খুদে গল্প : মুক্তিযুদ্ধ

'মুক্তিযুদ্ধ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো।

মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭১ সালে রাফির বয়স ছিল তেরো বছর। দীর্ঘ নয় মাস পর নিরস্ত্র বাঙালিদের কাছ সুসজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের মধ্য দিয়ে জন্ম হওয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষণটি তার স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল। ১৯৭১ সালের ২৪মে। হঠাৎ সেদিন রাফি দেখল বড় বড় জিপ গাড়িতে হর্ন বাজাতে বাজাতে মিলিটারিরা তাদের গ্রামে প্রবেশ করছে। সে বাজারের নিকটে বড় ব্রিজটার ওপর দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিল। সৈন্যরা ঝুপঝাপ করে গাড়ি থেকে নামছিল। সবার পায়ে শক্ত বুট ডোরাকাটা শার্ট, মাথায় লোহার টুপি এবং কাঁধে রাইফেল। তাদের দেখে অজানা আতঙ্কে রাফির মন আঁতকে উঠল পরের দিন দেখল মিলিটারিরা গ্রামের ব্রীজটার পাশে বড়সড় তাঁবু টানিয়েছে। বাঙ্কারও কেটেছে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য। রাফি দূর থেকে এসব দেখল। কাছে যেতে সাহস করল না। কয়েকদিন পর সে দেখল গ্রামের রহমত মাতবর, আলিম ও রাজুসহ কয়েকজন মিলিটারিদের ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করছে।

কেউ কেউ আবার চাল, আটা, মুরগি, ছাগলসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ করছে। রাফি এদের ব্যাপারে তার বাবার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওরা রাজাকার, শান্তিকমিটির সদস্য। ওরা এদেশের স্বাধীনতা চায় না। বাবার কথা শুনে ওদের প্রতি রাফির মনে তখন প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মেছিল। তার ইচ্ছা হলো দেশকে শত্রুমুক্ত করার জন্য কিছু একটা করতে হবে। রাফির পরিচিত শফিক ভাই গ্রামের তরুণদের নিয়ে মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলেছে। সে মনে মনে ভাবল গ্রামকে শত্রুমুক্ত করতে হলে মিলিটারিদের সাথে স্বাধীনতা বিরোধীদের গোপন আঁতাত করার কথাটি মুক্তিযোদ্ধাদের জানানো দরকার। তাই সে একদিন গোপনে সংবাদটি শফিক ভাইয়ের কাছে পৌছে দিয়েছিল। ইতোমধ্যে রাজাকারদের সহায়তায় মিলিটারিরা গ্রামের কয়েকজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বাড়িঘরে আগুন দেয় এবং মূল্যবান দ্রব্যাদি লুণ্ঠন করে। কমাণ্ডার শফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত হয়। তাদের প্রথম আক্রমণে বাঙ্কারের পাহারারত মিলিটারিসহ বেশ কয়েকজন নিহত হয়। অন্যরা পালিয়ে যায়। এর দু'দিন পর মুক্তিযোদ্ধারা এলাকার চিহ্নিত রাজাকারদের দোকান ও ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। সবকিছু পুড়ে ভস্মিভূত হয়ে যায়। গ্রামের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের এ ধরনের সাহসী কাজে সহযোগিতা করে। যুদ্ধের শেষ পর্যায়। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল। রাফি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখল হাতে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে সবাই চারিদিকে বিজয় মিছিল করছে। সেও ঘরে চুপ করে বসে থাকতে পারল না। সকলের সাথে মিছিলে যোগ দেয় সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্মক্ষণটির সাক্ষী হতে পারায় রাফি আজও নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post