খুদে গল্প : দেশাত্মবোধ

দেশাত্মবোধ শিরোনামে একটি ক্ষুদে গল্প লেখো।

দেশাত্মবোধ

সায়েরা খাতুনের প্রথম সন্তান জারা। পুরো নাম জান্নাতুন নাঈম জারা । জন্মের পরই বাবা-মা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন বড় হলে মেয়েকে ডাক্তার বানাবেন। জারার বয়স এখন ছয় বছর। মা সায়েরা যেন এখনি তার মাঝে ডাক্তারের প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। জারাকে প্রাথমিক শিক্ষার অনেকটাই বাসায় শেখানো। আসলে শিশুরা মায়ের কাছে থেকেই বেশি শিখে। মাকে বলা হয়ে থাকে শিশুদের প্রথম শিক্ষক। খেলাচ্ছলে আদর-সোহাগ দিয়ে মা প্রথম শ্রেণির পাঠ প্রায় সম্পন্ন করেছেন জারার। কিন্তু তারপরও তাকে তো স্কুলে ভর্তি করতে হবে। সে মোতাবেক 'সূর্যোদয় মাতৃপীঠ শিক্ষালয়ে তাকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে কৃতিত্বের সাথে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় সে। ক্লাসে তার রোল নাম্বার এক। এই এক রোল নম্বর যেন সে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত এক রোল থেকে তাকে আর কেউ সরাতে পারেনি। মেধার স্বাক্ষর রেখে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায় জারাহ। একই ফলাফল এইচএসসিতেও। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণে তার প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকে। আর একনিষ্ঠতা, নিয়মানুবর্তিতা ও পরিশ্রমের ফসলই এমন ফলাফল। কিন্তু এবার সবচেয়ে বড় যুদ্ধে নামতে হবে জারাকে। মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো না করলে ডাক্তারি পড়া কঠিন হয়ে পড়বে। জারার ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু হয়ে যায় লেখাপড়া। মা সায়েরা ছায়ার মতোই তার পাশে পাশে থাকে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম হয় সে। তাকে নিয়ে বাবা-মায়ের খুশি যেন আর ধরে না। মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হবে, মানুষের সেবা করে সুস্থ করে তুলবে এই স্বপ্ন আরও তীব্রতর হতে থাকে। এমবিবিএস পাস করে জারা এখন উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া শেষ করে একটি হাসপাতালে তার চাকরি হয়। সেখানে অনেক বেতন। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা বেতন। কিন্তু জারার তাতে লোভ নেই। যে দেশের নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করে সে বড় হয়েছে, যেখানকার সহজ-সরল মানুষগুলো হৃদয় দিয়ে একে অন্যকে ভালোবাসে সেই জন্মভূমিকে বঞ্ছিত করে শুধুমাত্র অর্থের জন্য আমেরিকা থাকাকে সে সমীচীন মনে করে না। তার বিবেক তাকে জাগিয়ে তোলে। দেশ, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার টানে সে স্বদেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। তার ভাবনা এখনো বাংলাদেশের অনেক স্থানে ভালো ডাক্তার নেই। চিকিৎসার অভাবে প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। সেসব মানুষের জন্য তার কিছু করার আছে। যে সবুজ সোনালি দেশের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতিতে সে বড় হয়েছে তার সেবা করা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা বড় স্বার্থপরতা মনে হয়। তাই সে দেশে ফিরে আসে। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা প্রদান শুরু করে। নিজ এলাকা হওয়ায় তাকে পেয়ে গ্রামের মানুষের যেন আনন্দের সীমা নেই। জারার আন্তরিক সেবা ও চিকিৎসার সফলতায় গ্রামের মানুষের মুখে মুখে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। দায়িত্বের বাইরে প্রতি শুক্রবার সে ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেয় গ্রামবাসীকে। দেশাত্মবোধে জাগ্রত হয়ে এবং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে স্বদেশের সেবায় নিজেকে ব্রত রাখে জারা।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post