বরেন্দ্র জাদুঘরে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

বরেন্দ্র জাদুঘরে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।

প্রাচীন বিষয়ের প্রতি আমার অজানা একটা দুর্বলতা রয়েছে। তাই পুরানো ইতিহাসের গন্ধসহ যেকোনো জিনিসই আমার মনকে আকর্ষণ করে। সেই দুর্নিবার আকর্ষণই আমাকে টেনে নিয়েছিল রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে। খুলনা থেকে ট্রেনে চেপে রাজশাহী যখন পৌঁছালাম তখন ভোরের সূর্যটা তার যাত্রা শুরু করেছে। স্টেশনের এক অখ্যাত রেস্টুরেন্ট থেকে সকালের নাশতা কোনো রকমে করে আমার লক্ষ্যস্থলের দিকেই রওয়ানা হলাম এবং ১০টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম রাজশাহীর বরেন্দ্র জাদুঘরে।

বিশ শতকের প্রথম দশকে দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের সন্তান শরৎকুমার, সাহ্যিতিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় প্রমুখ প্রত্ন অনুরাগীরা 'বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি' গড়ে তোলেন। ১৯১৬ সালে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল বরেন্দ্র জাদুঘর ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তারপর নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ১৯৬৪ সালে এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ত্তাধীন হয়।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে রয়েছে পাথর ও ধাতুনির্মিত ভাস্কর্য, খোদিত লিপি, মুদ্রা, মৃৎপাত্র ও পোড়ামাটির ফলক, অস্ত্রশস্ত্র, আরবি ফারসি দলিলপত্র, চিত্র, সংস্কৃত ও বাংলা বিভিন্ন পান্ডুলিপি।

মূল ভবনে প্রবেশ করার পর ১নং গ্যালারিতে দেখলাম সিন্ধু সভ্যতার প্রত্নসম্পদ, পাহাড়পুরের প্রত্নসম্পদ, মুঘল চিত্রকলা, পাথর ও ব্রোঞ্জের নির্মিত ভাস্কর্য প্রভৃতি। ২নং গ্যালারিতে রয়েছে বৌদ্ধ ও হিন্দুদের দেব দেবীর প্রস্তর মূর্তি এবং কাঠের ভাস্কর্য। ৩য় গ্যালারিতে রয়েছে হিন্দু দেব দেবীর ভাস্কর্য, যেমন- সূর্য মূর্তি, শিব, গণেশ ও বিষ্ণুর মূর্তি। ৪র্থ ও ৫ম গ্যালারিতে রয়েছে গৌরী, উমা পার্বতী, মাতৃকা ও চামুন্ডা মূর্তি। বৌদ্ধদের বুদ্ধমূর্তি, বোধিসত্ত্ব, তারা, জৈন তীর্থঙ্কর মূর্তি। ৬নং গ্যালারতে রয়েছে বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ভাষার প্রস্তর লিপি ও পোড়ামাটির ফলক এছাড়া রয়েছে শেরশাহের আমলে নির্মিত দুটি কামান। এরপর গেলাম জাদুঘর লাইব্রেরিতে। সেখানে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসসহ মূল্যবান পুঁথি ও বই রয়েছে যা প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। বরেন্দ্র জাদুঘরে কাটানো সময়টাতে আমার মনটা হারিয়ে গিয়েছিল সুদূর অতীতের অজানা ইতিহাসের ধ্বংসস্তুপের মাঝে। অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন আমি রেল স্টেশনের দিকে রওয়ানা হলাম তখন সূর্যটা পশ্চিম দেশে তার রক্তিম আভা ছড়িয়ে সন্ধ্যার আগমনী গান গাইছে।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post