খুদে গল্প : স্মৃতিবিজড়িত নদী

‘স্মৃতিবিজড়িত নদী’একটি খুদে গল্প রচনা করো।

স্মৃতিবিজড়িত নদী

ছুটিতে দাদুবাড়ি এসেছে আনন্দ। পড়ন্ত বিকেলে সে দাঁড়ায় তার স্মৃতিবিজড়িত নদীটির তীরে। এই সেই নদী, যার তীরে কেটেছে তার শৈশবের বহু বিকেল। সে যখন স্কুলে পড়ত, তখন এই নদী তাকে যেন চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত। প্রতিদিন বন্ধু বিনোদকে নিয়ে সে নদীর তীরে গিয়ে বসে থাকত ৷ যদিও নদীটির একটি সর্বজন স্বীকৃত নাম আছে। কিন্তু আনন্দ তার একটি নাম রেখেছে— ময়ূরাক্ষী। তার স্বপ্নের এই ময়ূরাক্ষী নদী একই সঙ্গে তার বহু আনন্দ ও বহু বেদনার সাক্ষী হয়ে আছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করার পর সে বাড়ি না গিয়ে এই নদীর তীরে এসে নীরবে অশ্রুবর্ষণ করেছিল। একসময় বাবা তাকে খুঁজে পেয়ে আচ্ছা করে বকাবকি করেছিল। বাবার একটি কথা এখনো তার মনে পড়ে। খুব রেগে গিয়ে বাবা বলেছিলেন— ‘বাদরামি করার আর জায়গা পেলি না। একে তো বাজে রেজাল্ট করলি, তার ওপর বাড়ি না ফিরে বাইরে গিয়ে হাওয়া খাচ্ছিস।' কথাটা মনে পড়লে আনন্দের হঠাৎ খুব হাসি পায়। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে ভালো ফলাফল করলে বন্ধুদের নিয়ে সে এই নদীর তীরে এসেই সেটা উদযাপন করেছিল। বন্ধুদের সবাইকে সে একটা করে মিষ্টি আর চকলেট খেতে দিয়েছিল। তারপর সবাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্নান করেছিল। সঞ্জয় ছিল ওদের মধ্যে সবচেয়ে দুষ্টু। বিনোদ স্নান করতে রাজি না হলে সে তাকে ধাক্কা দিয়ে জলে ফেলে দিয়েছিল। এই নদীর ঢেউ আনন্দকে অস্থির করে দেয়। সে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে ঢেউগুলো উঁচু নিচু হয়ে কেমন গড়িয়ে গড়িয়ে যায়। যেন বহমান জীবনেরই অনবদ্য প্রতীক সে। কখনো উত্থান কখনো পতন নদীতে নৌকা নিয়ে মাঝিরা যখন ভেসে চলে তখন আনন্দ উদাস হয়ে কোনো সুদূর স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমায়। কখনো মালামাল নিয়ে, কখনো যাত্রী নিয়ে নৌকাগুলো যখন তীরে এসে ভিড়ে তখন অন্যরকম এক পরিবেশ তৈরি হয়। আনন্দের হৃদয় যেন লাফিয়ে ওঠে। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পায় উড়ে যাচ্ছে কয়েকটি পাখি। সব যেন স্বপ্নের মতো। হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর শুনে সে স্বপ্নলোক থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। তার দাদু তাকে বাসায় যেতে ডাকছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় আনন্দ দাদুর সঙ্গে বাড়ি ফিরে চলল
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post