মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : স্নেহময়ী মা

‘স্নেহময়ী মা’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লিখো।

স্নেহময়ী মা

মেঘমুক্ত শরতের খোলা হাওয়ায় বিকেলবেলা একাকী সেজুঁতি পদ্মা নদীর পাড়ে হাঁটছে। হঠাৎ সে বুঝতে পারল, কেউ তার শাড়ি ধরে আছে। পেছনে ফিরতেই সে দেখতে পেল তিন-চার বছরের একটি ছেলে । দেখতে ভীষণ ফুটফুটে। সেজুঁতি ওকে কোলে নেয় আর এদিক সেদিক তাকিয়ে খুঁজতে থাকে ছেলেটির সাথে কেউ আছে কিনা। আশপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে, কী নাম তোমার? তোমার সাথে কে এসেছে? তোমার বাসা কোথায়? —এ রকম অনেক প্রশ্ন। কিন্তু ছেলেটি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয় না। শুধু তাকিয়ে থাকে সেজুঁতির দিকে। মায়াভরা সেই চাহনি দেখে সেজুঁতির মনে পড়ে কুসুমের কথা। কুসুম সেজুঁতির মেয়ে ছিল। এক বছর হলো ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সে মারা গেছে। হঠাৎ এক বৃদ্ধ লোক এসে ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। সেজুঁতি লোকটিকে প্রশ্ন করে, কাঁদছেন কেন আপনি? ও কে হয় আপনার? লোকটি কান্নাভেজা গলায় বলে— আমার নাতি। ওর জন্মের তিন মাসের মাথায় বউমা মারা যায়। ওর কথা ভেবে ছেলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে আবার বিয়ে করাই। কিন্তু লাভ হলো না। নতুন বউমা আমার নাতির মা হয়ে উঠতে পারল না। অযত্নে অবহেলায় গড়াগড়ি করতে করতে ওর বয়স আজ চার হলো। কিন্তু ও কথা বলতে পারে না। কষ্ট পেলে, খিদে পেলে শুধু কাঁদে। কখনো কারো আঁচল টেনে ধরে। শুনে সেজুঁতির চোখে পানি চলে আসে। সে আবেগতাড়িত হয়ে ছেলেটির চোখে মুখে চুমু খেতে থাকে। লোকটিকে সাথে নিয়ে ছেলেটিকে বাসায় নিয়ে আসে। তার মাতৃস্নেহে ছেলেটিকে খাওয়ায়। লোকটি তার নাতিকে নিয়ে যাওয়ার সময় সেজুঁতি শব্দ করে কেঁদে ওঠে এবং বৃদ্ধ লোকটিকে বলে, আমি ওর মা হতে চাই। আপনার নাতিকে আমার কাছে দেবেন?
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post