মার্চের দিনগুলি

খুদে গল্প : পানি-দূষণ

‘পানি দূষণ’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা করো।

পানি-দূষণ

লঞ্চ ভ্রমণের সময় বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দেখে রাহাত বিস্মিত হয়। এ কি নদী না নর্দমা? নদীর পানি একেবারে কালো হয়ে গেছে আর তার সঙ্গে রয়েছে তীব্র দুর্গন্ধ। মনে হয় এখনই দম বন্ধ হয়ে আসবে। রাহাতের মনে হচ্ছে এখনই নেমে যায় লঞ্চ থেকে। কিন্তু নদীর এই করুন দশা স্বচক্ষে দেখার জন্য সে চুপ করে তাকিয়ে থাকল নদীর দিকে।

কয়েকদিন আগে রাহাত কোনো একটি পত্রিকায় ‘নদী বাঁচাও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পড়েছিল। কিন্তু সরজমিনে দেখে রাহাত শুধু বিস্মিত হলো না, সাথে সাথে প্রচন্ড রাগ হলো মানুষের ধ্বংসাত্মক এই কর্মকাণ্ডের জন্য। কী করে ফেলেছে নদীটাকে প্রায় দুই কোটি লোকের বাস ঢাকা শহরে। ১৬১০ সালে যখন এই বুড়িগঙ্গার তীরে ঢাকা নগরীর পত্তন হয় তখন তার ছিল পূর্ণ যৌবন। কালের বিবর্তনে সেই পূর্ণ যৌবনা বুড়িগঙ্গা আজ মানুষের হাতেই মৃত্যুমুখে পতিত হতে চলেছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ন পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। অত্যধিক জনসংখ্যার চাপ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে নদীর ওপর। নগরীর অসংখ্য কল কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে যা নদীর এই অবস্থার জন্য দায়ী। লঞ্চে চলতে চলতে দেখল নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য পয়ঃনিষ্কাশন নালা বা প্রতিনিয়ত নদীর পানিকে বিষিয়ে তুলছে। হঠাৎ রাহাত দেখতে পেল কেউ একজন বিস্কুট খেয়ে বিস্কুটের খালি প্যাকেট-পলিথিন ব্যাগে ভরে লঞ্চের জানালা দিয়ে নদীতে ফেলল। এটাও পানি দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। মানুষের এই অসচেতনতা ও স্বার্থান্বেষী মনোভাব বুড়িগঙ্গাসহ অন্যান্য নদীর পানি দূষিত হওয়ার প্রধান কারণ। প্রতিদিন অসংখ্য ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলার কারণে তা থেকে যে তেল বা বর্জ্য নিঃসরণ হয় তাও নদীর পানি দূষিত করে। এসব দেখতে দেখতে রাহাতের মনে হলো, এ দেশের মানুষ যতদিন সচেতন না হবে ততদিন প্রকৃতির এই বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হবে না।


একই খুদে গল্প আবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো


লঞ্চ ভ্রমণের সময় বুড়িগঙ্গা নদীর পানির রং দেখে রাহাত বিস্মিত হয়। পানির গাঢ় কালো রং দেখেই সে বুঝতে পারে কী পরিমাণ দূষিত এই পানি। এছাড়া চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রকম আবর্জনা। রাহাত তার ভ্রমণসঙ্গী আবিরকে লক্ষ করে বলে– দেখ আবির, বুড়িগঙ্গার পানির কী বাজে অবস্থা।

- আবির কিছুটা উদ্বিগ্ন স্বরে বলে— হ্যা, আমিও তাই ভাবছিলাম। অথচ এই পানিই কিন্তু ঢাকা শহরের সবাই নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার করছে, যদিও পরিশোধিত করে। কিন্তু এভাবে দূষণ চলতে থাকলে তো এই পানি একসময় পরিশোধনেরও অযোগ্য হয়ে পড়বে।

-রাহাত কিছুটা ব্যথিত স্বরে বলে— কিন্তু এই অবস্থার জন্য আমাদের নিজেদের দায়ও কম নয়। আমরা যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষিত করে তুলছি। কলকারখানার বর্জ্য নির্বিচারে নদীতে ফেলছি। ফলে এমনটাতো হবেই।

- আবির প্রত্যয়ী স্বরে বলে পানিদূষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করা এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। কীভাবে শুরু করা যায় বলতো?

- রাহাত একটু ভেবে বলে, তাহলে ভার্সিটির আরও কিছু বন্ধুকে নিয়ে আমরা পানিদূষণ রোধে একটি টিম তৈরি করতে পারি। এই টিমের কাজ হবে পানি দূষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করা। রাষ্ট্রীয়ভাবে পানিদূষণ রোধে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে স্মারকলিপি প্রদান এবং পানি দূষণকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া।

- আবির সমর্থন করে বলল— দারুণ। পানি দূষণকারীরা তো প্রকৃতপক্ষে মানুষ হত্যাকারী। কারণ এই দূষিত পানি পান করে মানুষ নানারকম জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করছে। আর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী তো যারা পানি দূষণ করে তারা। পানিবাহিত রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও কিন্তু আমাদের দেশে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে।

এরপর রাহাত ও আবির দুজন দুজনার হাতে হাত রেখে শপথ করে যে, পানিদূষণ রোধে তারা তাদের সর্বসামর্থ্য দিয়ে কাজ করে যাবে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post