HSC : যুক্তিবিদ্যা : ৪র্থ সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট

HSC : যুক্তিবিদ্যা : ৪র্থ সপ্তাহ

অ্যাসাইনমেন্ট : যুক্তির উপাদান হিসেবে পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের তুলনামুলক বিশ্লেষণপূর্বক একটি বাস্তব উদাহরণ দাও।

নমুনা সমাধান

 যুক্তির উপাদান হিসেবে পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

১. পদ ও শব্দ :
পদ : যুক্তিবিদ যোসেফ পদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “কোনো শব্দ বা শব্দ সমষ্টির যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতা থাকলে, তাকে পদ বলে।” অর্থাৎ যদি কোন শব্দ বা শব্দ সমষ্টি নিজে নিজেই কোন যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয়রূপে ব্যবহৃত হতে সমর্থ হয় তাহলে সেসব শব্দ বা শব্দ সমষ্টি হলো পদ। যেমন : ‘গরু হয় গৃহপালিত পশু’ যুক্তিবাক্যটিতে ‘গরু’‘গৃহপালিত পশু’ শব্দ সমষ্টি অন্য কোন শব্দের সাহায্য ছাড়া উদ্দেশ্য ও বিধেয়রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়াও অন্য যেকোনো অবস্থাতেই শব্দগুলো কোনো যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। আলোচ্য যুক্তিবাক্যটিতে গরু সম্পর্কে কিছু বলা হয়েছে বলে ‘গরু’ হলো উদ্দেশ্য পদ এবং গরু সম্পর্কে বলা হয়েছে যে এটা গৃহপালিত পশু। তাই ‘গৃহপালিত পশু’ হলো বিধেয় পদ।

শব্দ : আমরা আমাদের চিন্তা, আনন্দ, বেদনা, বিস্ময় ইত্যাদি প্রকাশ করার জন্য যেসব কথিত বা লিখিত সংকেত ব্যবহার করি, তাদের বলা হয় শব্দ। যুক্তিবিদ আর. আর. থমাস তাঁর Students Logic বইয়ে বলেন যে, একটি শব্দ হলো মনের চিন্তা প্রকাশ করার জন্য বা মনের ধারণা নির্দেশের মৌখিক ধ্বনি। (A word is a vocal sound used to stand for or express an idea in the mind)। মূলত অর্থযুক্ত ধ্বনিকে বলে শব্দ। ধ্বনি প্রকাশিত হয় বর্ণের সাহায্যে। তাই বলা যায় যে, অর্থপূর্ণ বর্ণ বা বর্ণসমষ্টিকে শব্দ বলে। যেমন, মা + নু + ষ = মানুষ শব্দটি একাধিক বর্ণের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছে যার একটি নির্দিষ্ট অর্থ রয়েছে। 

পদ ও শব্দের মধ্যে যেসব পার্থক্য রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
√ সংজ্ঞাগত দিক থেকে পার্থক্য :
অর্থপূর্ণ বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি হলো শব্দ। যেমন - বই, কলম, মানুষ। যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য বা বিধেয়রূপে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দসমষ্টি হলো পদ। যেমন - ‘সব ফুল হয় সুন্দর’ যুক্তিবাক্যে ফুল ও সুন্দর হলো পদ।

√ গঠনগত দিক থেকে পার্থক্য :
একটি শব্দ এক বা একাধিক বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত হয়। কিন্তু একটি পদ এক বা একাধিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়।

√ যুক্তিবাক্যে সংখ্যাগত অবস্থানের দিক থেকে পার্থক্য :
যক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত শব্দ মাত্রই পদ। এ কারণেই যুক্তিবাক্যে সর্বদা দু'টি পদ থাকে। যথা - উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদ। কিন্তু একটি যুক্তিবাক্যে দুইয়ের অধিক শব্দ থাকতে পারে। যেমন সকল বাঘ হয় মাংসভোজী প্রাণী’ যুক্তিবাক্যটিতে দু'টি পদ আছে; কিন্তু শব্দ আছে পাঁচটি।

√ অর্থের দিক থেকে পার্থক্য :
শব্দের একাধিক অর্থ থাকতে পারে এবং প্রায়ই তা থাকে। কিন্তু পদের অর্থ সকল ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট এবং পদের একাধিক অর্থ থাকা সম্ভব নয়। কারণ, যুক্তিবাক্যে পদ সর্বদা একটি সুনির্দিষ্ট অর্থে ব্যবহৃত হয়।

২. পদ ও বাক্য / নাম : 
পদ ও নাম : পদের যৌক্তিক মূল্য ও তাৎপর্য যথাযথভাবে অনুধাবন করার জন্য নামের সাথে এর সম্পর্ক আলোচনা করা প্রয়োজন। পদ হলো সেসব শব্দ বা শব্দ সমষ্টি যা অন্য কোন শব্দের সাহায্য নিয়ে নিজে নিজেই কোন যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য বা বিধেয়রূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

নামের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে এরিস্টটল বলেন, ‘যে ধ্বনি আমরা একটি বিশিষ্ট অর্থ বুঝানোর জন্য উচ্চারণ করি তাই হলো নাম’। যুক্তিবিদ মিল এ প্রসঙ্গে বলেন, নাম হলো এমন শব্দ বা শব্দ সমষ্টি যা দুই ধরণের কাজ করে থাকে। প্রথমত, নাম হলো একটি প্রতীক বা চিহ্ন যার সাহায্যে আমরা কোন অতীত বা পুরানো চিন্তা সাদৃশ্য স্মরণ করি। দ্বিতীয়ত, নামের সাহায্যে আমরা আমাদের চিন্তা বা মনোভাবকে অন্যের কাছে প্রক করি। গতানুগতিক ধারায় অনেক যুক্তিবিদ, যেমন - মিল, জেভ প্রমুখ নাম ও পদ কথা দুটিকে একই অর্থে ব্যবহার করার পক্ষপাতী এবং ব্যাপক অর্থে নামগুলোকে পদ বলে মনে করেন। তাদের যুক্তি হলো, একটি যুক্তিবাক্যে একটি পদ কোনো কিছুর নামকরণ করে বা নির্দেশ করে। বাক্যের বিধেয় দ্বারা নির্দেশিত বিষয়টির কোনো বৈশিষ্ট্য বা গুণ নিরূপণ করে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে নাম ও পদ সমার্থক নয়। দের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যুক্তিবিদ মেলোন এর মতে, যে পদ যুক্তি উদ্দেশ্য বা বিধেয় হিসেবে ব্যবহৃত হয় না তাকে আমরা পদ না বলে নাম বলব। সুতরাং নাম হলেই যুক্তিবাক্যের অংশ হবে এমনটি বলা যায় না। নাম যুক্তিবাক্যের অংশ হতেও পারে, নাও হতে পারে। কিন্তু পদ সব সময়ই যুক্তিবাক্যের অংশ হয়। তাছাড়া যুক্তিবাক্যে ব্যবহৃত পদের একটি সুনির্দিষ্ট অর্থ থাকে। তাই পদ কখনও একাধিক অর্থ প্রকাশ করে না।

৩. ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থ : 
ব্যক্তার্থ ( Denotation): কোনো পদ একই অর্থে যে বস্তু বা বস্তুসমূহের উপর প্রয়োগ করা সম্ভব, সে বস্তু বা বস্তুসমূহের সমষ্টিকে ঐ পদের ব্যক্তার্থ বলে। আই. এম. কপি (I. M. Copi) ও কার্ল কোহেন (Carl Cohen) এর মতে, একটি সাধারণ পদ বা শ্রেণিবাচক পদ যা কতিপয় বস্তুকে নির্দেশ বস্তুগুলোর ক্ষেত্রেই পদটি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এই বস্তুগুলোর সমষ্টিই পদটির ব্যক্তার্থ গঠন করে। (A general term, or class term, denotes the several objects to which it may correctly be applied. The collection of this objects constitute the extension or denotation of the term.) 

ফ্রান্সিস হাওয়ার্ড-স্লাইডার (Frances Howard Snyder), ড্যানিয়েল হাওয়ার্ড-সাইডার (Daniel Howard Snyder) ও রায়ান ওয়াসেরম্যান (Ryan Wasserman) তাদের The Power of Logic গ্রন্থে বলেন যে, “একটি যেসব বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সেসব বস্তুর সমাহারকে ঐ পদের ব্যক্তার্থ বলে”(The extension of a term consists of the set of things which the term applies.)

ব্যক্তার্থ দ্বারা সাধারণভাবে পদের পরিমাণ নির্দেশ করা হয়। যেমন : মানুষ পদের ব্যক্তার্থ হলো ‘সকল মানুষ’। কোনো কোনো যুক্তিবিদ ব্যক্তার্থ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে বিস্তৃতি (extension), প্রশস্ততা (Bredth), পরিধি (domain), পরিসীমা (scope), অধিকৃত ক্ষেত্র (sphere) ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছেন।

জাত্যর্থ (Connotation ) :
কোনো পদ দ্বারা নির্দেশিত বিশেষ বস্তু বা বস্তুসমষ্টির অন্তর্গত সাধারণ ও অনিবার্য গুণ বা গুণসমষ্টিকে ঐ পদের জাত্যর্থ বলে। আই. এম. কপি (I. M. Copi) ওকার্ল কোহেন (Carl Cohen) বলেন যে, একটি পদ দ্বারা নির্দেশিত সকল বস্তুর মধ্যে বিদ্যমান সাধারণ গুণকে বলা হয় ঐ পদের জাত্যর্থ। (The set of attributes shared by all and only those objects to which the term refers is called the connotation of that term)। ফ্রান্সি হাওয়ার্ড স্নাইডার (Frances Howard Snyder)ও ড্যানিয়েল হাওয়ার্ড - সাইডার (Daniel Howard Snyder) ও রায়ান ওয়াসেরম্যান (Ryan Wasserman) বলেন একটি পদের ব্যক্তার্থের আওতাভুক্ত হতে হলে ঐ পদ নির্দেশিত বিষয় বা বস্তুর যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণ অপরিহার্যভাবে থাকা প্রয়োজন বৈশিষ্ট্য বা গুণই হলো পদটির জাত্যর্থ।

জাত্যর্থ হলো একটি পদের সাধারণ গুণ বা বৈশিষ্ট্যগত দিক। তবে পদের বিভিন্ন ধরণের গুণ থাকতে পারে। কিন্তু জাত্যর্থ বলতে সেসব গুণ বুঝায় যা সাধারণভাবে একই শ্রেণির সকল সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান এবং যা অর্থের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ জাত্যর্থ হলো পদের এমন বৈশিষ্ট্য যে বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান এবং যা অর্থের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ জাত্যর্থ হলো পদের এমন বৈশিষ্ট্য যে বৈশিষ্ট্য ছাড়া ঐ পদ নির্দেশিত বস্তুর অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। যেমন : 'মানুষ' পদটির জাত্যর্থ হলো জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি। কারণ সকল মানুষের বিভিন্ন গুণাবলি তুলনা করলে দেখা যায় যে, সকলের মধ্যে শুধু জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি সাধারণ ও আবশ্যিকভাবে বিদ্যমান।

৪. ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের হ্রাস বৃদ্ধির নিয়ম : 
বস্তুগতভাবে ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থ অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে সম্পর্কিত হলেও পরিসরের দিক থেকে বিপরীতমুখী সম্পর্কে সম্পর্কিত। পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থ বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত অর্থাৎ ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের মধ্যে বিপরীতমুখী সহপরিবর্তনের বা বিপরীত অনুপাতের সম্বন্ধ বিদ্যমান। এর মানে হলো ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের একের হ্রাস ও বৃদ্ধি যথাক্রমে অপরের বৃদ্ধি ও হ্রাস ঘটায়। ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের বিপরীতক্রমে হ্রাস - বৃদ্ধির এ পারস্পরিক সম্পর্ককে যুক্তিবিদগণ একটি নিয়মের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন। এ নিয়মটির নাম হলো ‘পদের ব্যক্তার্থ ও জাত্যর্থের বিপরীত অনুপাতের নিয়ম’ (Law of Inverse Variation of Denotation and Connotation of Term)। এ নিয়মটিকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা সম্ভব। যেমন :

ক) ব্যক্তার্থের দিক থেকে :
১. কোন পদের ব্যক্তার্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে,
২. কোন পদের ব্যক্তার্থ কমলে জাত্যর্থ বাড়ে।

খ) জাত্যর্থের দিক থেকে :
৩. কোন পদের জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্তার্থ কমে,
৪. কোন পদের জাত্যর্থ কমলে ব্যক্তাৰ্থ বাড়ে।

৫. হ্রাস বৃদ্ধি নিয়মের ব্যাখ্যা : 
ক) পদের ব্যক্তার্থ বাড়লে জাত্যর্থ কমে : মানুষ পদে ব্যক্তার্থ হচ্ছে 'সকল মানুষ'। এখন অন্যান্য প্রাণীকে এর সাথে যুক্ত করে এর ব্যক্তার্থ বাড়ালে ব্যক্ত্যর্থ দাঁড়াবে 'সকল প্রাণী' (সকল মানুষ + অন্যান্য প্রাণী)। কিন্তু এতে করে মানুষ পদের জাত্যর্থ জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি থেকে বুদ্ধিবৃত্তি বাদ পড়ে সকল প্রাণীর জাত্যর্থ দাঁড়াবে শুধু 'জীববৃত্তিতে'। কারণ, অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে 'বুদ্ধিবৃত্তি' নেই। সুতরাং এর দ্বারা প্রমাণিত হলে যে, ব্যক্তার্থ বাড়লে জাত্যৰ্থ কমে।

খ) পদের ব্যক্তার্থ কমলে জাত্যর্থ বাড়ে :
মানুষ শ্রেণী থেকে অসৎ মানুষদের বাদ দিয়ে এর সংখ্যা বা ব্যক্তার্থ কমালে ব্যক্তার্থ দাড়াবে 'সকল সৎ মানুষ'। সকল মানুষ > সকল অসৎ মানুষ। মানুষের জাত্যর্থ জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির সাথে আরেকটি জাত্যর্থ এসে যোগ হয়ে সকল সৎ মানুষের জাত্যর্থ হবে জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি + সততা। অর্থাৎ জাত্যর্থ বেড়ে যাবে। এতে প্রমাণ করা গেল যে, ব্যক্ত্যর্থ কমলে জাত্যর্থ বাড়ে।

গ) পদের জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্তার্থ কমে :
মানুষ পদের জাত্যর্থ হচ্ছে ‘জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি’। এখন এর সাথে সভ্যতা যোগ করলে জাত্যর্থ দাঁড়াবে জীবৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি + সভ্যতা। ফলে এ তিনটি জাত্যর্থধারী পদের ব্যক্ত্যর্থ হবে 'সকল সভ্য মানুষ'। আর এতে করে মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ কমে যাবে। কারণ সকল মানুষের ব্যক্ত্যর্থের চেয়ে সকল সভ্য মানুষের ব্যক্ত্যর্থ কম। কারণ এখানে অসভ্য মানুষেরা বাদ পড়েছে। ফলে প্রমাণিত হল যে, জাত্যর্থ বাড়লে ব্যক্তার্থ কমে। 

ঘ) পদের জাত্যর্থ কমলে ব্যক্তার্থ বাড়ে :
মানুষ পদের জাত্যর্থ জীববৃত্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি থেকে বুদ্ধিবৃত্তিকে বাদ দিলে এর জাত্যর্থ দাঁড়াবে কেবল জীববৃত্তি -তে। এতে করে মানুষ পদের ব্যক্ত্যর্থ বেড়ে গিয়ে সকল মানুষ থেকে সকল প্রাণীতে দাঁড়াবে। কারণ জীববৃত্তি গুণটি সকল প্রাণীতেই বর্তমান। আর সকল প্রাণীর সংখ্যা সকল মানুষের চেয়ে বেশী।
সুতরাং এতে প্রমাণিত হল যে, জাত্যর্থ কমলে ব্যক্তার্থ বাড়ে।

৬. একটি বাস্তব উদাহারণ :
প্রাণী, মানুষ ও সৎ মানুষ - এ তিনটি পদের ব্যক্ত্যর্থ ও জাত্যর্থের সম্বন্ধ বিচার করা যাক- 'প্রাণী' পদটির তাৎপর্য হলো সকল প্রাণী। ক্ষুদ্রতম প্রাণী হতে আরম্ভ করে মানুষ পর্যন্ত সকল প্রাণীই প্রাণী পদের ব্যক্তার্থের অন্তর্ভুক্ত। সেরূপ সকল মানুষ 'মানুষ' পদের ব্যক্তার্থের অন্তর্ভুক্ত এবং সকল 'সৎ মানুষ' পদের ব্যক্ত্যর্থ। উক্তপদ তিনটির ব্যক্তার্থের তুলনা করলে দেখা যায় যে, প্রাণী পদের ব্যক্তার্থ 'মানুষ' পদের ব্যক্তার্থ থেকে অধিক, কারণ মানুষ এক বিশেষ রকমের প্রাণী। অর্থাৎ প্রাণী = মানুষ + অন্যান্য প্রাণী। সেরূপ 'মানুষ' পদের ব্যক্তার্থ 'সৎ মানুষ' পদের ব্যক্তার্থ হতে অধিক। অর্থাৎ প্রাণী > মানুষ > সৎ মানুষ। এ পদগুলোকে এভাবে সাজালে দেখা যায় যে, এদের প্রত্যেকের পূর্ববর্তী পদের ব্যক্তার্থ পরবর্তী পদের ব্যক্তার্থ হতে কম ও এর অন্তর্ভুক্ত।

এবার পদগুলোর জাত্যর্থের তুলনা ধরা যাক। 'প্রাণী' পদটির জাত্যর্থ হল ‘প্রাণীত্ব’ আর 'মানুষ' এর জাত্যর্থ জীববৃত্তি + বুদ্ধিবৃত্তি। কারণ মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী। সৎ মানুষ এর জাত্যর্থ হল জীববৃত্তি বা প্রাণীত্ব + বুদ্ধিবৃত্তি + সততা।

তাহলে দেখা গেল যে, 'সৎ মানুষ' এর জাত্যর্থ মানুষ এর জাত্যর্থ হতে অধিক এবং মানুষের জাত্যর্থ ‘প্রাণী’ এর জাত্যর্থ হতে অধিক। অর্থাৎ প্রাণী > মানুষ > সৎ এভাবে সাজিয়ে এ পদগুলোর জাত্যর্থের সম্পর্ক বিচার করলে দেখা যায় যে, এদের প্রত্যেকের পরবর্তী পদের জাত্যর্থ পূর্ববর্তী পদের জাত্যর্থ হতে অধিক এবং পূর্ববর্তী পদের জাত্যর্থ পরবর্তী পদের জাত্যর্থ হতে কম ও এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ পদগুলির জাত্যর্থ ও ব্যক্তার্থের তুলনা করলে দেখা যাবে যে, এদের জাত্যর্থ ও ব্যক্তার্থের মধ্যে বিপরীত অনুপাতের সম্বন্ধ বিদ্যমান।


আরো দেখুন :
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post