HSC : অর্থনীতি : ৪র্থ সপ্তাহ
  অ্যাসাইনমেন্ট : রমিজ বাজার থেকে প্রতি কেজি পেয়ারা ৮০ টাকা, ৭০ টাকা ও ৬০
  টাকা হলে যথাক্রমে ১৫ কেজি, ২০ কেজি ও ২৫ কেজি পেয়ারা ক্রয় করতে আগ্রহী। অন্যদিকে
  পেয়ারা বিক্রেতা উক্ত দামে বাজারে পেয়ারা সরবরাহ করতে চায় যথাক্রমে ২৫ কেজি, ২০
  কেজি ও ১৫ কেজি। উল্লেখিত তথ্যের ভিত্তিতে পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ কর।
  নমুনা সমাধান
    "পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ"
  
  
    চাহিদা : সাধারণত চাহিদা শব্দের অর্থ হচ্ছে কোনো দ্রব্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা ভোগ
      করার ইচ্ছা। তবে অর্থনীতিতে চাহিদা শব্দটি বিশেষ অর্থ বহন করে। এখানে
      আকাঙ্ক্ষার সাথে সামর্থ্য বিশেষভাবে জড়িত। চাহিদা হচ্ছে কোনো দ্রব্য পাওয়ার
      ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা যা নির্ভর করে ক্রয়ক্ষমতা এবং অর্থ খরচ করে ঐ দ্রব্যটি
      ক্রয় করার ইচ্ছার উপর।
  
  
    শুধুমাত্র কোনো দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেই তা চাহিদা হবে না। একজন
    দিনমজুর কাজের ফাকে বিশ্রাম নিতে গিয়ে পাশে রাখা দামি গাড়িটি পাওয়ার ইচ্ছা
    হলো। কিন্তু গাড়িটি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তার কাছে নেই। তাহলে ইহাকে
    চাহিদা বলা যাবে  না। আবার, মনে করি একজন ব্যক্তির আইসক্রীম খেতে ইচ্ছে
    করল এবং আইসক্রীম কেনার জন্য অর্থ আছে৷ কিন্তু অর্থ খরচ করে আইসক্রীম কেনার
    ইচ্ছা নেই। এটিকেও চাহিদা বলা যাবে না।
  
  
    সুতরাং অর্থনীতিতে চাহিদা হতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। যথা : 
  
  
    (১) কোনো দ্রব্য পাওয়ার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা;
  
  
    (২) দ্রব্যটি কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ও
  
  (৩) অর্থ খরচ করে দ্রব্যটি কেনার ইচ্ছা।
  
    যোগান : সাধারণ অর্থে যোগান হচ্ছে কোনো দ্রব্যের মজুদ পরিমাণ।
    কিন্তু অর্থনীতিতে যোগান বলতে বোঝায় বাজারে একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি
    নির্দিষ্ট দামে কোনো দ্রব্যের যে পরিমাণ সরবরাহ থাকে। কোনো Online Education AO
    দ্রব্যের মজুদ বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে ও একটি নির্দিষ্ট দামে বাজারে
    ঐ দ্রব্যটির কি পরিমাণ সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু যোগান হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট দামে
    ও সময়ে বিক্রেতা কোনো দ্রব্যের কি পরিমাণ মজুদ বিক্রি করতে প্রস্তুত।
  
  চাহিদা ও যোগানের সূচি: 
  
    চাহিদা সূচি : অন্যান্য অবস্থা অপরিবর্তিত থাকা অবস্থায় কোনো দ্রব্যের
    দাম ও চাহিদার পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ককে যে সারণির মাধ্যমে দেখানো হয় তা হচ্ছে
    চাহিদা সূচি।
  
চাহিদা সূচি
| পেয়ারার দাম (টাকা প্রতি কেজি) | চাহিদার পরিমাণ (কেজি) | 
|---|---|
| ৮০ | ১৫ | 
| ৭০ | ২০ | 
| ৬০ | ২৫ | 
    চাহিদা সূচিতে কাল্পনিক চাহিদা সূচি দেখানো হয়েছে। প্রতিটি দামে ভোক্তা যে
    পরিমাণ পেয়ারা ক্রয় করতে আগ্রহী তা নির্ধারণ করতে পারি। সারণিতে, প্রতি কেজি
    ৮০ টাকা দামে রমিজ বাজার থেকে ১৫ কেজি পেয়ারা ক্রয় করতে আগ্রহী ৭০ টাকা দামে
    ২০  কেজি পেয়ারা ক্রয় করতে আগ্রহী। সারণি-১ এ এভাবে সারণি থেকে দেখা
    যায়, প্রতি কেজি পেয়ারার দাম যত কমছে পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ তত বাড়ছে।
  
  
    চাহিদা সূচি অনুযায়ী আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে চাহিদার
    অন্যান্য নির্ধারণসমূহ স্থির থাকা  অবস্থায় দ্রব্যের দামের উপর দ্রব্যটির
    প্রকৃত ক্রয়ের পরিমাণ নির্ভর করে।
  

    রেখাচিত্রের মাধ্যমে চাহিদা সূচির প্রকাশই হচ্ছে চাহিদা রেখা। চিত্রে OY বা
    লম্ব অক্ষে পেয়ারার দাম ও OX বা ভূমি অক্ষে পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ দেখানো
    হয়েছে। DD হচ্ছে ভোক্তার পেয়ারার চাহিদা রেখা। এই রেখার a,
    b,c, বিন্দুগুলোতে বিভিন্ন দামে চাহিদার বিভিন্ন পরিমাণ প্রকাশ
    পায়। যেমন,  b বিন্দু দ্বারা বোঝা যায়, ৭০ টাকা দামে ভোক্তার
    মাসে পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ ২০ কেজি। আবার c বিন্দুতে ৬০ টাকা দামে
    চাহিদা পরিমাণ ২৫ কেজি। অর্থাৎ দাম ও চাহিদার মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান।
    দাম কমার সাথে সাথে চাহিদার পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং চাহিদা রেখাটি বাম থেকে ডান
    দিকে নিম্নগামী হয়ে থাকে।
  
  
    যোগানের সূচি : চাহিদা সূচির মত যোগান সূচিকে একটি ছকের মাধ্যমে
    প্রকাশ করা হয় যা দ্রব্যের দাম ও যোগানের পরিমাণের মধ্যে সম্পর্ক দেখায়।
  
  সারনি - ২ এ পেয়ারার যোগান সূচি দেখানো হলো :
যোগানের সূচি
| পেয়ারার দাম (টাকা) | যোগানের পরিমাণ (প্রতি একক) | 
|---|---|
| ৬০ | ১৫ | 
| ৭০ | ২০ | 
| ৮০ | ২৫ | 
      সারনি- ২ এ দেখা যাচ্ছে যে, পেয়ারার দাম বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে পেয়ারার
      যোগানের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যখন অন্যান্য বিষয় (যা বিক্রেতার বিক্রির
      পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে) অপরিবর্তিত থাকে।
    

      ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ : যে কোনো দ্রব্য বা সেবা সামগ্রীর জন্য একটি
      নির্দিষ্ট সময়ে যে দামে চাহিদা ও যোগানের পরিমাণ সমান হয, তাকে ভারসাম্য দাম
      বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ে যে পরিমাণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে চাহিদা দাম ও
      যোগান দাম সমান হয়, তাকে ভারসাম্য পরিমাণ বলা হয়। কোন প্রতিযোগীতামূলক
      বাজারে কোন দ্রব্যের ক্রয় বিক্রয় নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দর কষাকষি
      হয়। ক্রেতারা কম দাম দিতে চায় আর বিক্রেতারা তার দ্রব্যকে বেশী দামে
      বিক্রয় করতে চায়। এই দর কষাকষির মধ্যেমে এমন একটি দামে দ্রব্যটি ক্রয় -
      বিক্রয় হয় যেখানে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের পরিমাণ পরস্পর সমান হয়। এই
      দামকে ভারসাম্য দাম এবং ক্রয় বিক্রয়ের পরিমাণকে ভারসাম্য পরিমাণ বলা হয়।
      ভারসাম্য দাম ও পরিমাণের এই স্থিতিবস্থাকে বাজার ভারসাম্য বলে পরিচিত।
    
    
      সাধারণত : নিম্নোক্ত দুই ভাগে বাজার ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারণ হয়ে
      থাকে।
    
    (১) সূচি ও রেখা চিত্রের সাহায্যে।
    (২) গাণিতিক / বীজগাণিতিক মডেলের সাহায্যে।
    
      পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ : আমাদের প্রশ্নের তথ্যের ভিত্তিতে
      পেয়ারার বাজারের ভারসাম্য বিশ্লেষণ এর জন্য নিমোক্ত তালিকা তৈরি করা হলো :
    
  | পেয়ারার দাম (টাকা) | যোগানের পরিমাণ (প্রতি একক) | 
|---|---|
| ৬০ | ১৫ | 
| ৭০ | ২০ | 
| ৮০ | ২৫ | 
|  | 
| চিত্র : বাজার ভারসাম্য | 
      চিত্রে বাজার চাহিদা রেখা (DD ) ও বাজার যোগান রেখা (SS) পরস্পরকে
      e বিন্দুতে ছেদ করেছে। এই e বিন্দুতে বাজার ভারসাম্য বিদ্যমান।
    
    
      ভারসাম্য হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যেখানে একটি নির্দিষ্ট দামে চাহিদার পরিমাণ ও
      যোগানের পরিমাণ সমতায় পৌঁছে। চাহিদা ও যোগানের ছেদবিন্দুতে  যে দাম
      বিদ্যমান তা হচ্ছে ভারসাম্য দাম এবং দ্রব্যের পরিমাণ হচ্ছে ভারসাম্য পরিমাণ।
      চিত্রে, ভারসাম্য দাম ৭০ টাকা (প্রতি কেজি) এবং ভারসাম্য পরিমাণ ২০ কেজি।
      ভারসাম্য দামে ভোক্তা বা ক্রেতা যে পরিমাণ দ্রব্য ক্রয় করতে ইচ্ছুক এবং
      বিক্রেতা যে পরিমাণ দ্রব্য বিক্রি করতে রাজি থাকে এ দু'য়ের পরিমাণ সমান
      থাকে। এই ভারসাম্য দামকে মাঝে মাঝে market clearing price ও বলা হয়।
      কারণ, এ দামে বাজারে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই সন্তুষ্ট থাকে। সাধারণত ক্রেতা
      ও বিক্রেতা ক্রিয়া চাহিদা ও যোগানের ভারসাম্যকে ঘিরে আবর্তিত হয়।
    
    
      যখন বাজার দাম ভারসাম্য দামের সমান না হয় তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়
        :
    
    
      প্রথমে ধরে নেই, বাজার দাম ভারসাম্য দামের চেয়ে বেশি। চিত্রে বাজার দাম যখন
      ৮০ টাকা তখন পেয়ারার যোগানের পরিমাণ ২৫ কেজি এবং পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ ১৫
      কেজি।
    
    
      অর্থাৎ, পেয়ারার উদ্বৃত্ত ১০ কেজি। এখানে যোগান দিতে ইচ্ছুক চলতি দামে তার
      সবটুকু বিক্রি করতে পারে না। উদ্বৃত্ত অবস্থাকে 'অতিরিক্ত যোগান'
      (excess supply) বলা হয়।
    
    
      যখন পেয়ারার বাজারে উদ্বৃত্ত দেখা দেয় তখন পেয়ারা যোগানদার যে পরিমাণ
      দ্রব্য বিক্রেতা উদ্বৃত্ত পেয়ারা মজুদ করে রাখে। এ অবস্থায় পেয়ারা
      বিক্রেতার উপর পেয়ারার দাম হাসের চাপ সৃষ্টি হয়। ফলস্বরূপ, দাম হ্রাস পায়।
      এতে পেয়ারার যোগানের পরিমাণ হ্রাস পায় এবং পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি
      পায়। পেয়ারার দাম হ্রাস পেতে থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত না বাজার ভারসাম্যে
      পৌঁছে।
    
    
      এখন ধরি, বাজার দাম ভারসাম্য দামের চেয়ে কম। চিত্রে পেয়ারার দাম যখন ৬০
      টাকা তখন পেয়ারার চাহিদার পরিমাণ ২৫ কেজি ও যোগানের পরিমাণ ১৫ কেজি। এখানে
      পেয়ারার ঘাটতি ১০ কেজি। ক্রেতার ক যে পরিমাণ পেয়ারা ক্রয় করতে ইচ্ছুক চলতি
      দামে তার সবটুকু ক্রয় করতে পারে না। মাঝে মাঝে এ ধরনের পরিস্থিতিকে
      ‘অতিরিক্ত চাহিদা’ (excess demand) বলা হয়। যখন দ্রব্যের প্রাপ্যতার
      তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা অধিক থাকে তখন বিক্রেতা দ্রব্য বিক্রয়ে কোন ধরণের
      ক্ষতির সম্মুখীন না হয়েই দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ দ্রব্যের দামের
      ঊর্ধ্বমুখী চাপ সৃষ্টি হয়। যখন দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পায় তখন দ্রব্যের
      চাহিদার পরিমাণ হ্রাস পায় এবং যোগানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এভাবে বাজার
      পুনরায় ভারসাম্য অবস্থায় ফিরে আসে। ক্রেতা ও বিক্রেতার ক্রিয়া
      প্রতিক্রিয়ার নার দাম ভারসিতে তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে বাজার দাম
      ভারসাম্য দামে উপনীত হয়। ভারসাম্য অবস্থায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই
      সন্তুষ্ট থাকে এবং দামের উপর উর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী কোন ধরণের চাপ থাকে না।
    
আরো দেখুন :
৪র্থ সপ্তাহের নমুনা সমাধান :
Tnqs
ReplyDelete