ময়নামতি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা

ময়নামতি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

কর্মচাঞ্চল্যের নাগপাশে আবদ্ধ জীবনটা কেমন যেন রোবটে পরিণত হতে চলেছে। আমার ভ্রমণ পাগল মনটা কিছুদিন ধরে বিদ্রোহ ঘোষণা করছে। তাই ত্বরিত সিদ্ধান্তে বেরিয়ে পড়লাম ময়নামতির উদ্দ্যেশে।
বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে কুমিল্লার ময়নামতি অন্যতম। গত শুক্রবার সায়েদাবাদ থেকে কুমিল্লাগামী একটি বাসে যখন চড়ে বসলাম তখন সকাল ৮টা। দুঘন্টার মধ্যেই কুমিল্লা শহরে পৌঁছলাম। সেখান থেকে অটোরিকশায় চড়ে ময়নামতি যখন পৌঁছালাম তখন বেলা এগোরোটা।

ময়নামতি একটি পাহাড়ি এলাকা। উত্তর দক্ষিণে এটি প্রায় ১১মাইল লম্বা এবং পূর্ব পশ্চিমে আধ থেকে দেড় মাইল পর্যন্ত চওড়া। গড়ে প্রায় ৫০ফুট এই পাহাড়শ্রেণীর কোনো কোনোটির উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট পর্যন্ত দেখা যায়। পাহাড়শ্রেণী উত্তরভাগের নাম ময়নামতি এবং দক্ষিণভাগের নাম লালমাই।

প্রথমে যাই শালবন বৌদ্ধবিহার দেখতে। মূল বিহারটি দেব বংশের চতুর্থ রাজা ভবদেব আনুমানিক ৮ম শতাব্দীতে নির্মাণ করেন। পাতলা ইটের চুন সুরকিতে তৈরি বর্গাকার এ বিহারটির প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ৫০০ ফুট। বিহারের কক্ষগুলোর সামনে রয়েছে আট ফুট বারান্দা। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ২৫ ফুট নিচে খুঁজে পাওয়া এ বিহারে ছোট বড় মন্দির, বিভিন্ন প্রকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান মেলে। ১৯৫৫ সালে ময়নামতিতে খনন কাজ শুরু হলে একে একে বেরিয়ে আসে এসব নিদর্শন। এখানে আরও দেখলাম আনন্দ বিহার, চারপত্র মুড়া, রুপবান মূড়া, বাটালী, পোড়ামাটির ফলকে বিভিন্ন ছবি, বিভিন্ন মূর্তি, তাম্রলিপি, সোনার দুল, ব্রোঞ্জের মূর্তি প্রভৃতি জিনিসপত্র। এসব ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ জাদুঘরে আরও দেখা গেল দন্ডায়মান বুদ্ধের মূর্তি, তাম্র শাসন, ব্রোঞ্জের তৈরি বিশাল ঘন্টা (যার ওজন প্রায় ৪০০ কেজি), কালো পাথরের বিভিন্ন মূর্তি যেমন- বিক্রম বিষ্ণু মূর্তি, তারা মূর্তি, পার্বতী মূর্তি, হর গৌরী মূর্তি, মনসা মূর্তি, গণশে মূর্তি ইত্যাদি। প্রাচীন বাংলার এসব নিদর্শন দেখতে পেয়ে মনে হচ্ছিল আমি যেন প্রাচীন বাংলার সেই সমতট জনপদের জীবন্ত প্রতিনিধি, যে এখনও ময়নামতিতে অবস্থান করছি। সন্বিত ফিরে পেয়ে দেখলাম সন্ধ্যা সমাগত। বাসায় ফিরতে হবে তাই বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post