খুদে গল্প : সংস্কৃতি ও সভ্যতা

"সংস্কৃতি ও সভ্যতা" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

সংস্কৃতি ও সভ্যতা

করিম মিয়া সকালে যখন বাজার থেকে ফিরছিলেন তখন তার মুখে খুশি জ্বলজ্বল করছিল কিন্তু তিনিই যখন বিকেলে মাঠের দিকে বেবুচ্ছিলেন তখন তার চোখে-মুখে সেই খুশির একবিন্দুও অবশিষ্ট ছিল না। সেখানে ছিল কেমন এক ধরনের রাগ কিংবা ঘৃণার প্রকাশ। অনেকটা রাগে গজগজ করতে করতে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং তার পরপরই বাড়ির ভেতর থেকে শোনা যায় কান্নার আওয়াজ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট ছেলেটি প্রায় বিনা কারণেই তাঁর হাতে মার খেয়েছে। কিন্তু কী এমন ঘটনা ঘটল যার জন্য তিনি হঠাৎই এমন আচরণ করলেন। খুব নিরীহ প্রকৃতির মানুষ করিম মিয়া। কারো সাতে-পাঁচে খুব একটা থাকেন না। বাড়ি থেকে অফিস আবার অফিস থেকে বাড়ি এই হচ্ছে তার চলাফেরা। পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সবসময়। কোথাও বেরুলেও সপরিবারে বেরোন। তার মতো মানুষের অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বাসা থেকে বেরোনো সত্যিকার অর্থেই খবর। জব্বার সাহেব করিম সাহেবের ওপর তলায় থাকেন। তিনি রীতিমতো করিম সাহেবের আচরণে বিস্মিত হয়ে গেলেন। পরনের কাপড় ছেড়ে চট করে তিনিও বেরোলেন করিম সাহেবের পেছনে। দেখলেন করিম সাহের হনহন করে হেঁটে চলছেন স্টেশনের দিকে। অগত্যা জব্বার সাহেবও সেদিকে হাঁটা শুরু করলেন। স্টেশনে গিয়ে করিম সাহেব ফাঁকা একটি বেঞ্চ দেখে সেখানে গিয়ে বসলেন। মুখ ঢেকে হয়ত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। দূর থেকে এসব দেখছিলেন জব্বার সাহেব। আস্তে আস্তে তিনি এগিয়ে এলেন করিম সাহেবের দিকে। তাঁকে দেখে করিম সাহেবের খুব একটা ভাবান্তর হলো না। তিনি উদাস হয়ে বসেই রইলেন তাঁর জায়গায়। একটা চা-ওয়ালাকে ডেকে দুকাপ চা দিতে বললেন জব্বার সাহেব। তারপর চায়ে চুমুক দিয়ে করিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন 'কী হয়েছে আপনার?' করিম সাহেব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেন। তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলেন কী হয়েছে আপনার? এবারে চোখ ফেরালেন করিম সাহেব। বললেন, "আচ্ছা দিন দিন কি আমরা অসভ্য হয়ে যাচ্ছি জব্বার সাহেব?' আমাদের ভেতরের মূল্যবোধ, সংস্কার সব কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? আমরা কি আমাদের জাতিসত্তা ভুলতে বসেছি?' জব্বার সাহেব তাকে থামিয়ে আসল ঘটনাটি জানতে চাইলেন। তখন করিম সাহেব বললেন, 'আমি মাঠের মধ্য দিয়ে বেরুচ্ছিলাম। দেখলাম অনেকগুলো ছেলে উচ্ছৃঙ্খলভাবে হিন্দি গান বাজিয়ে নাচছে। আমি ওদের কাছে গিয়ে বললাম কাল তো ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। তোমরা বাংলা গান না বাজিয়ে হিন্দি গান বাজােচ্ছ কেন? উত্তরে ওরা আমাকে (Back dated old man) বলল। আচ্ছা আমরা কি আমাদের ছেলেমেয়েদের এ শিক্ষাই দিচ্ছি। বাড়িতে এসে দেখি ছোট ছেলেটাও হিন্দি গান শুনছে। খুব রাগ হলো। দিলাম ওর গালে একটা চড় কষিয়ে। সব শুনে জব্বার সাহেব বললেন, 'দেখুন এতে ওই ছেলেগুলোর বা আপনার ছেলের কোনো দোষ নেই। কেবল লাইনের বদৌলতে আজ ঘরে ঘরে এসব জিনিস পৌঁছে গেছে। তাছাড়া পহেলা বৈশাখের মতো সার্বজনীন অনুষ্ঠানকেও আমরা সাম্প্রদায়িক বানিয়ে ব্লুষিত করছি। দেখলেন তো এবার টিএসসিতে কী ঘটনা ঘটল! আমরাই তো আমাদের ছেলেমেয়েদের এ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান দিতে পারিনি। ফলে আজ এ পরিণতি হয়েছে। সবার আগে পারিবারিকভাবে আমাদের ছেলেমেয়েদের বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে এ সমস্যার আপনা আপনিই সমাধান হয়ে যাবে।' এ বলে তিনি করিম সাহেবকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলেন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post