HSC : পৌরনীতি ও সুশাসন : ৪র্থ সপ্তাহ : অ্যাসাইনমেন্ট

HSC : পৌরনীতি ও সুশাসন : ৪র্থ সপ্তাহ

অ্যাসাইনমেন্ট : আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে প্রভাবিত করে- বিশ্লেষণ কর।

নমুনা সমাধান

মূল্যবোধের ধারণা : মূল্যবোধ মানবচরিত্রের একটি নৈতিক গুণাবলী। এটি একজন মানুষের নীতি নৈতিকতা ও বিবেকবোধের উপর নির্ভরশীল যা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। এটি মূলত অর্জনের বিষয়। অর্থাৎ মানবিক গুণাবলি ও সঠিক বিবেকবুদ্ধির বহিঃপ্রকাশই মূল্যবোধ। 

সমাজবিজ্ঞানী এইচ.এম.জনসন. এর মতে, " সামাজিক মূল্যবোধ হলো একটি মানদণ্ড"। সমাজবিজ্ঞানী এফ ই মেরিলের মতে, "সামাজিক মূল্যবোধ হলো বিশ্বাসের একটি প্রকৃতি বা ধরণ, যা গোষ্ঠীগত কল্যাণে সংরক্ষণ করাকে মানুষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।"

নৈতিকতার ধারণা : এটি একটি ব্যক্তিগত বিষয়।মূলত একজন ব্যক্তির চারিত্রিক গুণাবলির সমষ্টিই নৈতিকতা। সততা, সত্যবাদী, সৌজন্যতামূলক আচরণকারী, প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী ব্যক্তিকে নৈতিক ব্যক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি বলা হয়। এ রকম ব্যক্তি সমাজের জন্য কোনটি ভালো-মন্দ, সঠিক-ভুল তা যাচাই করতে পারেন। ভালোমন্দের মতে পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারাটাই হলো ব্যক্তির নৈতিকতা।

সাম্যের ধারণা : সাম্য অর্থ সমান। কিন্তু সমাজে সকলে সমান হতে পারে না সেটা সম্ভব নয়। যদি সকলের সমান হয়ে যায় তাহলে সমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা থাকবে না। পৌরনীতির মতে সাম্য বলতে সকলকে সমান করে নেওয়ার প্রক্রিয়া কে বোঝায় অর্থাৎ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমান। সমাজের সকলের সমান অধিকার রয়েছে।

আইন কি : আইন শব্দের উৎপত্তি ফারসি শব্দ থেকে হয়েছে যার পারিভাষিক অর্থ সুনির্দিষ্ট নিয়ম। মানুষ সামাজিক জীব এ সমাজে বসবাসের জন্য কিছু প্রচলিত বিধি-বিধান মেনে চলতে হয় সে সকল বিধিবিধানের সমষ্টি হল সামাজিক আইন। বিভিন্ন দার্শনিক নিজের অভিমত অনুসারে আইন কে সংজ্ঞায়িত করেছেন। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটলের মতে আইন হলো পক্ষপাতহীন চুক্তি। অন্যদিকে আইন বিজ্ঞানের মতে সার্বভৌম শক্তির আদেশেই হচ্ছে আইন।

স্বাধীনতা কি : স্বাধীনতা শব্দটি এসেছে ইংরেজি শব্দ liverty.থেকে যা ল্যাটিন শব্দ থেকে উৎপত্তি। ল্যাটিন শব্দ liver অর্থ মুক্তি বা স্বাধীন। সুতরাং উৎপত্তির দিক থেকে স্বাধীনতা বলতে যা খুশি তাই করার অধিকার কে বোঝায়। কিন্তু পৌরনীতিতে অবাধ স্বাধীনতা বলতে কিছু নেই এখানে নিজের ইচ্ছামতো খুশি মতে কোন কিছু করা যায় না। পৌরনীতিতে স্বাধীনতা বলতে অন্যের কাজে হস্তক্ষেপ না করে নিজের কাজ সুষ্ঠুভাবে করাকে বুঝায় । স্বাধীনতা মানে যৌক্তিক ও আইনসিদ্ধ ভাবে কোন কিছু করাকে বুঝায়। অর্থাৎ সামাজিক শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে সব কাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা প্রয়োজন যায় মানে স্বাধীনতাকে বোঝায়।

স্বাধীনতাও সাম্যের মধ্যকার সম্পর্ক : স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে দুই ধরনের মতবাদ প্রচলিত আছে। এক শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে সমমুখী সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন এবং অন্য শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এই দুইটির মধ্যে পরস্পর বিরোধী
সম্পর্ক আছে বলে ধারণা করেন।

১) পরস্পরবিরোধী মতবাদ : মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সমান নয় ও তারা নিজ নিজ গুনে স্বতন্ত্র। তাই তাদের স্বাধীনতার মাত্রা ও ধারণা স্বাভাবিকভাবে ভিন্ন হবে। লর্ড এ্যকটন ও হার্বাট স্পেন্সার, বেজহট টকভিল প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা স্বাধীনতা ও সাম্য কে পরস্পর বিরোধী আদর্শ বলে মনে করেন। লর্ড এ্যকটন বলেন " সাম্যের নেশা স্বাধীনতার আশাকে ব্যর্থ করেছে"। মার্কসবাদী কোন সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি করেন।

২) সমমুখী সম্পর্ক : মূলত স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান। স্বাধীনতা মানে যা খুশি করা নয় স্বাধীনতা বলতে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে বোঝাই। ব্যাখ্যা:
ক) সাম্যের মধ্যে স্বাধীনতার মূল্য নিহিত থাকে। সাম্য। নিয়ন্ত্রণের নিশ্চয়তা বিধান করে। সাম্য সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র সম্পদ ও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার সমবন্টনের ব্যবস্থা করে।
খ) দার্শনিক রুশো বলেন, "সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা অর্থহীন"। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা থাকতে পারেনা। অধ্যাপক লাস্কি বলেন, "রাষ্ট্র যত বেশি সমতা বিধান করবে, স্বাধীনতার উপভোগ ততবেশি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে"। সাম্য সবাইকে পর্যাপ্ত সুবিধা দান করে সম্পদের সমবন্টনের নিশ্চিত করে।
গ) সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে কোন বিরোধ নেই। পরস্পর পরস্পরের সহায়ক ও পরিপূরক। স্বাধীনতা উপভোগের জন্য সাম্যের প্রয়োজন। অধ্যাপক টনি বলেন, "সাম্য ও স্বাধীনতার জন্য অপরিহার্য সাম্য ছাড়া স্বাধীনতাকে কল্পনা করা যায় না"।
ঘ) সাম্য ও স্বাধীনতা একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতার কোন অস্তিত্ব নেই। তাই স্বাধীনতার জন্য সাম্যের প্রয়োজন, সাম্যের জন্য স্বাধীনতার প্রয়োজন। তাই স্বাধীনতাই সাম্য, সাম্যই স্বাধীনতা। উভয়ের সম্পর্ক দেহ ও প্রানের ন্যায়। এদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক ও সম্পূরক।

আইন স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক : আইন স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। এদের সম্পর্ক অনেকটা সামগ্রিক। আইন ও স্বাধীনতার রক্ষক ও অভিভাবক। আইন ছাড়া স্বাধীনতার কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না। আইন আছে বলেই স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা যায় আইন সাম্য কেও সার্থক করে তোলে। আইন স্বাধীনতাকে আরো সম্প্রসারিত করে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অসাম্যকে দূর করা যায়। সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও বৈষম্য দূর করতে আইনই মানুষকে যুগ যুগ ধরে সাহায্য করে আসছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলো আইনের মাধ্যমে বর্ণবাদ নিষিদ্ধ করা। ভারতে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথা রদ করা হয়।

অন্যদিকে সাম্য ও স্বাধীনতার এক অপরকে ছাড়া অচল। সাম্য ছাড়া স্বাধীনতাকে কল্পনা করা যায় না। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতার প্রয়োজন। স্বাধীনতা না থাকলে সাম্য কেবল মরীচিকায় থেকে যায়। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার পূর্বশর্ত। তা না হলে দুর্বলের সাম্য সকলের সুবিধার খেলনা হিসেবে পরিগণিত হবে। সাম্য সমাজের উঁচু নিচু পার্থক্য দূর করে এবং স্বাধীনতার সমাজের সকল মানুষের কাছে সম্পদের সুষম বন্টন করে সকলকে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।
অধ্যাপক লাস্কি বলেন, আইন যত বেশি রাষ্ট্রের সমতা বিধান করবে, স্বাধীনতা উপভোগ তত ব ততবেশি নিশ্চিত হবে। আইন ছাড়া সাম্য থাকতে পারেনা, সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা পুরোপুরি অচল। মূলত আইন সাম্য ও স্বাধীনতার সম্মিলিত প্রয়াসে আইনের শাসন ও রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে। বলা যায় সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক ও সম্পূরক।


আরো দেখুন :
৪র্থ সপ্তাহের নমুনা সমাধান :


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post