খুদে গল্প : স্বনির্ভরতার জন্য চাই ইচ্ছাশক্তি

'স্বনির্ভরতার জন্য চাই ইচ্ছাশক্তি' শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

স্বনির্ভরতার জন্য চাই ইচ্ছাশক্তি

রাহেলাকে যখন তার দরিদ্র বাবা মা বিয়ে দেয় তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর। কিন্তু সংসারভাগ্য তার মোটেও ভালো হয় নি। বিয়ের প্রথম দুই মাস সে স্বামীর ভালোবাসা পেলেও তার পর থেকে শুরু হয় তার ওপর অবহেলা ও নির্যাতন। সে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও তার স্বামী ছিল নিরক্ষর। তারপরও তাকে নানারকম অত্যাচার করে বাবার কাছ থেকে টাকা আনতে বলা হতো। কিন্তু নিরুপায় রাহেলা অভাবী পিতাকে কিছুতেই টাকার কথা বলতে পারত না। দেড় বছরের মাথায় তার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক ছেলে। অকর্মণ্য স্বামী স্ত্রী সন্তানের প্রতি কর্তব্য পালন তো করতোই না উপরন্তু রাহেলার উপর অকথ্য নির্যাতন চালাত এবং একদিন তাকে সন্তানসহ বাড়ি থেকে বের করে দিল।

রাহেলা শিশুকে নিয়ে বাবার অভাবের সংসারে এসে হাজির হয়। জীবনের এত দুর্যোগের মুহূর্তেও রাহেলা নিজেকে শক্ত রাখে। না, সে কিছুইতে জীবনের কাছে হেরে যাবে না। সে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করবে। দুধের শিশুকে মায়ের কাছে রেখে সে সেলাইয়ের কাজ শেখে। এরপর সে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে একটি সেলাই মেশিন কিনে ঘরে বসে কাজ শুরু করে। প্রথম দিকে কম কাজ থাকলেও একনিষ্ঠতা, আন্তরিকতা ও দক্ষতার ক্রমোন্নতিতে তার কাজের মান ও চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার কাছে বড় বড় কোম্পানি থেকে অর্ডার আসতে থাকে। একা অত কাজ পেরে উঠবে না ভেবে সে কিছু অসহায় ও দুঃস্থ মহিলাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগিয়ে দেয়। এখন তার কাছে প্রায় পঁচিশ জন নারী কাজ করে। তার শিশুপুত্রও এখন শহরের নামকরা স্কুলে পড়াশুনা করে। রাহেলা এখন স্বনির্ভর একজন নারী। তার এ স্বনির্ভরতার পেছনে ছিল তা অদম্য মানসিকতা ও প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি। জীবনযুদ্ধে জয়ী রাহেলা এখন অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি পোশাক কারখানা খোলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে এবং সে জানে তার স্বপ্ন পূরণ হবেই।


একই খুদে গল্প আবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো


এক অভাবনীয় হতাশা আজকাল পেয়ে বসেছে দীপুকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হওয়ার পর থেকেই একটি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে সে। খুব বড় কোনো চাকরির আশা তার ছিল না। ছোট খাটো একটা চাকরি হলেই চলত। কিন্তু তাও যেন সোনার হরিণ এর মতো। এদিকে পিতা-মাতার অভাবের সংসারে দিন দিন বাড়তে থাকে টানাপোড়েন। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। একদিন বাবা তাকে ডেকে ক্ষোভের সঙ্গে বললেন— ‘এত বড় ছেলে হয়ে সংসারে বসে বসে খেতে লজ্জা করে না তোর?’ কথাটা বড় দুঃখ দেয় দীপুর মনে। ফলে রাগ করে সে কাউকে কিছু না বলে বন্ধু শফিকের বাসায় চলে আসে। শফিক উচ্চশিক্ষিত নয়। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। দীপুর দুঃখের কথা শুনে শফিক তার কাঁধে হাত রেখে বলল– ‘শোন বন্ধু, চাকরি খুঁজে কোনো লাভ হবে না, তোকে স্বনির্ভর হতে হবে। ঠিক আমার মতো।’

দীপু হতাশার স্বরে বলল- ‘কিন্তু তার জন্যও তো পুঁজি দরকার। সেটা কোথায় পাব?’

শফিক দীপুকে আশ্বস্ত করে বলল— পুঁজি দরকার সেটা ঠিক কিন্তু তার চেয়ে বেশি দরকার ইচ্ছাশক্তি। তোর যদি ইচ্ছা থাকে, তাহলে আমি তোকে প্রাথমিক পুঁজি কিছুটা দেব। বাকিটা নিজের দক্ষতা দিয়ে তোকেই এগিয়ে নিতে হবে। দীপু যেন হঠাৎ আশার আলো খুঁজে পায়। সে আগ্রহের সঙ্গে বলে ‘আমি রাজি। তোর সহযোগিতা পেলে আমি নিশ্চয়ই সফল হতে পারব।’

এরপর শফিকের সহযোগিতায় দীপু একটি মুরগীর খামার গড়ে তোলে। প্রথমে ছোট আকারে শুরু করলেও কয়েক মাসের মধ্যেই তা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শফিকের কাছ থেকে ধার করা টাকা শোধ করে সে তার ব্যবসা সম্প্রসারিত করে। এভাবে কয়েক বছরের মধ্যে সে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post