অমাবস্যা রাতে একাকী পথ চলার অভিজ্ঞতা

অমাবস্যা রাতে একাকী পথ চলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।



মানুষের জীবনে কত রকম ঘটনাই ঘটে। কোন কোন ঘটনার অভিজ্ঞতা প্রায় সারা জীবনে তাকে নাড়া দেয় এবং শিক্ষা দেয়। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি মফস্বলের একটি কলেজে। বাড়ি থেকেই যাতায়াত করি। বাবা চাকরির সুবাদে বাইরে থাকেন এবং ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান। আমাদের বাড়ি থেকে উপজেলা সদর প্রায় ১৬ কিলোমিটার। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। আমি টাকা তোলার জন্য উপজেলা সদরে গেছি। ইচ্ছা আছে আসার পথে কিছু কেনাকাটাও করবো। টাকা তুলে কেনাকাটা শেষ করতে প্রায় সন্ধ্যা। দুপুর থেকে বেশ ভারী বর্ষণ হয়ে গেছে। পথঘাট কাদা হওয়াতে কোনো রিকশা-ভ্যান আসতে পারছেনা। আমি দেরি না করে সাহস করে হাঁটা শুরু করলাম। রাত যখন এগারোটা তখনও অর্ধেক পথ আমার সামনে পড়ে আছে। বিলের মাঝখান দিয়ে ফাঁকা রাস্তা। বৃষ্টি হয়ে যাওয়াতে লোকজন নেই। তার উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিজের হাতটি পর্যন্ত দেখা যায় না। এ অবস্থায় খুব ভয় করছে। মানুষ কোন কোন সময় এমন অবস্থার মুখোমুখি হয় যখন তার সমস্ত সংস্কার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়। ভুত-প্রেত আমি বিশ্বাস করিনা। কিন্তু এসব পরিস্থিতিতে পড়লে মনটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন মনের এমন অবস্থা হয় ক্ষীণ, একটা শব্দ হলেও মনটা কেঁপে ওঠে। মোটামুটি দ্রুত হাঁটছি। হঠাৎ অনুভব করছি আমাকে কেউ অনুসরণ করছে। মনে হচ্ছে পায়ের শব্দ। সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ভাবলাম দৌঁড় দেই। কিন্তু কতক্ষণ দৌঁড়াবো? লোকালয় তো এখনো অনেক দূরে। এমন সময় হঠাৎ পা পিছলে কাত হয়ে পড়লাম। এই নিশ্চয়ই ভূতের কান্ড। যাইহোক কোনোক্রমে উঠে দাঁড়ালাম। আবার অনুভব করলাম কেউ একজন পিছনে আসছে। লোক মুখে শুনেছিলাম ভয় পেলে দৌঁড়াতে বা পেছনে তাকাতে নেই, তাতে বিপদ বাড়ে। আমি সাহস করে পিছনে তাকিয়ে দেখি একজোড়া চোখ জ্বলজ্বল করছে। মধ্যরাতের তারার আলোয় অন্ধকার তখন সহনীয় হয়ে এসেছে। দেখলাম একটি কুকুর। কিছুটা সাহস হলো। অবশেষে রাত দুটোর দিকে বাড়ি পৌঁছালাম। মা আমাকে দেখেই কেঁদে বুকে জড়িয়ে ধরল। মার কাছে শুনলাম তখন ছিল অমাবস্যা। সে বার আমি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জরে ভুগেছিলাম। ডাক্তার বলেছিল ঠান্ডা লেগে ও ভয় থেকে জটিল হয়েছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post