সরকারি কাজে প্রমিত বাংলা ব্যবহারের নিয়ম
পর্ব - ১
অধীন/ অধীনে/ অধীনস্থ
'অধীনস্থ' ভুল শব্দ। এর কোনও প্রয়োগ চলবে না। 'অধীন' ও 'অধীনে' ব্যবহৃত হয়, তবে কিছুটা ভিন্ন অর্থে। যেমন— 'এটি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি দপ্তর।' 'সালাম সাহেব আমার অধীনে কাজ করেন।'
ই–কার, ঈ–কার (ি, ী)
সব অ–তৎসম (তদ্ভব, দেশি, বিদেশি) শব্দে সবসময়ই ই–কার (ি) বসবে। যেমন— শাড়ি, বাড়ি, দাদি, রপ্তানি, বুজরকি ইত্যাদি।
দেশ, ভাষা জাতির নাম ই–কার (ি) দিয়ে লেখা হয়। যেমন : ইংরেজি, জার্মানি, মারাঠি ইত্যাদি।
ব্যতিক্রম : চীন, চীনা।
ইত্যাদি/ প্রভূতি
'ইত্যাদি' এবং 'প্রভূতি' –র মধ্যে কার্যত অর্থগত কোনও পার্থক্য নেই; এই দুটি শব্দ বিকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে।
উ–কার, ঊ–কার (ু, ূ)
অ–তৎসম (তদ্ভব, দেশি, বিদেশি) শব্দে সবসময়ই উ–কার (ু) বসবে। যেমন—
ঊনবিংশ (তৎসম) — উনিশ (তদ্ভব)
ধূলি (তৎসম) — ধুলা/ধুলো (তদ্ভব)
পূর্ব — পুব
'অদ্ভুত' ছাড়া আর সব শব্দে 'ভূত' ঊ–কার দিয়ে লেখা হয়। যেমন— কিম্ভূতকিমাকার, ভূতপূর্ব, অদ্ভূতপূর্ব।
উদ্দেশ্যে/ উদ্দেশে
'উদ্দেশ্যে' অর্থ 'প্রতি', লক্ষ্য করে', যেমন— 'সবার উদ্দেশে সালাম জানাই', 'তিনি জনতার উদ্দেশে বক্তৃতা দিলেন' ইত্যাদি। অন্যদিকে, 'উদ্দেশ্যে' অর্থ 'লক্ষ্য নিয়ে', 'অভিপ্রায়ে', যেমন— 'তুমি যে–উদ্দেশ্যে এখানে এসেছ তা সফল হবে।'
উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘ ’ / “ ” )
উদ্ধৃত শব্দের দুইদিকে একক উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ‘ ’ ) এবং বাক্যাংশ বা বাক্যের দুইদিকে দ্বৈত উদ্ধৃতিচিহ্ন
( “ ” ) বসবে। উদ্ধৃত একাধিক অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে প্রতিটি অনুচ্ছেদের শুরুতে কেবল শুরুর উদ্ধৃতিচিহ্ন ( “ ) বসবে। সবগুলো অনুচ্ছেদ শেষ হবার পরই কেবল শেষের উদ্ধৃতিচিহ্ন ( ” ) বসবে।
উপলক্ষ/ উপলক্ষ্য
২০১৬ সালের বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান–এ 'উপলক্ষ' বাদ দিয়ে 'উপলক্ষ্য' গ্রহণ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত যৌক্তিক। সংসদ বাংলা অভিধান–এ অবশ্য দুটিকেই রাখা হয়েছে। তবে 'উপলক্ষ্য' —ই গ্রহণযোগ্য, সুতরাং 'উপলক্ষ' না লেখাই সমীচীন।
উপসর্গের লিখনরীতি
উপসর্গগুলো স্বতন্ত্র শব্দ নয়, এগুলো অন্য শব্দের আগে যুক্তভাবে বসে। তিন প্রকার উপসর্গ আছে : সংস্কৃত, খাঁটি বাংলা ও বিদেশি। এগুলো সবই অন্য শব্দের পূর্বে যুক্তভাবে বসবে। যেমন—
- প্র (প্রমার্জন)
- আম (আমজনতা)
- পরা (পরাজয়)
- লা (লাজবাব)
- অপ (অপসংস্কৃতি)
- পাতি (পাতিলেবু)
- উপ (উপসচিব)
- অতি (অতিবৃষ্টি)
- অনা (অনাবৃষ্টি)
- অধি (অধিভুক্ত)
- অজ (অজপাড়াগাঁ)
- ইতি (ইতিকর্তব্য)
উল্লিখিত/ উল্লেখিত
উপরে/ আগে লিখিত', 'পূর্বোক্ত' অর্থে 'উল্লিখিত' ব্যবহৃত হয়। 'উল্লেখকৃত' অর্থে 'উল্লেখিত' ব্যবহারের দৃষ্টান্ত নেই। এটি না লেখাই শ্রেয়।
ঋ–কার, র–ফলা (ৃ , ্র)
বিদেশি শব্দে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ঋ–কারের (ৃ) পরিবর্তে ই–কার সহযোগে র–ফলা (্র) ব্যবহৃত হয়। যেমন :
- খৃষ্টাব্দ (×) = খ্রিষ্টাব্দ
- বৃটিশ (×) = ব্রিটিশ
এ/ এই, ও/ওই, যে/যেই, সে/ সেই
বিশেষণের মতো অর্থ অনুযায়ী 'এ', 'ও', 'যে', 'সে', কখনও স্বতন্ত্র শব্দ হিসেবে, কখনও পরবর্তী শব্দের সঙ্গে যুক্তভাবে ব্যবহৃত হবে। যেমন— 'এবেলা (দিনের এই সময়ে) ভাত খেয়ো না', 'ওবেলা (দিনের পরবর্তী ভাগে) এসো', 'ও জিনিস (একটা নির্দিষ্ট জিনিস) না নেওয়াই ভালো', 'এ লোকটা (একটা নির্দিষ্ট লোক) তো কথাই শুনছে না', 'যেদিন (যখন) তুমি আসবে', 'যেদিন গিয়েছে', 'সে বেচারা', 'সেসব আর বোলো না', ইত্যাদি। এই, সেই, যেই যথাক্রমে এ, সে, যে–এর সমার্থক। আবার কখনও কখনও তারা আরও সুনির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়, অর্থাৎ এরা সংশ্লিষ্ট বিশেষ্যকে আরও সুনির্দিষ্ট করে বোঝায়, তবে সেক্ষেত্রে হাইফেন ব্যবহার করাই শ্রেয়। যেমন— 'এ-ই সেই লোক', 'সে–ই যাবে', 'যে–ই কথাটা বলুক', 'ও–ই আসল লোক' ইত্যাদি।