মার্চের দিনগুলি

রচনা : জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ

↬ জীব বৈচিত্র

↬ পরিবেশের ভারসাম্য ও জীব-বৈচিত্র্য

↬ জীব বৈচিত্রের সংরক্ষণের গুরুত্ব


ভূমিকা : মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়ােজন সুষ্ঠু, স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ প্রাকৃতিক পরিবেশের মূল উপাদান হলাে জীব। ছােটবড় বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব প্রভৃতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে জীব সম্প্রদায় বা জীববৈচিত্র্য। মাটি, নদী, গভীর সমুদ্র সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা প্রজাতির জীব। এ জীববৈচিত্র্যই পরিবেশের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। কেবল পরিবেশের নিয়ন্ত্রই নয়, মানুষের জীবনযাত্রার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলােও এরাই জোগান দিয়ে থাকে। আমাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতির জন্য প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে আমরা এই জীব সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের হলেও এ কথা সত্য যে, আমাদের বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপে এই জীববৈচিত্র্য প্রতিনিয়ত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বন উজাড় হচ্ছে, পানি দূষিত হচ্ছে এবং এদের বাসস্থান ও বাস্তৃতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। বিগত কয়েক দশকের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলােচিত বিষয় হলাে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন, যা এই জীববৈচিত্র্য ধ্বংসেৱই ফলাফল। এর ফলে প্রতিনিয়ত নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছি আমরা।

জীববৈচিত্র্য কী : জীববৈচিত্র্য বলতে বােঝায় উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবসহ পৃথিবীর গােটা জীবভাণ্ডার, তাদের অন্তর্গত জিন ও সেগুলাের সমন্বয়ে গঠিত বাস্তুতন্ত্র। তিনটি বিভিন্ন পর্যায়ে এগুলাে বিবেচ্য বংশানুসৃত বৈচিত্র্য, প্রজাতি বৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্রের বৈচিত্র্য। বংশানুগত বৈচিত্র্যের মাত্রা সংখ্যায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। এটি প্রজাতি বৈচিত্র্য অপেক্ষা বহুগুণে অধিক। বিজ্ঞানীদের নানা হিসাব অনুসারে প্রজাতি সংখ্যা (জীবন্ত) ৩০ লাখ থেকে ৩ কোটি। তাতে আছে ২ লাখ ৫০ হাজার উদ্ভিদ, ৭৫ লাখ কীটপতঙ্গা, ৪১ হাজার মেরুদণ্ডী; বাকিরা অমেরুদন্ডী, ছত্রাক, শৈবাল ও অণুজীব। জীববৈচিত্র্য প্রজাতি বিলুপ্তি ঠেকাতে সহায়তা জোগায়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা : জীববৈচিত্র্য মানে প্রাণের বৈচিত্র্য। কোনাে প্রাণিগােষ্ঠীই স্বনির্ভর নয়; জীবনধারণের তাগিদে অন্য প্রাণিগােষ্ঠীর ওপর নির্ভর করতে হয় প্রতিনিয়ত। যে স্থানে জীববৈচিত্র্য যত বেশি, সেখানকার প্রাণিগােষ্ঠীগুলাের জীবনধারণ সেখানে তত সহজ। নিচে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে -

১. খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা : জীববৈচিত্র্য নেই– আমাদের খাদ্যও নেই। আজ থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে কৃষিকাজ শুরুর পর থেকে মানুষ প্রায় ৭ উদ্ভিদ ও কয়েক হাজার প্রাণীর ওপর তার খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল। বৈশ্বিক খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার উৎস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। 

২. চিকিৎসা : আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রবর্তিত হওয়ার আগে মানুষ চিকিৎসার জন্য চারপাশের গাছপালা-লতাপাতার ওপর নির্ভরশীল ছিল যুগ যুগ ধরে। এখনও উন্নয়নশীল বিশ্বের কোটি কোটি জনগােষ্ঠী যাদের দোরগােড়ায় আধুনিক চিকিৎসার ছোঁয়া পৌছায় না, তারা প্রথাগত চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল। আর এই প্রথাগত চিকিৎসার একমাত্র উৎস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার উদ্ভিদ প্রজাতিকে মানুষ প্রথাগত ও আধুনিক চিকিৎসায় ব্যবহার করছে।

৩. প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা : একটি সুনির্দিষ্ট প্রাকৃতিক ভারসাম্য দিয়ে কোনাে নির্দিষ্ট অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য গঠিত। এর মধ্যে দু-একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেলে ঐ এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং পরিবেশ এক বিরাট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অনিবার্য।

৪. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার জন্য : এখন নগণ্য কোনাে উদ্ভিদ থেকে ভবিষ্যতে অতি মূল্যবান যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কার হতে পারে, যা দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনাে কঠিন দুরারােগ্য রােগ থেকে রক্ষা করা যাবে। তাই ভবিষ্যতের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সকল উদ্ভিদকেই সংরক্ষণ  করতে হবে।

৫. জেনেটিক জার্মপ্লাজম রক্ষা : আমাদের বনে-জঙ্গলে ফসলি উদ্ভিদের নিকট সম্পর্কযুক্ত অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে। এগুলাে সাধারণত রােগ প্রতিরােধক্ষম, জরা প্রতিরােধক্ষম এবং অন্যান্য উপকারী ও প্রয়ােজনীয় জিনসমৃদ্ধ। ভবিষ্যতে ফসলি উদ্ভিদের উন্নতি সাধনের জন্য এসব জিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এখন থেকেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।

গতিশীল ইকোসিস্টেম ও বিবর্তনের জন্য : সকল জীববৈচিত্র্য সম্মিলিতভাবে কোনাে ইকোসিস্টেমকে গতিশীল রাখে। আর গতিশীল ইকোসিস্টেমই প্রজাতির বিবর্তনে সাহায্য করে। গতিশীল ইকোসিস্টেম এবং বিবর্তনের ধারা অব্যাহত না থাকলে পরিবর্তিত পরিবেশে হঠাৎ করেই জীববৈচিত্র্যের এক বিরাট অংশ অভিযােজন ক্ষমতা হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

সুস্থ পরিবেশের জন্য : পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত নিশ্চিতকরণ, মরুকরণ রােধ, ভূমিকম্প রােধ, ঝড়-জলােচ্ছ্বাস রােধ ইত্যাদি সার্থকভাবে সম্পন্ন করতে পারে পর্যাপ্ত সংখ্যক বৃক্ষরাজি-লতাগুল্ম। ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন রােধে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। জীববৈচিত্র্যের আধার সংরক্ষিত বনাঞলগুলাে পৃথিবীর ১৫ ভাগ কার্বন সংবন্ধন করছে।

জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ : নানা কারণে জীববৈচিত্রা আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির তীব্রতাসহ বহুমাত্রিক সংকটের নিষ্ঠুরতা আমাদের জীবনযাত্রা দূর্বিষহ করছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, ভূগর্ভস্থ পানির সেচ্ছাচারী ব্যবহার,  বনজঙ্গল ধ্বংস করে বসত সৃষ্টি, প্রকৃতির বিরল দান পাহাড়-পর্বত কতর্ন, নদী-নালার যথাযথ সংরক্ষণের সমন্বয়হীনতা, আন্তজাতিক নদীর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব, নাভান, দেশি বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির প্রকৃতিবিরােধী আগ্রাসী কর্মকান্ড, তেল-গ্যাসসহ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার অভাব যত্রতত্র ইটভাটা প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি কারণে পরিবেশ বিদ্ধংসী রূপ লাভ করেছে এবং জীববৈচিত্র্য অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন। নিচে জীববৈড়িয়ায় বংসের প্রধান কাণগুলাে সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হলাে। 

১. বনভূমি ধ্বংস : নতুন বনভূমি সৃষ্টির ব্যবস্থা না রেখে এবং অন্য বনভূমিগুলাের সুষ্ঠু সংরক্ষণ না করে নির্বিচারে বনভূমি উজাড় করাকে বনভূমি ধবংস বলে। বনভূমি ধ্বংসে অনেক কারণ রয়েছে। এগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য কারণ হচ্ছে মানবসতি স্থাপন, কৃষিজমি সম্প্রসারণ, জ্বালানি সংগ্রহ, বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, জুম চাষ, পশু ফারণ, নির্মাণ সামগ্রী আহরণ, পরিবেশ দূষণ, অভিবাসন, মরুকরণ প্রভৃতি। বনভূমি ধবংসের ফলে উদ্ভিদ প্রজাতি যেমন হারিয়ে যাচ্ছে তেমনিভাবে বনে বসবাসকারী প্রাণিকুলও ধ্বংস হচ্ছে। তারা আশ্রয়ের আশায় লােকালয়ে আসছে এবং মানুষের নির্মমতার শিকার হচ্ছে। 

২. তেজস্ক্রিয়তা : চিকিৎসাক্ষেত্রে, উদ্ভিদবিজ্ঞানে, পরমাণু শক্তি ও আন্ত্র উৎপাদনে তেজস্ক্রিয়তার ব্যাপক ব্যবহার হয়। আয়নিত এই তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। বিরূপ পরিবেশে উদ্ভিদ এবং প্রাণিকুলের স্বাভাবিক জীবনধারা ব্যাহত হয়। 

৩. পানিদূষণ : পানিদূষণের কারণে পানিতে বসবাসকারী মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বিলুপ্তির সম্মুখীন। নর্দমার ময়লা, কাগজ ও কাগজমন্ড, বস্ত্র, চিনি, সার, লৌহ জাতীয় ধাতু, চামড়া ও রাবার, ওষুধ ও রাসায়নিক শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পানিকে দূষিত করছে। এসকল বর্জ্য নদী বা পুকুরের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়। পানিতে তেলের সংমিশ্রণ অথবা পানির ওপর তেলের বিস্তার জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রভূত ক্ষতিসাধন করে। বিশেষ করে সমুদ্রে তেল বহনকারী ট্যাংকার থেকে অপরিশােধিত তেল দুর্ঘটনার ফলে নির্গত হলে পানিতে মিশে যায় এবং বিস্তৃত এলাকাজুড়ে জীবকুলের ক্ষতি করে। 

৪. গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া : বায়ুমণ্ডলের ট্রপােস্ফিয়ারে অবস্থিত কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন-নাইট্রাস অক্সাইড ও ক্লোরােফ্লোরাে কার্বন গাসিসমূহের মাত্রা বেড়ে গেলে সূর্যরশ্মি যখন ভূপৃষ্ঠে এসে তাপরূপে পুনর্বিকিরিত হতে পারে না বরং উল্লিখিত গ্যাসগুলাে তা শুষে নেয় ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়, তখন এ অবস্থাকে গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া বলে। গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফল অত্যন্ত ভয়াবহ। এর ফলে পৃথিবীর উত্তরাঞ্চলে বনভূমির অধিকাংশ বিলীন হবে, সেই সঙ্গে বিলীন হবে জীববৈচিত্রের বিরাট অংশ। পৃথিবীর অনেক বনভূমি ও বন্যপ্রাণীই হুমকির সম্মুখীন হবে। অনেক উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র যেমন- নােনা পানির জলাশয়, ম্যানগ্রোভ জলাশয়, প্রবাল, প্রাচীর ও নদীজ বদ্বীপ  বিপন্ন হয়ে পড়বে। এ ছাড়াও বায়ুদূষণ, ভূমিক্ষয়, মরুকরণ প্রভৃতি কারণে প্রতিনিয়ত জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। 

জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ফলাফল : জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণে খাদ্যশৃঙ্খল বিনষ্ট হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কারণে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে। বনভূমি ধ্বংসের কারণে মানুষের খাদ্যের উৎস বিনষ্ট হওয়ার ফলে খাদ্যাভাব দেখা দিচ্ছে। বায়ুমণ্ডলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিজমি উর্বশক্তি হারাচ্ছে এবং জমিদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ, তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে আমরা প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে সামর্থ্যহীন হচ্ছি। জলবায়ুর পরিবর্তনে আমাদের উপকূলীয় ১৩২ উপজেলার প্রায় ৩-৪ কোটি জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক ঐতিহােৱ মূলবান সম্পদ সুন্দরবন সরাসরি হুমকির মুখে পড়ছে। হিসাব করে দেখা গেছে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গেলে বাংলাদেশের তিন ভাগের এক ভাগ পানিতে তলিয়ে যাবে। ৩৪ কোটি লােক ভূমিহীন হবে এবং মােট খাদ্য উৎপাদন ৩০-৪০ ভাগ হ্রাস পাবে। খাদ্য ব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষায় মাছের গুরুত্ব সর্বাগ্রে। মৎস্য প্রজাতি ধ্বংসের কারণে ইতােমধ্যে সুদ্বাদু অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে আরও ৫৪ প্রজাতি। 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গৃহীত পদক্ষেপ : জীববৈচিত্র্যের বিশ্ব প্রেক্ষাপট অনুধাবন করে মানবজাতিকে সচেতন করেন মার্কিন সামুদিক বিজ্ঞানী রেচল লুইজ কারসন। মানবজাতির কল‍্যাণ ও অস্তিত্ব রক্ষায় বাংলাদেশেও অতি উৎসাহ উদ্দীপনায় পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রণীত হয় নানা কালাকানুন, আইন - বিধিবিধান।  পরিবেশ সংরক্ষণে এ পর্যন্ত ২৩ টির অধিক আইন যুগােপযােগী করা হয়েছে। দূষণকারীদের জেল-জরিমানা আদায়ে ৭ ধারা বিধান রেখে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে। পরিবেশ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের শক্তিশালী অফিস স্থাপন করা হয়েছে দেশের জেলায় জেলায়। জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকি মােকাবিলায় ট্রাস্ট গঠন করে গত চার বছরে দুই হাজার পাঁচশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জাতিসংঘের উদ্যোগ : বিশ্বব্যাপী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ ২০১৩ সালকে আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য বর্ষ হিসেবে ঘােষণা করেছে। জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনভেনশন CBD নানাভাবে জীববৈচিত্র্য বর্ষ উদযাপনে সহায়তা করছে।

জীববৈচিত্র্য বর্ষের উদ্দেশ্য :
১. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়ােজনীয়তা বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি।

২. জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক মূল্য সম্পর্কে তথ্য বিস্তার। 

৩. জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কারণ ও তা সংরক্ষণের উপায় সম্পর্কে জনমনে ধারণা বৃদ্ধি।

৪. ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উৎসাহ প্রদান। 

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উপায় : পরিবেশকে হুমকির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সর্বপ্রথম জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। যে সব কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে সে সম্পর্কে সবার অবগত হওয়া প্রয়ােজন। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলাে নেওয়া যেতে পারে-

১. প্রাকৃতিক পরিবেশের কিছু অংশ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা অর্থাৎ সেখানে যেমন অবস্থায় আছে তেমন অবস্থায় রাখা। 

২. যেসব উদ্ভিদ পরিবেশেও জীবনযাপন ও বংশবিস্তার করতে পারে সেগুলাে বিভিন্ন উদ্যানে যত্নে রেখে সংরক্ষণ করা। 

৩. ভূমিক্ষয় রােধের প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

৪. পরিবেশ সমস্যার সমাধানে তথা জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য পানিদূষণ সমস্যার সমাধান অতীব জরুরি। পানিদূষণ রােধ করে পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়ােজনে নদীর আশেপাশে গড়ে ওঠা শিল্প-কারখানাগুলােকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে। 

৫. রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক সারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। 

৬. দেশীয় মাছের আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ। 

৭. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে বেশি করে বৃক্ষরােপণ করতে হবে। 

৮. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। 

৯. পরিবেশ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করে পরিবেশ বিপর্যয়ের সমস্যা সম্পর্কে অধিক প্রচারণা চালানাে। 

উপসংহার : জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের এখনই উদ্যোগী হওয়া প্রয়ােজন। কারণ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত না হলে এ পৃথিবী আমাদের বসবাসের অনুপযােগী হয়ে পড়বে। ইতােমধ্যে এ ধরনের কয়েকটি লক্ষণ দেখা গিয়েছে। কাজেই নিজেদের প্রয়ােজনের তাগিদেই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জনগণকে এ ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে এগিয়ে আসতে পারে এবং সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

2 Comments

  1. খুবই সুন্দর হয়েছে

    ReplyDelete
  2. খুব সুন্দর হয়েছে আমাদের বাসায় থাকার জন্য ধন্যবাদ

    ReplyDelete
Post a Comment
Previous Post Next Post