ব্যাকরণ : বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম - ২

বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম
পর্ব — ২ 

৪. শ, ষ, স 
ক. তৎসম শব্দের বানানে শ, ষ, স–এর নিয়ম মানতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে ষত্ব বিধি প্রযোজ্য হবে না। 

খ. বিদেশি মূল শব্দের শ, স–এর যে প্রতিসঙ্গী বর্ণ বা ধ্বনি রয়েছে বাংলা বানানে তা–ই ব্যবহার করতে হবে। যেমন : সাল (= বৎসর), সন, হিসাব, শহর, শরবত, শামিয়ানা, শখ, সৌখিন, মসলা, জিনিস, আপস, সাদা, পোশাক, বেহেশত, নাশতা, কিশমিশ, শরম, শয়তান, শার্ট। 
তবে 'পুলিশ' শব্দটি ব্যতিক্রমরূপে শ দিয়ে লেখা হবে।

গ. তৎসম শব্দে ট, ঠ বর্ণের পূর্বে যুক্তব্যঞ্জনে ষ হয়। যেমন : বৃষ্টি, দৃষ্ট, নিষ্ঠা, পৃষ্ঠা। 
কিন্তু বিদেশি শব্দে এক্ষেত্রে স হবে। যেমন : স্টল, স্টোর, স্টাইল, স্টিমার, স্টুডিও, স্টেশন, স্ট্রিট, স্টার, মাস্টার। 
তবে খ্রিষ্ট যেহেতু বাংলায় আত্তীকৃত শব্দ এবং এর উচ্চারণও তৎসম কৃষ্টি, তুষ্ট ইত্যাদি শব্দের মতো, তাই ষ্ট দিয়ে খ্রিষ্ট শব্দটি লেখা হবে। 

৫. আরবি - ফারসি শব্দে সে, সিন্, সোয়াদ, বর্ণগুলোর প্রতিবর্ণরূপে স এবং শিন্ –এর প্রতিশব্দরূপে শ ব্যবহৃত হবে। যেমন— সালাম, তসলিম, ইসলাম, মুসলিম, মুসলমান, সালাত, এশা, শাবান (হিজরি মাস), শাওয়াল (হিজরি মাস), বেহেশত। 

এক্ষেত্রে স–এর পরিবর্তে ছ লেখার কিছু কিছু প্রবণতা দেখা যায়, তবে তা ঠিক নয়। তবে যেখানে বাংলায় বিদেশি শব্দের বানান সম্পূর্ন পরিবর্তিত হয়ে স, ছ –এর রূপ লাভ করেছে সেখানে ছ ব্যবহার করতে হবে। যেমন— পছন্দ, মিছিল, তছনছ৷ 

৬. ইংরেজি ও ইংরেজির মাধ্যমে আগত বিদেশি S বর্ণ বা ধ্বনির জন্যে স এবং sh, –sion, –ssion, –tion ইত্যাদি বর্ণগুচ্ছ বা ধ্বনির জন্যে শ ব্যবহৃত হবে। যেমন— গ্যাস, প্রফেসর, সাবজজ, সুপার, সিনিয়র, শার্ট, শেড, পেনশন, মিশন, রেশন, ফেডারেশন, নেশন, পাবলিকেশন, করপোরেশন, কনভোকেশন। 
তবে Question ইত্যাদি শব্দের বানান অব্যরূপ; যেমন— কোএসচন হতে পারে 

৭. জ, ষ 
ক. বাংলায় প্রচলিত বিদেশি শব্দ সাধারণভাবে বাংলা ভাষার ধ্বনিপদ্ধতি অনুযায়ী লিখতে হবে। যেমন : কাগজ, জাহাজ, হুকুম, হাসপাতাল, টেবিল, পুলিশ, ফিরিস্তি, হাজার, বাজার, জুলুম, জেব্রা। 

খ. ইসলাম ধর্ম–সংক্রান্ত কয়েকটি বিশেষ শব্দে যে, যাল, যোয়াদ, যোই রয়েছে, যার ধ্বনি ইংরেজি Z –এর মতো, সেক্ষেত্রে উক্ত আরবি বর্ণগুলোর জন্যে য ব্যবহৃত হওয়া সংগত। যেমন : আযান, এযিন, ওযু, কাযা, মুয়াযযিন, যোহর, রমযান। তবে কেউ ইচ্ছে করলে এক্ষেত্রে য –এর পরিবর্তে জ ব্যবহার করতে পারবে। 

গ. জাদু, জোয়াল, জো ইত্যাদি শব্দ জ দিয়ে বাঞ্ছনীয়। 

৮. এ, অ্যা 
ক. বাংলায় এ ে–কার দ্বারা অবিকৃত এ এবং বাঁকা অ্যা এ উচ্চারণ বা ধ্বনি নিষ্পন্ন হয়। তৎসম বা সংস্কৃত ব্যাস, ব্যায়াম, ব্যাহত, ব্যাপ্ত, জ্যামিতি ইত্যাদি শব্দের বানান অনুরূপভাবে লেখার নিয়ম রয়েছে। অনুরূপ তৎসম এবং বিদেশি শব্দ ছাড়া অন্য সব বানানে অবিকৃত বা বিকৃত (বাঁকা নির্বিশেষে এ বা ে–কার হবে। যেমন : দেখে, দেখি, যেন, জেনো, কেন, কেনো (ক্রয় করো), গেলে, গেল, গেছে।

খ. বিদেশি শব্দে অবিকৃত উচ্চারণের ক্ষেত্রে এ বা ে–কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : এন্ড, নেট, বেড, শেড।

গ. বিদেশি শব্দে বিকৃত বা বাঁকা উচ্চারনে অ্যা বা ্যা–কার ব্যবহৃত হবে। যেমন : অ্যান্ড, অ্যাবসার্ড, অ্যাসিড, ক্যাসেট, ব্যাক, ম্যানেজার, হ্যাট।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post