খুদে গল্প : মোবাইল ফোনে বন্ধুত্বের পরিণাম

‘মোবাইল ফোনে বন্ধুত্বের পরিণাম’  শিরোনামে একটি খুদে গল্প রচনা কর।

মোবাইল ফোনে বন্ধুত্বের পরিণাম

অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আসা অপরিচিত এক নারী কন্ঠ শুনে সাগর বুঝতে পারে, সে ডায়াল করেছে ভুল নম্বরে। তবু নিশ্চিত হতে জিজ্ঞাসা করি, এটা কি পিয়াল খন্দকারের নম্বর? বিপরীত দিক থেকে এক নারী কন্ঠ স্বাভাবিকভাবে জানতে চাইলো, আপনি কে? আমি সাগর। কোথা থেকে বলছেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়? পিয়ালকে কিভাবে চিনেন? আমি ওনাকে দেখিনি, কথাও হয়নি। ফোন নম্বর কিভাবে পেয়েছেন? আমার রুমমেট আহসান দিয়েছে। পিয়ালের আর কোনো নম্বর আপনার কাছে আছে? না, নেই। তাহলে একটা নাম্বার লিখুন ০১৭১... এই নম্বরে ঘন্টাখানেক পরে ফোন দিলে পাবেন। আপনি কে বলছিলেন? আমি মৌমিতা, পিয়ালের বন্ধু। আরও কিছু? নো, থ্যাংকস। ওকে বাই। এটুকুই কথা হয়েছে ছদ্ম নামধারী মৌমিতার সঙ্গে। তারপর এক ঘন্টা পরে মৌমিতার দেয়া সেই নম্বরে ডায়াল করতেই রিসিভ হলো। অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো- হ্যালো, পিয়াল খন্দকার বলছি, হ্যাঁ বলুন। আচ্ছা, আপনি। তা ভালো আছেন ভাই? হ্যাঁ, হ্যাঁ মৌমিতা বলেছে। হাঃ হাঃ এই চলছে আর কী? না না ঠিক আছে, তখন বাসায় গেস্ট ছিল, কথা বলছিলাম তাদের সঙ্গে। হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিক আছে। ঠিক আছে অসুবিধা নেই, আমি আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দিলে যেতে পারবেন না? গুড, তাহলে লিখুন বাড়ি নং:.. রোড নং.... উত্তরা, ঢাকা ১২৩০। ঠিক আছে ভাই। আচ্ছা শুনুন, সম্ভব হলে ভালো জামা কাপড় পরে, একটু স্মার্ট হয়ে যাবেন। বুঝতেই পারছেন প্রথমে দর্শনদারি, পরে গুণ বিচারি। আপনি আমার বন্ধুর বন্ধু, তাহলে আমারও বন্ধু। না, না ভাই এভাবে বলবেন না। বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য কিছু করতে পারা তো আনন্দের। তাহলে কবে যাচ্ছেন? ঠিক আছে। ওকে ফাইন। তাহলে ঐ কথাই থাকল। ওকে বাই। ঠিক আছে আপনার কাজটা আগে হোক তারপর মিট করবো। ওকে। ওকে, বাই। পিয়াল খন্দকারের সাথে কথোপকথন শেষ হলো সাগরের। দীর্ঘ ফোনালাপের মূল বিষয় ছিল চাকরির তদবির। একজন নামি দামি নেতার সাথে সাক্ষাৎ করে বিস্তারিত বিষয় খুলে বলা। নেতা পিয়াল খন্দকারের মামা। আর মৌমিতা ঐ নেতার একমাত্র কন্যা। কথা বলে সাগর খুব আশাবাদী, পিয়াল ভাই খুব ভালো লোক। আজকের দিনে নিঃস্বার্থ এমন উপকারী এমন উপকারী লোক পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। নির্ধারিত দিনে যথাসময়ে পিয়াল খন্দকারের ঠিকানায় হাজির হলো সাগর। তার দেহটা ছাড়া দেহের সঙ্গে থাকা কোট, টাই, দামি ঘড়ি, মোবাইল, ব্যাগ, জুতা সবই ধার করা। অটোরিকশা থেকে নেমেই সাগর ফোন করল পিয়ালকে। পিয়াল ফোন কেটে দিল। আবার কল করল। ব্যস্ত পেল। মিনিট দুই পরে আবার ডায়াল করল, তখনও বিজি। আর পাঁচ মিনিট পর ডায়াল করে পেল, হ্যালো পিয়াল ভাই...। সাগর কথা বলতে পারল না। পেছন থেকে তাকে মাথায় সজোরে কেউ একজন আঘাত করল। যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন বুঝতে পারল সে একটা ময়লা ড্রেনে পড়ে আছে, মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে, গায়ে গেঞ্জি আর পরনে শার্ট প্যান্ট ছাড়া আর কিছু নেই। একজন রিকশাওয়ালা দয়াপরবশ হয়ে তাকে ড্রেন থেকে টেনে তুলছে।


একই খুদে গল্প আবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো


অপর প্রান্ত থেকে ভেসে আশা অপরিচিত এক নারীকণ্ঠ শুনে সাগর বুঝতে পারে, ডায়াল করেছে ভুল নম্বরে। আসলে সে বন্ধু রফিককে ফোন করতে চেয়েছিল। সাগর নম্রস্বরে দুঃখিত বলে ফোনটি রেখে দিতে চাইল। কিন্তু সেই নারীকণ্ঠ হঠাৎ জিজ্ঞেস করল— আপনি কে বলছেন? সাগর কিছুটা আমতা আমতা করে বলল— আমি সাগর বলছি!

– বাহ্! বেশ চমৎকার নাম তো আপনার ।
– ধন্যবাদ, (সাগর উৎফুল্ল স্বরে বলল)
– কী করেন আপনি?
– আমি পড়াশোনা করি।
– কোন ক্লাসে?
– দ্বাদশ শ্রেণি।
– আপনার নামটা কি জানতে পারি? (সাগর কিছুটা কম্পিত স্বরে বলল)
– আমি নদী।
– সত্যি? দারুণ তো..
– দারুণ কেন?
– একজন ‘সাগর’ একজন 'নদী' দারুণ না?
– আচ্ছা আমরা কি একদিন দেখা করতে পারি? (নদী হঠাৎ রহস্যময় স্বরে বলে উঠল।)
(সাগর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল)
– হতে পারে। কিন্তু আপনার ঠিকানা তো জানা দরকার। হ্যাঁ সময় মতো সবই জানবেন। আজ তাহলে রাখি। আরেক দিন কথা হবে।

এরপর সাগর আর নদী প্রায় প্রতিদিনই ফোনে কথা বলা শুরু করে। এভাবে কিছুদিন অতিক্রান্ত হলে নদী সাগরের ব্যক্তিগত প্রায় সব তথ্যই জেনে ফেলে। একদিন নদী সাগরকে একটি ঠিকানা দিয়ে দেখা করতে বলে। সাগরও সানন্দে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু ঠিকানা মতো গিয়ে সে খুব অবাক হয়। জায়গাটি বেশ নির্জন। তাছাড়া তার আসতে কিছুটা দেরী হলেও নদীকে সেখানে দেখা যাচ্ছে না। সাগর তাকে ফোন করলে নদী পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে বলে। কিন্তু পাঁচ মিনিট পরে ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা। চার পাঁচজন উঠতি বয়সী ছেলে এসে তাকে ঘিরে ধরে। তারপর তার গালে একজন চড় বসিয়ে বলে— ‘যা আছে দ্রুত দিয়ে দে।’ সাগর স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না। এরপর বাকিরা তাকে কিল ঘুষি মেরে দামী মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে চলে যায়। সাগর অশ্রুসজল চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post