SSC 2021 : বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা : অ্যাসাইনমেন্ট

তৃতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
৩য় অধ্যায়
বিশ্বসভ্যতা (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রোম)
৪র্থ সপ্তাহ

গ্রিকসভ্যতা ও রোমান সভ্যতার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপনপূর্বক বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে উভয় সভ্যতার অবদান মূল্যায়ন।

নমুনা সমাধান

(ক) পটভূমির ব্যাখ্যা :
গ্রিক সভ্যতা : গ্রিসের মহাকবি হোমারের 'ইলিয়াড' ও 'ওডিসি' মহাকাব্য দুটিতে বর্ণিত চমকপ্রদ কাহিনির মধ্যে লুকিয়ে থাকা সত্যকে খুঁজে বের করার অদম্য ইচ্ছা উৎসাহিত করে তোলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের। উনিশ শতকের শেষে হোমারের কাহিনি আর কবিতায়ই তা সীমাবদ্ধ থাকে না, বেরিয়ে আসে এর ভিতরের সঠিক ইতিহাস। ইজিয়ান সাগরের দ্বীপপুঞ্জে এবং এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে আবিষ্কৃত হয় উন্নত এক প্রাচীন নগর সভ্যতা। সন্ধান মেলে মহাকাব্যের ট্রয় নগরীসহ একশ' নগরীর ধ্বংসস্তূপের। যাকে বলা হয় ইজিয়ান সভ্যতা বা প্রাক-ক্লাসিক্যাল গ্রিকসভ্যতা। ক্রিট দ্বীপ, গ্রিস উপদ্বীপের মূল ভূখণ্ড, এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে এবং ইজিয়ান সাগরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গড়ে ওঠে এই সভ্যতা। এই সভ্যতার অধিবাসীরা ছিল সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি ঐতিহ্যের অধিকারী।

"রোমান সভ্যতা"

রোমান সভ্যতা পটভূমি :
গ্রিসের সভ্যতার অবসানের আগেই ইতালিতে টাইবার নদীর তীরে একটি বিশাল সম্রাজ্য ও সভ্যতা গড়ে ওঠে। রোমকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সভ্যতা রোমান সভ্যতা নামে পরিচিত। প্রথম দিকে রোম একজন রাজার শাসনাধীন ছিল। এ সময় একটি সভা ও সিনেট ছিল। রাজা স্বৈরাচারী হয়ে উঠলে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ৫১০খ্রিষ্টপূর্বাব্দ রোমে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রোমান সভ্যতা প্রায় ছয়শ বছর স্থায়ী হয়েছিল। 

(খ) ভৌগলিক অবস্থান ও সময়কালের সাদৃশ্য / বৈসাদৃশ্য উপস্থাপন :
গ্রিক সভ্যতা : গ্রিস দেশটি আড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর ও ইজিয়ান সাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। গ্রিকসভ্যতার সঙ্গে দুইটি সংস্কৃতির নাম জড়িত। একটি’ হেলেনিক' সংস্কৃতি'। অপরদিকে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের নেতৃত্বে মিশরের আলেজান্দ্রিয়াকে কেন্দ্র করে গ্রিক ওঅগ্রিক সংস্কৃতির মিশ্রণে জন্ম হয় নতুন এক সংস্কৃতির। ইতিহাসে এ সংস্কৃতি ‘ হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি' নামে পরিচিত।

রোমান সভ্যতা : ইতালির মাঝামাঝি পশ্চিমাংশে রোম নগর অবস্থিত। ইতালির দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর থেকে উত্তর দিকে আল্পস পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত। ইতালি ও যুগোস্লাভিয়ার মাঝখানে আড্রিয়াটিক সাগর। আড্রিয়াটিক সাগর তীরে ইতালির উত্তর-পূর্ব অংশে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন সমুদ্র বন্দর এড্রিয়া।ইতালির পশ্চিমাংশেও ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। সাগরের এ অংশকে প্রাচীনকালে বলা হতো এটুস্কান সাগর কৃষি বিকাশের সুযোগ ছিল বলে প্রাচীন রোম ছিল কৃষিনির্ভর দেশ। ফলে রোমের আদি অধিবাসীদের সঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের সংঘর্ষ সাধারণ বিষয় ছিল যে কারণে এসব সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে রোমানরা যোদ্ধা জাতিতে পরিণত হতে থাকে। রোমান ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নানা উত্থান - পতন, ঘাত - প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ৭৫৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোম নগরী প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ৪৭৬ খ্রি খ্রিষ্টাব্দে জার্মান বর্বর জাতিগুলোর হাতে রোমান সম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন হয়।

(গ) শিক্ষা, সাহিত্য ও দর্শন এর তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য :

"গ্রিক সভ্যতা"

শিক্ষা : শিক্ষা সম্পর্কে গ্রিক জ্ঞানী-গুণীরা বিভিন্ন ধারণা পোষণ করতেন। তারা নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ মনে করতেন সুশিক্ষিত নাগরিকের হাতেই শাসনভার দেওয়া উচিত। সরকারের চাহিদা ও লক্ষ্য অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা থাকা উচিত। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল আনুগত্য ও শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়া। স্বাধীন গ্রিসবাসীর ছেলেরা সাত বছর বয়স থেকে পাঠশালায় যাওয়া আসা করত। ধনী ব্যক্তিদের ছেলেদের ১৮ বছর পর্যন্ত লেখাপড়া করতে হতো। কারিগর আর কৃষকের ছেলেরা প্রাথমিক শিক্ষা পেত। দাসদের সন্তানের জন্য বিদ্যালয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। মেয়েরাও কোনো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে লেখাপড়া করতে পারত না।

সাহিত্য : সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রাচীন গ্রিসের সৃষ্টি আজও মানবসমাজে মূল্যবান সম্পদ। হোমারের 'ইলিয়াড' ও 'ওডিসি' মহাকাব্য তার অপূর্ব নির্দশন। সাহিত্য ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিকাশ ঘটেছিল নাটক রচনায়। বিয়োগান্ত নাটক রচনায় গ্রিকরা বিশেষ পারদর্শী ছিল এসকাইলাসকে এই ধরনের নাটকের জনক বলা হয়। তার রচিত নাটকের নাম প্রমিথিউস বাউন্ড। গ্রিসের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ছিলেন সোফোক্লিস। তিনি একশটিরও বেশি নাটক রচনা করেন। তার বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রাজা ইডিপাস, আন্তিগোনে ও ইলেকট্রী অন্যতম। আর একজন বিখ্যাত নাট্যকারের নাম ইউরিপিদিস। এরিস্টোফেনেসের মিলনান্তক ও ব্যঙ্গ রচনায় বিশেষ খ্যাতি ছিল। ইতিহাস রচনায়ও গ্রিকরা কৃতিত্ব দেখিয়েছিল। হেরোডটাস ইতিহাসের জনক নামে পরিচিত ছিলেন। হেয়োডটাস রচিত ইতিহাস - সংক্রান্ত প্রথম বইটি ছিল গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে। থুকিডাইডেন্স ছিলেন বিজ্ঞানসম্মত ইতিহাসের জনক। তার বইটির শিরোনাম ছিল 'দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়র'।

দর্শন : দার্শনিক চিন্তার ক্ষেত্রে গ্রিসে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিদিন কীভাবে এর পরিবর্তন ঘটছে – এসব ভাবতে - গিয়ে গ্রিসে দর্শনচর্চার সূত্রপাত। থালেস ছিলেন প্রথম দিককার দার্শনিক। তিনিই প্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণ ব্যাখ্যা করেন। এরপর গ্রিসে যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে। ভঁদের বলা হতো সফিস্ট। তারা বিশ্বাস করতেন যে, চূড়ান্ত সত্য বলে কিছু নেই। পেরিক্লিস তাদের অনুসারী ছিলেন। সক্রেটিস ছিলেন এ দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান। তার শিক্ষার মূল দিক ছিল আদর্শ রাষ্ট্র ও সৎ নাগরিক গড়ে তোলা। অন্যায় শাসনের প্রতিবাদ করার শিক্ষাও তিনি দেন। সক্রেটিসের শিষ্য প্লেটো গ্রিক দর্শনকে চরম উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলও একজন বড় দার্শনিক ছিলেন।

"রোমান সভ্যতা"

শিক্ষা : এ সময়ে শিক্ষা বলতে বুঝাতো খেলাধুলা ও বীরদের স্মৃতিকথা বর্ণনা করা। যুদ্ধবিগ্রহের মধ্য দিয়ে রোমের যাত্রা শুরু হয়েছিল। সুতরাং তাদের সব কিছুই ছিল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। তারপরও উচ্চ শ্রেণিভুক্ত রোমানদের গ্রিক ভাষা শিক্ষা ছিল একটি ফ্যাশন। রোমানদের অনেকেই গ্রিক সাহিত্যকে লাতিন ভাষায় অনুবাদ করার দক্ষতা অর্জন করে। রোমের অভিজাত যুবকরা গ্রিসের বিভিন্ন বিখ্যাত বিদ্যাপীঠে শিক্ষালাভ করতে যেত।

সাহিত্য : সে যুগে সাহিত্যে অবদানের জন্য পুটাস ও টেরেন্সর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এরা দুজন মিলনাত্মক নাটক রচনার ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে সবচেয়ে উন্নতি দেখা যায় অগাস্টাস সিজারের সময়। এ যুগের কবি হোরাস ও ভার্জিল যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ভার্জিলের মহাকাব্য ইনিড’ বহু ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। ওভিদ ও ইনিড’ বহু ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। 
ওভিদ ও লিভি এ যুগের খ্যাতনামা কবি।

দর্শন : অনেকে মনে করেন যে, রোমীয় দর্শন গ্রিক দর্শনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। তবুও রোমান দর্শনে সিসেরো, লুক্রেটিয়াস (খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ৯৮-৫৫) তাঁদের সুচিন্তিত দার্শনিক মতবাদ দ্বারা অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। রোমে স্টোইকবাদী দর্শন যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। ১৪০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ রোডস দ্বীপের প্যানেটিয়াস এই মতবাদ রোমে প্রথম প্রচার করেন।

(ঘ) স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও বিজ্ঞানের উৎকর্ষ উপস্থাপন :

“গ্রিক সভ্যতা”

স্থাপত্য : গ্রিক শিল্পের বিশেষ করে স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে বিশেষ উন্নতি হয়েছিল। গ্রিক চিত্রশিল্পের নিদর্শন মৃৎপাত্রে আঁকা চিত্রের মধ্যে দেখা যায়। স্থাপত্যের সুন্দর সুন্দর নিদর্শন গ্রিসের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে। বড় বড় স্তম্ভের উপর তারা প্রাসাদ তৈরি করত। আর প্রাসাদের স্তম্ভগুলো থাকত অপূর্ব কারুকার্যখচিত।পার্থেনন মন্দির বা দেবী এথেনার মন্দির স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন। এথেন্সের অ্যাক্রোপলিসে স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শনের ভগ্নাবশেষ এখনও চোখে পড়ে।

ভাস্কর্য : গ্রিক ভাস্কর্য পৃথিবীর শিল্পকলার ইতিহাসে এক স্বর্ণযুগের জন্ম দিয়েছিল। সে যুগের প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী ছিলেন মাইরন, ফিদিয়াস ও প্রাকসিটেলেস। 

বিজ্ঞান : গ্রিকরা প্রথম বিজ্ঞানচর্চার সূত্রপাত করে ৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে পৃথিবীর মানচিত্র প্রথম অঙ্কন করেন গ্রিক বিজ্ঞানীরা। তারাই প্রথম প্রমাণ করেন যে,পৃথিবী একটি গ্রহ এবং তা নিজ কক্ষপথে আবর্তিত হয়। গ্রিক জ্যোতির্বিদরা সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। বস্ত্র ও বিদ্যুৎ জিউসের ক্রোধের কারণে নয়, প্রাকৃতিক কারণে ঘটে – এই সত্য তারাই প্রথম আবিষ্কার করেন। জ্যামিতির পণ্ডিত ইউক্লিড পদার্থবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। বিখ্যাত গণিতবিদ পিথাগোরাস ও চিকিৎসা বিজ্ঞানী হিপোক্রেটসের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল।

“রোমান সভ্যতা”

স্থাপত্য : রোমান স্থাপত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এর বিশালতা। সম্রাট হার্ডিয়ানের তৈরি ধর্মমন্দির প্যানথিয়ন রোমানদের স্থাপত্যের এক অসাধারণ নিদর্শন। ৮০ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট টিটাস কর্তৃক নির্মিত কলোসিয়াম নাট্যশালা যেখানে একসঙ্গে ৫৬০০ দর্শক নির্মিত হয় বসতে পারত।

ভাস্কর্য : স্থাপত্যকলার পাশাপাশি রোমান ভাস্কর্যেরও উৎকর্ষ সাধিত হয়েছিল। রোমান ভাস্করগণ দেব- দেবী, সম্রাট, দৈত্য, পুরাণের বিভিন্ন চরিত্রের মূর্তি তৈরি করতেন মার্বেল পাথরের।

বিজ্ঞান : কলোসিয়াম বিজ্ঞানীদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে প্লিনি বিজ্ঞান সম্পর্কে বিশ্বকোষ প্রণয়ন করেন। এতে প্রায় পাঁচশ বিজ্ঞানীর গবেষণাকর্ম স্থান পেয়েছে। তাছাড়া চিকিত্সা বিজ্ঞানে রোমানদের অবদান ছিল। বিজ্ঞানী সেলসাস চিকিত্সা বিজ্ঞানের ওপর বই লেখেন। এছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্রে গালেন রুফাসে অসামান্য অবদান রেখেছেন।

সুতরাং আমরা বলতে পারি বিশ্ব সভ্যতার অগ্রগতিতে উভয় সভ্যতার অবদান অনস্বীকার্য।
দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট
দ্বিতীয় অধ্যায়
বিশ্বসভ্যতা (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক ও রোম)
২য় সপ্তাহ

অ্যাসাইনমেন্ট : সিন্ধু সভ্যতার আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিশ্লেষণপূর্বক এ সভ্যতার নগর পরিকল্পনার সাথে তোমার নিজ এলাকার নগর পরিকল্পনার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপন।

নমুনা সমাধান

পটভূমি : সিন্ধুনদের অববাহিকা অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল বলে এই সভ্যতার নাম রাখা হয় সিন্ধু সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার নাম সিন্ধু সভ্যতা হলেও এর বিস্তৃতি ছিল বিশাল এলাকা জুড়ে। মহেঞ্জোদারাে ও হরপ্পাতে এই সভ্যতার নিদর্শন সবচেয়ে বেশি আবিষ্কৃত হয়েছে। তা সত্ত্বেও ঐ সভ্যতা শুধু সিন্ধু নদীর অববাহিকা বা ঐ দুটি শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। পাকিস্তানের পাঞ্জাব, সিন্ধু প্রদেশ, ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাটের বিভিন্ন অংশে এই সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে পাঞ্জাব থেকে আরব সাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ ভৌগােলিক এলাকা জুড়ে সিন্ধু সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।

সময়কাল : সিন্ধু সভ্যতার সময়কাল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। পণ্ডিতগণের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত এ সভ্যতার উত্থান-পতনের কাল। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, আর্য জাতির আক্রমণের ফলে খ্রিষ্টাব্দপূর্ব ১৫০০ অথবা ১৪০০ অব্দে সিন্ধু সভ্যতার অবসান ঘটে। তবে সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংসের সম্পর্কেও ভিন্ন মতও রয়েছে। মর্টিমার হুইলার মনে করেন,এই সভ্যতার সময়কাল হচ্ছে খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ থেকে খ্রিষ্ট পূর্ব ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত।

রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা : সিন্ধু সভ্যতার জনগণের রাজনৈতিক জীবন ও শাসনপ্রণালি সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। মহেঞ্জোদারাে হরপ্পার নগর বিন্যাস প্রায় একই রকম ছিল।এগুলাের ধ্বংসাবশেষ দেখে নিশ্চিতভাবে বােঝা যায় যে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উঁচু ভিতের উপর শহরগুলাে নির্মাণ করা হয়েছিল। শহরগুলাের এক পাশে উঁচু ভিত্তির উপর একটি করে নগরদুর্গ নির্মাণ করা হতাে। চারদিক থাকত প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত। নগরের শাসনকর্তারা নগর দুর্গে বসবাস করতেন। প্রশাসনিক বাড়িঘরও দুর্গের মধ্যে ছিল। নগরের ছিল প্রবেশদ্বার।

দুর্গ বা বিরাট অট্টালিকা দেখে মনে হয় একই ধরনের। কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে নগর দুটিতে প্রচলিত ছিল।এই প্রশাসন জনগণের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করত। সিন্ধু সভ্যতার যুগে মানুষ সমাজবদ্ধ পরিবেশে বসবাস করত।সেখানে একক পরিবার পদ্ধতি চালু ছিল। সিন্ধু সভ্যতার যুগে সমাজে শ্রেণীবিভাগ ছিল। সব লােক সমান সুযােগ-সুবিধা পেত না। সমাজ ধনী ও দরিদ্র দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। কৃষকেরা গ্রামে বসবাস করত। শহরে ধনী এবং শ্রমিকদের জন্য আলাদা-আলাদা বাসস্থানের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

পােশাক : পরিচ্ছদের জন্য তারা মূলত সুতা ও পশম ব্যবহার করত। সিন্ধু সভ্যতার সমাজব্যবস্থা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। মহিলারা খুবই শৌখিন ছিল। তাদের প্রিয় অলংকারের মধ্যে ছিল হার, বালা, আংটি, দুল, বিছা, বাজুবন্ধ চুড়ি, বালা, পায়ের মল ইত্যাদি। তারা নকশা করা দীর্ঘ পােশাক পরত, ব্যবহার করত। ফজের পুরুষরাও অলংকার।

অর্থনৈতিক অবস্থা : সিন্ধু সভ্যতার অর্থনীতি ছিল মূলত কৃষি এবং উৎপন্ন ফসলের উপর নির্ভরশীল। তাছাড়া অর্থনীতির আর একটি বড় দিক ছিল পশুপালন। কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি মৃৎপাত্র নির্মাণ ধাতুশিল্প, বয়নশিল্প, অলংকার নির্মাণ, পাথরের কাজ ইত্যাদিতেও তারা যথেষ্ট উন্নতি লাভ করেছিল। এই উন্নতমানের শিল্প পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সিন্ধু সভ্যতার বণিকরা বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যােগাযােগ রক্ষা করে চলত। বণিকদের সাথে আফগানিস্তান, বেলুচিস্তান, মধ্য এশিয়া, পারস্য, মেসােপটেমিয়া, দক্ষিণ ভারত, রাজপুতনা, গুজরাট প্রভৃতি দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যােগাযােগ ছিল।

সিন্ধু সভ্যতার অবদান : পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলাের মধ্যে একটি হচ্ছে। সিন্ধু সভ্যতা। নিম্নে এই সভ্যতার অবদান আলােচনা করা হলাে।

নগর পরিকল্পনা : সিন্ধু সভ্যতার এলাকায় তার মধ্যে হরপ্পা ও মহেঞ্জোহর আবিস্কৃত হয়েছে। বড় শহর। ঘরবাড়ি সবই পােড়া মাটির বা রােদে পােড়ানাে ইট দিয়ে তৈরি। শহরগুলাের বাড়িঘরের নকশা থেকে সহজেই বােঝা যায় যে সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা উন্নত ধরনের নাগরিক সভ্যতায় ভাস ছিল। হরপা ও মহেঞ্জোদারাের নগর পরিকল্পনা একই রকম ছিল। নগরীর ভেতর দিয়ে চলে গেছে পাকা রাস্তা রাস্তাগুলাে ছিল সােজা। প্রত্যেকটি বাড়িতে খােলা জায়গা, কূপ ও স্নানাগার ছিল। জল নিষ্কাশনের জন্যে ছােট ছােট নর্দমা সংযুক্ত করা হতাে মূল নর্দমা বা পয়ঃপ্রণালির সাথে রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হতাে। পথের ধারে ছিল সারিবদ্ধ ল্যাম্পপােস্ট।

শিল্প : সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের শিল্প সম্পর্কে আলােচনা করতে গেলে প্রথমেই মৃৎশিল্পের কথা বলতে হয়। তারা কুমারের চাকার ব্যবহার জানত এবং সাহায্যে সুন্দর মাটির পাত্র বানাতে পারত। পাত্রও গায়ে অনেক সময় সুন্দর সুন্দর নকশা আঁৰ থাকত। তাঁতিরা ধাতুর সাহায্যে আসবাবপত্র, অস্ত্র এবং অলংকার তৈরির করা হতাে। তারা তামা ও বয়নশিল্পে পারদশ'স্পোদিস ও ফ্রি টিনের মিশ্রণে ব্রোঞ্জ তৈরি করতে শিখেছিল। কারিগররা রূপা, তামা, ব্রোঞ্জ প্রভৃতির তৈজসপত্র তৈরি করত।

তাছাড়া সােনা, রূপা, তামা ইলক্ট্রাম ও ব্রোঞ্জ ইত্যাদি ধাতুর অলংকার তৈরিতে তারা পারদর্শী ছিল। অলংকারের মধ্যে আংটি, বালা, নাকফুল, গলার হার, কানের দুল, বাজুবন্দ ইত্যাদি ছিল উল্লেখযােগ্য। সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা লােহার ব্যবহার জানত না।ধাতু ছাড়া দামি পাথরের সাহায্যে অলংকার নির্মাণ শিল্পেরও বিকাশ ঘটে। হাতির দাঁতসহ অন্যান্য হস্তশিল্পেরও দক্ষ কারিগর ছিল।

স্থাপত্য ও ভাস্কর্য : সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ এবং চমৎকার স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন রেখে গেছে। সেখানে দুই কক্ষ থেকে পঁচিশ কক্ষের বাড়ির সন্ধানও পাওয়া গেছে। আবার কোথাও দুই তিন তলা ঘরের অস্তিত্ব আবিস্কৃত হয়েছে। মহেঞ্জোদারাের স্থাপত্যের উল্লেখযােগ্য উদাহরণ হলাে 'বৃহৎ মিলনায়তন' যে মিলনায়তনটির ৮০ ফুট জায়গা জুড়ে তৈরি হয়েছিল।তাছাড়া বিরাট এক প্রাসাদের সন্ধান পাওয়া গেছে। হরপ্পাতে বিরাট আকারের শস্যাগারও পাওয়া গেছে। মেহেঞ্জোদারােতে একটি বৃহৎ স্নানাগার'-এর নিদর্শন পাওয়া গেছে যার মাঝখানে বিশাল চৌবাচ্চাটি ছিল সাঁতার কাটার উপযােগী।ভাস্কর্যশিল্পেও সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীদের দক্ষতা ছিল। পাথরে খােদিত ভাস্কর্যের সংখ্যা কম হলেও সেগুলাের শৈল্পিক ও কারিগরি দক্ষতা ছিল উল্লেখ করার মতাে। এ যুগে মােট ১৩টি ভাস্কর্য মূর্তি পাওয়া গেছে। চুনাপাথরে তৈরি একটি শক্তিমাখা পাওয়া গেছে।

সিন্ধু সভ্যতার নগরায়ন শিল্প, ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের সাথে আমার গ্রামের নগরায়ন শিল্প ও ভাস্কর্যের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নিম্নে তুলে ধরা হলােঃ

নগরায়ন : সিন্ধু সভ্যতায় ছিল পােড়ামাটির তৈরি ঘর কিন্তু বর্তমানে আমার গ্রামের বাড়ীঘরগুলাে পাকা বিল্ডিং ও বাঁশের তৈরি। সিন্ধু সভ্যতায় রাস্তায় বাতির খুটি লক্ষ্য করা গেছিল আমার গ্রামে ও রাস্তায় বাতি দেওয়া হয়েছে। আর চারিদিকে দেওয়াল করা নেই সিন্ধু সভ্যতায় কিন্তু হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারাের চারিদিকে দেওয়াল করা ছিল।

শিল্প : সিন্ধু সভ্যতায় পােড়ামাটির ফলক তৈরি করা হয় মাটি দিয়ে এবং মৃত শিল্প তৈরি করা হতে দেখা গেছে। তবে আমাদের গ্রামে এ ধরনের মৃৎশিল্প প্রায় উঠে গেছে। এখন বড় বড় কলকারখানা, দোকানপাট লক্ষ্য করা যায়। সিন্ধু সভ্যতায় তামা ও ব্রোঞ্জ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অলংকার সামগ্রী তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমানে আমাদের সমাজে তামা ও ব্রোঞ্জ এর প্রচলন খুবই কম। এখন স্বর্ণ রূপা তৈরি জিনিস ছাড়া সমাজের মানুষের চলেই না।


প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট
১ম অধ্যায়
ইতিহাস পরিচিতি
১ম সপ্তাহ

অ্যাসাইনমেন্ট : “মানব জীবনে ইতিহাস” শীর্ষক প্রবন্ধ (৩০০ শব্দের মধ্যে)

নমুনা সমাধান

মানব জীবনে ইতিহাস

ভূমিকা : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নয় মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই করে আমরা বিজয়ী হয়েছি। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গর্বের, গৌরবের কাহিনী। বাঙালি জাতির এমন অনেক গৌরবের কাহিনী আছে। যে সব জানতে হলে ইতিহাস পাঠ প্রয়োজন।

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা : ইতিহাস শব্দটির উৎপত্তি ‘ইতিহ’ শব্দ থেকে যার অর্থ “ঐতিহ্য”। ঐতিহ্য হচ্ছে অতীতের অভ্যাস, শিক্ষা, ভাষা, শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি যেটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয় ইতিহাস/। ই.এইচ. কারের ভাষায় বলা যায় যে, ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ।

বর্তমানের সকল বিষয়ই অতীতের ক্রমবিবর্তন ও অতীত ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আর অতীতের ক্রমবিবর্তন ও ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণই হলো ইতিহাস। তবে এখন, বর্তমান সময়েরও ইতিহাস লেখা হয়, যাকে বলে সাম্প্রতিক ইতিহাস। সুতরাং, এখন ইতিহাসের পরিসর সুদূর অতীত থেকে বিরাজমান বর্তমান পর্যন্ত বিস্তৃত।

গ্রিক শব্দ ‘হিস্টরিয়া’ (Historia) থেকে ইংরেজী ‘হিস্ট্রি’ (History) শব্দটির উৎপত্তি, যার প্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডটাস (খ্রিঃ পূঃ পঞ্চম শতক)। তিনি ইতিহাসের জনক হিসেবে খ্যাত। তিনিই সর্বপ্রথম তাঁর গবেষণা কর্মের নামকরণে এ শব্দটি ব্যবহার করেন যার আভিধানিক অর্থ হলো সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। তিনি বিশ্বাস করতেন, ইতিহাস হলো যেটি সত্যিকার অর্থে ছিল বা সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা ও লেখা। তিনি তাঁর গবেষণায় গ্রিস ও পারস্যের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করেছেন। এতে তিনি প্রাপ্ত তথ্য, গরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ এবং গ্রিসের বিজয়গাঁথা লিপিবদ্ধ করেছেন। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এ ঘটনা ভুলে না যায়, এ বিবরণ যাতে তাদের উৎসাহিত করে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। হেরাডটাসই প্রথম ইতিহাস এবং অনুসন্ধান এ দুটি ধারণাকে সংযুক্ত করেন। ফলে ইতিহাস পরিণত হয় বিজ্ঞানে, পরিপূর্ণভাবে হয়ে ওঠে তথ্য নির্ভর এবং গবেষণার বিষয়ে। টয়েনবির মতে, সমাজের জীবনই ইতিহাস/। পকৃতপক্ষে, মানব সমাজের অনন্ত ঘটনাপ্রবাহই হলো ইতিহাস।

ইতিহাস রচনার উপকরণ : যে সব তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব তাকেই ইতিহাসের উপাদান বলা হয়। সঠিক ইতিহাস লিখতে ঐতিহাসিক উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাসের উপাদানকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা : লিখিত উপাদান ও অলিখিত উপাদান।

১. লিখিত উপাদান : ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মেও তৎকালীন সময়ের কিছু তথ্য পাওয়া যায়। যেমন : বেদ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’, মিনহাজ-উস-সিরাজের ‘তবকাত-ই-নাসিরী’, আবুল ফজল এর ‘আইন-ই-আকবরী’ ইত্যাদি। বিদেশী পর্যটকদের বিবরণ সব সময়ই ইতিহাসের গরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত। যেমন- পাঁচ থেকে সাত শতকে বাংলায় আগত চৈনিক পরিব্রাজক যথাক্রমে ফা-হিয়েন, হিউয়েন সাং ও ইৎসিৎ-দের বর্ণনা। পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান পরিব্রাজক ইবনে বতুতাসহ অন্যান্যদের লেখাতেও এ অঞ্চল সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া যায়।

২. অলিখিত বা প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান : যেসব বস্তু বা উপাদান থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পাই সে বস্তু বা উপাদানই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ মূলত অলিখিত উপাদান। যেমন : মুদ্রা, শিলালিপি স্তম্ভলিপি, তাম্রলিপি, ইমারত ইত্যাদি। এ সমস্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণের ফলে সে সময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

ইতিহাসের গুরুত্ব : মানবসমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনের সত্য নির্ভর বিবরণ হচ্ছে ইতিহাস। যে কারণে জ্ঞানচর্চার শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব অসীম। ইতিহাস পাঠ মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুঝতে, ভবিষ্যৎ অনুধাবন করতে সাহায্য করে। ইতিহাস মঙ্গল-অমঙ্গলের পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব। সুতরাং দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তির প্রয়োজনে ইতিহাস পাঠ অত্যন্ত জরুরি। অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ জাতির সফল সংগ্রাম, গৌরবময় ঐতিহ্যের তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে জাতীয়তাবোধ, জাতীয় সংহতি সুদৃঢ়করণে ইতিহাস পাঠের বিকল্প নেই। ইতিহাস জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তোলে। ইতিহাসের ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ ইতিহাস পাঠ করে অতীত ঘটনাবলির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ইতিহাসের শিক্ষা বর্তমানের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইতিহাস দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় বলে ইতিহাসকে বলা হয় শিক্ষনীয় দর্শন। মানুষ কৌতুহলপ্রিয়। মানুষ তার অতীত ঘটনা জানতে চায়। ইতিহাস পাঠ করার মাধ্যমেই অতীতকে জানা সম্ভব।

সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস পাঠ করে যে জ্ঞান লাভ হয়, তা বাস্তব জীবনে। চলার জন্য উৎকৃষ্টতম শিক্ষা। ইতিহাস পাঠ করলে বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ে, দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করে। ফলে জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহ জন্মে।

মানবজীবনে ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব বিশ্লেষণ :
জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করে : অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ, জাতির সফল সংগ্রাম, গৌরবময় ঐতিহ্যের তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেশে উদ্বুদ্ধ করে। একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে জাতীয়তাবোধ, জাতীয় সংহতি সুদৃঢ়করণে ইতিহাস পাঠের বিকল্প নেই।

সচেতনতা বৃদ্ধি করে : ইতিহাস জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তোলে। বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীর উত্থান-পতন এবং সভ্যতার বিকাশও পতনের কারণগুলো জানতে পারলে মানুষ ভালো-মন্দের পার্থক্যটা সহজেই বুঝতে পারে। ফলে, সে তার করুন পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে।

দৃষ্টান্তের সাহায্যে শিক্ষা দেয় : ইতিহাসের ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ ইতিহাস পাঠ করে অতীত ঘটনাবলির দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারে। ইতিহাসের শিক্ষা বর্তমানের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইতিহাস দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় বলে ইতিহাসকে বলা হয় শিক্ষণীয় দর্শন।

উপসংহার : ইতিহাস হলো মানব সভ্যতা ও মানব সমাজের অগ্রগতির ধারাবাহিক সত্যনির্ভর বিবরণ। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির উত্থান পতনের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা ইতিহাসের বিষয়বস্তু। গ্রিক পণ্ডিত হেরোডোটাস সর্বপ্রথম বিজ্ঞান সম্মতভাবে মানুষের অতীতের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে রচনার চেষ্টা করেছিলেন বলে তাকে ইতিহাসের জনক বলা হয়।

ইতিহাস পাঠ করে আমরা অতীতের অবস্থা জানতে পারি। আবার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎও গড়তে পারি। সর্বোপরি ইতিহাস পাঠ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম, আত্মমর্যাদাবোধ এবং জাতীয়তাবোধেরও জন্ম দেয়। সে ক্ষেত্রে ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ একটি শাস্ত্র বা বিষয়। তাই ইতিহাসকে জানা গুরুত্বপূর্ণ।

2 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post