৯ম শ্রেণি : অ্যাসাইনমেন্ট : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় : ৫ম সপ্তাহ : ২০২১

৯ম শ্রেণি : অ্যাসাইনমেন্ট : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় : ৫ম সপ্তাহ

এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ :
বাংলাদেশে জুলাই মাসের সকাল ১০ টার সময়ে জাপান, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় নির্ণয় কর। বাংলাদেশের সাথে উল্লিখিত দেশসমূহের স্থানীয় সময় ও ঋতুগত পার্থক্যের কারণ ব্যাখ্যা কর।
১। সময়ের পারর্থক্যের ক্ষেত্রে দ্রাঘিমা রেখার ভূমিকা উল্লেখ করবে।
২। স্থানগুলোর স্থানীয় সময় নির্ণয় করবে।
৩। ঋতু পরিবর্তনের চিত্র অঙ্কন করবে।
৪। বার্ষিক গতির ফলাফল ও অবস্থানের ভিত্তিতে উল্লিখিত দেশগুলির ঋতুর পার্থক্য ব্যাখ্যা করবে।

নমুনা সমাধান

১। সময়ের পারর্থক্যের ক্ষেত্রে দ্রাঘিমা রেখার ভূমিকা উল্লেখ করবে।

পৃথিবীর সময় ও স্থান নির্ণয়ের জন্য দ্রাঘিমা রেখার প্রয়োজন হয়। পুরো পৃথিবী ৩৬০° এর অন্তর্ভুক্ত। এই ৩৬০° কে কেন্দ্র করে গ্রিনিচ মান মন্দিরকে ০° ডিগ্রি ধরে ১৯৮০ সালে পৃথিবীর জন্য একটি স্টান্ডার্ড সময় তথা আন্তর্জাতিক সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন এই ৩৬০° থেকে যেকোনো দেশের দ্রাঘিমা জেনে সেই দেশের সময় নির্ণয় করা যায়। তেমনিভাবে কোনো দেশের GMT সময় জেনে সেটি কোথায় অবস্থিত সেটাও বলা যায়। সেজন্য কোন একটি স্থানের সময় নির্ণয়ের জন্য দ্রাঘিমা রেখার গুরুত্ব অপরিসীম। 

২। স্থানগুলোর স্থানীয় সময় নির্ণয় করবে।

এখন বাংলাদেশের জুলাই মাসের সকাল ১০টায়  জাপান, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় নির্ণয় করে নিম্নে দেখানো হল— 

জাপানের (রাজধানী) টোকিওর দ্রাঘিমা ১৩৯.৪৫° পূর্ব এবং ঢাকার দ্রাঘিমা ৯০° পূর্ব।

সুতরাং, দ্রাঘিমার পার্থক্য (১৩৯.৪৫ — ৯০) = ৪৯.৪৫°

আমরা জানি, ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট হয়।

সুতরাং, ৪৯.৪৫ দ্রাঘিমায় সময়ের পার্থক্য = ৪৯.৪৫° × ৪ = ১৯৮ মিনিট = ৩ ঘন্টা ১৮ মিনিট

যেহেতু, জাপানের টোকিও পূর্বে অবস্থিত সেহেতু এর সময় বাংলাদেশের ঢাকার চেয়ে বেশি হবে।

অতএব, তাই বলা যায়— ঢাকার সময় সকাল ১০ টা হলে জাপানের টোকিওর স্থানীয় সময় হবে সকাল ১০ টা + ৩ ঘন্টা ১৮ মিনিট = দুপুর ১ টা ১৮ মিনিট।

কানাডার (রাজধানী) ওটোয়ার দ্রাঘিমা ১১৩.৬৪° পশ্চিম এবং ঢাকার দ্রাঘিমা ৯০° পূর্ব।
সুতরাং দ্রাঘিমার পার্থক্য = (৯০° + ১১৩.৬৪°) = ২০৩.৬৪°। 

এখন, ১° দ্রাঘিমায় সময়ের পার্থক্য ৪ মিনিট হলে ২০৩.৬৪ দ্রাঘিমায় = ২০৩.৬৪ × ৪ = ৮১৫ মিনিট = ১৩ ঘন্টা ৩৫ মিনিট।

যেহেতু কানাডার ওটোয়া পশ্চিমে অবস্থিত সেহেতু কানাডার ওটোয়ার সময় ঢাকার থেকে কম হবে। অতএব, ঢাকার সম সকাল ১০টার সময় কানাডার ওটোয়ার সময় হবে সকাল ১০ থেকে ১৩ ঘন্টা ৩৫ মিনিট = রাত ৮টা ২৫ মিনিট

যুক্তরাষ্ট্রের (রাজধানী) ওয়াশিংটনের দ্রাঘিমা ৯৮.৫° এবং ঢাকার দ্রাঘিমা ৯০° পূর্ব। 
সুতরাং দ্রাঘিমার পার্থক্য (৯০° + ৯৮.৫°) = ১৮৮.৫°।

আমরা জানি, ১° দ্রাঘিমার পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য ৪° মিনিট হলে ১৮৮.৫° দ্রাঘিমায় সময়ের পার্থক্য = ১৮৮.৫° × ৪ = ৭৫৪ মিনিট = ১২ ঘন্টা ৩৪ মিনিট। 

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পশ্চিমে অবস্থিত সেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সময় ঢাকার থেকে কম হবে।

অতএব, ঢাকার সময় সকাল ১০ টা হলে থেকে ১২ ঘন্টা ৩৪ মিনিট কম তথা রাত ৯ টা ২৬ মিনিট হবে। (আগের রাত)

স্থানীয় সময়ের পার্থক্য : পৃথিবী গোলাকার এবং নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে অনবরত আবর্তন করছে। ফলে ভূপৃষ্টের বিভিন্ন স্থান ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সূর্যের সামনে উপস্থিত হয়। যে সময়ে কোনো স্থানের মধ্যরেখা সূর্যের ঠিক সামনে আসে অর্থাৎ ঐ স্থানে সূর্য ঠিক মাথার ওপরে দেখা যায়, তখন ঐ স্থানে মধ্যাহ্ন হয়। তখন ঘড়িতে বেলা ১২ টা বাজে। মধ্যাহ্ন অনুসারে দিনের অন্যান্য সময় নির্ধারণ করা হয়। ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমা রেখা পার্থক্যের জন্য সময়ের পার্থক্য ধরা হয় ৪ মিনিট। গ্রিনিচ সময়ের মাধ্যমে স্থানীয় সময় নির্ধারণ করা হয়। গ্রিনিচের দ্রাঘিমা শূন্য ধরা হয়। কোনো স্থান গ্রিনিচের পূর্বে হলে তার স্থানীয় সময় গ্রিনিচের সময় থেকে বেশি হবে এবং কোনো স্থান গ্রিনিচের পশ্চিমে হলে তার তার স্থানীয় সময় গ্রিনিচের সময় থেকে কম হবে। যেহেতু জাপানের টোকিও পূর্বে অবস্থিত সেহেতু জাপানের টোকিওর সময় ঢাকার সময় থেকে বেশি হবে। এবং কানাডার ওটোয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পশ্চিমে অবস্থিত বলে এদের স্থানীয় সময় ঢাকার থেকে কম হবে। 

৩। ঋতু পরিবর্তনের চিত্র অঙ্কন করবে।

ঋতু পরিবর্তনের কারণ : পৃথিবীর বার্ষিক গতির ফলে সূর্যরশ্মি কোথাও লম্বভাবে এবং কোথাও তীর্যকভাবে পড়ে। ফলে স্থানভেদে তাপমাত্রার পার্থক্য ঘটে এবং ঋতু পরিবর্তন হয়। বার্ষিক গতির ফলে দিন ও রাতের হ্রাস - বৃদ্ধি ঘটে। কোনো স্থানে দিনের ভাগের সময় রাতের সময় হতে দীর্ঘ হলে সেই স্থানে বায়ুমণ্ডল অধিকতর উষ্ণ থাকে। এভাবে বছরের বিভিন্ন সময়ে ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপের তারতম্য হয় এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটে। দিন ও রাতের হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবী সবসময় ৬৬.৫° ডিগ্রি কোণে হেলে ঘুরে। ফলে বিভিন্ন স্থানে সূর্যরশ্মির পতনে কৌণিক তারতম্য ঘটে এবং ঋতু পরিচিত হয়। পৃথিবীর কক্ষপথের দৈর্ঘ্য ৯৩৮০৫১৮২৭ কি.মি.। কক্ষপথ উপবৃত্তাকার বলে পরিক্রমণকালে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সমান থাকে না। জানুয়ারির ১ থেকে ৩ তারিখে সূর্য পৃথিবীর নিকটে থাকে। একে পৃথিবীর অনুসূর বলে। আবার, জুলাই এর ১—৪ তারিখে সূর্য পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে। একে পৃথিবীর অপসূর বলে। সূর্য ও পৃথিবীর দূরত্বের হ্রাস — বৃদ্ধি এবং সে কারণে আপেক্ষিক আয়তনের আপাত পরিবর্তন হতে প্রমাণিত হয় যে— পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এর ফলে সূর্যতাপের তারতম্য হয় এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটে।

৪। বার্ষিক গতির ফলাফল ও অবস্থানের ভিত্তিতে উল্লিখিত দেশগুলির ঋতুর পার্থক্য ব্যাখ্যা করবে।

আমাদের বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত এবং দেশটির মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। কাজেই উত্তর গোলার্ধে উত্তর গোলার্ধে ঘনত্ব পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তিত হয়। ঠিক একইভাবে জাপান, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত, তাই উত্তর গোলার্ধে ঘনত্ব পরিবর্তনের সাথে সাথে এসব দেশেরও ঋতুর পরিবর্তন ঘটে।


আরো দেখুন :
৬ষ্ঠ সপ্তাহের নমুনা সমাধান :

৫ম সপ্তাহের নমুনা সমাধান :

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post