খুদে গল্প : পরিবেশ দূষণ

'পরিবেশ দূষণ' শিরোনামে একটি খুদে গল্প লেখ।

পরিবেশ দূষণ

রাস্তার পাশে ডাস্টবিনের বাইরে বর্জ্যপদার্থগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রিমার এখন আর এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে ইচ্ছে করে না। চারপাশটা মশা মাছি তে পরিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, দুর্গন্ধে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয় ওর প্রতিদিন। সাদা রঙের স্কুল ড্রেসে যখন মাছিগুলো উড়ে এসে পড়ে তখন নিজেকেও নোংরা মনে হয় রিমার। মাস দুয়েক আগে রিমা আর ওর ছোট ভাই লিমন প্রায় একই সঙ্গে জ্বরে পড়েছিল। সেই জ্বর আর কিছুতেই ছাড়ছে না। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় দুই ভাই বোনকে। রক্ত পরীক্ষার পর জানা যায় ওদের ডেঙ্গু জ্বর। মশার কামড় থেকেই জ্বরটা হয়েছিল। রিমা জানে ময়লা আবর্জনাতে মশার জন্ম হয়। আবার এই মাত্র কয়েকদিন আগে ঘটনা। স্কুল থেক্র ফিরছিল রিমা। ডাস্টবিনের পাশে শুয়ে থাকা কুকুরগুলো হঠাৎ ঘেউ ঘেউ করে চিৎকার করতে শুরু করে। রিমা সেদিন ভীষণ ভয় পেয়েছিল। ভেবেছিল কুকুরগুলো বুঝি ওকে কামড়ে দিবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে একটা রিকশাওয়ালা এসে জায়গাটা পার করে দেয়। এসব ঘটনা রিমার ভেতরে ভীষণ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। স্কুলে গিয়ে ক্লাসের বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিমা। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাল ওরা স্থানীয় কাউন্সিলের কাছে যাবে। গিয়ে একটা দরখাস্ত দিয়ে আসবে। আজ রাতেই সে দরখাস্ত লিখবে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে রিমার দাবি- ডাস্টবিনটা যেন মেরামত ও সুন্দর করা হয়। শুধু তাই নয়, ডাস্টবিনের চারপাশে ফুলের বাগান করার ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করে রিমা। সকাল সকাল তৈরি রিমা ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে যায় কাউন্সিলরের কাছে। দরখাস্তটা পড়ে ভীষণ খুশি হল কাউন্সিলর সাহেব। রিমাদের অনেক বড় মানুষ হওয়ার জন্য দোয়া করেন তিনি। সেখান থেকে রিমা বন্ধুদের সঙ্গে সোজা চলে যায় স্কুলে। স্কুলে গিয়ে শুনতে পায় আর এক খুশির খবর। ওদের স্কুল পনেরো দিনের জন্য বন্ধ। রিমা জানে ছুটি মানেই মায়ের সঙ্গে লিমনের হাত ধরে মামা বাড়ি যাওয়া। মামাবাড়িতে গিয়ে অনেক আনন্দ করেছে রিমা ও লিমন। পিঠাপুলি খেয়েছে, মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়িয়েছে। এবার ওরা পুকুরে সাঁতার কাটতেও শিখেছে। এতকিছুর মাঝেও রিমা ওই নোংরা ডাস্টবিনের কথা ভুলতে পারে নি। আজ স্কুল খুলেছে। স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে আর ভয় পাচ্ছে ঐ নোংরা আর দূষিত রাস্তাটার কথা ভেবে। কিন্তু উপায় নেই। স্কুলে যাওয়ার জন্য ওটাই একমাত্র রাস্তা। তাই স্কুল ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রিমা স্কুলের উদ্দেশ্যে। কিন্তু ডাস্টবিনটার কাছে গিয়ে অবাক হয়ে যায় রিমা। রাস্তায় কোন ময়লা আবর্জনা নেই। ডাস্টবিনের চারপাশে গোলাপ গাছের চারা লাগানো হয়েছে। সেই সঙ্গে একটা বড় সাইনবোর্ড লেখা আছে "ডাস্টবিনের বাইরে ময়লা ফেললে বিশেষ শাস্তির ব্যবস্তা রয়েছে।" রিমা মনের আনন্দে স্কুলের দিকে হাটতে থাকে।

1 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post