একটি ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর

একটি ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে সামান্য দূরত্বে হজরত খানজাহান আলী (রহ)-এর মাজার, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও খাঞ্জেলী দিঘি। ষাটগম্বুজ মসজিদ শুধু দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলারই নয়, এটি সুলতানি আমলে তৈরি বাংলার সবচেয়ে বড় মসজিদ। এ মসজিদের চূড়া বা গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি হলেও লোকমুখে সর্বসাধারণে এটি ষাটগম্বুজ মসজিদ নামে খ্যাত। আমরা মসজিদ, মিনার বা মাজারের গোলাকার শীর্ষদেশকে গম্বুজ বললেও ফারসি ভাষায় স্তম্ভ বা খুঁটিকেই গম্বুজ বলে। এ মসজিদের অভ্যন্তরে যে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে, তা থেকেই ৬০ গম্বুজ নামের উৎপত্তি বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। মসজিদের বাইরে বিরাট এলাকাজুড়ে একটি প্রাচীন বেষ্টক দেওয়াল এবং পূর্বদিকে মসজিদে প্রবেশের একটি প্রধান প্রবেশ তোরণের চিহ্ন এখনও বর্তমান। তোরণের দুপাশে ছিল দুটি কক্ষ। মসজিদের খাদেম আমাদেরকে মসজিদের ভেতর ও চারপাশের নানা স্থাপনা ঘুরিয়ে দেখান। তার মাধ্যমে জানা যায়, বৃহত্তর যশোর অঞ্চল, যা বর্তমান মাগুরা থেকে বাগেরহাট হয়ে সাতক্ষীরা পর্যন্ত বিস্তৃত, হজরত উলুঘ খানজাহান আলী (রহ)-এর যুগে (১৪১৮-১৪৫৯ খ্রি.) খলিফতাবাদ নামে পরিচিত ছিল। মধ্যযুগীয় খলিফতাবাদ নামীয় রাজ্যের রাজধানী ছিল প্রথমে বর্তমান ঝিনাইদহের বারোবাজার, তার পরে এই বাগেরহাট। খলিফতাবাদের এই ষাটগম্বুজ মসজিদ এতদঞ্চলের শাসক হজরত খানজাহান আলী (রহ)-এর সদর দফতর ছিল। ষাটগম্বুজ মসজিদ একাধারে মসজিদ, ঈদগাহ, দরবারগৃহ, মাদ্রাসা, হুজরাখানা, খানকা শরিফ, মুসাফিরখানা, লঙ্গরখানা, সরাইখানা, মুজাহিদদের দুর্গ ও বিচারালয়রূপে ব্যবহৃত হতো। আমাদের দেশে প্রায় সব মসজিদে দেখা যায়, পূর্ব দিক দিয়ে মসজিদের মূল গৃহে প্রবেশের একাধিক দরজা থাকলেও পশ্চিম প্রান্তে ইমাম সাহেবের নামাজ পড়ানোর জায়গা বা মেহরাব একটিই হয়। কিন্তু ষাটগম্বুজ মসজিদে আমরা প্রায় প্রতিটি প্রবেশমুখের বিপরীতে একটি করে মেহরাব দেখলাম। এ ব্যাপারটি আমাদের বিস্মিত ও জিজ্ঞাসু করে। এ প্রসঙ্গে খাদেম বললেন, মেহরাব আরবি শব্দ, এর অর্থ অস্ত্র রাখার স্থান। শাসক, বিচারক, সেনাপতি, পীর ও ইমাম হজরত উলুঘ খানজাহান আলী (রহ)-এর সৈন্য, মুরিদ, সাথি ও ভক্তগণ নামাজ, ওয়াজ, বিচার ও মন্ত্রণার সময় অস্ত্র ও সরঞ্জাম মেহরাবে রাখতেন। যদি কোনো বিপদ সংকেত পেতেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্র হাতে নিয়ে সৈন্যগণ মেহরাব বরাবর পূর্বদিকের দরজাগুলো দিয়ে বের হয়ে যেতেন। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি পাথরের তৈরি এবং আকারে বেশ বড়। এতে পাথরের ওপর সুন্দর অলংকরণ দৃশ্যমান। ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখার পর আমরা মসজিদের পাশে হজরত খানজাহান আলী (রহ)-এর মাজার দেখতে গেলাম। সে এক বিচিত্র অধ্যায় ও অভিজ্ঞতা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post