মার্চের দিনগুলি

রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (২টি রচনা) - PDF

↬ International Mother Language Day

↬ একুশে ফেব্রুয়ারি

↬ একুশে ফেব্রুয়ারী

↬ ২১শে ফেব্রুয়ারী

↬ শহীদ দিবস


ভূমিকা : 
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহ্যবাহী দিন। বাঙালির জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উৎস হচ্ছে এ দিনটি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্যে জীবন দিয়ে বাঙালি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাঙালির রক্তঝরা এ দিনটিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, সম্মান জানিয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরবময় ও ঐতিহাসিক দিন। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। প্রতি বছর ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সারা বিশ্বে পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। এ দিবসের তাৎপর্য উল্লেখ করে বিশিষ্ট ভাষাবিজ্ঞানী ড. হুমায়ুন আদাজ বলেছেন, 
‘আমি মুগ্ধ আমি প্রীতি, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার প্রাণের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে। সত্যিই গর্বিত আমি।’ 

ভাষা আন্দোলনের আদি কথা : পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বমূহুর্তে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপ করেন। পূর্ববঙ্গ থেকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেন (১১ শ্রাবণ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ)। এভাবেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। 

International Mother Language Day

বাংলা ভাষার প্রতি অবজ্ঞা ও অবহেলা : এ দেশের বহত্তম জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই উর্দুকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার হীন চক্রান্ত চলতে থাকে। ১৯৪৮ সালে রেসকোর্স উদ্যানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এর কিছুদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর ঘোষণার পনরাবৃত্তি করলে তুমুল প্রতিবাদধ্বনি উচ্চারিত হয়। 

ভাষা আন্দোলন : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ১৯৪৮ সালের ঘোষণার পর থেকেই বাংলা ভাষার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানি ডিক্টেটরগণ যতই বাংলা ভাষার বিরোধিতা করতে থাকে, বাংলা ভাষার আন্দোলন ততই জোরদার হয়। প্রাথমিকভাবে ছাত্ররা এ আন্দোলন চালিয়ে নিলেও পরবর্তী সময়ে গোটা দেশবাসী ছাত্রদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। দেশবাসীর জোরালো সমর্থনে ছাত্রদের মনোবল আরো বেড়ে যায়, তারা দ্বিগুণ উৎসাহে সম্মুখপানে এগোতে থাকে। 

একুশের স্মৃতি : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে প্রাদেশিক পরিশদের অধিবেশনকে সামনে রেখে সমগ্র দেশে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করা হয়। পাকিস্তানি শাসক ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে সকল প্রকার মিটিং মিছিল ও সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদানে পত্যয়ী ছাত্রসমাজ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। সাথে সাথে পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ অনেকে নিহত হয়। এ হত্যাযজ্ঞ ও দমননীতির ফলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন এ দেশের কবিসমাজকে করেছে তুমুল আলোড়িত। অনেক কবি অসংখ্য কবিতার মাধ্যমে এই ভাষা-আন্দোলনকে করেছেন বেগবান। ’৫২ এর ভাষা-আন্দোলনের প্রভাবে কবি শামসুল রাহমান রচনা করেছেন, ‘বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’ নামক বিখ্যাত কবিতাটি- 
‘তোমাকে উপড়ে নিলে, বলো তবে কী থাকে আমার? 
ঊনিশ শো’ বাহান্নোর দারুণ রক্তিম পুষ্পাঞ্জলি 
বুকে নিয়ে আছো সগৌরবে মহীয়সী।’ 

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের খবর সারা দেশে বিদ্যুৎবেগে পৌঁছে যায় এবং দেশবাসী প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। অতঃপর পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। 

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি : একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আর শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস নয়। প্রতি বছর ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সারা বিশ্বে পালিত হবে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো)-এর সাধারণ পরিষদের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশসহ ২৭টি দেশের সমর্থন নিয়ে সর্বসম্মতভাবে ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’কে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয়,

“১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং ১৯৫২ সালের এই দিনের শহীদদের স্মৃতিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ১৮৮টি সদস্য দেশ এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে উদ্‌যাপিত হবে।

ইউনেস্কোর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৫ হাজার ভাষা সম্মানিত হল এবং একবিংশ শতাব্দীর তথা দুই সহস্রাব্দ অর্থাৎ ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হল ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ইউনেস্কোর এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৫ হাজার ভাষা সম্মানিত হল এবং একবিংশ শতাব্দীর তথা ২০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হয়েছিল ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। 

স্বাধিকার চেতনা : ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মধ্যে যে চেতনার উন্মেষ হয়, তার চরম বিস্ফোরণ ঘটে ঊনসত্তর থেকে একাত্তরে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাৎপর্য শহীদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নি; তা বাঙালির জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের সমস্ত আন্দোলনের মূল চেতনা একুশে ফেব্রুয়ারি। তখন থেকেই বাঙালি উপলব্ধি করেছিল তার বাঙালি জাতীয়তাবোধ, তার সংস্কৃতির অতন্দ্র প্রহরী। এই সংগ্রামী চেতনাই বাংলার সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং রাজনৈতিক আন্দোলন এই দু’ধারাকে একসূত্রে গ্রথিত করে মুক্তিসংগ্রামের মোহনায় এনে দিয়েছে। আর এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য : ভাষা একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। আর এই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে ভাষা হচ্ছে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য, বহু ভাষা-ভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না, তা ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য হল- সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেওয়া, যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া, বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা, দুর্বল বলে কোনো ভাষার ওপর প্রভুত্ব আরোপের অপচেষ্টা না করা, ছোট-বড় সকল ভাষার প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন। এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে যেমন ভালোবাসবে তেমনি অন্য জাতির মাতৃভাষাকেও মর্যাদা দেবে। এভাবে একুশকে চেতনায় ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালোবাসার প্রেরণা পাবে মানুষ। বাঙালি জাতি নিজের রক্ত দিয়ে সারা বিশ্বকে শিখিয়ে দিয়ে গেল ভাষাকে ভালোবাসার মন্ত্র। মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসা, তার জীবনাচারকে ভালোবাসা আর তার জন্যে গর্ববোধ করা। 

উপসংহার : বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে গৃহীত হওয়ার ব্যাপারটি আমাদের তথা বাংলাদেশের জন্যে অত্যন্ত গৌরবের। কারণ, একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে বাঙালি জাতি আত্মমর্যাদার চেতনা লাভ করেছিল; লাভ করেছিল মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের প্রেরণা এবং অনুভব করেছিল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা।


[ একই রচনা আরেকটি বই থেকে সংগ্রহ করে দেয়া হলো ]


ভূমিকা: জাতীয়তার প্রধান উপাদান মাতৃভাষা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এ ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতার জন্য আমাদের বহু সংগ্রাম এবং জীবন দিতে হয়েছে। ভাষার জন্য আমাদের প্রথম রক্ত দিতে হয়েছে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে UNESCO’র সাধারণ পরিষদে মহান ভাষাদিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ’ ঘোষণা করায় বাংলা ভাষা আজ মর্যাদার আসনে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।

পটভূমি: পৃথিবীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে তার মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতার পর পরই পাকিস্তান সরকার উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা করার উদ্যোগ নেয়। ১৯৪৭ সালে এক সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু তখনো পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি মানুষ বাংলায় কাথা বলে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলায় ভাষার দাবিতে প্রথম বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। এতে শেখ মুজিব গ্রেফতার হয়। তাই ১১ মার্চ কে তখন “ভাষা দিবস” হিসেবে পালন করা হত। ২১ মার্চ ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের গভর্ণর উর্দুকে পাকিস্তানের এক মাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। সাথে সাথে হয় প্রতিবাদ। ২৪ মার্চ ১৯৪৮ সালে আবার ঘোষনা করা হয় “পাকিস্তানের শিক্ষার মাধ্যম হতে হবে উর্দু”। তখন থেকে শুরু হয় মহাপ্রতিবাদের আন্দোলন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে সমগ্র ঢাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় শুরু হয় সভা-মিছিল। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সভা আর মিছিলে মিছিলে ভরে গেলে চালানো হয় গুলি এবং শহীদ হন ছালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর সহ আরো অনেকে। এরই প্রেক্ষাপটে মাওলানা ভাসানির নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা পরিষদ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে  “ভাষা দিবস” পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

স্বীকৃতির উদ্যোক্তা: কানাডান প্রবাসী বাঙালিদের সংগঠন “Mother Language Of The World” সর্বপ্রথম এ ধরনের উদ্যোগ গহণ করে। কিন্তু জাতিসংঘের পরামর্শ মতে তারা বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করে। পরবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব UNESCO এর সদর দপ্তরে পাঠানো হয়। ১৯৯৯ সালের ২৮ অক্টোবর উনেস্কোর সাধারণ পরিষদে শিক্ষা মন্ত্রি একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ’ ঘোষণা করার প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবের পক্ষে ২৭টি দেশ সমর্থন দেয়। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে উনেস্কোর ৩১তম সম্মেলনে “২১শে ফেব্রুয়ারি” কে “আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস ’ হিসেবে পালনের স্বীকৃতি পায়। এরই হাত ধরে আজ বাংলা ভাষা পৃথিবীর মধুরতম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালত হবে। বিশ্বের ১৮৮টি দেশ “১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি” তে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হবে। যার মাধ্যমে বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি ও দেশসহ সকল জাতিই তার মাতৃভাষাকে রক্ষার ও তার ঐতিহ্য বহন করার দৃঢ় শপথে উদ্দীপ্ত হবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ’ এর তাৎপর্য: সাংস্কৃতির ঐতিহ্য সংরক্ষণের ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। মাতৃভাষার প্রচলন কেবল ভাষাগত বৈচিত্র্য ও বহু ভাষাভিত্তিক শিক্ষাকেই উৎসাহিত করবে না। তা ভাষাগত ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। পারস্পরিক বোঝাপড়া, সহনশীলতা ও সংলাপের উপর ভিত্তি করে বিশ্ব সংহতি আরও জোরদান হবে। তাই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ মাতৃভাষার উন্নয়ন ও বিস্তারে সচবছেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এতে পৃথিবীর সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিও তাদের ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী হতে উদ্বুদ্ধ করবে। অপর দিকে বাঙালি জাতি হিসেব আমরা পরিচিত হব আন্তর্জাতিক পরিমন্তলে, হব গর্বিত।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন: প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদের বেদিতে শ্রদ্ধাভরে ফুল অর্পণ করি। হৃদয়ের সকল আকুতি পবিত্রতা ও শভ্রতা দিয়ে শহীদের বেদিতে ফুল দিয়ে আমরা উদ্যাপন করি মাতৃভাষা দিবস। আমাদের মত পৃথিবীর ১৮৮ টি দেশেও আমাদের দেশের মত পালিত হয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। হৃদয়ের সমস্ত শুভ্রতা উৎসারিত করে তারা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আমাদের ভাষা শহীদদের । এর চেয়ে বড় পাওয়া, বড় চাওয়া আর কি আছে আমাদের? সত্যিই আমরা গর্বিত জাতি। আমরা গর্বিত আমাদের মাতৃভাষার জন্য। শহীদরা আমাদের পৌঁছে দিয়েছে বিশ্বের সম্মান জনক স্থানে। সার্থক হয়েছে তাদের রক্তদান। আজ বিশ্ব দরবারে সহস্র প্রাণে বেঁজে ওঠে-

উপসংহার: মাতৃভূমি একটি প্রস্ফুটিত ফুল আর তার সুবাস হচ্ছে মাতৃভাষা। তাই মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার সাথে মানুষ আবদ্ধ হয় বিনি সুতোর মালার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের। মাতৃভাষাকে আশ্রয় করেই একটি জাতি লালিত ও বিকশিত হয়। জাতীর ভাব, কল্পনা, আত্মার আকুলতা, ব্যাকুলতা, হৃদয়ের প্রেম ভালোবাসা মাতৃভাষার মাধ্যমেই রূপায়িত হয়। তাই মাতৃভাষা মায়ের মত। আর এই মাতৃভাষাকে যারা কেড়ে নিতে চায়, রক্তের বিনিময়ে হলেও তাদের প্রতিহত করতে হয়। তারই ইতিহাস গড়েছিল আমাদের দামল ছেলেরা। আমাদের এই গৌরভ গাঁথা ইতিহাসটিকে শুধু আমরা নই, বিশ্ববাসিও পালন করে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে।

রচনা : একুশের চেতনা
রচনা : ভাষা আন্দোলন এবং বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন
রচনা : মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি
রচনা : মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান
রচনা : বাংলা সাহিত্যে একুশের চেতনা
রচনা : শহীদ মিনার
ভাবসম্প্রসারণ : আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি / আমি কী ভুলিতে পারি।
রচনা : বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন
Composition : The International Mother Language Day

26 Comments

  1. thanks for uploading

    ReplyDelete
  2. এটা hsc student দের জন্য jotheshto?

    ReplyDelete
  3. ২০ নম্বরের জন্য আরো প্যারা হলে ভালো হয়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. 20number er jonno 20point hole valo hoi

      Delete
    2. ভালো ভালো হবে কিন্তু আরো ভালো হবে

      Delete
  4. অমর একুশে রচনা এখনে পাওয়া যাবে

    ReplyDelete
  5. খুব ভালো হয়েছে রচনাটা

    ReplyDelete
  6. আরো বড় হলে ভালো হয়

    ReplyDelete
  7. আমি এটি কপি অথবা ডাউনলোড কিভাবে করতে পারি

    ReplyDelete
    Replies
    1. পারবেন না তো.
      স্কীনশট নিতে পারেন

      Delete
  8. আরও পয়েন্ট দরকার।

    ReplyDelete
  9. This is a very good paragraph. In my memory, I thank the typer who type the paragraph for his good work.I am a student, I know how long time it takes to make paragraph by typing. Thank to write this.

    ReplyDelete
  10. এটা খুব ভাল হইছে

    ReplyDelete
  11. it helped a lot. Thanks

    ReplyDelete
  12. It's not so good, it's best.

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post