মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : রফিকের বাইসাইকেল

‘রফিকের বাইসাইকেল’ বিষয়ে একটি খুদে গল্প রচনা করো :

রফিকের বাইসাইকেল

রফিকের ঘরটা ছিল নিজের মতো করে সাজানো। তেমন কিছুই ছিল না ঘরে, তবে কোথায় যেন একটা পরিপূর্ণতা ছিল। সারাদিন কাজ করে যখন রফিক রাতে ঘরে ফিরত নিমেষেই যেন সব ক্লান্তি হারিয়ে যেত। সেই সময় ভালো যাচ্ছিল ওর। হঠাৎ করেই বাবা চলে গেলেন, মা তার মৃত্যুশোকে পাগলপ্রায় হয়ে গেলেন। সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়ল রফিকের ঘাড়ে।

দিনে দিনে রফিক বুঝতে শুরু করে সংসার কত কঠিন বিষয়। তার মনে পড়তে থাকে বাবার কথা। একটা মানুষ তার সারাজীবনের সবটা সময় ব্যয় করেছিলেন বাচ্চাদের লেখাপড়া, তাদের বিভিন্ন আবদার মেটানো এবং সমস্ত সংসারটাকে নিয়ে। রফিকের মনে পড়ে, একবার সে বায়না ধরেছিল একটা লাল সাইকেল নেবে। বাবার কাছে সে মাসে খুব কম টাকা ছিল। তার মধ্যে আবার টুম্পার চিকিৎসা করাতে হয়েছিল, কারণ সে ভীষণ অসুস্থ হয়েছিল। এত কিছুর পরেও বাবা হাসিমুখে বাইসাইকেল কিনে দিয়েছিলেন। বাবা তখন শুধু একটা কথাই বলেছিলেন, 'অনেকটা পথ তোমাকে চলতে হবে, কখনো অনেকেই তোমার সাথে থাকবে, আবার কখনো তুমি খুব একা।' সত্যি জীবনটা অনেক কঠিন। কারণ বাবার মৃত্যুর পর কেউ তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি।

এখন সংসার নিজের ওপর। সারাদিন কাজ করে রফিক এসে যখন ওর ঘরটাতে প্রবেশ করে তখন ওর কাছে মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত অক্সিজেন এখানে মজুদ করে রাখা আছে ওর জন্য। ও আনমনে এসে দাঁড়ায় ঘরের এককোণে সযত্নে রাখা বাই সাইকেলটার পাশে। রঙ উঠে যাওয়া বাইসাইকেল স্পর্শ করলে সে তার বাবার স্পর্শ অনুভব করে।। ওর মনে হতে থাকে শত-সহস্র আলোকবর্ষ দূর থেকে ভেসে আসা তার বাবার কণ্ঠস্বর ‘অনেকটা পথ তোমাকে চলতে হবে’। ওর সারাটা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তখন ঘুমানোটাও একটা স্বপ্ন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post