রচনা : ছাত্রজীবনে ত্যাগ ও সততার অনুশীলন

আমাদের বিচিত্র এ বিশ্বে শিক্ষার অন্ত নেই- সারা জীবন লিখলেও লেখা শেষ হয় না। তবু প্রচলিত অর্থে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে, নির্দিষ্ট শিক্ষকের সান্নিধ্যে শেখার জন্য যে ছকবাঁধা জীবন তাই ছাত্রজীবন। মানব জীবনে ইহাই সুবর্ণ সময়। এ সময় ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতি পর্ব। ছাত্রজীবনে জীবন ক্ষেত্রে যে যেমন কর্ষণ করে বীজ বপন করে ভবিষ্যৎ জীবনে সে তেমন ফল পায়। এ জন্যেই বিজ্ঞজনেরা বলেন, সংসার সমরাঙ্গনে প্রত্যেকটি মানুষ যেমন এক একজন সৈনিক; আর ছাত্র জীবন ত্যাগ ও সততা অনুশীলনের প্রকৃষ্ট সময়। যদিও আমাদের দেশে এরকম একটি কথা চলে আসছে যে, অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা বিশেষ। লেখা পড়াতো একটা তপস্যাই। 

তথাপি একথাও স্মরণীয় যে, পুঁথির পাতায় গ্রন্থ কীটের ন্যায় অষ্টপ্রহর পড়ে থাকলে চলে না। বর্তমানে দেহ-মনকে সুস্থ ও সতেজ রাখবার জন্য কম-বেশি গ্রন্থাগার বা বিদ্যালয়ের বাইরে যেতে হয়। কারণ, বিদ্যাশিক্ষার ধরন পরিবর্তন হয়েছে, সুতরাং বিদ্যার্থীর দায়িত্ব এবং কর্তব্য পরিবর্তিত হয়েছে। এখন বিদ্যার্থীর ত্যাগ ও সততা শিক্ষার প্রয়োজন ও বৃদ্ধি পেয়েছে। পত্যেক ছাত্রকেই মনে রাখতে হবে যে, শুধু জ্ঞানী হলে চলে না, সত্যিকারের জ্ঞানী, ত্যাগী এবং সৎ ব্যক্তিও হতে হবে। অতএব, শিক্ষার্থী যে বিদ্যা লাভ করছে তার উদ্দেশ্য বিশেষভাবে সর্বমানবীয় অধিকার লাভ ও মূল্যবোধের বিকাশ। বিদ্যার্থীকে সামাজিক উন্নতি, পারিবারিক ও দেশের কল্যাণ, শান্তি বিধানের সংগ্রাম, মানসিকতা প্রতিষ্ঠিত করবার বিদ্যা ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রদীপের চারদিকে লোহার চিমনী না দিয়ে কাঁচের চিমনী দেওয়া হয়, যেন এর চারদিকে অন্ধকার দূর করতে পারে, অন্যথায় প্রদীপের তৈল সলিতা পুড়ে ছাই হবে; না হবে প্রদীপের কল্যাণ, না হবে চারপাশের কল্যাণ। 

প্রতিটি ছাত্র একটি প্রদীপশিখা। আমাদের সমাজে যেখানে অজ্ঞানতার অন্ধকারে প্রতিটি ব্যক্তি অমাবস্যার মতো কালো হয়ে জমাট বেঁধে রয়েছে; সেখানে প্রতি ছাত্রকে অন্তত তার চার পাশের অজ্ঞানতা দূর করার জন্য ত্যাগী হতে হবে এবং সততার সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। দেশের নিরক্ষরেরাও ওয়াজ-নসিহত ও নানা কথাবার্তার ভিতর দিয়ে অধ্যাত্ম জ্ঞান লাভ করে থাকেন। আমাদের ছাত্ররা অহঙ্কার ও আড়ম্বরহীন কথাবার্তা ও কাজকর্মের ভিতর দিয়েই তাদের নিরক্ষর পল্লীবাসীকে স্বাস্থ্য সংরক্ষণ, উন্নত কৃষিকাজ, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রের প্রতি কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন ও সক্রিয় করে তুলতে পারে। 

আজ যারা নবীন, আগামী দিনে এরা প্রবীণর আজকার ছাত্রই কয়েক বৎসর পর হবে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য, জননায়ক, দেশনায়ক, রাষ্ট্রপতি বা সেনাপতি। সেই ভবিষ্যতের বুনিয়াদটিকে ছাত্রজীবনে সততা ও ত্যাগের মাধ্যমে সুদৃঢ় করে গড়তে হবে। সুস্থ দেহ-মন অবিচল আত্মপ্রত্যয়, অপরাজেয় উৎসাহ ও কর্মোদ্যোম; অকৃত্রিম দেশপ্রেম-এগুলোই তো মহৎ ভবিষ্যতের পাথেয়। ছাত্র জীবনেই এগুলো সংগ্র করতে হয়। অন্যথায় ভাবীকালে জনপ্রতিনিধি হবে কালোবাজারী, দেশনায়ক হবে বিশ্বাসঘাতক এবং সে হবে কাপুরুষ। 

দেশকে গড়ে তোলার কঠোর দায়িত্ব ছাত্র সমাজের উপর। এজন্য নৈতিক বল, চিত্তবল ও দৈহিক বলে বলীয়ান হতে হবে। হৃদয়ের ঐশ্বর্যে হতে হবে ধনী। দলাদলি, মারামারি, অনৈক্য দূর করে মানবতার ভিত্তিতে এক হয়ে কাজ করতে হবে, দেশ গঠনের কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে। জনগণের নিরক্ষরতা দূরীকরণের দায়িত্ব ছাত্রদের। বন্যাপীড়িত, মহামারী, জলোচ্ছ্বাসে বিধ্বস্ত দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসতে হবে ছাত্রদের। 

আজকের ছাত্ররাই ভবিষ্যতের নাগরিক। দেশের সেবার জন্য তাকে প্রস্তুত হতে হবে। ছাত্র জীবনে ত্যাগ ও সততার অনুশীলন করলে পরবর্তী জীবনে ত্যাগ ও সততার পরিচয় দেয়া সম্ভব হয়। ছাত্র-জীবনে যারা ত্যাগ ও সততার পরিচয় দিতে পারে না তারা ভবিষ্যতে সমাজেও কোন অবদান রাখতে পারে না। ত্যাগ ও সততার অনুশীলন ছাত্রজীবনেই করতে হবে। তাই ছাত্রজীবনে শেখানো হয়- 

মোট কথা, ছাত্রজীবনে সততা ও ত্যাগের মাধ্যমে নিজেদের সবরকম কাজের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজের সততা ও ত্যাগের অনুশীলনে অবদান রাখতে হবে। সুতরাং, ছাত্রজীবনে ত্যাগ ও সততার অনুশীলন একান্ত প্রয়োজন। তাহলে দেশ ও জাতির উন্নতি সাধিত হবেই।


আরো দেখুন :
রচনা : ছাত্রজীবন / দেশ ও জাতি গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
রচনা : শিষ্টাচার
রচনা : দয়া
রচনা : মহত্ত্ব
রচনা : মিতব্যয়িতা
রচনা : সৎসঙ্গ
রচনা : মনুষ্যত্ব
রচনা : দেশভ্রমণ
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post