বিধার কারণ থাকে। যথাসম্ভব উচ্চারণ অনুযায়ী প্রতিবর্ণীকারণ করলে এ সমস্যা এড়ানো যায়। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করা উচিত— 
  • উচ্চারণ 'অ্যা' এর মতো হলে 'অ্যা' ব্যবহৃত হবে ('এ্যা', 'এ' নয়)। যেমন : অ্যাকাডেমি, অ্যাসিড। 
  • বিদেশি (এবং অ–তৎসম) শব্দের বানানে দীর্ঘস্বরের ব্যবহার হবে না, প্রায় সবক্ষেত্রেই হ্রস্ব ই–কার ও হ্রস্ব উ–কার ব্যবহৃত হবে। কিছু সুপরিচিত নামের বানানে ব্যতিক্রম হতে পারে। যেমন : চীন৷ 
  • বিদেশি (এবং অ–তৎসম) শব্দের বানানে ড়, ঢ়, ণ –এর ব্যবহার হবে না। 
  • বিদেশি (অ–তৎসম) শব্দে স, শ, ষ –এর ব্যবহারের নিয়ম জানতে 'স, ষ, শ', এর ব্যবহারের নিয়মটি দেখুন। 

বিকল্পচিহ্ন ( / )
'বা' 'অথবা' শব্দের বিকল্প হিসেবে বা পরিবর্তনে কখনো কখনো বিকল্পচিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কমাতে ওষুধ/পানি ব্যবহার করুন। লক্ষ করুন, এখানে বিকল্পচিহ্নের ব্যবহারের কারণে বাক্যটি সংক্ষিপ্ত করা সহজ হয়েছে। অন্য কোনোভাবে এটা করা সম্ভব হতো না। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে 'বা', 'অথবা' শব্দের স্থানে বিকল্পচিহ্ন ব্যবহার সংগত নয়। যেমন : "রহিম/করিম সেখানে যাবে না" না লিখে "রহিম অথবা করিম সেখানে যাবে না" লেখাই সমীচীন। প্রসঙ্গত, তারিখ লিখতে দৃশ্যত একই চিহ্ন ব্যবহৃত হলেও সেটি বিকল্পচিহ্ন নয়৷ 

মনে রাখুন : বিকল্পচিহ্নের দুইদিকে কোন স্পেস থাকে না। 

বিনা, ছাড়া (ব্যতিত অর্থে)
'বিনা' সংশ্লিষ্ট শব্দের পরে স্বতন্ত্রভাবে বসে। যেমন : 'দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে'। শব্দের আগেও স্বতন্ত্রভাবে এটি ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন : বিনা মেঘে বজ্রপাত। 'ছাড়া' সংশ্লিষ্ট শব্দের পরে প্রায়শই স্বতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হয়। যেমন : কাজ ছাড়া আর কিছু নেই তার জীবনে। তবে শব্দের পরে যুক্তভাবেও এর ব্যবহার আছে। যেমন : লক্ষ্মীছাড়া, ছন্নছাড়া ইত্যাদি। 

বিশেষণ লেখার নিয়ম
বাংলা বিশেষণ ও বিশেষণবাচক শব্দ সাধারণত বিশেষ্যের আগে স্বতন্ত্রভাবে বসে। যেমন : কালো কোকিল, লাল জামা, মন্দ লোক, এক টাকা, তিন দিন, মৃদু বাতাস, ধীরে চলো ইত্যাদি। এইসব ক্ষেত্রে বিশেষণ ব্যবহারের উদ্দেশ্য থাকে বিশেষ্যটিকে বিশেষিত করা, ফলে বিশেষণটি বেশি গুরুত্ব পায়। তবে বিশেষ অর্থগত ব্যঞ্জনা থাকলেও কখনও কখনও বিশেষণ বিশেষ্যের সাথে যুক্তভাবে বসে। যেমন : একদিন আমিও বড়ো হব৷ মন্দলোকে নানা কথা বলবে। এইসব ক্ষেত্রে বিশেষ্য ও বিশেষণ একটি একক ধারণা বা অর্থকে বোঝায়। সাহিত্যিক ব্যবহারে অবশ্য কখনও কখনও বিশেষ্যের পরেও বিশেষণ বসতে পারে। যেমন : 'যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ', 'যে ফুল লাল', 'পিতা ভয়ংকর'। 

বিস্ময়চিহ্ন ( ! )
বিস্ময়চিহ্নের আগে একটি 'স্পেস' ব্যবহার করা সংগত। উল্লেখ্য, এককালে সম্বোধনসূচক শব্দের পরে বিস্ময়চিহ্নের ব্যবহার হলেও এখন তার পরিবর্তে কমা ( , ) ব্যবহৃত হয়। 

–বিহীন
'বিহীন' শব্দের পরে যুক্তভাবে বসে। যেমন : লেজবিহীন, কারণবিহীন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post