HSC 2021 : পৌরনীতি ও সুশাসন : অ্যাসাইনমেন্ট

তৃতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
পৌরনীতি ও সুশাসন (২য় পত্র)
৪র্থ সপ্তাহ

১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা

নমুনা সমাধান

(ক) ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপটও বৈশিষ্ট্য :
১৯৩৫ সালের নতুন ভারত শাসন আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণ অনুধাবন করা যায়।

১) গণ আন্দোলন : ১৯১৯ সালের মন্ট-ফোর্ড সংস্কার আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধীজির নেতৃত্বে ব্যাপক গণ আন্দোলন শুরু হয়।

২)বিপ্লবী কার্যকলাপ : এই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

৩) জাতীয়তাবাদের প্রভাব : ভারতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।

৪) সাইমন কমিশনের রিপোর্ট : ১৯৩০ সালে সাইমন কমিশন ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যে রিপোর্ট দেয় তা ভারত শাসন আইন প্রণয়নের পথ খুলে দেয়।

৫) গোলটেবিল বৈঠক : সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।এই আলোচনা গোলটেবিল বৈঠক নামে পরিচিত। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সাংবিধানিক সংস্কার করতে বাধ্য হয়।

৬) শ্বেতপত্র প্রকাশ : এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৩ সালে একটি 'শ্বেতপত্র' প্রকাশ করতে বাধ্য হয় যার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ করে।

আইনের শর্তাবলী (বৈশিষ্ট্য) এই আইনের শর্তাবলী বিশ্লেষণ করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে পড়ে।

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে :
১) ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন : এই আইনে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। দেশীয় রাজ্যগুলির যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেওয়া ঐচ্ছিক হিসাবে গন্য হয়।

২) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনস্ভা : কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। নিম্নকক্ষ ফেডারেল এসেম্বলি ৩৭৫ জন এবং উচ্চকক্ষ কাউন্সিল অব স্টেট ২৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে বলে ঘোষিত হয়।

৩) সাম্প্রদায়িক নির্বাচন : মুসলিম ও তফসিল সদস্যদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্হা করা হয়।

৪) মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্ব : গভর্নর জেনারেলের অধীনে একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার দেওয়া হয়। মন্ত্রীরা কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন বলে জানানো হয়।

৫) শাসন ক্ষমতা বিভক্তিকরণ : কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ক্ষমতকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এই দুভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক, ব্যাংক ইত্যাদি সংরক্ষিত বিষয়ে গভর্নর জেনারেলের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়।

৬) গভর্নর জেনারেলের চূড়ান্ত ক্ষমতা : গভর্নর জেনারেল শাসন পরিচালনায় চূড়ান্ত ক্ষমা লাভ করেন। এছাড়া 'সোচ্ছাধীন ক্ষমতা' ও 'স্ববিবেচনাপ্রসূত ক্ষমতা' ভোগ করতেন।

৭) কেন্দ্র ও প্রদেশের ক্ষমতার তালিকা : কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের উদ্দেশ্যে তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়। ক) কেন্দ্রীয় তালিকা, খ) প্রাদেশিক তালিকা, গ) যুগ্ম তালিকা।

৮) গভর্নর জেলারেলের দায়বদ্ধতা : গভর্নর জেনারেল তাঁর কাজের জন্য সরাসরি ভারত-সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন।

প্রাদেশিক সরকারের ক্ষেত্রে :
১) স্বায়ত্তশাসন : প্রদেশগুলিতে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

২) প্রাদেশিক আইনসভা : বাংলা-সহ ছয়টি প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট এবং অবশিষ্ট পাচঁটিতে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রাখা হয়।

৩) দায়বদ্ধতা : প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা তাঁদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।

৪) গভর্নরের দায়িত্ব : কেন্দ্রের অনুকরণে প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা, ধর্ম ইত্যাদির দায়িত্ব গভর্নরের হাতে দেওয়া হয়।


৫) গভর্নরের চূড়ান্ত ক্ষমতা : প্রদেশের গভর্নর আইন প্রণয়নও নাকচ করার অধকারী হন।

৬) পৃথক নির্বাচন : কেন্দ্রের মতই মুসলিম ও তপসিল জাতিদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

(খ) দ্বি-জাতি তত্ত্বের তাৎপর্য : ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ভারতকে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত করার নির্ণায়ক আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রাক্কালে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের ধারণার উন্মেষ ঘটান। এ তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের ভিত্তি তৈরি করেছিল। কংগ্রেস সভাপতি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে কেবল দুটি দলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। একটি হলো কংগ্রেস এবং অপরটি হলো সরকার এবং বাকি দলগুলো কংগ্রেস অন্তর্ভুক্ত। মুসলমান মৃত্যুদণ্ড অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু-মুসলিম দলগুলো কংগ্রেস অন্তর্ভুক্ত। মুসলমান মৃত্যুদণ্ড অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু-মুসলিম সমস্যা সমাধানের জন্য হিন্দু নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করেও ব্যর্থ হন। পরে জিন্নাহ উপলব্ধি করেন যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকলে মুসলমানের স্বার্থ রক্ষা পাবে না।

১৯৪০ সালের ২২ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণ দ্বিজাতি তত্ত্বের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এভাবে, ভারতবর্ষের দুটি পৃথক জাতির বসবাস হিন্দু ও মুসলমান মুসলমানের কৃষ্টি স্বতন্ত্র, কালচার স্বতন্ত্র, আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বতন্ত্র, তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র। সুতরাং জাতীয়তা যেকোনো মানদণ্ড অনুযায়ী ভারতের মুসলমানরা একটি জাতি। এভাবে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়। যার প্রতিফলন ঘটে ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে। পরবর্তীতে এ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

(গ) লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য : ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলার কৃতি সন্তান শেরে বাংলা একে ফজলুল হক যে প্রস্তাব পাস করেন সে প্রস্তাব লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত। লাহোর প্রস্তাবে বলা হয়, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সন্নিহিত স্থানসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে যেসব স্থানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলসমূহের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।এসব স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত সার্বভৌম। রাহুল প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্রের রূপান্তরিত হয়।

বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য : ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে All India Muslim League -এর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণে জন্য যে অধিবেশন আহ্বান করা হয় ঐ অধিবেশনের লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়।

নিচে লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো :
১. ভারতুবর্ষকে বিভক্ত করে এর উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব অঞ্চলে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা গুলো নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে হবে।

২. উল্লিখিত স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের অধীন ইউনিট বা প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম হবে।

৩. ভারতের অন্যান্য হিন্দু অঞ্চলগুলোর সমন্বয়ে পৃথক হিন্দু রাষ্ট্র গঠিত হবে।

৪. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রস্তাবের তাৎপর্য সাথে পরামর্শ ভিত্তিতে তাদের স্বার্থ অধিকার ও রক্ষার জন্য সংবিধানের পর্যাপ্ত ক্ষমতা রাখতে হবে।

৫. প্রতিরক্ষা, পরস্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যগুলোর উপর ন্যস্ত থাকবে।

তাৎপর্য : ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অবিভক্ত ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করে। লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হবার পর মুসলিম লীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ উপস্থিত হয়।

মুসলমানের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা বোধ জাগ্রত হয়। অপরদিকে হিন্দুরা লাহোর প্রস্তাবকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। গান্ধীর মতে, লাহোর প্রস্তাব মেনে নেওয়ার অর্থ ‘ভারতকে ব্যবচ্ছেদ করা ‘এবং তা হবে একটি পাপ কাজ'।জওহরলাল নেহেরু বলেন, লাহোর প্রস্তাব মেনে নিয়ে ভারত বই পড়বে বলকান রাষ্ট্র গুলোর ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত কর্তৃত্ববাদী পুলিশী রাষ্ট্র। লাহোর প্রস্তাব কে মুসলিম লীগ বিরোধী পত্রিকাগুলো 'পাকিস্তান প্রস্তাব' বলে অভিহিত করে সমালোচনা শুরু করে। তাদের অপবাদই পরে মুসলিম লীগের জন্য সুবাদে পরিণত হয়। লাহোর প্রস্তাব ‘পাকিস্তান প্রস্তাব' নামে প্রস্তাব' বলে অভিহিত করে সমালোচনা শুরু করে। তাদের অপবাদই পরে মুসলিম লীগের জন্য সুবাদে পরিণত হয়। লাহোর প্রস্তাব ‘পাকিস্তান প্রস্তাব' নামে পরিচিতি অর্জন করে। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়।

(ঘ) ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য : ১৯৪৭ সালের ৩ জুন লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত স্বাধীনতা আইনের পরিকল্পনা করেন, যা ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ হয়। ভারত শাসনব্যবস্থায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই আইন ছিল সর্বশেষ পদক্ষেপ । নিচে ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো দেওয়া হলো :

১। স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি : এই আইনের ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং তারা ডোমিনিয়ন মর্যাদা লাভ করে।

২। নতুন প্রদেশ সৃষ্টি : পূর্ব-বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা নামে দুটি আলাদা প্রদেশের সৃষ্টি হয়।

৩। ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার : ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব থাকবে না।

৪। গভর্নর জেনারেল নিয়োগ ও ভারত সচিবের পদ বিলুপ্তি : নবগঠিত রাষ্ট্রসমূহের জন্য পৃথক গভর্নর জেনারেল হবেন রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি। এটার মাধ্যমে ভারতে সচিবের পদ বিলুপ্ত করা হয়।

৫। গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের ক্ষমতা হ্রাস : ভারত স্বাধীনতা আইনে গভর্নর জেনারেল এবং গভর্নরের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা, বিচার-বুদ্ধিজনিত ক্ষমতা এবং ‘বিশেষ দায়িত্ব' এর বিলোপ সাধিত হয়। ভারত স্বাধীনতা আইনে বলা হয় গভর্নর জেনারেল ডোমিনিয়ন মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

৬। আইন কার্যকরীর সময় : ১৯৪৮ সালের ৩১ মায়ের মধ্যে এই আইনের বিভিন্ন ধারা কার্যকর করতে হবে।

৭। ব্রিটিশ রাজার “ভারত সম্রাট উপাধি” বিলোপ : ভারত স্বাধীনতা আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে ব্রিটিশ রাজার ভারত সম্রাট উপাধি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

সুতরাং, বলা যায় যে- ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ আইনের ফলেই ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।

দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
পৌরনীতি ও সুশাসন (২য় পত্র)
৩য় সপ্তাহ

১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা।

নির্দেশনা :
  • ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন
  • দ্বি-জাতি তত্ত্ব
  • লোহোর প্রস্তাব
  • ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন

নমুনা সমাধান

(ক) ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপটও বৈশিষ্ট্য : ১৯৩৫ সালের নতুন ভারত শাসন আইন প্রণয়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করলে এর কারণ অনুধাবন করা যায়।

১) গণ আন্দোলন : ১৯১৯ সালের মন্ট-ফোর্ড সংস্কার আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধীজির নেতৃত্বে ব্যাপক গণ আন্দোলন শুরু হয়।

২) বিপ্লবী কার্যকলাপ : এই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

৩) জাতীয়তাবাদের প্রভাব : ভারতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।

৪) সাইমন কমিশনের রিপোর্ট : ১৯৩০ সালে সাইমন কমিশন ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন বিষয়ে যে রিপোর্ট দেয় তা ভারত শাসন আইন প্রণয়নের পথ খুলে দেয়।

৫) গোলটেবিল বৈঠক : সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে।এই আলোচনা গোলটেবিল বৈঠক নামে পরিচিত। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সাংবিধানিক সংস্কার করতে বাধ্য হয়।

৬) শ্বেতপত্র প্রকাশ : এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৩ সালে একটি 'শ্বেতপত্র' প্রকাশ করতে বাধ্য হয় যার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ করে।

আইনের শর্তাবলী (বৈশিষ্ট্য) : এই আইনের শর্তাবলী বিশ্লেষণ করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে পড়ে।

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে

১) ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন : এই আইনে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। দেশীয় রাজ্যগুলির যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেওয়া ঐচ্ছিক হিসাবে গন্য হয়।

২) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনস্ভা : কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সিন্ধান্ত নেওয়া হয়। নিম্নকক্ষ ফেডারেল এসেম্বলি ৩৭৫ জন এবং উচ্চকক্ষ কাউন্সিল অব স্টেট ২৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে বলে ঘোষিত হয়।

৩) সাম্প্রদায়িক নির্বাচন : মুসলিম ও তফসিল সদস্যদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্হা করা হয়।

৪) মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্ব : গভর্নর জেনারেলের অধীনে একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার দেওয়া হয়। মন্ত্রীরা কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন বলে জানানো হয়।

৫) শাসন ক্ষমতা বিভক্তিকরণ : কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ক্ষমতকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এই দুভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক, ব্যাংক ইত্যাদি সংরক্ষিত বিষয়ে গভর্নর জেনারেলের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়।

৬) গভর্নর জেনারেলের চূড়ান্ত ক্ষমতা : গভর্নর জেনারেল শাসন পরিচালনায় চূড়ান্ত ক্ষমা লাভ করেন। এছাড়া 'সোচ্ছাধীন ক্ষমতা' ও 'স্ববিবেচনাপ্রসূত ক্ষমতা' ভোগ করতেন।

৭) কেন্দ্র ও প্রদেশের ক্ষমতার তালিকা : কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের উদ্দেশ্যে তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়। ক) কেন্দ্রীয় তালিকা, খ) প্রাদেশিক তালিকা, গ) যুগ্ম তালিকা।

৮) গভর্নর জেলারেলের দায়বদ্ধতা : গভর্নর জেনারেল তাঁর কাজের জন্য সরাসরি ভারত-সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন।

প্রাদেশিক সরকারের ক্ষেত্রে

১) স্বায়ত্তশাসন : প্রদেশগুলিতে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

২) প্রাদেশিক আইনসভা : বাংলা-সহ ছয়টি প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট এবং অবশিষ্ট পাচঁটিতে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রাখা হয়।

৩) দায়বদ্ধতা : প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা তাঁদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।

৪) গভর্নরের দায়িত্ব : কেন্দ্রের অনুকরণে প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা, ধর্ম ইত্যাদির দায়িত্ব গভর্নরের হাতে দেওয়া হয়।

৫) গভর্নরের চূড়ান্ত ক্ষমতা : প্রদেশের গভর্নর আইন প্রণয়নও নাকচ করার অধকারী হন।

৬) পৃথক নির্বাচন : কেন্দ্রের মতই মুসলিম ও তপসিল জাতিদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

(খ) দ্বি - জাতি তত্ত্বের তাৎপর্য : ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ভারতকে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত করার নির্ণায়ক আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রাক্কালে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের ধারণার উন্মেষ ঘটান। এ তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের ভিত্তি তৈরি করেছিল। কংগ্রেস সভাপতি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে কেবল দুটি দলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। একটি হলো কংগ্রেস এবং অপরটি হলো সরকার এবং বাকি দলগুলো কংগ্রেস অন্তর্ভুক্ত। মুসলমান মৃত্যুদণ্ড অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু-মুসলিম দলগুলো কংগ্রেস অন্তর্ভুক্ত। মুসলমান মৃত্যুদণ্ড অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু-মুসলিম সমস্যা সমাধানের জন্য হিন্দু নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করেও ব্যর্থ হন। পরে জিন্নাহ উপলব্ধি করেন যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকলে মুসলমানের স্বার্থ রক্ষা পাবে না।

১৯৪০ সালের ২২ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণ দ্বিজাতি তত্ত্বের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এভাবে, ভারতবর্ষের দুটি পৃথক জাতির বসবাস হিন্দু ও মুসলমান মুসলমানের কৃষ্টি স্বতন্ত্র, কালচার স্বতন্ত্র, আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বতন্ত্র, তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র।সুতরাং জাতীয়তা যেকোনো মানদণ্ড অনুযায়ী ভারতের মুসলমানরা একটি জাতি। এভাবে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়। যার প্রতিফলন ঘটে ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে। পরবর্তীতে এ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

(গ) লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য : ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলার কৃতি সন্তান শেরে বাংলা একে ফজলুল হক যে প্রস্তাব পাস করেন সে প্রস্তাব লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত।লাহোর প্রস্তাবে বলা হয়, ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সন্নিহিত স্থানসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে যেসব স্থানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলসমূহের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।এসব স্বাধীন রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত সার্বভৌম। রাহুল প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্রের রূপান্তরিত হয়।

বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য : ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে All India Muslim League -এর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণে জন্য যে অধিবেশন আহ্বান করা হয় ঐ অধিবেশনের লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়।

নিচে লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো:
১. ভারতুবর্ষকে বিভক্ত করে এর উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব অঞ্চলে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা গুলো নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে হবে।

২. উল্লিখিত স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের অধীন ইউনিট বা প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম হবে।

৩. ভারতের অন্যান্য হিন্দু অঞ্চলগুলোর সমন্বয়ে পৃথক হিন্দু রাষ্ট্র গঠিত হবে।

৪. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রস্তাবের তাৎপর্য সাথে পরামর্শ ভিত্তিতে তাদের স্বার্থ অধিকার ও রক্ষার জন্য সংবিধানের পর্যাপ্ত ক্ষমতা রাখতে হবে।

৫. প্রতিরক্ষা, পরস্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যগুলোর উপর ন্যস্ত থাকবে।

তাৎপর্য : ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অবিভক্ত ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করে। লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হবার পর মুসলিম লীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ উপস্থিত হয়।

মুসলমানের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা বোধ জাগ্রত হয়। অপরদিকে হিন্দুরা লাহোর প্রস্তাবকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। গান্ধীর মতে, লাহোর প্রস্তাব মেনে নেওয়ার অর্থ ‘ভারতকে ব্যবচ্ছেদ করা ‘এবং তা হবে একটি পাপ কাজ'।জওহরলাল নেহেরু বলেন, লাহোর প্রস্তাব মেনে নিয়ে ভারত বই পড়বে বলকান রাষ্ট্র গুলোর ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত কর্তৃত্ববাদী পুলিশী রাষ্ট্র। লাহোর প্রস্তাব কে মুসলিম লীগ বিরোধী পত্রিকাগুলো 'পাকিস্তান প্রস্তাব' বলে অভিহিত করে সমালোচনা শুরু করে।

তাদের অপবাদই পরে মুসলিম লীগের জন্য সুবাদে পরিণত হয়। লাহোর প্রস্তাব ‘পাকিস্তান প্রস্তাব' নামে প্রস্তাব' বলে অভিহিত করে সমালোচনা শুরু করে।

তাদের অপবাদই পরে মুসলিম লীগের জন্য সুবাদে পরিণত হয়। লাহোর প্রস্তাব ‘পাকিস্তান প্রস্তাব' নামে পরিচিতি অর্জন করে। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়।

(ঘ) ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য : ১৯৪৭ সালের ৩ জুন লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত স্বাধীনতা আইনের পরিকল্পনা করেন, যা ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ হয়। ভারত শাসনব্যবস্থায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই আইন ছিল সর্বশেষ পদক্ষেপ। নিচে ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো দেওয়া হলো :

১। স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি : এই আইনের ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং তারা ডোমিনিয়ন মর্যাদা লাভ করে।

২। নতুন প্রদেশ সৃষ্টি : পূর্ব-বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা নামে দুটি আলাদা প্রদেশের সৃষ্টি হয়।

৩। ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার : ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব থাকবে না।

৪। গভর্নর জেনারেল নিয়োগ ও ভারত সচিবের পদ বিলুপ্তি : নবগঠিত রাষ্ট্রসমূহের জন্য পৃথক গভর্নর জেনারেল হবেন রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি। এটার মাধ্যমে ভারতে সচিবের পদ বিলুপ্ত করা হয়।


৫। গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের ক্ষমতা হ্রাস : ভারত স্বাধীনতা আইনে গভর্নর জেনারেল এবং গভর্নরের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা, বিচার-বুদ্ধিজনিত ক্ষমতা এবং ‘বিশেষ দায়িত্ব' এর বিলোপ সাধিত হয়। ভারত স্বাধীনতা আইনে বলা হয় গভর্নর জেনারেল ডোমিনিয়ন মন্ত্রিপরিষদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।

৬। আইন কার্যকরীর সময় : ১৯৪৮ সালের ৩১ মায়ের মধ্যে এই আইনের বিভিন্ন ধারা কার্যকর করতে হবে।

৭। ব্রিটিশ রাজার “ভারত সম্রাট উপাধি” বিলোপ : ভারত স্বাধীনতা আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে ব্রিটিশ রাজার ভারত সম্রাট উপাধি বিলুপ্ত হয়ে যায়।

সুতরাং, বলা যায় যে- ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ আইনের ফলেই ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।


প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
পৌরনীতি ও সুশাসন (১ম পত্র)
১ম সপ্তাহ

“নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাই পৌরনীতি।” ই. এম. হোয়াইটের এই সংজ্ঞার আলোকে পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তু ও পরিধি ক্রমিবিকাশ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর।

নমুনা সমাধান

ভূমিকা : রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকদের এবং অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে আলােচনার মধ্য দিয়ে জ্ঞানচর্চার সুনির্দিষ্ট একটি ধারা হিসাবে পৌরনীতি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আধুনিককালে প্রত্যেক নাগরিক ও সংগঠন রাষ্ট্রের নিকট হতে অধিকতর দায়িত্বসম্পন্ন সেবা প্রত্যাশা করে। প্রকৃত বাস্তবতায়, পৌরনীতির আলােচনায় সুশাসন বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।

(ক) পৌরনীতি ও সুশাসনের ধারণা : সংস্কৃত ভাষায় নগরকে (City) ‘পুর’ বা ‘পুরী’ এবং নগরে বসবাসকারীদেরকে পুরবাসী বলা হয়। যার জন্য নাগরিক জীবনের অপর নাম পৌর জীবন এবং নাগরিক জীবনের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কিত বিদ্যার নাম পৌরনীতি। প্রাচীন গ্রিসে এক একটি নগর ছিল এক একটি রাষ্ট্র। রাষ্ট্রগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল এথেন্স এবং স্পার্টা। এ নগর রাষ্ট্রগুলাের আয়তন ও জনসংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম। নগর রাষ্ট্রের সকল জনগণকে নাগরিক বলা হতাে না। কেবল নগর রাষ্ট্রের যারা রাজনৈতিক অধিকার ভােগ করতে অর্থাৎ রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনায় যারা অংশগ্রহণ করতাে তাদেরকেই নাগরিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হতাে। বর্তমানে বরং পৌরনীতিকে কেবল শব্দগত অর্থে আলােচনা করা হয় না। কেননা বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্রগুলাে গ্রিসের নগররাষ্ট্র (City State) এর মতাে নয়, এগুলাে এখন জাতি রাষ্ট্র (Nation State) হিসেবেই পরিগণিত। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রগুলাের অপেক্ষা বর্তমান আধুনিক জাতি রাষ্ট্রগুলাে আয়তনে বড় এবং জনসংখ্যাও বেশি। এসব জাতি রাষ্ট্রের নাগরিকদের জীবন এবং কার্যাবলি জটিল ও বহুমূখী। আধুনিক জাতি রাষ্ট্রে নাগরিকদের ভূমিকা ও কার্যাবলি, আচার - আচরণ এবং তাদের বিভিন্ন আর্থ - সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারাবাহিক পর্যালােচনার মাধ্যমে যে শাস্ত্র আদর্শ নাগরিক জীবনের জ্ঞান দান করে তাই হলাে পৌরনীতি।

সুশাসন প্রত্যয়টি পৌরনীতির সাম্প্রতিক সংযােজন : সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Good Governance’। সুশাসনকে স্পষ্টভাবে বুঝতে হলে শাসন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। Governance হল একটি বহুমাত্রিক ধারণা যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, ক্ষেত্র এবং প্রেক্ষাপট থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ‘Governmen’ সুলতই Governance শব্দটি এসেছে ‘kubernao’ নামক ল্যাটিন শব্দ থেকে, যার অর্থ পরিচালনা করা। সাধারণত Governance বা শাসন এমন একটি পদ্ধতিকে বােঝায়, যেখানে একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধিব কোনাে সংস্থা, সমাজ বা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

(খ) পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি : পরিধি ব্যাপক। পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি সম্পর্কে নিম্নে আলােচনা করা হল : 

১। নাগরিকতা বিষয়ক : পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিকের উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা করা পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, সচেতনতা, সুনাগরিকতা, নাগরিকতা অর্জন ও বিলােপ, নাগরিকতার অর্থ ও প্রকৃতি, সুনাগরিকের গুণাবলি প্রভৃতি সম্পর্কে আলােচনা করে। 

২। মৌলিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত : মানব সভ্যতার ইতিহাসে পরিবার হল আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। কালের বিবর্তন ধারায় পরিবারের সম্প্রসারণ হয়েছে এবং গড়ে উঠেছে রাষ্ট্র ও অন্যান্য বহুবিধ সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। পৌরনীতি ও সুশাসন পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশ, রাষ্ট্রের কার্যাবলি প্রভৃতি মৌলিক প্রতিষ্ঠান পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্তর্ভূক্ত তা রাজনৈতিক।

৩। প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলােচনা : পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ওৎপ্রােতভাবে জড়িত। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের ধারণা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি, রাষ্ট্রের কার্যাবলি, রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ, রাষ্ট্রের উপাদান, সংবিধান, সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ, সংবিধানের বৈশিষ্ট্য, সরকার, সরকারের শ্রেণিবিভাগ, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ, জনমত, জনমতের বাহন, নির্বাচকমন্ডলী, রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি পৌরনীতি ও সুশাসনের আলােচনার অন্তর্ভুক্ত। 

৪। সামাজিক ও রাজনৈতিক বিমর্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। আইন, আইনের উৎস ও প্রকৃতি, আইন ও নৈতিকতা স্বাধীনতা, স্বাধীনতার প্রকৃতি, স্বাধীনতার রক্ষাকবচ, সাম্য ও স্বাধীনতা, সাম্যের প্রকারভেদ প্রভৃতি সম্পর্কে পৌরনীতি ও সুশাসন আলােচনা করে। 

৫। রাজনৈতিক ঘটনাবলি : পৌরনীতি ও বাংলাদেশে পৌরনীতি ও সুশাসন পলাশীপন রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে আলােচনা করে। যেমন যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৪০ সালের লাহাের প্রস্তাব, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক অভ্যত্থান ইত্যাদি রাজনৈতিক পর্যায় সম্পর্কে আলােচনা করে। 

৬। সুশাসন সম্পর্কে আলােচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্রের সুশাসনের বহুমাত্রিক ধারণা সম্পর্কে আলােচনা করে। সশাসনের উপাদান সুশাসনের সমস্যা, সুশাসনের সমস্যার সমাধান, সুশাসনের সমস্যা সমাধানে সরকার ও জনগণের ভূমিকা সম্পর্কে পৌরনীতি ও সুশাসন আলােচনা করে।

৭। নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলােচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের বর্তমান স্বরূপ সম্পর্কে আলােচনা করে এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের আদর্শ ও স্বরূপের ইঙ্গিত প্রদান করে।

৮। নাগরিকের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিক নিয়ে আলােচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় সংস্থার (যেমন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি) গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিয়ে আলােচনা করে | নাগরিকের জাতীয় বিষয় (যেমন, স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন জাতীয় নেতার অবদান, দেশ রক্ষায় নাগরিকের ভূমিকা, জাতীয় রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ ) সম্পর্কে আলােচনা করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন এবং বিভিন্ন ঘটনাবলি সম্পর্কেও পৌরনীতি ও সুশাসন আলােচনা করে। 

৯৷ নাগরিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি : পৌরনীতি ও সুশাসন আধুনিক নাগরিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়াবলি নিয়ে আলােচনা করে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানও পাওয়া যায় এর মাধ্যমে। যেমন- ইভটিজিং, দুর্নীতি, ইলেকট্রনিক গভর্নেন্স (ই-গভর্নেন্স), দারিদ্র বিমােচনের মত বিষয়গুলির আলােচনা পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধিকে সমৃদ্ধ করেছে।
 
১০। সুশাসন ও ই - গভর্নেন্স : পৌরনীতি ও সুশাসন বর্তমান সময়ে সুশাসন ও ই গভর্নেন্স নিয়ে আলােচনা করে। সরকার কিভাবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন আলােচনা করে। পরিশেষে বলা যায় যে, পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। নাগরিকের জীবন ও কার্যাবলি যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধিও ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত 

(গ) সুশাসনের বৈশিষ্ট্য : সুশাসন হলাে "রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ক।" আর এ সম্পর্ক হতে পারে কয়েক ধরনের। তবে যেহেতু প্রশাসকের জবাবদিহিতা, বৈধতা, স্বচ্ছতা, বাক স্বাধানত; বিচার বিভাগে  স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন প্রভৃতি ছাড়া একটি দেশের সশাসন ভাবা যায় না সশসান ব্যবসায় শাসক ও শাসিতের মধ্যে আস্থায় সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই আস্থার সম্পর্ক যত শক্তিশালী হবে, সুশাসন তত মজবুত হবে এ ভাবনার কোন বিকল্প নেই। সুশাসনের বৈশিষ্ট্যগুলাে হচ্ছে - স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা জনগণের নিকট গ্রহণযােগ্যতা, স্বাধীন প্রচার মাধ্যমে, দুর্নীতিমুক্ত অংশগ্রহণমূলক, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জনবান্ধব প্রশাসন, জীবন ঘনিষ্ঠ ও কল্যাণমূলক, সমতা, জনগণের নিকট গ্রহণযােগ্যতা, দক্ষতা। 

(কেউ বিস্তারিত লিখতে চাইলে নিচের পয়েন্ট গুলাে লিখতে পারাে)

সুশাসনের এই চরিত্র বা বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে আলােচনা করলে তা কয়েকটি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারােপ করে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হল :
 
১. অংশগ্রহণ : নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শাসনের কাজে সকলের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ অংশগ্রহণ হচ্ছে সুশাসনের অন্যতম ভিত্তি। রাষ্ট্রের আয়তন ও জনসংখ্যা অধিক হওয়ার কারণে বর্তমানকালে প্রত্যক্ষভাবে সকলে শাসন কার্যে অংশগ্রহণ করতে পারে না। সে কারণে পরােক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যম হচ্ছে বৈধ প্রতিষ্ঠানসমূহ | অংশগ্রহনের অর্থ হচ্ছে, কার্যকরী যে কোন সংগঠন গড়ে তােলার স্বাধীনতা এবং এসব সংগঠনের মাধ্যমে মতামত প্রকাশের অবারিত সুযােগ। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের সুশীল সমাজকেও নিরপেক্ষ, কল্যাণকর ও সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সুসংগঠিত থাকতে হবে। 

২. আইনের শাসন : সুশাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আইনের শাসন। সুশাসনের জন্য এমন আইনগত কাঠামাের উপস্থিতি প্রয়ােজন যা আইন প্রয়ােগের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে সক্ষম। নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়ােগের বিশেষভাবে প্রয়ােজন মানবাধিকার সংরক্ষণ, বিশেষ করে চরম দরিদ্র ও দরিদ্র জনগােষ্ঠী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য। আবার এসব কিছুর জন্য প্রয়ােজন স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত আইন প্রয়ােগকারী সংস্থা। 

৩. স্বচ্ছতা : সাধারণভাবে স্বচ্ছতা বলতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ও তা বাস্তবায়নে আইনসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করাকে বােঝায়। কেবল তাই নয়, স্বচ্ছতা দ্বারা এটিও বুঝানাে হয় যে, আইনসম্মতভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যারা প্রভাবিত হবে তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তথ্য প্রবাহ অবাধ করা এবং তথ্য জানার অধিকার উন্মুক্ত করা। একথার অর্থ হচ্ছে তথ্য প্রবাহ যেন সকল স্তরের জনগণের কাছে সহজবােধ্য হয় এবং বিভিন্ন মাধ্যমে সকলের কাছে পৌঁছায়। 

৪. সংবেদনশীলতা : সংবেদনশীলতা হচ্ছে শাসনযন্ত্রের এমন দক্ষতা, যােগ্যতা ও সামর্থ্য যার মাধ্যমে জনসাধারণের বিশেষ করে প্রান্তিক জনগােষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য সকল বৈধ প্রয়ােজন ও দাবী-দাওয়া যথাসময়ে পূরণ করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ, সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথাসময়ে সাড়াদানে প্রস্তুত থাকাটাই সংবেদনশীলতা।

৫. ঐকমত্য : যেকোন রাষ্ট্রেই নানা মত ও স্বার্থের উপস্থিতি বিদ্যমান। এই সব মত ও স্বার্থের মাঝে সমন্বয় সাধন করে সামাজিক ঐক্য ধরে রাখা সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য। সুশাসনের ক্ষেত্রে এরূপ সমন্বয় সাধন কাজ এমনভাবে সম্পন্ন করা হয় যাতে সামগ্রিকভাবে সমাজের সকল অংশ লাভবান হয়। এভাবে মত ও স্বার্থের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জনগােষ্ঠীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক একরূপতা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

(ঘ) পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ : মানুষ মাত্রই সামাজিক জীব। ফলে সঙ্গপ্রিয়তা তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সুদূর অতীতে সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনকে কেন্দ্র করে কতগুলাে নিয়ম : কানুন, রীতি - নীতি প্রচলিত ছিল। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিক জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতাে কতগুলাে বিধি - বিধান বা নিয়ম - কানুন। অবশ্য প্রাচীন গ্রিসে যারা রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করত শুধু তাদেরকেই বলা হতাে নাগরিক। আর নাগরিকদের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে জ্ঞানের যে শাখায় আলােচনা করা হতাে তাকে বলা হতাে পৌরনীতি। সমসাময়িক ভারতবর্ষে নগরকে বলা হতাে 'পূর' বা পুরী এবং এর অধিবাসীদের বলা হতাে পুরবাসী। তাদের নাগরিক জীবনকে বলা হতাে পৌরজীবন এবং নাগরিক জীবন সম্পর্কিত বিদ্যার নাম ছিল পৌরনীতি। প্রাচীনকাল থেকেই শাসকদের লক্ষ্য ছিলাে অধিকতর জনকল্যাণ।পৌরনীতি ও সশাসনের ক্রমবিকাশ তখন থেকেই। 

উপসংহার : পৌরনীতি হল নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। রাষ্ট্র ও  নাগরিকতার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি এখানে বিবৃত হয়। সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে, জনগণের কল্যাণে শাসনকার্য পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন। গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবােধের বিকাশ এবং সরকার ও জনগণের নধ্যে ৪ প্রতিষ্ঠা করাই পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post