খুদে গল্প : আমার ছোট বোন

‘আমার ছোট বোন’ শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখো।

আমার ছোট বোন

ফোনটা বাজছে। বাড়ি থেকে ফোন। আমি নিশ্চিত ফোনটা আমার ছোট বোনই করেছে। পান থেকে চুন খসলেই ফোন করে দাদার কাছে নালিশ করা তার বহুদিনের স্বভাব। এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাবার অকাল মৃত্যুতে পথে বসে আমাদের পরিবার। একটা সেলাই মেশিন পুঁজি করে মা সংসারের হাল ধরেছিলেন। আমরা শহরের বাসা ছেড়ে গ্রামে চলে যাই। আমি গ্রামের স্কুলে ভর্তি হই। আমার ছোট বোন নিতুকেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিই। সময় পেলেই মায়ের কাজে সাহায্য করি। চাচা বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। সম্পদ বলতে আমাদের পুরানো বাড়ি ছাড়া আর কিছু ছিল না। দাদি তখনও জীবিত ছিলেন। তিনি বাবার মৃত্যুর শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর দু বছর পর তাঁর মৃত্যু হয়। দু বছর তিনি একটি কথাও বলেননি। নিতু ফোন করেছে বাড়ি থেকে? কিন্তু কী কথা? আমি ফোন ধরতে ধরতে লাইন কেটে গেল। গ্রামের স্কুল কলেজের পাঠ চুকিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য আমি যখন ঢাকায় আসি, নিতু তখন ক্লাস ফাইভে। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়েছি দু বছর। আমার চাকরির বয়সও দু বছর। অনার্স পাস করেই প্রাইভেট ব্যাংকে জুনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করছি। নিতু এখন কলেজে। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায় নিতু অনেক ভালো করেছে। মাকে সব রকম পরিশ্রমের কাজ থেকে বহু কষ্টে বিরত করেছি। আমাদের সংসারে এখন সুখের বাতাস বইছে। পুরান ভিটায় আমরা নতুন ঘর তুলেছি। নিতুর লেখাপড়ার খরচ, মায়ের ওষুধ, চিকিৎসা নিয়ে এখন আমার আর ভাবনা নেই। নিতুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বানানোর স্বপ্ন দেখতেন আমার বাবা, মা সে কথা মনে করে এখনও চোখের জল ফেলেন। এখন একটাই লক্ষ্য নিতুকে দিয়ে বাবার স্বপ্ন পূরণ আর মায়ের অশ্রুমোচন। ফোনটা আবার বেজে উঠল। ধরলাম, হ্যালো নিতু। ওপাশ অপরিচিত একটি কন্ঠ জানাল- নিতু আর নেই, কলেজ থেকে ফেরার পথে কে যেন ছুরি মেরেছে।


একই খুদে গল্প আবার সংগ্রহ করে দেওয়া হলো


ফোনটা বাজছে। বাড়ি থেকে ফোন। আমি নিশ্চিত ফোনটা আমার ছোটবোনই করেছে। বাজতে থাকা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি স্ক্রিনে 'Baba' শব্দটি। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মৃদু কণ্ঠস্বর। আমি কিছুটা শঙ্কিত হলাম। ক'দিন ধরেই বাড়ি থেকে খবর আসছে শ্যামার শরীরটা বেশ একটা ভালো না। শ্যামা আমার ছোট বোন। এবার উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে। প্রায়ই কেঁপে কেঁপে জ্বর আসে। তাই বাড়ি থেকে আসা প্রতিটি ফোনই আমাকে শঙ্কিত করে। বাবা বললেন, ‘যদি পারিস কিছুদিনের জন্য বাড়ি আয়। শ্যামা তোকে খুব দেখতে চাইছে।' আমি বললাম, ‘শ্যামা ভালো আছে তো?' বাবা মৃদুহেসে বললেন, ‘আগে তুই আয়।’ আমি বললাম, ‘২ সপ্তাহ পর আমাদের গ্রীষ্মকালীন ছুটি আরম্ভ হচ্ছে তখন আসব।’

বাবা বললেন, ‘আচ্ছা’। আমি হাতখরচের টাকা জমিয়েছিলাম আমার জন্য একটা ডিজিটাল ক্যামেরা কিনবো বলে। দুই দিন পর কলেজ এক মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে। আমিও অল্প অল্প করে ব্যাগ গোছাচ্ছি। হঠাৎ করেই মনে হলো শ্যামার জন্য একটা স্মার্টফোন কিনি। তাতে বাড়ির সবার সাথেই যোগাযোগটা আরও সহজ ও সুন্দর হবে। নামি ব্র্যান্ডের একটি স্মার্টফোন কিনে বাড়ি নিয়ে গেলাম। বাড়ি পৌঁছে দেখি শ্যামা বিছানায় আধশোয়া। বাবা মাথায় পানি দিচ্ছে। শ্যামা আমাকে দেখে মৃদু একটা হাসি দিল। বললো, ‘ভাইয়া, আমার জন্যে কী এনেছিস?’ আমি ফোনটি বের করে দেখাতেই তার যে কি আনন্দ। ২/৩দিন পর আস্তে আস্তে শ্যামা সুস্থ হয়ে উঠল। আমরা দুই ভাইবোন স্মার্টফোন এর নানান অ্যাপস দেখলাম। ছুটি শেষ হওয়ার আর দুদিন বাকি। শ্যামা এসে বললো, আয় ভাইয়া, বাবা-মা, তুই আর আমি মিলে একটা সেলফি তুলি।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post