সাধারণ জ্ঞান : মাহমুদুল হক

মাহমুদুল হক

মাহমুদুল হক কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? — ১৯৪০ সালে, ঢাকায়।

তাঁর প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর নাম কী? — অনুর পাঠশালা, নিরাপদ তন্দ্রা, জীবন আমার বোন, কালো বরফ চিক্কোর কাবুল, খেলাঘর, মাটির জাহাজ, অশরীরী। 

'খেলাঘর' কোন ধরনের উপন্যাস? — মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস। 

'জীবন আমার বোন' সম্পর্কে লেখ।
মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'জীবন আমার বোন' প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৭৬ সালে; এর লেখক মাহমুদুল হক। জাহিদুল কবির খোকা নামের এক আপাত নির্লুপ্ত ও জীবন - পলাতক মানুষকে কেন্দ্রে স্থাপন করে মাহমুদুল হক উপন্যাসটি লিখেছেন। দেশে যখন রাজনৈতিক উত্তালতা; বন্দুকের দোকান লুট; জেল ভেঙে কয়েদিদের পলায়ন; অবাঙালিরা বাংলা থেকে পুঁজি নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে পলায়নপর; ইয়াহিয়া - ভুট্টো রাজনৈতিক আপোসের ভান; বাঙালিদের গর্জে ওঠা; জাতীয় পরিষদের অধিবেশন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক স্থগিত ও লাঠিসোটা নিয়ে এর বিরুদ্ধে বাঙালির প্রতিবাদ; বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের পর বাংলার মুক্তিকামী মানুষের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া –এই উত্তাল সময়টাই তুলে ধরা হয়েছে এই উপন্যাসে। উপন্যাসের একটি চরিত্র মুরাদ বলেছে— 'প্রত্যেকটা দিন এখন ইতিহাসের এক একটি পাতা; আমরা এক একজন এক একটা গোটা সাক্ষী হয়ে থাকবো।' মুরাদ আছে, রহমান আছে, ইয়াসিন আছে —সবাই কমবেশি আন্দোলন সংগ্রাম সংশ্লিষ্ট, শুধু জাহিদুল কবির খোকা ছাড়া। খোকা মনে করে আন্দোলন সংগ্রাম হলো ভূতের মতো। এই 'ভূত' কোনোভাবেই যেন তার মাথায় না ঢুকতে পারে, এ ব্যাপারে সে তৎপর।  উপন্যাসে বলা হয়েছে— ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় চোর - ডাকাত ও চুরি ডাকাতি ছেড়ে দিয়ে স্বদেশের প্রয়োজনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশপ্রেমিক হয়ে গেছিল। আর মুক্তিযুদ্ধের সূচনা কালে একজন বাঙালি কি করে এমন নির্লিপ্ত থাকে, খোকা নামের চরিত্রটি উত্তাল ঢাকায় থাকবে, ঢাকা ছাড়বে না, আবার আন্দোলন সংগ্রামেও যাবে না। খোকা চরিত্রের এই যখন অবস্থা, এরই মধ্যে নেসে আসে কাল রাত। পাকিস্তানিরা আক্রমণ করে বাঙালিদের। শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ। খোকার বন্ধুরা সব মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। রহমান শহীদ হয়, ইয়াসিন পঙ্গু গয়, মুরাদ থাকে গেরিলা যুদ্ধে। জাহিদুল কবির খোকা এই অবস্থাকেও স্বপ্ন বলে। সে উচ্চারণ করে : 'স্বপ্নের ভিতর দেখতে দেখতে আমরা আরেক স্বপ্ন হয়ে যাই।' বাস্তবতাকে সে স্বপ্ন ভাবে। আসলে মুক্তিযুদ্ধে এমন অনেক বাঙালি চরিত্র ছিল যারা পলায়নপর, দায়িত্ব পালনে অনীহ ছিল। জাহিদুল কবির খোকা হল তেমনি এক চরিত্র। এই চরিত্র ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পালিয়ে বেড়িয়েছিল। নীলা ভাবির সঙ্গে তার সম্পর্ক এর বড় প্রমাণ। বোনের ক্ষেত্রেও দায়িত্ব পালন করে নি। উপন্যাসে জাহিদুল কবির খোকা কাব্যমিশ্রিত বক্তব্য দেয়, স্বপ্ন দেখে, স্বপ্ন দেখায় কিন্তু পাঠককে তৃপ্ত করে না। এ যেন, রোম যখন পুড়ছিল, রাজা নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল —ঠিক তেমনি কিছু। উপন্যাসটি থেকে বাঙালি পাঠক এই শিক্ষা নেয় যে, অস্তিত্বের লড়াইয়ে যখন দেশ ও জনতা, তখন নির্লিপ্ততার আরেক নাম আত্ম-অবমাননা বলেই পরিত্যাজ্য। 

তিনি কী পুরস্কার লাভ করেন? — বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৭)।

তিনি কবে মারা যান? — ২০০৮ সালের ১৯ শে জুলাই, রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে, সে হিসেবে তারিখটি ২০ শে জুলাই ধরা যায়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post