মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : মাদকের ছোবল

'মাদকের ছোবল' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।

মাদকের ছোবল

শরীরে সুপরিচিত একটা অস্থিরতা অনুভব করতেই টাকার জন্য হন্যে হয়ে ওঠে সেলিম। গতরাতেই তার কাছে থাকা নেশা দ্রব্যগুলো শেষ হয়ে গেছে। আবার সে কালই মায়ের কাছ থেকে জোর করে মাস খরচের শেষ টাকাটাও কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু সেলিমের ভেতরের অস্থিরতা ক্রমাগত বেড়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে সে আর নিশ্বাস নিতে পারছে না। শরীরে বিভিন্ন অংশে খিচুনি হচ্ছে। যে করে হোক একটা ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে নেশার টাকা জোগাতে। মাত্র বছর দু আগের কথা, তখনও পর্যন্ত সেলিম এমনটা ছিল না। খুবই দুষ্টু আর প্রাণোচ্ছল ছেলে ছিল সে। যেকারো মনে আদর জমাতে তার জুড়ি মেলা ভার। তাই অনেক বন্ধুবান্ধব সেলিমের। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সে প্রথমবার বাবা মাকে ছেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার যায় সাতদিনের জন্য। সেই পিকনিক ট্যুরে ছিল কিছু মাদকাসক্ত বন্ধু। তারাও সেলিমের আজকের অবস্থার জন্য দায়ী। ট্যুরের দ্বিতীয় রাতে সমুদ্র সৈকত থেকে ফিরে হোটেলে সেলিমরা। সেলিমের তখন খুব ক্লান্তি লাগছিল। সে বন্ধুদের বলে,"আমি আর জেগে থাকতে পারছি না, সবার সঙ্গে কাল সকালে দেখা হবে।" কিছুক্ষণ পর সেলিমের রুমের দরজাতে কড়া নাড়ে তার দুই বন্ধু। রুমের ভিতরে ঢুকে তারা তাকে লাল রঙের কয়েকটা ট্যাবলেট দিয়ে খেতে বলে। তারা বলে, এটা খেলে কখনো ক্লান্তি লাগে না, কাজ করার শক্তি বৃদ্ধি পায়, আবার পড়াশুনায় মনোযোগও বৃদ্ধি পায়। এখনকার যুগে সব স্মার্ট ছেলে তো এগুলো খেয়ে আরো স্মার্ট হচ্ছে।" ওদের কথা না বুঝেই সেলিম সেদিন ওই লাল রঙের ট্যাবলেট খেয়ে নেয়। আর তখন থেকেই শুরু। বাড়ি ফেরার পর থেকে সে অভাব অনুভব করে ট্যাবলেট গুলোর। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় তার অস্বাভাবিক জীবন যাপন আর টাকার জন্য বাড়ির মানুষের উপর অত্যাচার। পড়াশুনা, গানবাজনা, গল্পের আসর কোনকিছুই তাকে আর টানে না অভিশপ্ত ট্যাবলেট গুলো বাদে। টাকার জন্য প্রথমেই সে যায় মায়ের কাছে। মা টাকা নেই বললে তার অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে। মাকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে। তখন বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়ে বাসা থেকে। তার শরীরের অসহ্য যন্ত্রনাটা বাড়তে থাকে। রাস্তার পাশেই একটা ঘড়ির দোকান। সেখানে চুপ করে দাঁড়য়ে থাকে আর ভাবে, সুযোগ পেলেই ঘড়ি চুরি করবে। আর চুরি করা ঘড়ি বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড় করবে। কিন্তু ঘড়ি চুরি করতে গিয়ে সে ধরা পড়ে যায়। দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা তাকে বেদম মারপিট করে। মার খেয়ে তার মুখ থেকে রক্ত পড়তে থাকে। সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। সে শুধুভাবে কীভাবে টাকা পাবে। সে ঘুরে আবার বাসায় যায়। বাসায় গিয়ে মায়ের ফোন চুরি করে বিক্রি করার জন্য। মা বুঝতে পেরে সেলিমকে বাধা দেয়। তার কাছে অনুরোধ করে ফোনটা ফেরত দেয়ার জন্য। কিন্তু সেলিম হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। কারণ তার মধ্যে কোনো মানবিকতাবোধ আর কাজ করে না। তার চাই শুধু নেশাদ্রব্য। মা তাকে যতই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন সেলিম ততই বেপরোয়া হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত রান্না ঘর থেকে বটি এনে চালিয়ে দেয় মায়ের গলায়। তারপর বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সে।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post