খুদে গল্প : পথ শিশুদের জীবন

"পথ শিশুদের জীবন" নিয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

পথ শিশুদের জীবন

রায়হান দীর্ঘদিন কানাডা বসবাস করছে। শীতের এক ছুটিতে তিনি ঢাকা আসেন। রায়হান বাংলাদেশী হলেও তার স্ত্রী কানাডিয়ান। হযরতশাহজালাল বিমানবন্দরে সকাল ৬:৩০ ঘটিকায় তাদের বিমান এসে পৌছায়। দুজন নেমে বিমানবন্দরের যাবতীয় নিয়ম-কানুন শেষে বাইরেআসেন। সরাসরি তারা দুজন ওভারব্রিজ পার হয়ে রেলস্টেশনে আসেন।গ্রামের বাড়িতে যাবেন রেলগাড়িতে।

রেলস্টেশনে এসে রায়হানের স্ত্রীর মাথা ঘুরছে। রেলস্টেশনের প্লাটফর্মে সারিবদ্ধভাবে শুয়ে আছে অসংখ্য শিশু। রায়হানের স্ত্রী এলিজার তাদের বয়স অনুমান করতে কষ্ট হলো না। এলিজা রায়হানকে প্রশ্ন করে এসব শিশু কাদের? কেনই বা তাদের এ দুরবস্থা? প্রচণ্ড শীতে তাদের গায়ে নেই কোনো শীতবস্ত্র। একজন আরেকজনের গায়ের উপর পা দিয়ে তারা মনের আনন্দে ঘুমাচ্ছে। পেট দেখেই সে বুঝতে পারে ঠিকমতো তারা খেতে পায়নি। তাই পুষ্টির অভাবে শরীরের এ বেহাল দশা। ঠিকমত তারা গোসলও করে না। রায়হান এসব শিশুদের সম্পূর্ণ পরিচয় তুলে ধরলেন তার স্ত্রী এলিজার নিকট। এলিজা বুঝতে পারল এরা সবাই পথ শিশু। পথ শিশুদের এত কষ্ট দেখে এলিজার ভেতরের মানুষটি জেগে উঠল। তার মাতৃহৃদয় অজানা স্নেহ-মমতায় কেঁদে উঠল। রায়হানের দুহাত জড়িয়ে ধরলো এলিজা। কান্নারত কণ্ঠে বলল, আমাদের তো অনেক সম্পদ আছে। তাছাড়া এত বছরের দীর্ঘদিনের সংসারে আমাদের কোলজুড়ে বিধাতা কোনো সন্তানও দিল না।

আমরা কি পারিনা এসব শিশুদের মা-বাবা হতে? স্ত্রীর আবেগজড়িত কণ্ঠ শুনে রায়হানেরও ভারি মমতা হলো সেসব পথ শিশুদের প্রতি। তারা স্থির করল সবাইকে একটা বাসে তারা তাদের গ্রামে নিয়ে যাবে। রায়হানের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদি গ্রামে।

ত্রিশজন পথ শিশু নিয়ে রায়হান ও এলিজা দশঘটিকায় তাদের নিজ গ্রামে পৌছালেন। সবাইকে পুকুরের পানিতে ভালো করে শ্যাম্পু-সাবান দিয়ে গোসল করায় এলিজা। সবাইকে নতুন জামা-কাপড় পরিধান করায় এবং ভালো খাবার পরিবেশন করে। কষ্টে জর্জরিত শিশুদের কী যে আনন্দ! রায়হানের ঘরে সবাইকে থাকতে দেওয়া হলো। সবাইকে শিক্ষা দেবার জন্য নিজ উদ্যোগে রায়হান একটি বিদ্যালয়ও স্থাপন করেন। আজ এলিজার মাতৃহৃদয় পরিপূর্ণ। সে আজ ত্রিশজন সন্তানের স্নেহময়ী মা। সবাইকে তিনি ‘খোকন' বলে ডাকেন, পথশিশুরাও সবাই নিজ নিজ পরিচয় ভুলে এলিজাকেই তাদের মা বলে আপন করে নেয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post