রচনা : বাংলাদেশের গৃহপালিত পাখি

ভূমিকা : পাখ-পাখালির দেশ হল বাংলাদেশ। এরা আমাদের বড় সম্পদ। পাখি বনের কিংবা খাঁচার হোক, তার একটা অর্থনৈতিক মূল্য আছে। পাখি সম্পদে ভরপুর বলেই আমাদের মাংসের অভাব হয় না। মাংস ও ডিম পুষ্টিকর খাদ্য। সেজন্য অর্থনৈতিক কারণেই লোকে পাখি পোষে। মিষ্টি মধুর ডাকাডাকি বা গান শোনার জন্যও লোকে বনের পাখি খাঁচায় বন্দী করে পোষ মানায়। ইংরেজি Poultry (পোল্ট্রি) বলতে যে গৃহপালিত বা শিকারযোগ পাখিকুল বুঝায়-বাংলায় গৃহপালিত পাখি সেগুলোই। হাঁস-মুরগি, কবুতর বাংলাদেশের প্রধান গৃহপালিত পাখি। 

প্রয়োজনীয়তা : গৃহপালিত পশু গো-মহিষাদির ন্যায় হাঁস-মুরগি ইত্যাদি গৃহপালিত পাখির প্রয়োজন কম নয়। হাঁস মুরগির ডিম ও মাংসের জন্যই এদের ভরণ-পোষণ ও লালন-পালন। পল্লী প্রধান বাংলাদেশে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে কোন না কোন গৃহপালিত পাখি দেখা যায় না। নিতান্ত দরিদ্র পরিবারও ২/৪ জোড়া হাঁস-মুরগি ও কবুতর লালন-পালন করতে পারে। কবুতর পোষা হয় শুধু মাংসের জন্য। নিজের খাওয়া এবং বিক্রি করে নগদ টাকা উপার্জন করা যায় সহজেই। গ্রাম বাংলায় অতিথি বা মেহমান আপ্যায়নে যদি ভোজের আয়োজন করতে হয়, তাহলে গৃহপালিত পাখি হাঁস-মুরগি অতি সুপ্রাপ্য ভরসা। অসময়ে বাজারে ছুটতে হয় না-ঘরে যদি ডিম থাকে। গরুর দুধ, মোরগের গোশত ছাড়া তো জামাই আদর সম্পূর্ণ হয় না। মোরগ-মুরগি : গৃহপালিত পাখির মধ্যে মোরগ-মুরগি প্রধান। কেননা, বাংলাদেশে এখন এগুলোই অধিক সংখ্যায় আছে। বাংলাদেশের এক কৃষি পরিসংখ্যানে জানা যায়-প্রায় তিন কোটির মত মোরগ-মুরগি আছে। চালের গুঁড়ো, খুদ, কুড়া ও পোকা-মাকড় ইত্যাদি খেয়েই এগুলো বেঁচে থাকে। খাসি মোরগ সাধারণত ৩/৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। ডিম দেয় মুরগি। বছরে শতাধিক ডিম দিতে পারে দেশিজাতের মুরগিগুলোই বিদেশি জাতেরগুলো প্রায় আড়াই / তিনশত পর্যন্ত ডিম দেয়। ইদানিং হাঁস-মুরগি খামার প্রতিষ্ঠার একটা হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু লালন বিদ্যা জানা না থাকলে বিদেশি জাতের মোরগ-মুরগি খামারে রেখে পালতে গিয়ে হঠাৎ মড়কে সব ধ্বংস হতে পারে। এগুলোর রাণীক্ষেত, বসন্ত, ডিপথেরিয়া ইত্যাদি রোগ হয়। দেশি জাতের মুরগি ডিমে তা’ দিয়ে একসাথে ২০টি বাচ্চা ফুটতে পারে। আধুনিক যন্ত্র ‘হ্যাচারি’ দিয়েও ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা পাওয়া যায়। 

হাঁস : জলাভূমিতে হাঁস পালন করা যায় সহজে। এগুলো সারাদিন খালে-বিলে, নদীতে কিংবা পুকুরে সাঁতার কাটে। এরা ডুব দিয়ে শামুক, গুগলি, ছোট মাছ ইত্যাদি ধরে খায়। এরা দলবদ্ধ হয়ে থাকতে ও চলতে ভালবাসে। নদীর জলে মনের খেয়ালে এরা বহুদূর চলে যেতে পারে। সেজন্য বারবার ডেকে ডেকে খুদ, কুড়া ইত্যাদি দিয়ে আসতে হয়। দেশি জাতের হাঁস প্রায় তিন কেজি থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। একটি মাদী হাঁস বছরে দু’আড়াই শ’ ডিম দেয়। বিদেশি জাতের হাঁস আকারে-প্রকারে বড় ও ভারি এবং ডিমও দেয় বেশি। এদেরও নানারোগ হয় এবং একসঙ্গে মরে যায়। তাই সুচিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা চাই। 

কবুতর : বাংলাদেশে ঘরের চালের ঠিক নিচেই কিংবা দালানের আলিশায় ছোট ছোট কাঠের ঘর বানিয়ে কবুতর পোষা হয়। বড় অভিমানী ও তেজী জাতের পাখি কবুতর। জোড়া ছাড়া থাকে না। প্রাচীনকালে কবুতরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চিঠিপত্র গলায় কিংবা পায়ে বেঁধে দিয়ে দূরদেশে পাঠানো হত। 

স্বভাব ও স্বরূপ : গৃহপালিত পাখি হাঁস-মুরগির সাধারণ স্বভাব পোষ মানা। এদের পাখা থাকলেও উড়তে উড়তে দূরে যেতে পারে না। খাঁচার জীবনে এরা খুবই অভ্যস্ত। বনের পাখির সাথে এদের কোনরূপ সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তবে কবুতর একটু ভিন্ন প্রকৃতির। সুযোগ পেলেই কবুতর উড়ে চলে যায়। 

উপসংহার : গৃহপালিত পাখি হিসেবে ময়না, টিয়া, তোতা, ময়ুরকে ধরা যায় না। কারণ সেগুলো পুরোপুরি খাঁচায় অভ্যস্ত নয়। গান বা ডাকাডাকি শুনতে কিংবা বর্ষাকালে নাচ দেখতে অনেকে সখ করে এসব পুষে থাকে। ময়ূরের পাখা কেটে বিক্রি করে কিছু অর্থ পাওয়া গেলেও ময়না, টিয়া, তোতা পাখির কোন অর্থনৈতিক গুরুত্ব নেই। না খাওয়া যায় মাংস না খাওয়া যায় এর ডিম। কাজেই গৃসম্পদ হিসাবে হাঁস-মুরগি ও কবুতরই চিরকালের পোষ মানা পাখি।


আরো দেখুন :
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post