গণিত : লাভ-ক্ষতি : প্রাথমিক আলোচনা

গাণিতিক যুক্তি
লাভ–ক্ষতি (Profit–Loss)
প্রাথমিক আলোচনা

লাভ–ক্ষতি (Profit–Loss) খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি গাণিতিক অধ্যায়। প্রতিবছর সরকারি বিভিন্ন চাকুরীর নিয়োগ পরীক্ষায় লাভ–ক্ষতি (Profit–Loss) থেকে ২/৩ টি করে প্রশ্ন এসে থাকে। সুতরাং পরীক্ষায় ভালো করতে লাভ–ক্ষতি (Profit–Loss) –র বিকল্প নেই৷ তাই আপনার প্রস্তুতিকে সর্বোচ্চ করতে আমি আছি আপনার সাথে। নির্ভুল এবং সহজভাবে লাভ–ক্ষতির সকল ট্রিকস জানতে মনোযোগ পড়ে ফেলুন আমাদের লাভ–ক্ষতি (Profit–Loss) আর্টিকেলটি। 

সহজ ভাষায় আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে মুনাফা–লোকসান বা ক্ষতির ডেফিনিশন সবাই বুঝি। আমরা লাভ–ক্ষতি পরিমাণ বিভিন্নভাবে পরিমাণ করে থাকি৷ গণিতের ভাষাতেও লাভ–ক্ষতি ভিন্ন কিছু নয়। চলুন গণিতের প্রাতিষ্ঠানিক ভাষায় লাভ–ক্ষতির সংজ্ঞা এবং লাভ–ক্ষতির হিসাব-নিকাশ আরো ভালোভাবে জেনে নিই। শুরুতে আমরা এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বেসিক সংজ্ঞা এবং তারপর সূত্র এবং সহজ সব ট্রিক্সে লাভ–ক্ষতির অংক সমাধান করার চেষ্টা করব।

ক্রয়মূল্য (Cost Price বা C.P. ) : যে মূল্যের বিনিময়ে কোনো জিনিস ক্রয় করা যায় বা কেনার  সামর্থ্য লাভ করা হয় তাকে ওই জিনিসের ক্রয়মূল্য বলে।

বিক্রয়মূল্য (Selling Price বা S.P. ) :  যে মূল্যে কোনো জিনিস বিক্রি করা হয় বা জিনিসপত্র বিক্রয় করলে যে দাম পাওয়া যায় তাকে ওই জিনিসের বিক্রয়মূল্য বলে। 

উৎপাদন মূল্য : কোনো জিনিস তৈরি করতে যে টাকা খরচ হয় বা যে পরিমাণ ব্যয় হয় তাকে ওই জিনিসের উৎপাদন মূল্য বলে। 

লাভ বা মুনাফা (Profit/Gain) : কোনো জিনিসের বিক্রয়মূল্য যদি জিনিসের ক্রয়মূল্য বা উৎপাদন মূল্য অপেক্ষা বেশি হয় তাহলে ওই বেশি মূল্যকে ওই জিনিসের লাভ/মুনাফা (Profit/Gain) বলে।অর্থাৎ, বিক্রয়মূল্য ক্রয়মূল্য অপেক্ষা বেশি হলে লাভ হয়।

লাভ বা, মুনাফা (Profit) = বিক্রয়মূল্য (S.P.)  বিক্রয়মূল্য (C.P.)
 
ক্ষতি/লোকসান (Loss) : কোনো জিনিসের বিক্রয়মূল্য যদি জিনিসের ক্রয়মূল্য বা উৎপাদন মূল্য অপেক্ষা কম হয় তাহলে ওই কম মূল্যকে ওই জিনিসের ক্ষতি (Loss) বলে। অর্থাৎ, বিক্রয়মূল্য ক্রয়মূল্য অপেক্ষা কম হলে ক্ষতি হয়। 

লোকসান বা, ক্ষতি (Loss) = ক্রয়মূল্য (C.P)  বিক্রয়মূল্য (S.P)

তুলনা করার জন্যে লাভ বা ক্ষতি শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়। লাভ–ক্ষতির শতকরা হিসাব সবসময়ই ক্রয়মূল্যের উপর করা হয়। আমরা জানি, শতকরা শব্দটি দ্বারা প্রতি শতে অর্থাৎ প্রত্যেক ১০০ তে বোঝায়। এইরূপ একশ বা ১০০–র উপরে যে হিসাব করা হয়, তাকে শতকরা হিসাব বলে। 

ক্রয়মূল্যের উপর শতকরা লাভ : ১০০ টাকা ক্রয়মূল্যে কোনো জিনিসে মোট যে লাভ হয় তাকে ঐ জিনিসের ক্রয়মূল্যের উপর শতকরা লাভ বলে।

ক্রয়মূল্যের উপর শতকরা লাভ = মোট লাভ ক্রয়মূল্য × ১০০

ক্রয়মূল্যের উপর শতকরা ক্ষতি : ১০০ টাকা ক্রয়মূল্যে কোনো জিনিসে মোট যে ক্ষতি হয় তাকে ঐ জিনিসের ক্রয়মূল্যের উপর শতকরা ক্ষতি বলে।

ক্রয়মূল্যের উপর শতকরা ক্ষতি = মোট ক্ষতি ক্রয়মূল্য × ১০০

বিক্রয়মূল্যের উপর শতকরা লাভ : কোনো জিনিসের মোট লাভ ১০০ টাকা বিক্রয়মূল্যে কত হয় তাকে ঐ জিনিসের বিক্রয়মূল্যের উপর শতকরা লাভ বলে। 

বিক্রয়মূল্যের উপর শতকরা লাভ = মোট লাভ বিক্রয়মূল্য × ১০০

বিক্রয়মূল্যের উপর শতকরা ক্ষতি : ১০০ টাকা বিক্রয়মূল্যে কোনো জিনিসে যে ক্ষতি হয় তাকে ঐ বিক্রয়মূল্যের উপর শতকরা ক্ষতি বলে। 

বিক্রয়মূল্যের উপর শতকরা ক্ষতি = মোট ক্ষতি বিক্রয়মূল্য × ১০০

ধার্যমূল্য (Market Price) : ধার্যমূল্য (Market Price) বলতে বোঝায় সরকার কর্তৃক কোনো জিনিসের নির্ধারিত মূল্য বা দাম।

ছাড় (Discount) : ছাড় (Discount) বলতে বোঝায় কোনো জিনিসের ধার্য বিক্রয়মূল্যের উপরে শতকরা হারে প্রকৃত বিক্রয়মূল্য কিছু কমানো হয়। অর্থাৎ, মার্কেট প্রাইস থেকে শতকরা যে টাকা কমানো হয়। অনেক সময় ছাড় কে কমিশন হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। 

সমতুল্য ছাড় (Equivalent Discount) : যখন কোনো জিনিসের মার্কেট প্রাইসের উপর পরপর একাধিক ছাড় দেওয়া হয় তখন ঐ ছাড়কে সমতুল্য ছাড় বলে।

একনজরে লাভ-ক্ষতি গাণিতিক সমস্যার সূত্রসমূহ :
১. লাভ বা, মুনাফা (Profit) = বিক্রয়মূল্য — ক্রয়মূল্য

২. ক্ষতি বা, লোকসান (Loss) = ক্রয়মূল্য — বিক্রয়মূল্য

৩. ক্রয়মূল্য = বিক্রয়মূল্য — লাভ

৪. ক্রয়মূল্য = বিক্রয়মূল্য + ক্ষতি

৫. বিক্রয়মূল্য = ক্রয়মূল্য + লাভ

৬. বিক্রয়মূল্য = ক্রয়মূল্য — ক্ষতি

৭. শতকরা লাভ বা ক্ষতির হার = লাভ বা ক্ষতি ক্রয়মূল্য × ১০০

৮. ক্রয়মূল্যের ওপর x% লাভ হলে, বিক্রয়মূল্যের ওপর লাভ = $\left[\left(\frac x{১০০+x}\right)\times১০০\right]\%$

৯. ক্রয়মূল্যের ওপর x% ক্ষতি হলে, বিক্রয়মূল্যের ওপর ক্ষতি = $\left[\left(\frac x{১০০—x}\right)\times১০০\right]\%$  

১০. বিক্রয়মূল্যের ওপর x% লাভ হলে, ক্রয়মূল্যের ওপর লাভ = $\left[\left(\frac x{১০০—x}\right)\times১০০\right]\%$  

১১. বিক্রয়মূল্যের ওপর x% ক্ষতি হলে, ক্রয়মূল্যের ওপর ক্ষতি = $\left[\left(\frac x{১০০+x}\right)\times১০০\right]\%$ 

১২. কোনো দ্রব্য y টাকায় বিক্রয় করায় x% ক্ষতি হয়, তবে ক্রয়মূল্য = $\left[\left(\frac {১০০}{১০০+x}\right)\times y\right]\%$  

১৩. কোনো দ্রব্য y টাকায় বিক্রয় করায় x% লাভ হয়, তবে ক্রয়মূল্য = $\left[\left(\frac {১০০}{১০০—x}\right)\times y\right]\%$  

১৪. কোনো দ্রব্যের মূল্য x% হ্রাস পাওয়ায় n কেজি বেশি পাওয়া যায় A টাকায়, তখন দ্রব্যটির হ্রাসের পর মূল্য = $\frac {Ax}{১০০n}$ প্রতি কেজি এবং প্রকৃত মূল্য  $\frac {Ax}{\left(১০০-x \right) n}$ প্রতি কেজি।

১৫. কোনো দ্রব্যের মূল্য x% হ্রাস পাওয়ায় n কেজি কম পাওয়া যায় A টাকায়, তখন দ্রব্যটির নতুন মূল্য = $\frac {Ax}{১০০n}$ প্রতি কেজি এবং প্রকৃত মূল্য  $\frac {Ax}{\left(১০০+x \right) n}$ প্রতি কেজি।

১৬. একজন অসৎ ব্যবসায়ী ক্রয়মূল্যেই দ্রব্যটি বিক্রয় করে কিন্তু দ্রব্যটি পরিমাণে ১ কেজির পরিবর্তে x কেজি দেয়। তখন শতকরা লাভ = [প্রকৃত ওজন — x x × ১০০]%

১৭. একজন অসৎ ব্যবসায়ী x% লাভে একটি দ্রব্য বিক্রয় করে কিন্তু দ্রব্যটি পরিমাণে y% কম দেয়। তবে ব্যবসায়ীর মোট শতকরা লাভ = [কম ওজন প্রকৃত ওজন — কম ওজন × ১০০]%

উপরোল্লিখিত নিয়মগুলোর ব্যবহার করে আমরা পরীক্ষায় আসা লাভ–ক্ষতির ৮০ থেকে ৯০% অংক সমাধান করতে পারব৷ এছাড়া এগুলোর গাণিতিক সমস্যাবলির প্রয়োগ দেখতে লাভ–ক্ষতি নিয়ে আমাদের পরবর্তী পোস্ট পড়ুন।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post