মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : শিশুশ্রম

''শিশুশ্রম" শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

শিশুশ্রম

আমাদের বাসার কাজের মেয়েটার খুব সাজার শখ। সে সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাজে। আম্মা এজন্য তাকে খুব বকাবকি করেন। আমার খুব খারাপ লাগে। আমরা দুজনেই কাছাকাছি বয়সের, বাসা থেকে কোথাও যাবার সময় আমিও সাজি কিন্তু মা তো আমাকে বকেন না। আচ্ছা আমি যদি এ বাড়ির মেয়ে না হয়ে এ বাড়ির কাজের মেয়ে হতাম, মা কি আমাকেও বকতেন? আমি কখনো কখনো ভাবি যে, আমি যদি শিউলির মতো ভাগ্য নিয়ে জন্মাতাম। যদি আমাকেও মানুষের বাড়িতে কাজ করে বেঁচে থাকতে হতো তাহলে কি হতো? আম্মা যখন শিউলিকে বকেন তখন আমার খুব কষ্ট হয়। আমি দৌড়ে আমার ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে কাদি। কিন্তু কেউ আমার কান্না শুনতে পায় না। কেন আমার কষ্ট হয়, তাও কেউ জানতে চায় না। রাতে জানালার ধারে বসে আমি শিউলির কথা ভাবতে থাকি। আচ্ছা ও যদি ওর বাড়িতে ওর বাবা-মায়ের সামনে সাজতো তবে কি তারাও ওকে এভাবে বকাবকি করতো। নিশ্চয়ই করতো না। কারণ প্রত্যেক মানুষই তার সন্তানকে প্রাণাধিক ভালোবাসে। ওর বাবা-মা নিশ্চয়ই ওকে অনেক সাজার জিনিস কিনে দিত ৷ এসব ভেবে আমার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আমি ভাবি কালই মায়ের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা বলব। সকালে নাস্তার টেবিলে আমি মায়ের পাশে বসে মাকে বললাম 'মা তুমি শিউলিকে এভাবে আর বকবে না। ওর জায়গায় যদি আমি থাকতাম তবে কি আমাকে তুমি এভাবেই বকতে?' মা কথা শুনে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকালেন। তার মুখ দিয়ে একটা শব্দও বের হলো না। কলেজে গিয়ে আমি সিমির সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলাম। সিমি আমার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমি আমার জীবনের সব কথা সিমিকেই বলি। ও আমার কাছ থেকে শিউলির বয়স শুনে বলল, 'শিশুশ্রম আমাদের দেশে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু আমরা কেউই কথাটা মানি না। শিশুদের শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা আইনত দণ্ডনীয়।' এসব শুনে আমার মাথা ঘুরে গেল। বাড়িতে এসেই আমি ইন্টারনেট খুলে বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করলাম। দেখলাম শিশুশ্রম সত্যিকার অর্থেই দণ্ডনীয় অপরাধ। সঙ্গে সঙ্গে আম্মাকে ডেকে আমি সমস্ত কথা বললাম। আম্মা প্রথমটায় বিরক্ত হলেও পরে কথার গুরুত্ব অনুধাবন করলেন। পরদিন থেকেই শিউলির সঙ্গে তিনি ব্যবহার পরিবর্তন করে ফেললেন। শিউলি সাজতে গেলে আম্মা আর আগের মতো তাকে বকাবকি করেন না। বরং কাজের ফাঁকে ফাঁকে ওকে সাজার জন্যে অবসর করে দেন। আব্বুকে বলে ওর জন্য আলাদা একটা আয়না কেনার ব্যবস্থা করেছি আমি। ও এখন খুব খুশি থাকে, আর ওর খুশি দেখে আমার নিজেরও খুব ভালো লাগে। এক অজানা আত্মতৃপ্তির স্ফূরণ ঘটে আমার মধ্যে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post