খুদে গল্প : বিপদে বন্ধুর পরীক্ষা

 বিপদে বন্ধুর পরীক্ষা শিরোনাম একটি খুদে গল্প রচনা করো।

  বিপদে বন্ধুর পরীক্ষা 

আমি আর মতিন ছোট থেকেই এক সঙ্গে বড় হয়েছি। ঘুমের সময় ছাড়া বাকি সময়টুকু দুজনে প্রায় একসঙ্গেই থাকি। একই কলেজে পড়ি, একসঙ্গেই যাতায়াত করি। মতিন একটু চুপচাপ ধরনের। আমি আবার কথা না বলে থাকতে পারি না। বেশি কথা বলার কারণে প্রায়ই ও আমার ওপর বিরক্ত হয়। নানা কটুকথাও বলে। এগুলো শুনে আমার মন খারাপ হয়। কিন্তু সে মন খারাপ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। আবার আমি ওর কাছে যাই। দুজনে সব ভুলে আবার আগের মতো থাকি। কেউ কেউ আমাদের মানিকজোড় বলে। মানিকজোড় কিনা জানি না কিন্তু দুজনেই দুজনের সঙ্গে থাকতে খুব পছন্দ করি। একবার আমার খুব শরীর খারাপ হলো। জ্বরের ঘোরে আমি উল্টা-পাল্টা কথা বলতে থাকলাম। মাঝে মাঝেই ঘোরের মধ্যে মতিনের নাম বলতে থাকলাম। আমাদের বাড়ি থেকে মতিনের খোঁজও করা হলো, কিন্তু ওর দেখা পাওয়া গেল না। অনেকদিন শয্যাশায়ী ছিলাম, কিন্তু মতিন একদিনও আমাকে দেখতে এলো না। এগুলো ভেবে আমার খুব কষ্ট হলো। কিন্তু কাউকে কিছু বলতেও পারলাম না। একটু সুস্থ হতেই বাড়ির বাইরে বের হতে শুরু করলাম। তারও ক'দিন পরে কলেজে গিয়ে মতিনের সঙ্গে দেখা হলো। হাসিমুখ নিয়ে ও কথা বলার জন্য এগিয়ে এলো। কিন্তু আমি কোনো কথা বললাম না। পেছন থেকে অনেকবার ডেকেছিল আমাকে কিন্তু সাড়া দিইনি। সন্ধ্যেবেলায় এসব ভাবতে ভাবতে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। হঠাৎ চার-পাঁচটা ছেলে আমার পথ আগলে দাঁড়ায়। আমার কাছ থেকে টাকা-পয়সা ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমিও প্রাণপণে বাধা দিই। কিন্তু অত জনের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। খানিক দূর থেকে মতিনের গলা শুনতে পেলাম। ও দৌড়ে আসছে এদিকে। ওকে দেখে ছেলেগুলো সতর্ক হয়ে গেল। একজন পকেট থেকে একটি ধারালো অস্ত্র বের করল। মতিন ওদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করতে লাগল। আমিও নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করতে লাগলাম। এক পর্যায়ে মতিনের হাতের খানিকটা অংশ কেটে রক্ত ঝরতে লাগল। ততক্ষণে দুএকজন এদিকে দৌড়ে আসতে শুরু করেছে। অবস্থা টের পেয়ে ছেলেগুলো পালিয়ে গেল। আমি মতিনকে নিয়ে দ্রুত একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে ওর ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বাঁধার ব্যবস্থা করলাম। তারপর একটা রিক্শা নিয়ে দুজনে এসে আমাদের বাড়িতে নামলাম। সবকিছু শুনে বাড়ির সবাই মতিনকে বাহবা দিতে লাগল। কিন্তু আমি যেন কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। ওকে আমার সঙ্গে এতদিন দেখা না করার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। জানতে পারলাম, ওর নানা মারা গিয়েছিল। সেখানেই ছিল ও। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল। তারপর ভুল ভাঙল, ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমি। উপলব্ধি হলো, সত্যিকারের বন্ধু কখনো বিপদে চুপ করে বসে থাকে না।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post