সন্ধি
  
  
    পরস্পর সন্নিহিত ধ্বনির মিলনকে সন্ধি বলে। সন্ধি আলোচনা করা হয় ধ্বনিতত্ত্বে।
    সন্ধি শব্দটি গঠিত হয়েছে উপসর্গের মাধ্যমে। ‘সন্ধি’ ভাঙলে হয় = সম্ + ধি।
  
  কোনটা কোন সন্ধি?
স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনকে স্বরসন্ধি বলে। অর্থাৎ, স্বরধ্বনি + স্বরধ্বনি = স্বরসন্ধি।
যেমন, শত + এক = শতেক। এখানে, অ এবং এ ধ্বনির সন্ধি ঘটেছে।
স্বরধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি, কিংবা ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জনধ্বনির মিলনকে ব্যঞ্জনসন্ধি বলে। অর্থাৎ,
স্বরধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
  ব্যঞ্জনধ্বনি + স্বরধ্বনি
  ব্যঞ্জনধ্বনি + ব্যঞ্জনধ্বনি
  যেমন, দিক্ + নির্ণয় = দিকনির্ণয়। এখানে ক্ এবং ন ধ্বনির সন্ধি ঘটেছে।
    সংস্কৃত মূল শব্দ অনুযায়ী কিছু কিছু শব্দের শেষে বিসর্গ আছে বলে ধরে নেওা হয়।
    যেমন, মনঃ, বনঃ, শিরঃ, ততঃ, পরিঃ, পুরঃ ইত্যাদি। এ রকম বিসর্গযুক্ত শব্দের
    সন্ধিকে বিসর্গসন্ধি বলে। যেমন,
  
  ততঃ + অধিক = ততোধিক।
  সূত্র : ১
  অ/আ + অ/আ = আ
    নব + অন্ন = নবান্ন
    বিদ্যা + আলয় = বিদ্যালয়
    সূত্র : ২
    ই/ঈ + ই/ঈ = ঈ
    রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র
    পরি + ঈক্ষা = পরীক্ষা
  সূত্র : ৩
    উ/ঊ + উ/ঊ = ঊ
    মরু + উদ্যান = মরূদ্যান
    কটু + উক্তি = কটূক্তি।
    সূত্র : ৪
    অ/আ + ই/ঈ = এ
    শুভ + ইচ্ছা = শুভেচ্ছা
    যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট।
    সূত্র : ৫
    অ/আ + উ/ঊ = ও
    সূর্য + উদয় = সূর্যোদয়
    কথা + উপকথন = কথোপকথন।
    সূত্র : ৬
    ই/ঈ + অন্য স্বর = য্ + স্বর
    অতি + অন্ত = অত্যন্ত
    ইতি + আদি = ইত্যাদি।
    সূত্র : ৭
    উ/ঊ + অন্য স্বর = ব্ + স্বর
    সু + আগত = স্বাগত
    তনু + ঈ = তন্বী।
    সূত্রের সাহায্যে সন্ধিবিচ্ছেদ
শব্দের প্রথম অক্ষর (syllable) দেখে সন্ধিবিচ্ছেদ করা যেতে পারে। যেমন :
      শব্দের প্রথম অক্ষরে ‘অয়’ থাকলে সন্ধিবিচ্ছেদে ‘এ’ হয়। এই সূত্রে, শয়ন শব্দের
      শুরুতে শয় আছে। ফলে শয়ন = শে + অন হবে। একই ভাবে নয়ন = নে + অন। শব্দের প্রথম
      অক্ষরে ‘আয়’ থাকলে সন্ধিবিচ্ছেদে ‘ঐ’ হয়। এই সূত্রে, গায়ক শব্দের শুরুতে গায়
      আছে। ফলে গায়ক = গৈ + অক। একইভাবে, নায়ক = নৈ + অক। শব্দের প্রথম অক্ষরে ‘অব’
      থাকলে সন্ধিবিচ্ছেদে ‘ও’ হয়। এই সূত্রে, লবণ শব্দের শুরুতে লব আছে। ফলে লবণ =
      লো + অন। একই ভাবে পবন = পো + অন। শব্দের প্রথম অক্ষরে ‘আব’ থাকলে
      সন্ধিবিচ্ছেদে ‘ঔ’ হয়। এই সূত্রে, নাবিক শব্দের শুরুতে আব আছে। ফলে, নাবিক =
      নৌ + ইক। একইভাবে, ভাবুক = ভৌ + উক।
    
    ব্যঞ্জনসন্ধি
      সব ব্যঞ্জনসন্ধি আসলে কোনো না কোনো সমীভবন। একটি ধ্বনির প্রভাবে পাশের ধ্বনি
      বদলে গেলে তাকে সমীভবন বলে।
    
    দিক্ + অন্ত = দিগন্ত
  [ঘোষধ্বনি অ-এর প্রভাবে ক হয়েছে গ]
    বাক্ + দান = বাগ্দান
  [ঘোষধ্বনি দ-এর প্রভাবে ক হয়েছে গ]
    দিক্ + নির্ণয় = দিঙ্ নির্ণয়
  [ন-এর প্রভাবে ক হয়েছে ঙ]
    বিপদ + জনক = বিপজ্জনক
  [জ-এর প্রভাবে দ হয়েছে জ]
    যাবৎ + জীবন = যাবজ্জীবন
  [জ-এর প্রভাবে ত হয়েছে জ]
    উৎ + ছেদ = উচ্ছেদ
  [ছ-এর প্রভাবে ত হয়েছে চ]
    উৎ + লাস = উল্লাস
  [ল-এর প্রভাবে ত হয়েছে ল]
    মৃৎ + ময় = মৃন্ময়
  [ম-এর প্রভাবে ত হয়েছে ন]
    জগৎ + নাথ = জগন্নাথ
  [ন-এর প্রভাবে ত হয়েছে ন]
    শম্ + কা = শঙ্কা
  [ক-এর প্রভাবে ম হয়েছে ঙ]
    সম্ + চয় = সঞ্চয়
  [চ-এর প্রভাবে ম হয়েছে ঞ]
    সম্ + তাপ = সন্তাপ
  [ত-এর প্রভাবে ম হয়েছে ন]
    কৃষ + তি = কৃষ্টি
  [ষ-এর প্রভাবে ত হয়েছে ট]
    নিপাতনে সিদ্ধ
কতগুলো সন্ধি কোনো নিয়ম অনুসারে হয় না। এগুলোকে বলা হয় নিপাতনে সিদ্ধ।
নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি
প্র + ঊঢ় = পৌঢ়
  (সূত্র অনুযায়ী প্রোঢ় হওয়ার কথা)
    কুল + অটা = কুলটা
  (সূত্র অনুযায়ী কুলাটা হওয়ার কথা)
    গো + অক্ষ = গবাক্ষ
  (সূত্র অনুযায়ী গবক্ষ হওয়ার কথা)
    মার্ত + অণ্ড = মার্তণ্ড
  (সূত্র অনুযায়ী মার্তাণ্ড হওয়ার কথা)
    নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি
এক + দশ = একাদশ
    তৎ + কর = তস্কর
    পর + পর = পরস্পর
    বৃহৎ + পতি = বৃহস্পতি
    গো + পদ = গোষ্পদ
    ষট্ + দশ = ষোড়শ
    পতৎ + অঞ্জলি = পতঞ্জলি
    মনস + ঈষা = মনীষা
    আ + চর্য = আশ্চর্য
    বিসর্গসন্ধি
বিসর্গসন্ধিতে বিসর্গ (ঃ) পরিবর্তিত হয়ে চার ধরনের রূপান্তর ঘটে :
১. বিসর্গ বিদ্যমান থাকে। যেমন -
মনঃ + কষ্ট = মনঃকষ্ট
    শিরঃ + পীড়া = শিরঃপীড়া
    ২. বিসর্গ ‘ও’ হয়ে যায়। যেমন -
মনঃ + যোগ = মনোযোগ
    ততঃ + অধিক = ততোধিক
    ৩. বিসর্গ ‘র’ হয়ে যায়। যেমন,
নিঃ + দয় = নির্দয়
    নিঃ + আকার = নিরাকার
    ৪. বিসর্গ শ / ষ / স হয়ে যায়। যেমন -
নিঃ + চয় = নিশ্চয়
    নিঃ + ঠুর = নিষ্ঠুর
    নিঃ + তেজ = নিস্তেজ
    শব্দগঠনে সন্ধি
সন্ধি শব্দগঠনের একটি হায়ক প্রক্রিয়া। শব্দ গঠিত হয় মূলত তিন উপায়ে:
১. সমাসের মাধ্যমে শব্দগঠন :
নীল + পদ্ম = নীলপদ্ম
    নীল + আকাশ = নীলাকাশ
    ২. উপসর্গের মাধ্যমে শব্দগঠন :
দোকান + দার দোকানদার
    নৌ + ইক = নাবিক
    
      এখানে নীলপদ্ম, উপহার বা দোকানদার শব্দগুলো গঠনে সন্ধির কোনো সহায়তা নেই।
      কিন্তু নীলাকাশ, উদ্ধার বা নাবিক শব্দগুলো গঠনে সন্ধি সহায়ক ভূমিকা পালন
      করছে।
    
  কিছু গুুত্বপূর্ণ উদাহরণ :
অধি + ইন = অধীন
অনু + উদিত = অনূদিত
উৎ + ভিদ = উদ্ভিদ
উৎ + ভব = উদ্ভব
যোগী + ইন্দ্র = যোগীন্দ্র
সম্ + খ্যা = সংখ্যা
সদ্যঃ + জাত = সদ্যোজাত
মনঃ + জগৎ = মনোজগৎ
উৎ + নয়ন = উন্নয়ন
    অনুশীলন :
  
  
    ১। ‘পবিত্র’- এর সন্ধিবিচ্ছেদ কোনটি?
  
  (ক) পি + ইত্র (খ) পো + বিত্র
  (গ) পো + এত্র (ঘ) পো + ইত্র।
  
    ২। কোনটি স্বরসন্ধির উদাহরণ নয়? 
  
  (ক) বিদ্যালয় (খ) পরিচ্ছেদ
  (গ) শুভেচ্ছা (ঘ) নাবিক।
  ৩। ‘সঞ্চয়’-এর সন্ধিবিচ্ছেদ -
  (ক) সম্ + চয় (খ) সঞ্ + চয়
  (গ) সন্ + চয় (ঘ) সঙ্ + চয়।
  
    ৪। ‘দ্বৈপায়ন’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ -
  
  (ক) দ্বীপ + আয়ন (খ) দ্বিপ + অনট
  (গ) দ্বীপ + আয়ন (ঘ) দ্বীপ + অনট
  
    ৫। ‘মার্তণ্ড’ শব্দটি কোন সন্ধির দৃষ্টান্ত?
  
  (ক) স্বরসন্ধি (খ) ব্যঞ্জনসন্ধি
  (গ) নিপাতনে সিদ্ধ (ঘ) বিসর্গসন্ধি
  ৬। কোন সন্ধিটি নিপাতনে সিদ্ধ?
  
    (ক) বাক্ + দান = বাগদান (খ) উত্ + ছেদ = উচ্ছেদ
  
  
    (গ) পর + পর = পরস্পর (ঘ) সম্ + সার = সংসার
  
  
    ৭। ‘রত্নাকর’ শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ-
  
  (ক) রত্ন + কর (খ) রত্না + কর
  (গ) রত্না + আকর (ঘ) রত্ন + আকর
  ৮। ‘গায়ক’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ -
  (ক) গে + অক (খ) গায় + অক
  (গ) গৈ + অক (ঘ) গৌ + অক
  
    ৯। নিচের কোনটি শ-জাত বিসর্গের নমুনা?
  
  (ক) নিশ্বাস (খ) নিশ্চুপ
  (গ) নির্দয় (ঘ) শিরঃপীড়া
  
    ১০। ‘মাত্রাধিক্য’ শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ কী রকম?
  
  (ক) মাতৃ + আধিক্য (খ) মাত্র + আধিক্য
  (গ) মাত্র + আধিক্য (ঘ) মাত্রা + আধিক্য
  
    ১১। ‘জনৈক’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ কী হবে?
  
  (ক) জন + ঐক (খ) মাত্র + অধিক্য
  (গ) জনে + এক (ঘ) জন + অক
  
    ১২। ‘পর্যালোচনা’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ -
  
  (ক) পর্য + আলোচনা (খ) পরি + আলোচনা
  (গ) পর্যা + লোচনা (ঘ) পর্যা + আলোচনা
  ১৩। ‘স্বাগত’ -এর সন্ধিবিচ্ছেদ -
  (ক) সু + আগত (খ) স্বা + গত
  (গ) সু + গত (ঘ) সা + আগত
  
    ১৪। ‘নাবিক’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ -
  
  (ক) নো + ইক (খ) নবৌ + ইক
  (গ) নৌ + ইক (ঘ) নবো + ইক
  
    ১৫। নিচের কোনটির সন্ধিবিচ্ছেদ ঠিকভাবে হয়নি?
  
  
    (ক) ষষ্ + থ = ষষ্ঠ (খ) যথা + ইষ্ট = যথেষ্ট
  
  
    (গ) শরৎ + চন্দ্র = শরচ্চন্দ্র (ঘ) মৃত্যু + জয় = মৃত্যুঞ্জয়
  
  ১৬। কোনটি স্বরসন্ধির উদাহরণ নয়?
  (ক) মহেশ (খ) তৃষ্ণার্ত
  (গ) অত্যন্ত (ঘ) অনুচ্ছেদ
  
    ১৭। ‘যথোচিত’ শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদে কোন কোন ধ্বনির মিলন পাওয়া যায়?
  
  (ক) আ + উ (খ) অ + উ
  (গ) আ + ই (ঘ) অ + ই
  ১৮। কোনটি বিসর্গসন্ধি নয়?
  (ক) দুর্যোগ (খ) সংহার
  (গ) দুস্থ (ঘ) নিষ্পাপ
  ১৯। ‘সন্ধি’ শব্দটির সঠিক সন্ধিবিচ্ছেদ কী?
  (ক) সং + ধি (খ) সম্ + ধি
  (গ) সঙ্ + ধি (ঘ) সন্ + ধি
  ২০। ‘পশু + অধম’ মিলে কী হয়?
  (ক) পশ্বাধম (খ) পশধম
  (গ) পশাধম (ঘ) পশ্বধম
  ২১। ‘নীরোগ’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ কোনটি?
  (ক) নি + রোগ (খ) নিঃ + রোগ
  (গ) নী + রোগ (ঘ) নীঃ + রোগ
  ২২। ‘ষষ্ঠ’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ -
  (ক) ষট্ + ঠ (খ) ষষ্ + ত
  (গ) ষষ্ + থ (ঘ) ষষ্ + ঠ
  ২৩। ‘স্বল্প’ শব্দের  সঠিক সন্ধিবিচ্ছেদ কোনটি?
  (ক) স্ব + ল্প (খ) স্ব + অল্প
  (গ) সু + অল্প (ঘ) সে + অল্প
  ২৪। ‘তন্ময়’ -এর সন্ধিবিচ্ছেদ -
  (ক) তনু + ময় (খ) তন্ + ময়
  (গ) তত্ + ময় (ঘ) তদ্ + ময়
  ২৫। কোন শব্দটি স্বরসন্ধিযোগে সঠিত?
  (ক) নিজন্ত (খ) অহরহ
  (গ) মস্যাধার (ঘ) দুশ্চিন্তা
  ২৬। কোনটি ঠিক?
  (ক) শির + ছেদ = শিরোচ্ছেদ (খ) শিরঃ + ছেদ = শিরচ্ছেদ
  (গ) শির + ছেদ = শিরশ্ছেদ (ঘ) শিরঃ + ছেদ = শিরশ্ছেদ
  ২৭। ‘সন্ধি’ শব্দটি কোন উপায়ে গঠিত?
  (ক) সন্ধি (খ) সমাস
  (গ) প্রত্যয় (ঘ) উপসর্গ
  ২৮। ‘সন্ধান’ শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ -
  (ক) সং + ধ্যান (খ) সং + ধান
  (গ) সমঃ + ধ্যান (ঘ) সম্ + দশ
  ২৯। ‘ষোড়শ’ -এর সন্ধিবিচ্ছেদ কোনটি?
  (ক) ষট্ + অশ (খ) ষট্ + দশ
  (গ) ষড়্ + অশ (ঘ) ষড়্ + দশ
  ৩০। নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধির উদাহরণ কোনটি?
  (ক) একাদশ (খ) বৃহস্পতি
  (গ) পৌঢ় (ঘ) পতঞ্জলি
  
    উত্তর :
  
  
    ১-ঘ; ২-খ; ৩-ক; ৪-গ; ৫-গ; ৬-গ; ৭-ঘ; ৮-গ; ৯-খ; ১০-ঘ; ১১-খ; ১২-খ; ১৩-ক; ১৪-গ;
    ১৫-ঘ; ১৬-ঘ; ১৭-ক; ১৮-খ; ১৯-খ; ২০-ঘ; ২১-খ; ২২-গ; ২৩-গ; ২৪-গ; ২৫-গ; ২৬-ঘ;
    ২৭-ঘ, ২৮-ঘ; ২৯-খ; ৩০-গ