ভাবসম্প্রসারণ : দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ / যে একা সে-ই সামান্য, যাহার ঐক্য নাই, সেই তুচ্ছ / ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল. গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল / একতাই বল / দশের লাঠি একের বোঝা

দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।
অথবা
যে একা সে-ই সামান্য,
যাহার ঐক্য নাই, সেই তুচ্ছ
অথবা
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল
গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল

অথবা
একতাই বল
অথবা
দশের লাঠি একের বোঝা

মানুষ কখনো একা চলতে পারে না, পৃথিবীতে যে ব্যক্তি নিঃসঙ্গ এবং একা, নিঃসন্দেহে সে অসহায়।

পৃথিবীর আদিকালে মানুষ ছিল চরম অসহায়। কারণ তখন সে ছিল একা, ঐক্যবদ্ধহীন। একজন একাকী মানুষ তার সীমিত সামর্থ্যের দ্বারা বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না; এক্ষেত্রে প্রয়োজন ঐক্যের। ঐক্যবদ্ধ মানুষের কাছে কোনো বাধাই বাধা নয়। অতি ছোট ছোট বালুকণা মিলে যেমন মহাদেশ গড়ে ওঠে, তেমনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ শক্তি। বিশাল এ পৃথিবীতে একজন একাকী মানুষ অতি সামান্য ব্যক্তি মাত্র। এ সামান্য অসহায় ব্যক্তিই ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে এক অপরাজেয় শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। তাই কথায় বলে, ‘একতাই বল’। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বৃহত্তর কল্যাণের জন্য তাই বৃহত্তর ঐক্য একান্ত প্রয়োজন। বলা আবশ্যক যে, সৃষ্টির আদি থেকে বর্তমান পর্যন্ত যা কিছু উন্নতি ও মহৎ কাজ সম্পন্ন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে এক প্রচ্ছন্ন ঐক্যের বন্ধন। অনৈক্যের মাঝে জীবন দুর্বিষহ। যেখানে অনৈক্য সেখানেই পতন। কাজেই সকল সংকীর্ণতা ও বিভেদ ভুলে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। এরই ফলে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বের কল্যাণ ত্বরান্বিত হবে। ঐক্যহীন মানুষ কখনো জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে পারে না।

যারা ঐক্যবদ্ধ তাদের শক্তি অসীম। ঐক্যই প্রকৃত শক্তি। আমাদের জাতীয়, সামাজিক ও পারিবারিক জীবনে একতার প্রয়োজন সর্বাধিক। মাটির পৃথিবীতে ছোট ছোট পিঁপড়ার মধ্যেও আমরা ঐক্য লক্ষ করি। তারা নিয়মশৃঙ্খলা অনুযায়ী ঐক্যব্ধ হয়ে চলাফেরা করে এবং ঐক্যবদ্ধ শক্তির মাধ্যমেই তাদের আকৃতির তুলনায় অনেক বড় জিনিস বহন করতে পারে। মানুষ এককভাবে সামান্য আর তুচ্ছ বলেই সভ্যতার উন্নতির বিকাশে চাই মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। তাই আমরা সুনিশ্চিত হতে পারি এ ব্যাপারে যে, মানুষ একা যা করতে পারে না দশজনে তা খুব সহজেই করতে পারে। তাই বলা যায় দশে মিলে করি কাজ কাজ করলে হার জিতের লজ্জা থাকে না। একতাবদ্ধ হয়ে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায়। তাই এটা চরম সত্য যে, যে একা সে সামান্য; তার দ্বারা আমরা কঠিন বা বড় কোনো কাজ আশা করতে পারি না।

কোনো বড় ধরনের কাজে সফলতা লাভ করতে হলে অবশ্যই একতা বা ঐক্য একান্তভাবে প্রয়োজন। একজনের নিকট যা বোঝা, দশজনের নিকট তা সামান্য। সুতরাং সমাজে বড় হয়ে বা সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে হলে অবশ্যই ঐক্যের প্রয়োজন।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : দশজনে মিলেমিশে কাজ করার আনন্দ ও শক্তি দুই-ই আলাদা। তাতে হার ও জিতের কোন ভয় নেই। লাজ-লজ্জা পাওয়ারও কিছুই নেই।

সম্প্রসারিত-ভাব : কথায় বলে ‘একতাই বল’। শুধু কথায় নয়, কাজেও তাই প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা যে কাজটি একা করতে লজ্জা বা ভয় পাই, সেটি যদি কয়েকজন মিলে মিশে করি, তবে আর সেখানে কোন লাজ লজ্জা, ভয় ডর থাকে না। কারণ সেখানে হারলে সবাই হারবে জিতলে সবাই জিতবে। এককভাবে যেমন কেউ লজ্জার ভাগী হবে না, তেমনি এককভাবে কেউ আনন্দও ভোগ করবে না। যে পরিণতি হবে তা সবার ওপরেই বর্তাবে। সুতরাং সেখানে হার, জিত নিয়ে কোন চিন্তা থাকে না। তা ছাড়া একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যেমন আনন্দ পাওয়া যায় তেমনি শক্তিও বেশি পাওয়া যায়। ফলে অল্প আয়েশে কাজটি সুসম্পন্ন করা সম্ভব হয়। একা একা কাজ করা যায় বটে। কিন্তু তাতে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে, হার-জিতের প্রশ্ন আসে। দশজনে মিলে কোন কাজ করলে আর সে প্রশ্নটি আসে না। আর তাছাড়া সব কাজ একার পক্ষে সব সময় সম্ভবও হয় না। যেমন সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বৃহত্তর কার্যসমূহ সম্পাদনের জন্য ঐক্যবদ্ধ শক্তি অপরিহার্য। ঐক্যবদ্ধ শক্তি ছাড়া বৃহৎ কোন কাজ সম্পন্ন করা যায় না। কাজেই সেসব কাজ সূসম্পন্ন করার জন্য দশজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তাতে যদি পরাজয় আসে তাও অগৌরবের কিছু নেই। যেমন শুধু কোন রাষ্ট্রনায়কের একক প্রচেষ্টার দ্বারা জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা করা যায় না। সে জন্য প্রয়োজন বৃহত্তর শক্তি। এক কথায় নাগরিকদের সম্মিলিত শক্তি ও প্রাণপণ প্রচেষ্টা। কিন্তু যদি শত্রুপক্ষ মহাপরাক্রমশালী হয় এবং তাদের কাছে নেটিভরা হেরেই যায়। তাতেও তাদের অগৌরবের কিছু নেই বা পরাজিত হওয়ার গ্লানি নেই। কারণ, তারা সম্মিলিতভাবে বীরের মত লড়াই করে হেরেছে। বরং এতে তাদের গৌরবই দীপ্ত হয়ে উঠবে।

সম্মিলিত প্রচেষ্টা সাধারণত সর্বত্রই বিজয়ী হয়। কদাচিৎ পরাজিত হলেও বিজয়ী হয়। কদাচিৎ পরাজিত হলেও তাতে লাজ লজ্জার প্রশ্ন আসে না।


এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে দেয়া হলো


মূলভাব : যে কাজ একজনের পক্ষে করা কষ্টকর তা অনেকের পক্ষে একেবারে সহজ। 

সম্প্রসারিত ভাব : এ জীবন কর্মময়। কাজ সাধারণত আমরা দুভাবে করতে পারি। কখনো একা, কখনো অনেকে মিলে। কোনো কাজ একা করলে তার ব্যর্থতা একারই। ব্যর্থ হলে দশজনের কাছে লাঞ্ছিত হতে হয়। নিজের কাছেও খারাপ লাগে। উৎসাহে ভাটা পড়ে। সকলে মিলে কাজ করেও অনেক সময় সফল হওয়া যায় না। কিন্তু সে ব্যর্থতা কারও একার নয়। তাই ব্যক্তিবিশেষের লজ্জা ও নিরুৎসাহিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ব্যর্থতার দুঃখ সবাই মিলে ভাগ করলে পরিমাণে অনেক কম হয়। সে দুঃখের তীব্রতা কম থাকে। তাছাড়া লজ্জিত হওয়ার ভয়ও থাকে না। ছোট ছোট কাজ মানুষ একা করতে পারে, কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু বড় বড় কাজ কখনো একজনের শক্তি ও পরিশ্রমে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। একা করতে গেলে বহু সময় লেগে যায়। তাতে কাজ সর্বাঙ্গীণভাবে সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে সমাধা করা কঠিন হয়ে পড়ে। যে উদ্দেশ্যে কাজটা শুরু করা হয়েছিল তা সাধিত হয় না। আমরা দেখেছি যে, জগতের যে কোনো বড় কাজের পশ্চাতেই অনেক লোকের অবদান রয়েছে। বর্তমান দুনিয়ার মানুষ যে দুস্তর সমুদ্র, পর্বতশৃঙ্গ, মহাশূন্য জয় করেছে; এর পশ্চাতে রয়েছে ক্ষুদ্র-বৃহৎ কত মানুষের ইচ্ছা সাধনা। সে সাধনার প্রথম স্তরে কত না পরাজয়, কত না বিপর্যয় ঘটেছে। তাতে যদি কেউ লজ্জিত হয়ে বা ব্যথিত হয়ে মুষড়ে পড়তেন, তাহলে পরবর্তীকালে এ জয় কিছুতেই সম্ভব হতো না। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রথম আঘাতে বাঙালিরা ক্ষতিগ্রস্ত, পর্যুদস্ত ও বেসামাল হয়ে পড়ে। কিন্তু পরে সমস্ত বাঙালি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একযোগে কাজ করেছিল বলে তারা নিরুৎসাহিত হয়নি। একাকী কাজ না করে দশজনকে নিয়ে করলেই পরাজয়ের লজ্জার আগাম ভাবনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মিলেমিশে কাজ করলে জয়ে যেমন আত্মপ্রসাদ থাকে, পরাজয়েও তেমন কোনো ক্ষোভ বা দুঃখের কারণ থাকে না, যা লাভ হলো বা হারাল তা সবারই কৃতকর্মের ফল- এ একতাতেই আনন্দ। 

সিদ্ধান্ত : তাই ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ – এ মনোভাব ও জড়তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে আমাদের সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে যেকোনো কাজ করা উচিত। 

5 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post