হযরত (র.) শাহজালাল-এর মাজার পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর

হযরত (র.) শাহজালাল-এর মাজার পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

হযরত শাহজালাল (র.) ছিলেন উপমহাদেশের বিখ্যাত দরবেশ ও পীর। সিলেট অঞ্চলে তিনিই প্রথম ইসলামের ব্যাপক প্রচার ও প্রসার ঘটান। তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনা ও শক্তি, নির্লোভ ও নিষ্কাম প্রকৃতি, মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্যই সর্বস্তরের মানুষ আজও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি হ্রদর্শন করে। এমন একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও ওলিকুল শিরোমণির মাজার পরিদর্শন অবশ্য কর্তব্য মনে করে সিলেট পৌঁছালাম। উঠলাম এক পরিচিতের বাড়িতে। তাঁদের অভ্যর্থনা ও আপ্যায়নে মুগ্ধ হলাম। পরদিন সকালে মাজার পরিদর্শনে তাঁরাই আমাদের সাথি ও গাইড হলেন। তারা জানালেন, অত্যাচারী রাজা গৌরগোবিন্দকে পরাজিত করে ৩৬০ সফরসঙ্গীসহ হযরত শাহজালাল (র.) সিলেটে আগমন করেন। আর সিলেটের মাটির সঙ্গে আরবের মাটির মিল পাওয়ায় এখানেই বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। দরগা মহল্লায় একটি ছোট্ট টিলার উপর আস্তানা স্থাপন করে এখানে বসেই তিনি এবাদত-বন্দেগি করতে থাকেন। আমরা গেট দিয়ে মাজার কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশ করলাম। ডান পাশে ছোট্ট টিলা। এখানেই তাঁর মাজার। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত করলাম। মাজারের দক্ষিণ দিকে গ্রিল ঘেরা তারকাখচিত ছোট্ট ঘরটি তাঁর চিল্লাখানা। স্থানটি মাত্র দুই ফুট চওড়া। এখানেই তিনি ২৩ বছর আরাধনা করেছেন। দরগাহ চত্বরে একটি সুদৃশ্য মসজিদ দেখলাম। সুরমা রঙের অনেক কবুতর উড়তে দেখলাম, এগুলো জালালি কবুতর। কেউ এগুলো ধরে না, খায়ও না। কবুতরের ঝাঁক দেখে ভালো লাগল। মাজার চত্বরের উত্তর দিকে রয়েছে একটি পুকুর। এখানে রয়েছে অসংখ্য গজার মাছ। ছোট মাছ কিনে ২ ৩টি গজার মাছকে খাওয়ালাম। মাজারের পূর্ব দিকে একতলা ঘরের ভেতর তিনটি বড় আকারের ডেকচি রয়েছে। শুনলাম এগুলোতে কখনো রান্নাবান্না হয় না। কিন্তু সাত মণ চাল ও সাতটি গরুর মাংস এগুলোতে একবারে রান্না করা যায়। এগুলোতে কিছু টাকা-পয়সা দিলাম। একপাশে রয়েছে জমজমের কূপ ও ঝরনা। দিন-রাত ঝরনার স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। মাজার চত্বরের সঙ্গেই দুটো বাড়িতে হযরত শাহজালালের ব্যবহৃত তলোয়ার, খড়ম, প্লেট, বাটি ইত্যাদি দেখলাম। প্রত্যেকটি আকারে বেশ বড় ও ভারী মনে হলো। এখানেই জানতে পারলাম হযরত শাহজালাল (র.) সুদূর ইয়েমেন থেকে তাঁর পীরের আদেশে ভারতবর্ষে এসেছিলেন। ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে ৬৯ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। চিরকুমার থেকে তিনি কেবল ইসলামের খেদমত, ইবাদত-বন্দেগি ও মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছেন। হৃদয়জুড়ে একটা আধ্যাত্মিক আবহ নিয়ে মাজার চত্বর থেকে বেরিয়ে এলাম।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post