ব্যাকরণ : বহুব্রীহি সমাস

বহুব্রীহি সমাস

যে সমাসে পূর্বপদ বা পরপদ কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোনো তৃতীয় অর্থ প্রকাশ করে থাকে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে।

বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার > বহুব্রীহি সমাস।

কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বহুব্রীহি সমাসের উদাহরণ :
দশানন = দশ আনন যার

মহাত্মা = মহান আত্মা যার

সবান্ধব = বান্ধবসহ বর্তমান

বিপত্নীক = বিগত পত্নী যার

যুগজানি = যুবতী জায়া যার

চন্দ্রচূড় = চন্দ্র চূড়ায় যার

সহকর্মী = সমান কর্মী যে

পঙ্কজ = পঙ্কে জন্মে যা

সতীর্থ = সমান তীর্থ যার

হতভাগ্য = হত ভাগ্য যার

গৌরাঙ্গ = গৌর অঙ্গ যার

সজল = জলের সহিত বর্তমান

বিচিত্রকর্মা = বিচিত্র কর্ম যার

সহোদর = সহ উদর যাদের / সমান উদর যাদের

অপয়া = পয় নাই যার

সবেগ = বেগের সঙ্গে বর্তমান

নির্মল = নাই মল (দোষ) যার

রাশভারী = রাশ ভারি যার

শূলপাণি = শূল পাণিতে যার

বহুব্রীহি সমাস নয় প্রকারের হয়ে থাকে। যথা:
  • সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
  • ব্যধিকরণ বহুব্রীহি
  • ব্যতিহার বহুব্রীহি
  • মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
  • নঞ্ বহুব্রীহি
  • সহার্থক বহুব্রীহি
  • প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
  • সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি
  • অলুক বহুব্রীহি

তবে নিপাতনে সিদ্ধ বলে আর এক প্রকার বহুব্রীহি সমাস আছে।

১। সমাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদে বিশেষণ ও পরপদে বিশেষ্য থাকে। যেমন:
হৃতসর্বস্ব = হৃত হয়েছে সর্বস্ব যার

খোশমেজাজ = খোশ মেজাজ যার

হতশ্রী = হত হয়েছে শ্রী যার

নীলকন্ঠ = নীল কন্ঠ যার

পক্বকেশ = পক্বকেশ যার

২। ব্যধিকরণ বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদ কোনোটিই সাধারণত বিশেষণ নয় (অন্যপদ)। যেমন:
আশীবিষ = আশীতে বিষ যার

বজ্রদেহ = বজ্রতে দেহ যার

বীণাপাণি = বীণা পাণিতে যার

পদ্মনাভ = পদ্ম নাভিতে যার

কথাসর্বস্ব = কথা সর্বস্ব যার

বোঁটাখসা = বোঁটা খসেছে যার

দুকানকাটা = দুই কান কাটা যার

ছাপোষা = ছা পোষা যার

৩। ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

পরস্পর একজাতীয় ক্রিয়া করা বোঝালে এ সমাস হয়।এতে পূর্বপদে আ এবং উত্তরপদে ই যুক্ত হতে দেখা যায়। যেমন:
ঘুষাঘুষি = ঘুষিতে ঘুষিতে যে লড়াই

কানাকানি = কানে কানে যে কথা

লাঠালাঠি = লাঠিতে লাঠিতে যে যুদ্ধ

কেশাকেশি = কেশে কেশে ধরে যে যুদ্ধ

দেখাদেখি = দেখায় দেখায় যে ক্রিয়া

হাসাহাসি = হাসিতে হাসিতে যে ক্রিয়া

৪। নঞ্ বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

নঞর্থক পদের সঙ্গে বিশেষ্যের যে সমাস হয় তাই নঞ্ বহুব্রীহি সমাস।যেমন:
বেওয়ারিশ = বে (নাই) ওয়ারিশ যার

বেতার = বে (নাই) তার যার

নিঃশঙ্ক = নাই শঙ্কা যার

নিষ্কলঙ্ক = নাই কলঙ্ক যার

বিপত্নীক = বিগত পত্নী যার

বেকার = কর্ম নাই যার

নিরক্ষর = অক্ষরজ্ঞান নেই যার

অজানা = না (নয়) জানা যা

৫। মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বহুব্রীহি সমাস ব্যাসবাক্যের মধ্যস্থিত কোনো পদকে লোপ করে বা গ্রহণ না করেই তৈরি হয়। যেমন:
দশবছুরে = দশ বছর বয়স যার

কমলাক্ষ = কমলের মতো অক্ষি যার

বিড়ালচোখী = বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর

কাঞ্চনপ্রভ = কাঞ্চন বা সোনার মতো প্রভা যার

শূর্পণখা = শূর্পের (কুলা) ন্যায় নখ যে নারীর

মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাসের আরো দুটো নাম কি? উপমাত্মক বহুব্রীহি ও ব্যাখ্যাত্মক বহুব্রীহি।

৬। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বহুব্রীহি সমাসে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয়যুক্ত হয়। যেমন:
দোটানা = দুই দিকে টান যার

নিখরচে = নেই খরচ যার

অকেজো = কোনো কাজে লাগে না৷ যা

ঘরমুখো = ঘরের দিকে মুখ যার

দোমনা = দুই দিকে মন যার

৭। সহার্থক বহুব্রীহি সমাস কাকে বল? উদাহরণ দাও।

পূর্বপদের সাথে বিশেষ্য উত্তরপদের বহুব্রীহি সমাস নিষ্পন্ন হলে তাকে সহার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে।যেমম:
সশিষ্য = শিষ্যের সহিত বর্তমান

সকর্দম = কর্দমের সহিত বর্তমান

সবান্ধব = বান্ধবের সহিত বর্তমান

সক্রিয় = ক্রিয়ার সহিত বর্তমান

সজল = জলের সহিত বর্তমান

৮। অলুক বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি বজায় থাকলে এবং কোনো পদের পরিবর্তন না হলে তা অলুক বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ:
মাথায়পাগড়ি = মাথায় পাগড়ি যার

গলায়গামছা = গলায় গামছা যার

মুখেভাত = মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে

হাতেখড়ি = হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে

গায়েহলুদ = গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে

৯। সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদে সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশোষ্য। উদাহরণ:
দশানন = দশ আনন (মুখ) যার

দশভুজা = দশ ভুজ (হাত) যার

দোনলা = দুনি নল যার

সহস্রলোচন = সহস্র লোচন যার

দশগজি = দশ গজ পরিমাণ যা

চৌচালা = চার চাল যে ঘরের

সেতার = সে (তিন) তার যে যন্ত্রের

চারহাতি = চার হাত পরিমাণ যা

তেপায়া = তিন পা বিশিষ্ট যা

নিপাতনে সিদ্ধ বহুব্রীহি সমাস কালে বলো? উদাহরণ সহ লিখো।

কোনো নিয়মে ব্যাখ্যা করা যায় না, অথচ বহুব্রীহি সমাস বলে গণ্য। যেমন:
সুহৃদ = সু (শোভন) হৃদয় যার

নিরুপায় = নিঃ (নাই) উপায় যার

বেহায়া = হায়া নাই যার

বেপরোয়া = নাই পরোয়া যার

দ্বীপ = দুই দিকে অপ যার

অন্তরীপ = অন্তর্গত অপ যার

জীবন্মৃত = জীবিত থেকেও যে মৃত

পন্ডিতমূর্খ = পন্ডিত হয়েও মূর্খ।

আজিবুল হাসান
৯ এপ্রিল, ২০২১

Related Links
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post